![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি ... ফাগুন প্রাতের উতলা গো চৈত্র রাতের উদাসী
দরজায় কে বেল টিপেছে। বিরক্ত লাগল। কিছুক্ষণ আগে এক বইএর সেলসম্যান এসেছিল। চমৎকার রঙীন ছবিওয়ালা বই, জ্ঞান বিজ্ঞানের। আমাদের ছোটবেলায় এশিয়ান ফাউন্ডেশন থেকে এনে কিছু পড়েছিলাম। আসলে বিজ্ঞানে প্রথম মন আকর্ষণের জন্য এ রকম বই ভালো উৎপাদক হতে পারে। দাম খুব সঙ্গত, নিজে থেকেই বলল; কিন্তু এখন এ বাড়িতে এমন কেউ নেই যার জন্য এ সব কাজে লাগতে পারে। নাছোড়বান্দা বিক্রেতা, বলতেই থাকল মুখস্থ বক্তৃতা - নিজের জন্য না হলেও ভাগ্নে-ভাগ্নীর জন্য নেয়া উচিত। তারা খুশী হবে। তাদের লেখাপড়ায় মন আসবে, এই সব। সবিনয়ে জানাতে হলো আমার বেশিরভাগ আত্মীয়রাই বিদেশে। দরজা বন্ধ করে একটু চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলাম, ছেলেবেলার কথা কিছু কিছু মনে আসছিল।
ঘন্টা শুনে উঠতে হলো। বিরস মুখে দরজা খুলে দেখি, ও মা, এক সর্বাঙ্গঢাকা মহিলা। বোরকার ফাঁক দিয়ে শুধু চোখের কালো মনি দেখা যাচ্ছে। বেশ লম্বা।
খুব সরু নিস্তেজ গলায় বললেন - আপনার বাড়িতে কি কোন মহিলা আছে?
- না তো। আমি একা।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
- তাহলে তো আর কথা বলার কেউ নেই। কিছু মনে করবেন না, আপনার ওয়াশরুমটা কি দু মিনিটের জন্য ব্যবহার করতে পারি?
সেরেছে। আবার কি বিপদে ফেলে। এবার আরো ভালো করে তাকালাম। বোরকার কাপড় বেশ ভালো কোয়ালিটির, ডিজাইনও চমৎকার, যদিও বেশ ঢিলা, হাল ফ্যাশনের টাইটফিটিং না। পায়ের জুতোজোড়া বিদেশী এবং মনে হলো দামী। একটু ভাবলাম। আমার ঘরে ল্যাপ্টপও নেই, শুধু বিশাল ডেস্কটপ। লোহার আলমারিতে হাজার দশেক টাকা আছে বটে, সেটা খোয়া গেলে কোন বিরাট অঘটন হবে না।
- ঠিক আছে , আসুন।
আমি দরজার বাইরে চলে এলাম। তিনি ভিতরে ঢুকে গেলেন, আমি হাত দিয়ে দিকটা দেখিয়ে দিলাম, কিন্তু তিনি মনে হলো আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। ঠিকই খুঁজে পেলেন।
দু মিনিট পরে বার হয়ে এসে সোফাতে বসলেন আরাম করে। আমি ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে বললাম, এবার একটু কড়া কন্ঠে।
- আমার বাড়িতে কেউ নেই। আপনি বসলেন কেন বুঝতে পারছি না।
তিনি আবার সেই সরু শান্ত কন্ঠে বললেন।
- আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
এবার ভয় পেলাম।
- তাহলে আপনি আসলে আমার কাছেই এসেছেন? কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না। আমার কাছে আপনার কি প্রয়োজন? অফিশ্যাল কোন ব্যাপার থাকলে অফিসে আসুন।
- কারণটা খুবই ব্যক্তিগত। আপনি আমাকে চেনেন না, কথাটা ঠিক। কিন্তু আমি আপনাকে ভালো করেই চিনি।
কি বিপদ, এর উদ্দেশ্য খারাপ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। বাড়ি থেকে পালাবো? আমি দরজার দিকে এগুলাম। অমনি তিনি দ্রুত উঠে এসে দরজা বন্ধ করে লক লাগিয়ে দিলেন।
আমার গলা শুকিয়ে গেল। এ সব ঘটনা কাগজে মাঝে মাঝে পড়ি বটে, কিন্তু নিজের জীবনে ঘটবে কখনো কল্পনা করি নি।
এবার গলা বদলে গেল। রাম ধমক।
- বসো। সারাজীবনই তো কাপুরুষ থেকে গেলে।
মুখ ঢাকা কাপড়টা তুলে ফেলল।
স্বস্তির সাথে আমার ভীষণ রাগও এলো।
- এ সবের মানে কি!
