নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০০

১৬
— বাইকটা আপনার?
— কোথায় যাবেন?
— বাবার ওখানে।
কিছুটা সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে অদিতির দিকে তাকিয়ে থাকল আশফাক। বুঝতে চেষ্টা করল, মেয়েটা কতোটা সমস্যায় আছে। ঢাকায় বাবার বাসা থাকতে, হোস্টেলে কেন আছে? এরপরে ক্ষান্ত দিল। পুরো ঘটনা বলে না দিলে আন্দাজ করা সম্ভব না। শুধু বলল
— চলুন।
অদিতি আজকের সব ঘটনাগুলোকে একবার ভাববার চেষ্টা করল। এমন অবাক করা দিন ওর জীবনে অনেকদিন আসেনি। নীরবের সাথে দিনগুলোতে সারপ্রাইজ ছিল, তবে তারও একটা মাত্রা ছিল। একটা নতুন ড্রেস, কিংবা হোটেলে গিয়ে লাঞ্চ কিংবা ডিনার। আর নয়তো সিনেপ্লেক্সে কোন মুভি। ফয়সালের সাথে সময়গুলোতেও সারপ্রাইজ বলতে ছিল হঠাৎ করে লঙ ড্রাইভে যাওয়া আর নয়তো এখানে ওখানে ডেটিং। মাঝে মাঝে নতুন ড্রেস। ব্যাস। এই প্রথম একেবারে নতুন কিছু। নতুন একটা অভিজ্ঞতা। মন থেকে একটা কৃতজ্ঞতা বেরিয়ে আসছে। এর আগে এমনই অনুভূতি হয়েছিল কেবল নওরিনের জন্য।
বেশ দ্রুতই মালিবাগে পৌঁছে গেল। এবার সমস্যায় পড়ল অদিতি। ভেতরে বসতে বলবে? না চলে যেতে বলবে? বসতে বলার সমস্যা হচ্ছে, পরিচয় কি তা নিয়ে একগাদা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আর এই মুহূর্তে অদিতি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, অপরিচিত একজন পুরুষের সাথে ঘুরে বেড়ানোর বিচ্ছিরী একটা মানে দাঁড়াবে। কি বলবে ভাবছিল এমন সময় আশফাকই বলল
— আপনি কাজ সেরে আসুন, আমি অপেক্ষা করছি।
কিছুটা ইতস্ততঃ করে অদিতি বলল
— তা কেন। ভেতরে বসুন।
আশফাক স্মিত একটা হাসি দিয়ে বলল
— রাস্তায় দাঁড়ান আমার ফেভারেট হবি। আপনি সেরে আসুন।
অদিতি বুঝল, আশফাক আসবে না। কিছুটা ইতস্ততঃ করে অদিতি ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। আজকের দিনটা বোধহয় সারপ্রাইজেরই দিন। ভেতরে ঢুকেই দেখে ড্রইং রুমে নীরব আর বাবা বসে আছেন। দুজনের মুখই বেশ গম্ভীর। বাবকে কিভাবে কি বলবে, তা অনেকটা গুছিয়ে এসেছিল। সব গোলমাল হয়ে গেল। কথাগুলো এখন দুজনের সামনেই বলতে হবে। যদি না তাকে দেখে নীরব চলে যায়।
অদিতি ঘরে ঢুকতেই অদিতির বাবা বললেন
— বস
অদিতি একবার নীরবের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে সোফাতে বসল। বাবার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, উনি সমঝোতা প্রচেষ্টার জন্য নীরবকে ডেকেছেন। গতকাল যখন অদিতি জানায় যে সে আজকে আসছে, তখনই সম্ভবতঃ বাবার মাথায় আইডিয়াটা আসে। নীরবও নিপাট ভদ্রলোক। তাই বাবার অনুরোধ ফেলতে পারেনি। অদিতিকে এখন একসাথে দুটো কাজ করতে হবে। পুরো ব্যাপারটা বাবাকে শোনাতে হবে সঙ্গে পুরো দোষ নিজের ঘাড়ে নিতে হবে।
— দেখ মা, আমার বয়স হয়েছে…
টিপিক্যাল বাবা টাইপ আপ্রোচ। বয়সের দোহাই দিয়ে সন্তানদের দাম্পত্য সম্পর্ককে ট্র্যাকে আনবার চেষ্টা। বাবাকে থামানো দরকার। সমস্যাটা এখন আর আলাপ আলোচনা লেভেলে নাই। সো এসব সমঝোতা প্রচেষ্টায় আদৌ কোন উৎসাহ পাচ্ছে না অদিতি। তাছাড়া কথাবার্তা সে খুব দ্রুত সারতে চায়। বাইরে আশফাক রোদে অপেক্ষা করছে। বাবাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অদিতি বলল
— তোমরা কিছু বলার আগে, আমি কিছু বলতে চাই।
নীরব মনে হল কিছুটা স্বস্তি পেল। আসলে তার ও আলাপের কোন ইচ্ছা নাই। একবার নীরবের দিকে তাকিয়ে অদিতি চোখ ঘুরিয়ে নিল। এরপরে বাবার দিকে তাকিয়ে অদিতি শুরু করল
— বাবা। সমস্যাটা আমিই তৈরি করেছি। বিয়ের আগে ফয়সালের সাথে আমার অ্যাফেয়ার ছিল। মানে রেপ কেসে ও জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। আর সেই সময়ে ওর সাথে আমি বাইরে এদিক ওদিকও যেতাম। তোমাদেরকে বলে যেতাম বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছি।
বাবা প্রথমটায় বেশ মনোযোগ দিয়ে শোনা শুরু করলেও অচিরেই উনার চোখ বিস্ফোরিত হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে আধশোয়া থেকে উঠে বসে গেলেন। অদিতি বলে চলল
— সেই সময়ে আমি ওর সাথে বাইরে রাতও কাটাই। একবার আমরা টাইটানিক সিনেমাটা দেখতে যাই। নাইট শো দেখারা পরে আমরা বাইরেই রাত কাটাই। সেদিন ফয়সাল আবদার করে টাইটানিকের নায়িকার মত ন্যুড পোজ দিতে। বলে ঐ অবস্থায় ও ছবি তুলবে।
