![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি ... ফাগুন প্রাতের উতলা গো চৈত্র রাতের উদাসী
দুপুরে একটা লোক এসেছিল।
- স্যার আপনার এখানে কি কোন মহিলা এসেছিল।
রকিব অবাক হয়ে তাকিয়েছিল।
- না তো। আপনি কে?
লোকটা প্রশ্নটার উত্তর যেন মুখস্থ করে রেখেছিল।
- কাছের পাড়ার এক মহিলাকে কয়েক ঘন্টা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাকে খুঁজে দেখতে বলেছে। মাথায় নাকি একটু দোষ আছে।
রকিব খেয়াল করল লোকটার চুল একটু পরিপাটি করে ছাঁটা, সাদা পোশাকের যেমন হয়। একটু ভয়ই ঢুকল।
- না, না, এখানে কেউ আসে নি।
দরজা বন্ধ করে দিল।
*******************
আজ হরতাল, অফিস নেই। রকিব কম্পিউটার খুলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মজার একটা বিষয়ের খোঁজ পেয়েছে। আজ শেষ করতে হবে।
- এদিকে একটু তাকাবার সময় হবে?
রকিব চমকে ওঠে। তার হাত কীবোর্ডের ওপর থেকে নেমে যায়। মুখ না ফিরিয়েই বলে।
- কি ব্যাপার, কখন এসেছ? আগে ডাকো নি কেন?
- তুমি কিন্তু এখনো আমার দিকে তাকাও নি।
রকিব একবারে ইউপিএসটাই বন্ধ করে দেয়। এতে হার্ড ডিস্কের বারোটা বেজে যেতে পারে। সেই রিস্ক নেয়া যেতে পারে এ মেয়ের অভিমান ভাঙতে।
মেয়ে খুশী হয়। মুখে আলতো হাসি দেখা যায়। রকিব চেয়ার ঘুরিয়ে বসে।
- সরি। সব দিকে সব সময় খেয়াল থাকে না।
- ঘরের জিনিস চুরি হয় না?
একটু ভাবার ভান করে রকিব।
- নাহ, আমার আর চুরি হওয়ার মত কিছু নেই।
এবার হেসে ওঠে মেয়ে।
- তুমি দেখি অনন্ত ডায়ালগ শিখে ফেলেছ। আবার বুক নিয়ে টানাটানি করো না। তোমার যা মাসল, আসলেই অঘটন ঘটে যেতে পারে।
- ওই ভদ্রলোককে আমি বেশ পছন্দ করি। উচ্চারণ নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে; বাংলাদেশের ক’জন সঠিক বাংলা উচ্চারণ করে, ইংরেজী বাদই দিলাম।
বাঁকা চোখে তাকালো মেয়ে।
- তোমার উন্নাসিকতা কখনো যাবে না। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে কি মনে হচ্ছে, বললে না তো।
- আগে অনেক বার বলেছি। এক কথা বার বার শুনতে চাও কেন?
- আগে অন্য অবস্থা ছিল, তখন তোমার কথা বিশ্বাস করার মত আত্মবিশ্বাস ছিল।
এবার রকিব হা হা হা করে অট্টহাসি হাসল। মেয়ে বিস্ময় আর বিরক্তি মাখা চোখে তাকিয়ে দেখল।
- এত হাসির কি আছে?
রকিব হাসি থামিয়ে বলল।
- বুঝলাম এবার। তোমার সন্দেহ হচ্ছে – স্বামীটি তার বৌয়ের ভরের নিত্যতা নীতিতে বিশ্বাস করে। বিয়ের পরে তোমার বয়স দু বছর বেড়েছে - বাইশ থেকে চব্বিশ। আর বড় কথা বাচ্চাটার জন্য ওজন কয়েক কেজি বেড়েছিল নিশ্চয়ই, যার কিছুটা এখনো যায় নি। আমি তোমার ফেসবুকে গেল ন মাসে কোন নতুন ছবি দেখি নি। তখনই বুঝেছিলাম, ওজন বাড়ার জন্য তুমি ভীষণ বিব্রত আছ। বোধ হয় আশায় ছিলে বাচ্চা জন্মাবার পরে সঙ্গে সঙ্গে আবার আগের ফিগার ফিরে পাবে। সবুর কর। ঐশ্বরিয়া রায়কেও অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর ছিলে তো কাঠির মত, সরি, মডেলের মত, সরু। এখন অনেক ভালো দেখাচ্ছে। নর্মাল।
মেয়ের মুখের রাগ একটু কমল মনে হলো, কিন্তু পুরোটা নয়।
- তোমার পছন্দ অপছন্দে কি এসে যায়! আমি খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। অনেক হাঁটাহাঁটি করি। আর কি করতে পারি! সবাই এসে বাবুকে দেখে বলে – কি কিউট! বাবার মত হয়েছে। তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি। আমার দিকে কেউ তাকায়ও না। ন' মাস কত কষ্ট করেছি, কোন দাম নেই কারো কাছে। আগে আমার ছবি তুলতে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। এখন সবাই বাবা-ছেলের ছবি তোলে, আমি অচ্ছুৎ হয়ে গেছি। ফেসবুকে নতুন ছবি দেব কোথা থেকে?
