নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যভুবন

তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়

সাপিয়েন্স

আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি ... ফাগুন প্রাতের উতলা গো চৈত্র রাতের উদাসী

সাপিয়েন্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম দিন

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৬







বাড়িতে ফিরে তিনি একটু ক্লান্ত বোধ করলেন, যদিও এ ধরণের আয়োজনের পরে সাধারণত এক ধরণের উজ্জীবনী সুরার মত মগজ ও শরীরে উষ্ণ প্রবাহই অনুভব করেছেন আগে। কি বিপুল জনসমাগম- তাঁর সব আশা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আগে থেকেই ঠিক করে গিয়েছিলেন কি বলবেন, প্রায় প্রতিটি শব্দ। যদিও তিনি কখনোই লিখে অভ্যাস করেন নি। বিষয়টা তো তেমন জটিল নয়। আর তিনি তো জানতেনই তাঁর অসংখ্য অনুসারী কি শুনতে চায়। তিনি নিজেও আসলে তা চান কি না তা বড় কথা নয়। প্রথম কথা হলো তাঁর ন্যায্য অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত করা। এ জন্য অবশ্যই দেখাতে হবে সবাই তাঁর পেছনে আছে। বিষয়টা অনেক আগেই আপোষে রফা করা যেত। অনেক সবুরের সাথে তিনি অপেক্ষা করেছেন। টেলিফোনের দিকে যখনই তাকিয়েছেন, মনে একটু আশা হয়েছে, এখনই সেই বার্তা আসবে। তার বদলে ওরা কালক্ষেপন করতে লাগল। আসলে ওদের মতলব কি? দিন দিন সন্দেহ বাড়তে লাগল। তাহলে কি তারা কখনোই তাঁকে তাঁর পাওনা বুঝিয়ে দেবে না, সব আইন কানুন ভেঙে?



বড় মেয়েটা এসে ঢুকল।

- আব্বু, আপনার চা। আপনার মিটিং নাকি খুব ভালো হইছে। সবাই বলছে।

তিনি কাপটা নিলেন, একটু হাসলেন।

- তোর বাপের কোন মিটিং-ই খারাপ হয় না, মা। আমার কথায় আগুণ থাকে সব সময়। মানুষ তাতে তাইতা উঠে। মদ খাইলে যেমন শরীরে একটু আগুণ লাগে।

মেয়ে একটু বিষণ্ণ হয়।

- আপনে কখনো ঐ সব জিনিস খাইসেন?

বাবা একটু অপ্রস্তুত হন। এভাবে না বললেও হতো। মেয়েমানুষের চিন্তার মধ্যে বড় বেশি রক্ষণশীলতা। বাবাকে ভালোবাসে। তার অমঙ্গল চায় না। মায়ের মতই। একটু আধুটু খেয়ে চাঙ্গা হলে কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু একথা বোঝাবার চেষ্টা না করাই ভালো। পাইপটা নিয়েও মেয়ের কিছু আপত্তি আছে। তামাকও নাকি শরীর খারাপ করে। জেনেছে ওর সবজান্তা স্বামীর কাছ থেকে। ছেলেটা দারুণ মেধাবী ছাত্র ছিল। তাই জেলে থেকেই বিয়েতে সায় দিয়েছিলেন। পরে তো অনেক গল্প শুনলেন – কিছু পাগলামীর, কিছু বদমায়েশীর। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। মাথা ভালো,কিন্তু মাত্রাজ্ঞান নেই।



ক’বছর হলো তিনি রাজনীতি করছেন? বিশ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করলেন। এমনিতেই লম্বা। কাঁধের সমান সহপাঠীরা সবাই খুব মানত। কলকাতায় বেকার হোস্টেলে সেটা আরো পোক্ত হলো। সুহরাওয়ার্দী তাঁকে বেছে নিলেন খাস অনুচর হিসেবে। সুহরাওয়ার্দী ছিলেন কলকাতার সব চেয়ে বড় পীরের বংশধর, এ ছেলেও দাবী করে তার পূর্বপুরুষ আরব থেকে আগত পীর ছিলেন। হতেও পারে। তবে এখন অবস্থা মোটেই ভালো না। ওর বাবা কলকাতার নিম্ন আদালতের এক সেরেস্তাদার মাত্র। কিন্তু ছেলেটার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ আছে। ঢাকায় এসে লেখাপড়া আর বেশি চালাতে পারল না। ইউনিউয়ন, ছাত্র রাজনীতিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে গেল। এক সময় মুশ্তাককে সরিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হয়ে গেল। মুশতাক কি কথাটা মনে রেখেছিল?