বাবার চোখ তখন পুরোপুরি বিস্ফোরিত। নিজের মেয়েকেই তাঁর অচেনা লাগছে। এই শান্তশিষ্ট মেয়েটা এসব কি বলছে? ঐ লম্পট ছেলেটার পাল্লায় কখন পড়ল? আর এতোসব নোংরা কাজ করতে ওর একটুও বাধল না? উনার বিশ্বাসের এই মূল্য দিল মেয়েটা? অদিতি ওর বাবার প্রতিক্রিয়া দেখে কিছুটা বিরতি দিল। নীরবের দিকেও তাকাল। নীরবও অবিশ্বাস আর ঘৃণা মেশানো এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে অবিশ্বাসের জায়গা ঘৃণা নিয়ে ফেলল। ঐ চোখ বেশ জোরে জোরেই বলছে ‘ছিঃ’। অদিতি আবার শুরু করল।
— সেদিন আমার যে কি হল, আমিও রাজী হয়ে গেলাম। ও বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছিল ওর মোবাইলে। এর কিছুদিন পরে তো সেই রেপ কেসে ও জেলে চলে যায়। সম্প্রতি ও ছাড়া পেয়েছে। ওর বাবা সম্ভবতঃ টাকা পয়সার ক্ষেত্রে লাগাম লাগিয়েছেন, তাই পুরনো পরিচিতদের টার্গেট করছে। ফুর্তি করার জন্য।
অদিতির বাবার অবস্থা এখন রীতিমত বিধ্বস্ত। অদিতি তাই উঠে গিয়ে বাবার পাশে বসল। বাবার হাতের ওপর হাত রাখল। বলতে লাগল
— আমি খুব ভাল কিছু করেছি, তা বলছি না। তবে তখন যা করেছি, ফয়সালকে হবু স্বামী ভেবেই করেছি। ওকে আনন্দ দেয়াটাকেই নিজের দ্বায়িত্ব ভেবেছি। ন্যায় করছি না অন্যায় তা ভাবিনি। তোমাদের মিথ্যে বলতেও সেদিন তাই বাধেনি। আই অ্যাম সরি ফর দ্যাট।
— তোর সরি তো আর সবকিছু ঠিক করে দিতে পারবে না।
— আমি তো তা বলছি না বাবা। শুধু জানাচ্ছি। ব্যাপারটা এতোদিন কাউকেই জানাইনি, কারণ ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখাটাই সঠিক মনে হয়েছিল।
— এখন তবে বলতে গেলি কেন?
— কারণ ফয়সাল আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেছিল। বলেছিল, ওর ডাকে সাড়া দিতে হবে, নাহলে সব ছবি প্রকাশ করে দিবে। ব্যাপারটা প্রথমে নীরবকে বলি। সিদ্ধান্ত নিই, ওর কথায় সাড়া দিব না।
বাবা নীরবের দিকে তাকায়। চোখে কিছুটা শ্রদ্ধা। অদিতি কিছুটা সময় চুপ করে থাকে। এরপরে আবার বলতে শুরু করে
— নীরব ঠিক করে, ছবিটা প্রকাশ করলে যে অসম্মান হবে, তার আঁচ যেন কেবল আমার গায়ে লাগে। সিদ্ধান্তটা আমারও সম্মতি ছিল। আমিও চাইনি, আমার জন্য ওর সম্মান নষ্ট হোক। তাই আমি হোস্টেলে থাকা শুরু করি। ওর ও সবাইকে বলতে থাকে, আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে। যেন ছবিগুলো প্রকাশ করলে ও বলতে পারে, ‘এ মেয়ের সাথে তো আমার আর সম্পর্ক নাই।’
বাবার চোখের সম্মান হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল, সেখানে দেখা দিল ভীতি। মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তৈরি হওয়া শঙ্কা। অদিতি সেদিকে একবার তাকাল। বাবর জন্য খারাপ লাগছে, তারপরও তাকে বলতে হবে। সে বলে চলল
— তিনদিন আগে ফয়সাল ইন্টারনেটের কিছু পর্ণ সাইটে ছবিগুলো আপলোড করে। কিন্তু হাজার হাজার ছবির ভিড়ে সেই ছবি কেউ তেমন লক্ষ্য করে না। আমার তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না দেখে ফয়সাল তখন নীরবদের ফ্ল্যাটে ছবিটা ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করে। এরপরে আমার হোস্টেলে ছবিগুলো কুরিয়ার করে।
বাবা বেশ স্বগতোক্তির মত করে বলল
— এখন কি হবে?
— কি হবে এখনও জানি না। আজকে ওখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য আমাকে নোটিশ দিয়েছে। আমি হয়তো নতুন ঠিকানা খুঁজব। আর আজকে এসেছি, তোমাদের সত্যি কথাগুলো বলতে। আমার যা হবার হবে, কিন্তু আমার জন্য তোমরা নিজেদের সম্মান নষ্ট কর না। কেউ জানতে চাইলে বলে দিও, ঐ মেয়ের সাথে তোমাদের সম্পর্ক নেই।
বাবা কিছুটা হতাশা মেশানো কণ্ঠে বললেন
— তাতে কি আর এমন হবে?
— হয়তো কিছুই হবে না, তবে এতোসবের পরে আমাকে স্বীকার করে নিলে অসম্মান, অপমান পুরো পরিবারটার হবে। আর আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিলে, অসম্মান কেবল আমার হবে।
বাবা এবার অদিতির দিকে তাকাল। সেই চোখে স্নেহ, ভালোবাসা তেমন দেখতে পেল না অদিতি। কেবল কিছুটা উৎকণ্ঠা
— তুই কি করবি?
— সেটা এখনও জানি না। তবে আশা করছি, তোমাদের আর কখনও ডিস্টার্ব করব না।
এরপরে নীরবের দিকে তাকাল। অদিতির এই নতুন রূপ দেখে সে রীতিমত বিস্মিত। অবাক চোখে অদিতির দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিয়ে অদিতি বলল
— ডিভোর্সের অফিসিয়াল কাগজপত্র একটু দ্রুত তৈরি করে ফেল। আমাকে আর বড়জোর এক সপ্তাহ ওখানে থাকতে দিবে।
চলবে