রকিব লক্ষ করে মেয়ের চোখ ভিজে উঠেছে। হুঁ, নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধনকে নিয়েও মানুষের ঈর্ষা হতে পারে! যারা অতি আদরে বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে এ সমস্যা আসতে পারে। আরো কারণ আছে।
- হায়, অভিমানিনী নারী। একটু অপেক্ষা কর। তোমার সিম্পটম অনেক মাইল্ড। অনেকে তো শিশুর জন্মের পরে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে পাগল হয়ে যায়। বাচ্চাকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না। বাবাকেই সব দায়িত্ব নিতে হয়। আমাদের টাইটানিক হিরোর মায়েরও ঐ দোষ ছিল।
- সেটা আবার কে?
এবার হি হি হাসি হাসে রকিব।
- ওই যে বিখ্যাত ভদ্রলোক । অনেক জায়গায় পোস্টার দেখবে দুই হাত টাইটানিকের মত দুই দিকে সম্প্রসারিত করে নিজের সৌভাগ্য খুব এঞ্জয় করছেন।
আবার রাগ দেখালো মেয়ে।
- হিংসুক! তুমি সফল কোনো মানুষকে সইতে পারো না। তোমার টাইটানিক সাহেব নাকি অনেক বড় পরিবারের সন্তান? এত বাচ্চা তাহলে কিভাবে হলো?
- হুম, বড়লোক এবং বড় পরিবার। এক বোন উম্মে কুলসুম, কিন্তু সাত ভাই। অন্যদের চিনি না, কিন্তু এর মধ্যে তিন জন বিখ্যাত, যদিও সাংবাদিক সাহেব আর পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সাহেব টাইটানিকের সমান খ্যাতিমান না। তিন জনই মায়ের সান্নিধ্য পান নি, তাই নিজেদের জীবনে মেয়েদের সাথে ব্যবহারেও আনাড়ি থেকে গেছেন। তিন জনেরই বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তবে বিজ্ঞানীজন যুক্তি বিদ্যা ব্যবহার করে এবং মেধাবী ছেলের চাপে আবার তালাক দেয়া বৌকে ফিরিয়ে নেন।
- এত কথা তুমি জানলে কিভাবে।
- হেঁ হেঁ হেঁ।
- আমার সামনে এ রকম বাজেভাবে হাসবে না।
রকিব তবু একটু মুচকি হাসল।
- আমার হাসির পবিত্রতা বিষয়বস্তুর পরিচ্ছন্নতার ওপরে নির্ভরশীল। আসলে আমার পরিবারের সাথে ওই পরিবারের কিছু সম্পর্ক আছে। বাদ দাও। তোমার বাচ্চা কেমন আছে?
মেয়ের মুখ নরম হয়ে গেল।
- ভালোই আছে। তবে এত আদরে না আবার স্বভাব নষ্ট না হয়। ওর বাবা বাড়িতে এসে সারাক্ষণ ওর সাথেই খেলে, আমাকে কোন পাত্তাই দেয় না। আগে আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ভালো রেস্তরাঁয় খেতে যেত, সিনেপ্লেক্সে সিনেমায়, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে। এখন আমার কাজ শুধু তার বংশধরের যত্ন নেয়া – খাওয়ানো, কাঁদলে শান্ত করা, গোসল করানো, পরিষ্কার করানো, ঘুম পাড়ানো।
- কেন, তোমার মজা লাগে না?