৭০ এর নির্বাচনের আগে যে অবস্থান ছিল, পরে তা হলো আকাশচুম্বী। ৭০ এর সেই প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের পরে পাকিস্তানী সরকার আর সেনাদের উদাসীনতা পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, নিজের অধিকার বুঝে নেবার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু কবে সেই যে আগরতলা মামলা হয়েছিল, যাতে পাকিস্তানীরা সঠিকভাবেই টের পেয়েছিল এঁর সাথে ভারতীয় বাহিনী এবং সরকারের সম্পর্ক আছে, তার পর থেকেই সন্দেহ। এই লোক প্রধান মন্ত্রী হলে শুধু পুর্ব না, পশ্চিম অংশের মানুষকেও যদি মালাউনদের গোলাম বানিয়ে ছাড়ে? ভুট্টো ইন্ধন দিতে লাগল সেই সন্দেহে। ও ব্যাটা তো নিজেই ভারতীয় রিফিউজি, কিন্তু কি দেশপ্রেম! পেয়েছে অর্ধেক ভোট, কিন্তু তাই নিয়েই এত লাফালাফি। দুজন দুই দিকে। ইয়াহিয়া তো আইয়ুবের মত স্যন্ডহার্স্টের বেস্ট ক্যাডেট নয়, মাথায় বুদ্ধি-সুদ্ধি একটু কম। খালি ভাবে আর ভাবে, আর মদ খায়। কুল কিনারা পায় না। সময় চলে যায়।



তাই আজ এই সভায় আল্টিমেটাম দিতেই হলো। কিন্তু তিনি একটু চালাকি করেছেন। বক্তৃতার একেবারে শেষে জয় বাংলার পরে খুব মৃদুস্বরে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ও বলেছেন। কম লোকই শুনতে পেয়েছে। আসলেই তো। এখন যদি তারা তাঁকে প্রধান মন্ত্রী করে দেয়, তাঁকে তো সেই দায়িত্ব নিতেই হবে, ইন্ডিয়ানরা যা-ই ভাবুক না কেন। ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বক্তৃতাও দিতে হবে।

রাজনীতিতে কোন পথ একেবারে বন্ধ করে দিতে নেই। শত্রুর সাথেও মিতালি করতে হয় প্রয়োজনে। গরম গরম বক্তৃতার বেশির ভাগই তাশ খেলার ব্লাফ। এটা তিনি যেমন জানেন, তারাও নিশ্চয়ই জানে।



পূর্ব ইন্ডিয়ায় একট স্বতন্ত্র স্বাধীন মুস্লিম দেশের কথা তো শের-এ-বাংলা সেই ১৯৪০ সালের মুস্লিম লীগের কনভেনশনেই বলেছিলেন, এটা আর নতুন কথা কি। ফজলুল হককে যখন পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর করা হয়, তখনো তিনি আবার বলেছিলেন – ‘ইস্ট পাকিস্তান ওয়ান্টস টু বি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’। তাঁর চাকরি চলে গেল এতে। ভাষানীও এক সভায় পশ্চিমকে বিদায় জানিয়েছিলেন- আসসালামু আলায়কুম বলে। আর তিনি নিজে ছয় দফা আন্দোলন দিয়ে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন বহু বছরে। আল্লাহর মেহেরবানী ছিল এই প্রচন্ড ঝড় আর সুনামি, আর বোকা পাকিস্তানীদের প্রতিক্রিয়া। ইলেকশনে দুটো বাদে সব সীট পাবেন এটা কল্পনাও করেন নি। গোটা পাকিস্তানে তাঁর পরিষ্কার মেজরিটি হয়ে গেল। কিন্তু হারামজাদা ভুট্টোর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হলো না। আইয়ুব এই ভুট্টোকে প্রথমে রাজনীতিতে পাত্তা দেয়, পরে নিজেই সাপ আখ্যা দিয়ে বের করে দেয়। বেশি শিক্ষিত হলেই মানুষ ভালো হয় না।



