নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যভুবন

তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়

সাপিয়েন্স

আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি ... ফাগুন প্রাতের উতলা গো চৈত্র রাতের উদাসী

সাপিয়েন্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিজিত, অজয় রায় ও অবিশ্বাসের অন্য অর্থ

১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:০২

এই তো সেদিন দেখা হয়েছিল অধ্যাপক অজয় রায়ের সাথে এক সম্মাননা অনুষ্ঠানে। সম্মান পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নিশ্চয়ই। এর আগে তো একুশে পদকই পেয়ে বসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারের প্রাক্তন পরিচালক হিসেবে এই স্বীকৃতি তো এন্টিক্লাইমেক্স। তবু স্যারকে খুব খুশী খুশী দেখাচ্ছিল। কিন্তু বয়স তাঁর চলার ভঙ্গীতে, গলার স্বরে, মুখের বলিরেখায় ছাপ রাখতে শুরু করেছে। কিন্তু ভেতরে আগের মতই প্রাণ-উচ্ছল। জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার ছেলে অভিজিত কি এখনো সিঙ্গাপুরে? ভুলে গিয়েছিলাম সে তো সেখান থেকে আমেরিকায় চলে গেছে বহুদিন আগে। স্যার ছেলে সম্বন্ধে কোন গর্ব দেখালেন না, উচ্ছাস প্রকাশ করলেন না। সার্থক সন্তানের জন্য দুর্বলতা দুর্লভ নয়, অশোভনও নয়। হয় তো একটু পরীক্ষা করতে লোভ হয়েছিল। অজয় রায় সসম্মানে পাশ করে গেলেন।



অভিজিতকে আমি প্রথম দেখি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক পিকনিকে যখন সে বাবার সাথে এসেছিল। খুব স্বল্পভাষী সিরিয়াস টাইপের মনে হয়েছিল। পিকনিকের শেষদিকে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। অভিজিত তাতে খুব সুন্দর একটা আবৃত্তি শুনিয়েছিল। এর বহু পরে শুনি এখন সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, খুব ভালো ছাত্র ছিল।



২০০০ সালের দু'এক বছর আগে বা পরে এক ঘটনা ঘটে। ঢাবির এক খ্যাতনামা অধ্যাপকের এক মেয়ে অভিজিতের এক বন্ধুর প্রেমে পড়ে। কিন্তু বন্ধুটির কাছ থেকে সে কোনো সাড়া পায় নি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে যোগ্য পাত্র বা পাত্রী পাওয়া কিছুটা কষ্টকর। দিনে দিনে হতাশ মেয়ে এক মানসিক রোগীতে পরিনত হয়। এক সময় সে শামসুন নাহার হলের চার তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে, কিন্তু সামনে কিছু থাকায় আটকে যায়। ফলে বাকি জীবন তাকে খুঁড়িয়ে হাটতে হয়। তার বিধ্বস্ত পরিবারকে দেখে অভিজিতের মায়া হয়। মেয়েটিকে সে নিজেই বিয়ে করার উদ্যোগ নেয়। এই কাজে অজয় বাবুও বাধা দেন নি। বাঙালী কায়দায় ভাত মাছ দিয়ে বিয়ের ভোজ হয় । আমিও গিয়েছিলাম।



কিন্তু মেয়েটি তো ভালোবেসেছিল অভিজিতের বন্ধুটিকে, অভিজিতকে নয়। অভিজিতের সিঙ্গাপুরের এপার্টমেন্টের দশ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে। এবার আর কিছু তাকে আটকাতে পারে নি। অভিজিত দাহ করার আগে যাতে তার পরিবার শেষবার দেখতে পায়, সেজন্য বহু অর্থ ব্যয় করে আবার ভগ্ন মুখ-মাথা সযত্নে সেলাই করে আনে।



বহুদিন পরে আমার পরিচিতা একজন আমাকে ব্লগের জগত দেখতে আমন্ত্রন জানায়। প্রথম নামটি ছিল "সচলায়তন"। সেখানেই অভিজিতের লেখা প্রথম পড়ি। খুব প্রাঞ্জল ভাষা, বিস্তৃত, অনেক আয়াসে লব্ধ মূল রিসোর্সের থেকে অনূদিত, ক্ষেত্রবিশেষে মৌলিক। কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানী নয়, গণিতবিদও নয়। এখানে সেখানে অনুবাদের অর্থ সত্য থেকে সরে যেত। আমি আমার মন্তব্যে সেগুলি উল্লেখ করে দিতাম, কিন্তু লোকটির মধ্যে আমি একটা একরোখা প্রবণতা লক্ষ্য করলাম। কিছুতেই নিজের ভুল স্বীকার করতে চাইত না। দারুণ আত্মবিশ্বাস। আইন্সটাইনও যা বুঝতেন না বলে স্বীকার করতেন, সেটাতেও নাক গলাত। মাঝে মাঝে আমি বিরক্ত হতাম। কিন্তু তার কাজের পরিমান এবং একনিষ্ঠতা আমাকে মুগ্ধ করত।



