নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যভুবন

তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়

সাপিয়েন্স

আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি ... ফাগুন প্রাতের উতলা গো চৈত্র রাতের উদাসী

সাপিয়েন্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহমদ শফির প্রকৃত বক্তব্য

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৫



ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। বেশ কড়া সিকিউরিটি। দরজাতে অনুমতি নিতে হলো।

- উনি কি আছেন?

আমাকে এক নজর পরীক্ষা করে দেখল। হাতে কিছু নেই। খুব গোবেচারা চেহারা দেখেই হয়তো বেশি ঝামেলা করল না। তবু ইন্টারকমে কি জানি বলে এলো।

- ঠিক আছে। যান।

- আমি তাঁর বাস-এলাকার দরজার কাছে এসে বেল বাজালাম। কে জানি দরজা খুলে দিয়ে চলে গেল। বলল-

- বসেন। উনি আসতেছেন।

এক মিনিট পরেই তিনি এলেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম।

- আস সালামু আলায়কুম।

কিন্তু তিনি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কি জানি মৃদুস্বরে বিড় বিড় করে বললেন।

-বসুন।

আমি সঙ্কুচিত হয়ে বসলাম। তিনি উল্টোদিকের চেয়ারে আরাম করে বসলেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করলেন। তারপরে আবার খেয়াল করলেন আমি আছি সামনে।

- ও, দুঃখিত। আমাদের পরিচয় হয় নি।

- আমি একজন এমেচার লেখক। চার দিকে এত হৈচৈ শুনছি - কঠোর সমালোচনা চলছে। ভাবলাম একবার স্বকর্ণেই শুনে আসি। যদি আপনি বেয়াদবী মনে না করেন।

- মানে? কি বিষয়ে শুনতে চান?

- মানে অনেক কথা তো লোকে সহজে গ্রহণ করছে না। আপনার অনেক বক্তব্য নাকি এমন সব ইস্যু নিয়ে, যা মোটেই আধুনিক চিন্তা-চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তাঁর মুখ একটু মলিন হলো।

- তা হতে পারে। বর্তমান বিজ্ঞানের অনেক কিছু থেকেই আমি বিচ্ছিন্ন, আর অনেক কিছুর সাথে একমত নই। আমার মনে হয় বিজ্ঞান গত কয়েক বছর ভুল পথে চলছে।

-যেমন?

- যেমন কেউ কেউ বলেই যাচ্ছেন সমস্ত পৃথিবীর সব কিছু সূক্ষ্ণ সূতা দিয়ে তৈরী। আমি এটা আগেও বিশ্বাস করতাম না, এখনো করি না। আজকাল অবশ্য অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী আমার মতই এ ধরণের বিজ্ঞানে অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। আবার ধরুন এক সময় বলা হতো বিশ্বের কোন শুরু বা শেষ নেই, তখন তাতেও আমার বিশ্বাস ছিল না। এখন তো দেখাই যাচ্ছে তা সম্ভব না।

- এই সব জটিল ব্যাপারে আমার বা আমার পাঠকদের তেমন জ্ঞান নেই, আগ্রহও নেই। আমি আপনার সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই।

- আমার সাম্প্রতিক বক্তব্য মানে?

- অনেকে মনে করে আপনি নারীদ্বেষী।

- বলেন কি। এটা ডাহা মিথ্যা।

-আপনি মনে করেন নারীদের ঘরের ভেতরে থাকা উচিত।

তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।

- যা অবস্থা করেছে দেশের। সবারই ঘরের ভেতরে থাকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

-মানে?

- কেন আপনার কি ঘুরতে খুব আরাম লাগে? গরম, ট্রাফিক জ্যাম, মোড়ে মোড়ে ভিকিরীর উৎপাত...

- না, না তা না। আপনি নাকি বিশ্বাস করেন মেয়েদের গার্মেন্টসে কাজ করা উচিত না।

- কথাটা সেভাবে তো বলি নি। যেভাবে গার্মেন্টসে আগুন লাগে, ভবন ধসে যায়, নিরাপত্তার ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক না করলে বিপদজনক যে কোন কাজের জায়গায় নারী-নর কারো-ই কাজ করা উচিত না।

- আপনি কি মনে করেন নারীদের মেধা কম?

- হুম, এমন কিছু কথা আমেরিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানরা বেশ কয়েক বছর আগে বলেছিলেন বটে। তার প্রতিক্রিয়া ভালো হয় নি। সবার চাকরী গেছে, সেখানে এখন মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তবে এটা ঠিক মহিলারা কেন অংকজাতীয় বিষয় কম পড়ে আমি জানি না। তবে তারা জীববিজ্ঞানে অনেক ভালো, এতে মনে হয় প্রাণবন্ত জিনিসের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশী।

- অর্থাৎ তাদের ঘর সংসার করাই ভালো?

- কি বলছেন? ছেলেরা কি ঘর-সংসার করে না? বাড়ির যত রিপেয়ার কাজ ছেলেরাই বেশি করে। বাজারও করে।

- আপনি ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা পছন্দ করেন না?

- অনেক সময় করি না। আপনি কার্জন হলে গেলে দেখবেন, জোড়ায় জোড়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডাবাজি করছে। কখনো দেখবেন না, দুটি ছেলে বা দুটি মেয়ে অতটা সময় আলাপচারিতায় ব্যয় করে। মোবাইলেও তাই। তার ওপরে এসেছে ফেসবুক। মেয়েগুলো ঘন্টায় ঘন্টায় নিজের নতুন নতুন ছবি দেয়, ছেলেরা তা দেখে "ওয়াও" বলে। এই ছবিতোলা, আর ফেসবুক ব্যবহারের সময়টা লেখাপড়া করলে অনেক ভালো কাজে লাগত। সিজিপিএ অন্তত দেড় পয়েন্ট বেড়ে যেত।

- আচ্ছা, আপনি কি তেঁতুল আর মেয়েদের মধ্যে কোন সাদৃশ্য দেখেন?

- এত বছর পরে অর্গানিক কেমিস্ট্রির অনেক কিছুই ভুলে গেছি। কোন কোন মেয়ের জিহবায় বেশ ঝাল আছে। এল্কালি হয় তেতো, এসিড হয় টক। কিন্তু ঝাল কি? দাঁড়ান, আমি একটু গুগল করে দেখি।

- থাক, থাক লাগবে না। আস-সালামু আলায়কুম ।

আমি তাড়াতাড়ি ঢাবির পদার্থবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপক ড: আহমদ শফির ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে এলাম।



( আশা করি এই কল্প-সংলাপ উনি মাইন্ড করবেন না)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.