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৮

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: বাবা যেভাবে রিআক্ট করলেন সেটা কতটা বাস্তবসম্মত তাই ভাবছিলাম। আপনার প্রতিটি লেখা অনেক বাস্তবসম্মত বলেই এই প্রশ্ন মনে উঁকি দিল। উনি হয়ত জোরে চড় মারলে ব্যাপারটি রিয়ালিস্টিক হতো। বাংলাদেশী যেকোন বাবার তাই করার কথা। এতটা শান্ত ভাবে রাগ দেখানোর কথা না। তবে হয়ত বেশি হতবাক হয়ে এমন করেছেন। আর একেকজনের চরিত্র একেকরকম।

আমি সামনে জানতে চাই। আরো জলদি আরো বেশি করে লিখুন। অনেক মজা লাগছে পড়ে।
ধন্যবাদ।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫১

করুণাধারা বলেছেন: চারপাশে মেয়েদের মার খাওয়া দেখতে দেখতে আর ভাল লাগে না।

অদিতি যেন না হারে। পুরুষমমানুষ একশ ধর্ষণ করে উদযাপন করে আর অদিতি কি একটা ভুলের জন্য হেরে যাবে! ওকে বিজয়িনী করে গল্প শেয করুন, প্লিজ।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:২৫

শুভ_ঢাকা বলেছেন: খুব তাড়াহুড়ো করছেন কি। যে গতিতে এগুচ্ছেন মনে হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গল্পটা শেষ করতে চাচ্ছেন। ইট সিমস টু মি দ্যাট ইউ আর জাম্পিং সো ফাস্ট।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৫৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অদিতির আত্মবিশ্বাস প্রত্যয় ভাল লাগল :)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:০৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৭

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া
অদিতির জন্য খারাপ লাগছে তার চাইতেও বেশি নীরবের জন্য! আর ফায়সাল কুত্তাকে পেলে তো নিজেই জবাই দিয়ে দিতাম মনে হচ্ছে!!!!!


বাপরে এমন করে লিখেছো!!!!!! সব যেন সত্যি দেখতে পাচ্ছি!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.