নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যান্ড দেন ইট হ্যাপেন্ড

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৯



বাস জার্নিতে আমার কপাল বেশ ভাল। প্রায়ই পাশের সিটে সুন্দরী পাই। আমার এই সৌভাগ্য দেখে আপনি জেলাস ফিল করতে পারেন, তবে কথা সত্য। আমি আসলেই বেশ কপাল নিয়ে জন্মেছি। ইভেন ট্রেন জার্নিতেও এমনটা হয়েছে। দুবার তো গল্প গুজব বেশ রোমান্টিক চেহারা নিয়ে ফেলেছিল। তারপর? নাহ তারপর আর এগোয়নি। আর তাই, এখনও ব্যাচেলার। তবে এলিজেবল ব্যাচেলর।
মনে হচ্ছে অহংকার করছি? বলতে পারেন। তবে আমার বর্ণনা শুনলে, আমার ধারণা আপনি আপনার মত পাল্টাবেন। ওকে। এখন বলুন আমার বর্ণনায় কি কি শুনতে চান? হাইট? গায়ের রং? দেখতে কেমন? আলাদা করে বর্ণনা করতে গেলে মনে করতে পারেন, আত্মপ্রশংসা করছি। তাই কম করেই বলছি, দেখতে আমি খুব খারাপ না। আর যোগ্যতাও নেহাত মন্দ না। যোগ্যতা মানে দুই ধরেনর যোগ্যতার কথাই বলছি। মেয়েদের আকৃষ্ট করবার যোগ্যতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে আমি এমবিবিএস এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান করছি। চিকিৎসকদের যোগ্যতায় যে তিনটি ব্যাপারকে বেঞ্চমার্ক ধরা হয়, তার প্রথমটি হচ্ছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান আছে কি না, দ্বিতীয় হচ্ছে সরকারী চাকরী আছে কি না আর তৃতীয় হচ্ছে সরকারী চাকরীতে তার বর্তমান পদ কি।
এই আলোকে আমার যোগ্যতা অবসহ্যে তেমন আকর্ষণীয় না। ডাক্তারি বা বলা যায় এমবিবিএস পাশ করছি। সরকারী চাকরী এখনও হয়নি। ব্যাপারটাকে অবশ্য আমার অযোগ্যতা বলা ঠিক হবে না। কারণ বিসিএস দেয়ার সুযোগ এখনও পাইনি। সার্কুলার হয়েছে। ফর্ম টর্ম ফিল আপ চলছে। এপরে কি হয়, দেখা যাক। সো সরকারী চাকুরী এবং সরকারী পদ, এই দুটি অযোগ্যতা আমার আছে। তবে বয়সও কম। এবং বিসিএসে ফেল এখনও করিনি। সো, অযোগ্যতাগুলোকে ঠিক অযোগ্যতা বলা ঠিক হবে না। বলা উচিত সম্ভাবনাময় ক্যান্ডিডেট।
এনিওয়ে, গল্পের সারাংশ হচ্ছে, আমি পেশায় ডাক্তার। একটি নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরী করি। যদিও মেডিকেল অফিসার, তারপরও বেতন খারাপ না। এবং এখনও বিসিএস ফেল মারিনি। এই যোগ্যতা বিয়ের বাজারে, মাঝারি অবস্থানে আছে। শুধু এই যোগ্যতায় ভাল কিছু হয়তো জুটবে না, তবে এর সাথে যদি ফ্যামিলি স্ট্যাটাস আর আমার অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার যোগ করা হয়, তবে দূরদর্শী অভিভাবকরা আমার ভেতরে দামী পাত্র দেখতে পারেন।
বাট। এখানে একটা বড়সড় বাট আছে। আর তা হচ্ছে প্রেমের ক্ষেত্রে এসব যোগ্যতা সাধারনতঃ দেখা হয় না। ওখানে যোগ্যতা বলতে প্রথমে আসে মুখশ্রী। নারীর ক্ষেত্রে এই নিয়ম অতীব জরুরী। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে এই নিয়মে কিছুটা শিথিলতা আছে। মোটামুটি চেহারার সাথে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, এই কম্বিনেশানটাও অনেক ক্ষেত্রে কাজে দেয়। আর এই কথাটা বলার জন্যই এই সাতকাহন গাইলাম।