- তোমার চরিত্র পরীক্ষা করছিলাম। দেখলাম একা একটা মেয়েকে দেখে তুমি কি কর।
- বোরকার ভেতরে কি করে বুঝব বয়স কত। গলার স্বরও বদলেছ। এই পরীক্ষা নাল এন্ড ভয়েড। আমি ভালো মানুষ না। নায়ক যখন হতে পারি নি, অবশ্যই ভিলেইন।
- ভীতুর ডিম। তুমি হবে ভিলেইন!
- "রাবন" দেখেছ? সেখানে ভিলেইনই হিরো। নায়িকাকে এতদিন হাতে পেয়েও ছুঁলো না।
ওর মুখ থেকে হাসিটা চলে গেল।
- দেখেছি। কষ্ট লাগল। কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করল তার সাথে। এর পরে রাম-সীতা সংসার করতে পারবে?
- রামায়নেও পারে নি। অগ্নিপরীক্ষার পরেও না। আমাদের নেতারা অনেক ভালো। তাঁরা পরিবারের জন্য দেশের মানুষকে বিসর্জন দেন।
- আমার সাথে রাজনীতির আলোচনা করবে না। তা তুমি ঘরে বসে কি করছ?
- পুরোনো স্মৃতির রোমন্থন করছি। তুমি এই গরমে বোরকা পরে ঘুরে বেড়াও আজকাল? খোলো তো।
- না খুলব না। এভাবেই থাকব আর চলে যাবো, কয়েক মিনিট পরে।
- এসেছ কেন তাহলে?
এবার ওর মুখে অনেক বিরক্তি।
- তুমি কোনো খোঁজ খবর রাখো না। নববর্ষে একটা এস এম এস ও পাঠাও নি।
মিথ্যাই বলতে হলো। হৈমন্তী, অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মত বিড়ম্বনা আর নাই।
- সরি, সময় পাই না। অফিসের কাজ বাড়িতেও করতে হয়। আর আমি এক সাথে ছ'টা কোরসেরা কোর্স করছি।
- সেটা আবার কি কোর্স?
- ইন্টারনেটে বিভিন্ন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের মজার মজার সব কোর্স। দু'তিন মাসের এক একটা। প্রতি সপ্তাহে শক্ত কুইজ সল্ভ করে সাবমিট করতে হয়। মিডটার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়। পরে একটা সার্টিফিকেট দেয়।
কিন্তু পরীক্ষার কথা উঠলেই ওর মন খারাপ হয়ে যায়। ভুলে গিয়েছিলাম, নিজের বাহাদুরী দেখাতে গিয়ে।
- তুমি তো নিজেকে সবজান্তা মনে করতে। নতুন কি শিখলে?
আমার মধ্যে এবার নবলব্ধ জ্ঞান দেখাবার ইচ্ছে হলো।
- তোমার কাছে কিছু পয়সা আছে?
ও অবাক হয়ে তাকালো।
- আজকাল দশ টাকার নিচে কেউ কাউকে কিছু দেয় নাকি। পয়সা কোথায় পাবো?
- কিছু মারবেল পেলেও চলত।
হঠাৎ ও বোরকার ভেতরে হাত দিয়ে কি জানি বের করে এনে টেবিলে রাখল। গলার মালা ছিঁড়ে বীডগুলো।
- ছিঁড়লে কেন।
- আবার গেঁথে নেব পরে। দেখাও কি দেখাবে?
আমার খারাপ লাগল কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে।
- এই পুঁতিগুলোকে আমি কয়েকটা ভাগে ভাগ করে রাখলাম, সমান বা অসমান । এবার ধর যে কোনো এক ভাগ থেকে তুমি কয়েকটা সরিয়ে রাখলে। পরের দানে আমি সেই ভাগ বা অন্য ভাগ থেকে কয়েকটা সরালাম, তারপরে আবার তুমি। যে শেষ পুঁতিগুলো নিয়ে যাবে সে এই খেলায় জয়ী। খেলার নাম নিম। দুজনই ভালো খেললেও কে জিতবে আগে থেকেই বলে দেয়া যায় বাইনারী অংক করে। যদি একটা মাত্র ভাগ থাকে, তাহলে প্রথম জনই সবগুলো তুলে নিয়ে জিতবে। এ ধরণের যেসব কম্বিনেটরিয়াল খেলায় প্রথম খেলোয়ার জিতবেই, সে খেলার মান কে * বলে। যে খেলায় দ্বিতীয়জন জিতবেই সেখেলার মান ০। দুটো * যোগ করলে ০ হয়, অর্থাৎ দুটো ভাগ থাকলে দ্বিতীয় জন জিতবেই। এই সব। কোর্সের নাম কম্বিনেটরিয়্যাল গেইম থিওরী।
- এটা শিখে কি লাভ। এ ধরণের খেলা কাউকে খেলতে দেখি নি।
- আসলে লাভ লোকসানের কথাটা ভেবে দেখি নি। তবে এই * সংখ্যাটা এক নতুন জিনিস শিখলাম। কোথাও দেখিনি কোন সংখ্যা নিজের সাথে যোগ করলে, মানে দ্বিগুণ করলে ০ হয়। একে তাই কেউ কেউ আজকাল পরাবাস্তব সংখ্যা বলে। এক সময় মাইনাস ১ এর বর্গমূলকে i অর্থাৎ কাল্পনিক সংখ্যা বলত। এখন তো ইঞ্জিনিয়াররাও হরদম ব্যবহার করে। কে জানে কোনো দিন হয় তো এই জাতীয় পরাবাস্তব সংখ্যারও প্রয়োগ দেখা যাবে।
ও উঠে দাঁড়ালো, মুখের সামনের পর্দা আবার ঢেকে দিল।
- ভালো, তুমি তোমার পরাবস্তব নিয়েই থাকো। সেখান থেকে মহাশূন্যে পৌঁছে নির্বানের শান্তি পাবে।
আমি ওর কাছে এসে দাঁড়ালাম।
তোমার ডেট কবে।
হঠাৎ চমকে উঠল।
- কি করে বুঝলে?
