![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি ... ফাগুন প্রাতের উতলা গো চৈত্র রাতের উদাসী
- শাহবাগে গিয়েছিলে?
- গিয়েছিলাম।
- কবে?
- শান্তনু বিশ্বাসের গানটা শুনেছ?
- শান্তনু বিশ্বাস কে?
- ঠিক আছে, শোন নি। কয়েক লাইন শোনাইঃ
জাদুঘর আর আজিজ সুপার আর শাহাবাগ মোড়
বই মেলা আর একুশের শোক
ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা তুখোড়
খুঁজে বেড়ায় সন্ধানী চোখ;
সব কিছু ঠিক যেমন ছিল তেমনি সবই আছে,
শুধু তুমি নেই, শুধু তুমি নেই, শুধু তুমি নেই...।
- এর মানে কি?
- তুমি ও পাড়া ছাড়ার পর থেকে আর যাই না।
- আহা, আমার দেবদাস! তুমি জানো আমি কি বলছি। সবাই গেছে, এটা কত বড় একটা ঘটনা। অন্তত কৌতূহলেও তো যেতে পারতে। আর তুমি তো কোন দিন ঈদের নামাজ পড়তেও যাও না, জামাতীদের জন্য এত দরদ কেন?
- যুদ্ধ অপরাধীদের জন্য আমার কোনই দরদ নেই। তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।
- তাহলে? সবার থেকে আলাদা হয়ে গেলে কেন?
- তোমার সাথে ব্রেক-আপের পর আমার পৃথিবী খুবই ছোট, বহু আগেই সবার থেকে আলাদা হয়ে গেছি। ঘরে বসে অংক করি খালি, অনেক শান্তি।
- বাজে বকো না। আগেও তুমি অংকই করতে। আমি ঘরে ঢুকলেও টের পেতে না। সতীনের সাথে ঘর করতে হয় নি, বেঁচে গেছি। এখনো তো অংকই করছ।
-হ্যাঁ, রীমানের কঞ্জেকচার। পৃথিবীর সব চেয়ে বিখ্যাত অংক সমস্যা । একটা বিশেষ কমপ্লেক্স ফাংশন যেখানে যেখানে শূন্য হয়ে যায় সেই বিন্দুগুলো একটা রেখার ওপরে। এটা কেউ প্রমাণ করতে পারে না। পারলে এক মিলিয়ন ডলার পুরস্কার, আর অনন্তকাল খ্যাতির গ্যারেন্টি।
- হুঁহ, তুমি সারাজীবন অংকে একশ পেয়েছ বলেই এটা করতে পারবে মনে কর?
- না তো, এক বারও ১০০ পাই নি। শুনেছি সত্যেন বসু স্কুলে থাকতে একবার একশ তে একশ দশ পেয়েছিলেন। শুনে আমার যা হিংসে হতো। আমি সব সময় ৯৭ থেকে ৯৯ পেতাম।
- টেন্ডুল্কার ব্যারাম? নার্ভাস হয়ে ছোটখাটো ভুল করতে?
- না। আমার হাতের লেখা পচা ছিল। বোধ হয় সেই জন্যেই। বাদ দাও আমার গল্প। তুমি শাহবাগে ক'বার গেলে।
- আমি গেছি কে বলল তোমাকে।
- হা হা, আমি তোমাকে কত বছর চিনি। এক কালে সবার চোখ কাড়া আধুনিকা মেয়ে, এখন তুমি যতই নামাজ পড়, রোজা রাখো, হয়তো সায়েদীর সিডি করা ওয়াজও শোন, ঐ যে বললে কৌতূহল। ওটা তোমাকে ছাড়বে না। তোমার স্বামী জানে যে তুমি গিয়েছিলে?
কিছুক্ষণ চুপ।
- না, ও নাস্তিকদের একেবারেই পছন্দ করে না। এক রাকাত নামাজও মিস করে না। ব্লগে এই যে নবীজী সম্বন্ধে নোংরা সব লেখা আছে, ও দেখেছে। একবার চেঁচিয়ে বলেছিল - এদের ওপর আল্লহর গজব পড়ুক। একজনকে এত নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলল, কিন্তু ওকে দুঃখিত দেখলাম না। অবশ্য ব্লগটা আমি দেখেছিলাম। খুবই জঘন্য।
- শাহবাগের জনসমুদ্রে নাস্তিক বেশি নেই। ৭১এও ধার্মিকরাই পাকিদের বিরুদ্ধে লড়েছে বেশি। ধার্মিকদের আমি খুব হিংসে করি।
- কেন?
- কারণ তারা অনেক কষ্টেও একটা আশা নিয়ে জীবন কাটাতে পারে, যে পরে বেহেশতে যাবে, অনেক আরাম আয়েশে দিনের পর দিন কাটবে। এত হুর-পরী! তুমি তো আমার অংককেই সতীন ভাবলে। কি করবে ওপারে এত সুন্দরী প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে? অবশ্য তোমার চাইতে সুন্দরী হুর-পরী কিভাবে বানানো সম্ভব তাও আমার মাথায় আসছে না।
- হুঁহ, এখন আর এসব মন-ভোলানো কথা বলে লাভ নেই, আর ধর্মের কথা তোমাকে বুঝিয়েও লাভ নেই। মৌলানারা বলেছেন নেক মহিলারা নিজেই অনেক রূপ নিয়ে স্বামীর সাথে থাকবে।
- সব জায়গায় কি একের সাথে এক মেলানো যায়? বর্গমূল করলে একটা সংখ্যা থেকে দুটো বেরিয়ে আসে। ননলিনিয়ার ম্যাপিং করলে অনেক রুট হতে পারে।
- তোমার সাথে কথা বলা খুবই বিরক্তিকর, খালি অংক আর অংক। আসলেই খুব বেঁচে গেছি।
- ঠিক আছে, এসব কথা বাদ। আসলেই ধর্ম নিয়ে কথা বলা বিপজ্জনক। যে পক্ষেই যা বলি না কেন, কেউ না কেউ রাগ করে। তবে এটা বলতে পারি যারা সত্যি নিজের মনের শান্তির জন্য ধর্ম কর্ম করে তাদের আমি খুব শ্রদ্ধা করি, তোমাকেও করি।
- ফাজলামো পেয়েছ, তুমি আমাকে এখন শ্রদ্ধা কর, বড় বোনের মত , না খালাম্মার মত?