কেমন যেন আনমনা হয়ে যায় মেয়ে।
- লাগে, কিন্তু আমারও তো একটু আদর দরকার, শান্তি দরকার, রেস্ট দরকার। রাতে ঘুমাতে পারি না। এভাবে কখনো আগে জীবন কেটেছে?
রকিব শেলফ থেকে খবরের কাগজ টেনে আনে, এক পাতা খোলে।
- দেখ এক শিশু নিয়ে দু মায়ের মধ্যে বিবাদ, আদালতে গড়িয়েছে। দুজনই দাবি করছে এটা তার। এখন ডি এন এ টেস্ট করে রায় দেয়া হবে।
- কি বলতে চাও?
রকিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
-তুমি যেসব ঝামেলার কথা বলছ, একটি পরিবারে ১৪ বছরেও সেই ঝামেলা আসে নি বলে কঠিন শাস্তির ভয় উপেক্ষা করেই অবৈধভবে একটা বাচ্চা সংগ্রহ করেছে। বাবা-মা দুজনেরই সমান উৎসাহ। তোমার স্বামীর ফেসবুক বাচ্চার ছবিতে ভর্তি। কিন্তু তুমি আছ। একটু আড়ালে। খুব কিউট বাচ্চা। ওকে কিছুদিন দাও। তোমার হরমন ব্যালেন্স ঠিক হয়ে এলে, একটু বাড়তি ফ্যাট ঝড়ে গেলে, তোমার স্বামী আবার পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরী মেয়েটির ছবি দিয়ে পাতা ভরে ফেলবে। মনে রাখবে একটা মেয়ে একাধিকবার মা না হলে মানুষ জাতিটাই লোপ পেয়ে যেত।
শেষের কথাটা বুঝতে মেয়ের বেশি সময় লাগল না। ওটাই তো তার প্রধান অভিযোগ ছিল, শিশুকে নিয়ে বিরক্তি নয়।
মেয়ে আবার আগের মত লঘু পায়ে উড়তে উড়তে বেরিয়ে গেল।
কম্পিউটার আবার খুলে ইন্টারনেটের সোশ্যাল সাইকোলজী কোর্সে ঢোকে রকিব। প্রয়োজন নেই, শুধুই শখের লেখাপড়া। একটা মজার গল্প পড়ল। এক আরবের ১৭টা উট। উইল করে গেল তার সম্পত্তির ১/২ অংশ বড় ছেলে পাবে, ১/৩ অংশ মেজ পাবে, আর ছোটর জন্য ১/৯ অংশ। কিভাবে এভাগ হবে, সবাই চিন্তায়। শেষে এক বৃদ্ধা বলল, আমিও একটা উট দিচ্ছি, যোগ করে নিয়ে ভাগ কর। এবার অনায়াসেই যার যা ভাগ পেয়ে গেল। আবার শেষে একটা অতিরিক্ত রয়ে গেল এবং ছেলেরা তা বৃদ্ধাকে ফেরত দিল। ঠিক রসায়নের অনুঘটকের মত।
রকিব মনে মনে হাসল । এই পরিবারের সম্পর্কের টানা-পোড়েনে সে কি সেই আঠারতম উট? তাদের ভাগাভাগির জটিল অংকে তার ঐতিহাসিক কারণে সাময়িক প্রয়োজন দেখা দিতে পারে; কিন্তু স্থায়ী অবস্থানের দরকার নেই।
দুপুরের সেই লোকটা আবার এক সময় এলো।
- স্যার, আপনাকে সকালে বিরক্ত করেছিলাম।
রকিব বিরক্ত হলো না। ঠিকই দেখেছে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে।
- না, না, বিরক্ত হওয়ার কি আছে। কেউ হারিয়ে গেলে তো খোঁজ নেয়াটাই স্বাভাবিক।
লোকটা গলা একটু বিষণ্ণ করল।
- তবে অনেকে একেবারে হারিয়ে যায়।
রকিব মাথা নাড়াল।
- এক্ষেত্রে তা হবে না। তাকে স্থায়ীভাবে ধরে রাখার ফোর্স চলে এসেছে।
লোকটা হাসল।
- ইয়েস স্যার, আমি দেখে এসেছি, খুব কিউট হয়েছে।
২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১০
রফিক মাহমুদ বলেছেন:
এবারের অংকটা খুবই সহজ!
৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। ১৮তম উটের উপমাটা চমৎকার হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০০
মাক্স বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন!
ভালো লাগলো।