এর আগে যে কবার আমার পাশের সিটে কোন অপরুপা বসেছেন, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই আমি গল্প জমিয়ে ফেলতে সক্ষম হই। আর একবার বিশ্বাস অর্জন হয়ে গেলে, মোবাইল নম্বর কিংবা ফেসবুক আইডি জোগাড় যে তেমন সমস্যা না, তা তো বুঝতেই পারছেন। তেমন বেশ কয়েকজনের সাথেই সখ্য হয়েছে। এখনও আছে, তবে ঐ পর্যন্তই। এর বেশি এগোয়নি। কেন এগোয়নি, তা নিয়ে রিসার্চ করা হয়নি, বাট ওয়ান থিং ইস সিওর, সেই সুন্দরীরা কেউই আমাকে রিজেক্ট করেনি।
এনিওয়ে, এই গল্পের নায়িকা এই মুহূর্তে আমার পাশে বসে আছে। কাহিনী হচ্ছে, আমরা ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছি। বাসে উঠেই দেখি আমার পাশের সিটে বসে আছে এই সুন্দরী। শুধু সুন্দরী বললে কমিয়ে বলা হবে। অপূর্ব ভ্যারাইটির সুন্দরী। যথারীতি মনটা বাকুম বাকুম শুরু করে দিয়েছিল। কিভাবে কি করব, ভাবতে ভাবতে বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। ট্রাজিডি হচ্ছে, কাহিনী কিছুই এগোয়নি। উনি মোবাইল ফোনে গান শুনছেন। এতোটাই মনোযোগে গান শুনছেন, যে চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।
প্রথমবারের মত মনে হচ্ছে ধরা খেতে যাচ্ছি। জার্নি এমনিতেই ঘণ্টা পাঁচেকের। জ্যাম থাকলে অবশ্য কাহিনী আলাদা। আর এই জার্নির মূল জ্যামটা থাকে সাধারনতঃ ঢাকায়। এরপরে টাঙ্গাইল। এরপরে সাধারনতঃ থাকে না। আর কিছুক্ষণের ভেতরেই টাংগাইলে এসে পৌছাব। বাট, এভাবে ঘুমালে তো কাহিনী শুরুই হবে না। কিছু একটা বাহানা খুঁজছি, কিভাবে শুরু করা যায়। কিন্তু জুতসই কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। অন্ততঃ ঘুমন্ত কিংবা চোখ বন্ধ করে গান শুনছেন, এমন একজনকে ডেকে তোলার জন্য শক্ত বাহানা দরকার। বিশ্বাস যোগ্য হওয়া ছাড়াও, সেটাতে আরও একটা ব্যাপার থাকতে হবে। সেই বাহানায় গায়ে পড়া ভাব থাকা যাবে না।
এমন সময় ঘটনাটা ঘটল। বাসটা থেমে গেল। সামনে তাকিয়ে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। বাসটা একটা জ্যামে পড়েছে। গ্রেট। এবার সুযোগ আছে। শুধু চাই জ্যামটা বিরক্তিকর রকমের লম্বা যেন হয়। আরও কিছু তথ্য এখানে দেয়া উচিত। জায়গাটা জ্যামের না। এখনও টাঙ্গাইল আসতে একটু দেরী আছে। এখানে জ্যাম মানে সম্ভবত” জ্যাম বেশ লম্বা। মনটা আনন্দে নেচে ওঠার এটাও একটা কারণ।চাঁদ তারার অবস্থান টবস্থানে তেমন বিশ্বাস করি না, তারপরও মন বলল, ইটস অ্যা গ্রেট সাইন। একটা কিছু ঘটাবার সুযোগ এখন একধাপে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এখন নায়িকা চোখ খুললেই হয়।
বাসের সুপারভাইজার বেশ করিৎকর্মা লোক। দ্রুত মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলল। এরপরে উদ্ভট একটা অফার দিল। অফারটা উদ্ভট হলেও মনটা নেচে উঠল। সুপারভাইজার জানাল, সামনে বিশাল জ্যাম। সামনে কোথাও একটা গাড়ি দুজন ছাত্রকে মেরেছে। মেরেছে মানে আহত না, স্পট ডেড। এরপরে শুরু হয়েছে প্রতিক্রিয়া। রাস্তা অবরোধ। এবং জ্যামের দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এবার সে জানাল
— আপনারা যদি বলেন, তবে একটা কাজ করা যেতে পারে।
সবাই জানতে চাইল কি সেই কাজ। এবার সুপারভাইজার সেই মজার অফারটা দিলেন।
— গাড়ি ঘুরিয়ে আরিচা হয়ে যাওয়া যায়। যদি সবাই রাজী থাকেন, তবে সেটা করা যায়, কিন্তু একটা শর্ত আছে।