- হা হা, বেগানা পুরুষের কাছ থেকে তো শ্রদ্ধাই আশা করা উচিত।
-তুমি মানুষকে কনফিউজ করে দিতে খুব ভালোবাসো। আসলে কেন শাহবাগে যাও নি, একটু বোঝাও আমাকে।
- পলাতক বাচ্চুকে ফাঁসীর আদেশ দিয়ে যখন কাদেরকে শুধু যাবজ্জীবন দিল, তখন আমার মনে হলো কি এক প্রহসন হচ্ছে, আর এটা সরকারের ইচ্ছাতেই। ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হলো যখন স্বাচিপের এমরান এজন্য সরকার, আওয়ামী লীগ, বিচারক বা সরকারী উকিল কাউকে দায়ী না করে শুধু "সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী চাই" বলে চেঁচাতে লাগল। এমন কি চার বছরের শিশুকে দিয়েও এই কথা বলাচ্ছিল, যেন এটা একটা বেশ বিনোদনের ব্যাপার। সবার অপরাধ কি সমান? আওয়ামী দলে যুদ্ধাপরাধী নেই? তখন আমার মনে বিরক্তি এলো। যদি বলত- "ন্যায় বিচার চাই', যদি সরকার বা বিচারককেও দোষ দিত, তাহলে হয়তো যেতাম।
- তোমার অফিস থেকে যেতে বলে নি?
- হ্যাঁ, আমার বস বাকি সবাইকে নিয়ে গেছে।
- তোমার ওপর রাগ করে নি সবাই?
- কিছুটা বিরক্ত হয়েছে হয়তো, কিন্তু আমাকে সবাই ভয় পায়। সবাই জানে আমি কোনো দল করি না। আমি সৎ, আর সেটাই আমার ধর্ম আর শক্তি।
- তুমি সৎ?
- সন্দেহ আছে?
- মিথ্যা কথা। তাহলে একবার অন্তত আমাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে। কিন্তু তুমি চুপ করে রইলে। আমার বিয়েতে খুব আনন্দ দেখালে। আমার বাবা নিশ্চিত হলেন বাড়িতে যে পাগলাটে ছেলের কথা সারাক্ষণ বলতাম, সে কোনো গোলমাল করে এত ভালো পাত্রের সাথে বিয়েটা নষ্ট করার চেষ্টা করবে না।
- বলো কি হইবে জেনে/ ত্রিভুবনে আর যাহে নাই উপকার/ একমাত্র শুধু যাহা নিতান্ত আমার/ আপনার কথা! তুমি সুখী হবে। তোমার বর তোমাকে খুব পছন্দ করে। তুমি খুব ভালো, সরল। আমি জটিল, সংসারে মনোযোগ দিতে পারতাম না।
- আমার বোধ হয় তোমার কাছে আসা উচিত না। মনটা কেমন হয়ে যায়। এটা হারাম।
- তোমার স্বামীর আপত্তি থাকলে এসো না। হা হা, যদি বলে হেজাব পরে আসতে, তাই এসো। আমি না হয় তাকাবোই না। তবে শাহবাগে নিশ্চয়ই দেখেছ হাজার হাজার ছেলে মেয়ে এক সাথে অঘটন ছাড়াই ২৪ ঘন্টা কাটায়। এটাই শাহবাগের সব চেয়ে বড় কৃতিত্ব। স্বাধীনতার পর পরেই ১৯৭২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে কয়েকজনের নির্দেশে শহীদ মিনারের সব বাতি অফ করে দেয়া হয়েছিল, ঘটনা ঘটেছিল।
- যাই। তুমি শাহবাগে তাহলে যাবে না?
- নাহ। তুমি তো জানোই আমার অনেক এলার্জি আছে, দুধ, গরুর মাংস, ডাল, টমেটো, বাদাম, ঠান্ডা। অনেক এঞ্জাইম তৈরীর জীন বাদ পড়ে গেছে। আমার মাথার নিউরাল নেটেও ঘাটতি আছে, নিকৃষ্টতম মানুষকেও ঘৃণা করতে পারি না। অথচ ঘৃণা সৃষ্টি করা ভালোবাসা প্রচারের চাইতে অনেক সহজ।
- ঐ গানটা একটা পেন-ড্রাইভে দেবে? না, থাক, শুনলে আবার আমার স্বামী কিছু মনে করবে। ব্রেক-আপের গান শুনে কি লাভ!
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৫
উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: কঠিন গল্প!
আপনে কি ম্যাথের না ফিজিক্সের`?
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: ৭২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে কী হইসিল? জানা নাই।
৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২৩
হাঁড় = ঘাঁড় বলেছেন: এই পুস্টে কিছু গবীড় মেছেঝ আছে। পুস্ট শেয়ার শুরু হইল বইলা...
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৫
অনার্য পথিক বলেছেন: কী অদ্ভুদ, একেবারেই অদ্ভুদ। একেবারে নতুন বিষয় নিয়ে গল্প হয়ে উঠা খুব কঠিন কাজ। রসদ নিয়ে আরো ভাবলে গল্প চিরস্থায়ী হতো।