![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ মা দিবস। পৃথিবীর সব মাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমার মা বেঁচে নেই। আমার মতো যারা মা হারা তাদের সবাইকে সমবেদনা জানাই। আমি কখনো মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ছিলাম না; হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই ক্ষমতা চলে গেলে মানুষ কতোটা অসহায় হয়, দুর্বল হয়, আমি জানি না। তবে মা চলে গেলে মানুষ যে সবকিছু হারিয়ে ফেলে তা বুঝতে পারি। তাই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি মাকে আমরা মাথার ওপর স্থান দিতে চাই, হৃদয়ের গভীরে লালন করতে চাই। মা ছিলেন তাই আমি, মা ছিলেন তাই আমার আত্মপ্রকাশ এই বড় সত্যকে সামনে রেখে বলতে চাই, আমাদের এই দেশও তো আমাদের মা। একজনার-দুজনার নয়, কোটি কোটি মানুষের মা। এই মাকে আমরা পেয়েছি ১৯৭১ সালে, জয় করেছি নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামে।
কিন্তু তারপর মায়ের প্রতি অযত্ন-অবহেলা, মায়ের বুক খালি করে ব্যক্তির প্রতিষ্ঠা, আমরা দিনে দিনে মাকে মাসি বানিয়ে ফেলেছি। এই মাসি নিয়ে মাসি-পিসি খেলতে গিয়ে আমাদের ওপর এসেছে বিপর্যয়। এসেছে বিশৃঙ্খলা। এসেছে অবিশ্বাস। এসেছে অসম্মান। যেই জাতির জনক এ দেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছেন তাঁকে আমরা সপরিবারে হত্যা করেছি। যেই সাহসী সৈনিক স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ থেকে দেশ পরিচালনায় অবদান রাখলেন তাঁকে আমরা নির্মমভাবে হত্যা করলাম। নয় মাসের স্বাধীন দেশ, নয় বছরে যিনি অনেক উন্নয়নের উদাহরণ রাখলেন তাকে দেখলাম স্বৈরাচারী হতে। জাতির জনকের যিনি কন্যা, পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদি প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখলাম অভিযুক্ত হতে, হয়তো পারিপার্শ্বিক কারণে অথবা পিতার মতো নিজের উদারতা ও ভুলের কারণে। আর একজন একাধিক মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী, সেনানায়ক-রাষ্ট্রনায়ক পতির পতœী, যার ভালো কাজগুলোও আজ নন্দিত হলো না পুত্র, পুত্রবন্ধু ও কতিপয় অতি নিকটজনের জন্য।
৩৭ বছরের একটি পূর্ণবতী দেশ আমাদের, মা আমাদের, মাতৃভূমি আমাদের দেশ-বিদেশে সবার কাছে আজ মাসি হওয়ার উপক্রম। ১৯৭৫ সালে একবার ঝড় উঠেছিল, ১৯৯০ সালে আর একবার ঝড় উঠেছে কিন্তু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যেই ঝড় তা মহাসমুদ্রে পুরো জাহাজটি ডুবিয়ে দেয়ার মতো, প্রলয় সৃষ্টির মতো সবকিছু নিশ্চিহ্ন হওয়ার মতো, কিন্তু যাদের মনে দেশপ্রেম আছে, যারা মাকে মা হিসেবেই দেখতে চায়তারা এগিয়ে এলো। নির্ধারিত নির্বাচিত কয়েকজন মানুষ প্রচ- ঝড়ো হাওয়ায় জাহাজের হাল ধরলো অথবা বলা যায় ধরতে বাধ্য হলো। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল, এই অবস্থার পরও দেশের কিছু মানুষ দেশকে বিপদমুক্ত করতে চায় না। নিজেদের যতো ত্রুটি তা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে চায় না। ব্যবসায়ীদের মুনাফার লোভ, সুবিধাভোগীদের সুবিধাপ্রাপ্তির লালসা, দুর্নীতিবাজদের নতুন কৌশলে দুর্নীতি অব্যাহত রাখা সবই চলছে। লাগাম শক্ত হাতে কবে কে ধরবে অথবা ধরতে পারবে আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু প্রত্যাশা করবো, ‘বাংলাদেশ’ নামের আমাদের মা যেন আমাদের কাছে চিরকাল মা হিসেবেই সম্মানীয়, বরণীয়, পূজনীয় হয়ে থাকে। উন্নতি, সমৃদ্ধি, সততা ও সফলতায় উজ্জ্বল হয়। কখনোই যেন সে মাসি না হয়ে যায়।
©somewhere in net ltd.