নিচে নামতে হলো তাঁকে। বাড়ি ভরে গেছে নেতা আর কর্মীতে। কথা বলতে হবে। আগামী দিনের পরিকল্পনা শুনতে চায় তারা। তারা মনে করছে এটা পয়েন্ট অব নো রিটার্ন। তারা ভাবছে তাঁকে এখনই গ্রেফতার করতে আসবে। মনে হয় না। এত লোকের সমাবেশ হয়েছে এই সভাতে। দেশ চলছে তাঁর নির্দেশে। অসহযোগ শুরু হয়েছে সরকারের সাথে। তাঁর সাথে আপোষে না এসে উপায় নেই।



সবাইকে আশ্বস্ত করলেন।

- তোরা তোদের কজ চালিয়ে যা। যারা আমাদের বিরুদ্ধে, তাদের এমন শিক্ষা দিবি যেন আর মাথা উঠাইবার কথা চিন্তা না করে।



রাত দশটায় ফোন এলো নিসার সাহেবের কাছ থেকে। লোকটা অবাঙালী, কিন্তু তাঁর সাথে খুব ভালো সম্পর্ক। অনেক টাকাও দিয়েছেন মাঝে মাঝে।

-মুজিব ভাই, আপনার লোকরা আমার ফ্যাক্টরী লুট করতে এসেছে। আপনিই একমাত্র থামাতে পারেন।

তিনি দু তিন জনকে ফোন করলেন, কিন্তু তারা জানালো এখন আর এ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না। এরা সবাই আওয়ামী কর্মীও না। শুধুই সুযোগ সন্ধানী।

রাত এগারোটায় ফোন এলো ইস্মত আরার কাছ থেকে। এ অবাঙালী মহিলাও আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন।

- ভাইয়া মেরা আওলাদকো মার ডালা। ও ঘর লোট আ রহা থা। আপ তো উসে দেখে থে। ও ভার্সিটিকা বেস্ট স্টুডেন্ট থা।

যখন ঘুমাতে যাবেন তখন মুনির হাশমীর ফোন এলো। প্রথমে শুধুই কান্নার শব্দ। তার পর বোঝা গেল তাঁর আঠারো বছরের মেয়েটিকে বাড়ি থেকে কতিপয় যুবক ধরে নিয়ে গেছে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। তিনি পুলিশকে ডেকেছিলেন, তাঁর সাথে বন্ধুত্বের কথা বলেছিলেন, কোন লাভ হয় নি।



এর একটু পরেই জেনারেল সাহেবের ফোন।

- স্যার, আই ডোন্ট নো বেঙ্গলি ওয়েল এনাফ টু আন্ডারস্ট্যান্ড দ্য ফাইনার নুয়েন্সেস অফ হোয়াটেভার ইউ মাইট হ্যাভ সেড ইন ইয়র মিটিং টুডে। বাট ইউ হ্যাভ ডেফিনিটলি ওপেন্ড আপ এ প্যান্ডোরাস বক্স। মে বি অল অব আস শুড প্রে টু আল্লাহ সো দ্যাট ইভেন্টস ডোন্ট টার্ন ফর দ্য ওয়ার্স। আদারওয়াইজ অল হেল উইল ব্রেক লুজ।



তিনি গম্ভীরমুখে পাইপে শেষ টানটা দিয়ে বাথ রুমের দিকে গেলেন। বড় কিছু অর্জন করতে হলে কিছু ক্ষতি হতেই পারে কারো কারো। এমনকি বন্ধুদেরও। তবু তিনি ঠিক এই মুহূর্তে আশা ছাড়ছেন না। আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যে তারা তাঁকে মেনে নেবে, এটাই তাঁর আশা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:২৭

রফিক মাহমুদ বলেছেন: ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত এদেশে কি হয়েছিল তার হয়তো একটা নির্মোহ গবেষণা হওয়া উচিত। তাতে হয়তো আওয়ামী লীগেরই লাভ, হয় তো অন্যায় অপবাদ দূর হতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.