হাসলাম। - আমি তো সবজান্তা। কোমড় আর ২৩ ইঞ্চি নেই, এটা ঢেকে চলার কোন প্রয়োজন নেই। রেনেসার পেইন্টিং দেখলে বুঝবে সুন্দরীর সংজ্ঞায় কোমড়ের মাপ নেই। মাতৃত্বের একটা আলাদা রূপ আছে। এঞ্জয় ইট।
আরো কাছে এলো ও। মুখে হাসি, চোখ উজ্জ্বল। আমার হাতটা বোরকার ওপরেই নাভির কাছাকাছি ছোঁয়ালো।
- দেখ নড়ছে। যাদের আমরা সবচেয়ে ভালোবাসি, তারাই সবচেয়ে জ্বালাতন করে।
**
তিন সপ্তাহ পরেই কল। কি কান্না!
- থাকল না। তোমার কাছে আমার যাওয়া উচিত হয় নি সেদিন। এত দিন এত কষ্টে তিল তিল করে পেটে বড় করলাম, কি অভিমানে চলে গেল!
২| ৩১ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১
হাসান মাহবুব বলেছেন: শুরুতে নাটকীয়তা এল, পরে রোমান্টিক সংলাপ এল, এরপর ম্যাথমেটিকাল টার্ম, তারপর ট্রাজেডি এল, কিন্তু পাঠক আসলে কী পেল!
৩| ০১ লা জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩
সাপিয়েন্স বলেছেন: এই লেখার জন্ম কয়েকটা অসমতার সমন্বয়ে।
নাটকীয়তা এসেছে ইনফরমেশন এসিমেট্রি থেকে। সামজিক মিথস্ক্রিয়ায় "যে জানে" তার এডভান্টেজ। ব্যবসা ও অনেক খেলায় তাই। এখানে প্রাথমিকভাবে লঘু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য, যদিও ব্যাপারটি সর্বক্ষেত্রে মজার বিষয় নয়।
রোমান্টিক সংলাপে অসমতা আছে। ছেলেটা ভুলে যেতে চায়; যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে শূন্য, তা থেকে সরে দাঁড়াতে চায়। রামায়ণের উল্লেখ করেও সে নিজের মধ্যে এক দুর্বল রাম ও সুশীল রাবণের মিশ্রণের কথা ভাবে। পরাবাস্তব সংখ্যা * কে ফাজি সংখ্যাও বলা হয়, কারণ তা বিভিন্ন প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রূপ নিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েটা তার প্রথম মনস্তাত্ত্বিক পুরুষকে ভুলতে পারে না। তাকে বহু মাস পরে দেখতে শারীরিক সতর্কতার প্রয়োজন উপেক্ষা করেই এসে উপস্থিত। মেয়েরা জীবনের সব চেয়ে বড় পরিবর্তনের পরেও পুরোনো দিনের কিছু কিছু জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখতে যায়। তবে মাতৃত্ব সবার ওপরে। সন্তানটি রাম বা রাবণ কারো নয়, তার নিজের, যে তার জীবনের অবলম্বন হবে তার আশা ছিল।
গেম থিওরীর উইন-উইন থেকে শূন্যতে চলে আসার টেকনিকাল প্রাসঙ্গিকতা না হয় না-ই ব্যাখ্যা করলাম। ওটা আমার ডিজিটাল সিগ্নেচার হয়েই থাক।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০০
ইউক্লিড রনি বলেছেন: লিকচেন তো ভালাই,