সবাই জানতে চাইল কি সেই শর্ত। উত্তরে উনি যা জানালেন তার সারাংশ হচ্ছে, ঐ পথে যেতে হলে দূরত্ব কিছুটা বেশি হবে, যমুনা ব্রিজের বদলে ফেরি পার হতে হবে এবং এসব কারণে খরচ কিছুটা বাড়বে। এই বেড়ে যাওয়া খরচ আমাদেরকেই বহন করতে হবে। যদি আমরা রাজী থাকি, তবে সবাইকেই পঞ্চাশ টাকা করে দিতে হবে। এবং সবাইকেই রাজী হতে হবে, অর্ধেক রাজী অর্ধেক অরাজি, এমনটা হলে হবে না।
যথারীতি ভাঙ্গন দেখা দিল। কেউ কেউ জ্যামে অপেক্ষা করতে রাজী। নসিহত দিল, আরে এটা কোন সমস্যা না। ন্যাশনাল হাইওয়ের ব্যাপার। এখনই মন্ত্রী মিনিস্টার ইনভলভ হয়ে যাবে। ছাত্রদের আশ্বাস টাস্বাস দিবে। তারপরে একবার অবরোধ উঠে গেলে, জ্যাম ছাড়তে সময় লাগবে না। অন্য গ্রুপের বক্তব্য উল্টো। এসব অবরোধ পাঁচ ছয় ঘণ্টার আগে থামে না। ঘটনা যেহেতু কিছুক্ষণ আগে ঘটেছে, তাই এখানে থাকা মানে ছয় ঘণ্টা জ্যামে আটকানো।
সুপারভাইজার আরও জানাল যে সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হবে। গাড়ির লাইন লেগে গেলে গাড়ি রিভার্স করা সমস্যা হয়ে যাবে। ব্যাপারটায় কিঞ্চিৎ চালাকি আছে। কারণ ড্রাইভার খানিকটা ফাঁকা যায়গায় গাড়িটা রেখেছে। সে সম্ভবতঃ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ঐ পথেই যাবে। এখন নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে যেন সিদ্ধান্তটা দ্রুত আসে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে ঐ সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয়া। আর ড্রাইভারের কাজ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে সাথেই আরিচা রোডে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়া যায়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি কিছুটা কনফিউজড। কোন পথে গেলে এই অপরূপার সাথে একটু বেশি সময় থাকা যাবে। ভাগ্যের ওপরে নিজেকে ছেড়ে দিলাম। দেখা যাক কি হয়। বেশ কিছুক্ষণ তর্ক বিতর্ক চলল। যুক্তি তর্কের রীতিমত ঝড় বয়ে চলল। মূল সমস্যা সম্ভবতঃ এক্সট্রা পঞ্চাশ টাকার কারণে তৈরি হয়েছে। সেটা দিতে অনেকে নারাজ। বাকী ব্যাপারে কারো তেমন আপত্তি নেই। এক পথে গেলেই হল।
সুপারভাইজার বেশ অনুনয় বিনয় শুরু করলেন। তাগাদা দিলেন। বেশি দেরী করলে ফেরি পেতে সমস্যা হবে। যমুনা ব্রিজ হওয়ার পরে ফেরি পথে যাওয়ার অভ্যাস আমাদের ঢাকা রাজশাহী যাত্রীদের নেই বললেই চলে, ফলে ফেরি ঘটিত জটিলতা নিয়ে সুপারভাইজারের বক্ত্যব্যের সত্যটা যাচাই করবার উপায় নেই।
মিনিট দশেক বিতর্ক চলার পরে, একদল রণে ভঙ্গ দিল। সুপারভাইজারের দেয়া ফর্মুলা মেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত হল, আমরা সবাই এক্সট্রা পঞ্চাশ টাকা দিব আর আরিচা নগরবাড়ী পথে, ফেরি পারাপার করেই আমরা রাজশাহীর পথে এগিয়ে যাব।
চলবে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১২

আন্ধার রাত বলেছেন:
:)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:

আমি তো মনে করেছি, কোরবাণীর দিন ছাগল টাগল বনে পালিয়ে যায়

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩০

ইরিবাসের রাত বলেছেন: ভাল জায়গায় আইসা থামায়া দিলেন, একেমনতর বিচার? X( অপেক্ষায় রইলাম

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা

দারুন!

++++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.