কিছুদিন পরেই জানতে পারি অভিজিত 'মুক্তমনা' নামে এক ব্লগ পরিচালনা করে, এবং অজয় বাবুও তার প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের একজন। সেই ব্লগে গিয়ে আমি বেশ আহত বোধ করলাম। আমি নাস্তিক নই, ধার্মিক তো নই-ই। কিন্তু যাঁরা ধার্মিক নিজের শান্তির জন্য এবং অন্যের ক্ষতি করেন না, তাঁদের আমি ঘাঁটি না, এবং তাঁদের বিশ্বাস নিয়ে ব্যঙ্গোক্তিও করি না। আমার এত জ্ঞান নেই যে গলা ফাটিয়ে বলতে পারি ধর্মের সব কিছু ভুল, কপট, মিথ্যাচার।



এক সময় কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়তে হয়েছিল, জেনে হতভম্ব হয়েছিলাম যে কোনো বস্তুর অবস্থান ও গতিবেগ একসাথে জানা যায় না। এমন অনেক অনেক বিষয় আছে যেখানে বিজ্ঞান নিজেই বলে - এইটুকু জ্ঞান নিয়েই তোমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এই বিশ্বের গঠনই এমন ধোঁয়াটে। সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই, সেটা তো আরো জটিল প্রশ্ন। তোমার মস্তিষ্কের সীমিত নিউরনগুলির ক্ষমতা নেই যে সব রহস্যের তুমি সমাধান পেতে পারো যুক্তি প্রয়োগ করে। পরীক্ষণের উপযোগিতা আরো কঠিন বিষয়।



ধরা যাক, আমরা কেউই প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসে শত করা এক শ ভাগ বিশ্বাসী নই। অনেক অসঙ্গতি চোখে পড়বে, এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবিচার (যেমন মেয়েদের জন্য), অনাচার (কোন কোন নিষ্ঠুর অথবা নির্বোধ অনুষ্ঠান ) আমাদেরকে প্রচলিত সেই সব বিশ্বাসের প্রতি বিমুখ করে তুলতে পারে। ধর্মের সাথে জড়িত কোনো কোনো কর্মকাণ্ড হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু যারা এসব বিশ্বাস করে, এবং আমার ক্ষতি করে না, আমি কি তাদের শখ করে আহত করে এক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করব?



বাংলা উইকিপিডিয়ায় অজয় রায়ের জীবনীতে তাঁকে ঢাবির এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে তাঁর অবদানকে অনেক অতিরঞ্জিত রূপ দেয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে এক সাংবাদিক তাঁর কাজ নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। ধর্মে বিশ্বাস না করলে কি অসৎ হওয়াটা বিধিসম্মত হয়ে পড়ে?



অভিজিত ব্লগ জগতে বন্যার সাক্ষাৎ পায়। বন্যাও কিছু কম দক্ষতার সাথে ইসলাম বিদ্বেষী কিছু কথা লিখত। অভিজিত প্রশংসা করত। কালক্রমে তাদের সম্পর্ক পরিনতি পায় যা অজয় রায় সাগ্রহে বরণ করে নেন। বোঝা গেল ব্যাপারটা জাতিভেদ না। কিন্তু অভিজিতের সমালোচনায় ইসলামের বাইরে অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন ত্রুটির কথা কদাচিৎ পাওয়া যেত। অজয় বাবু পরীক্ষার সময় মুসলিম (শুধু নামে) ছাত্রদের এত কম নম্বর দিতেন যে অন্যান্য সহপরীক্ষক হাঁ করে অবিশ্বাস জানাত।



যে কোন দেশে সংখ্যালঘু হয়ে থাকা একটা মানসিক অস্বাস্থ্যকর অবস্থা। কেউ মেনে নেয়, কেউ পুরো ব্যাপারটাই অগ্রাহ্য করার হিম্মত রাখে। কেউ ডন কিহোতের মত গাধার পিঠে চড়ে তরবারি হাতে যুদ্ধ করতে বার হয়। যে যুদ্ধ পিশাচের সাথে তার পরিনতি হাস্যকর হয় না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:

"এক সময় কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়তে হয়েছিল, জেনে হতভম্ব হয়েছিলাম যে কোনো বস্তুর অবস্থান ও গতিবেগ একসাথে জানা যায় না। এমন অনেক অনেক বিষয় আছে যেখানে বিজ্ঞান নিজেই বলে - এইটুকু জ্ঞান নিয়েই তোমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। "

-কোয়ান্টাম মেকানিক্স কয়েক কোটী মানুষ পড়েছেন; সবাই কি একই 'লেভেল' এ বুঝেছেন?

অনেকে আপনার থাকে কম বুঝেছেন, অনেকে আপনার চেয়ে আরো অনেক বেশী বুঝেছেন; যাঁরা বেশী বুঝেছেন, তাঁদের " জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্টির লেভেল" কোন স্তরে?

২| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২

গাঁও গেরামের মানুষ বলেছেন: দারুণ লিখেচেন।

কিন্তু যাদের বোঝা দরকার বেশি, তারা সম্ভবতঃ কিছুই বুঝবে না।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪১

রাফিউল আলম ইমন বলেছেন: আপনার বর্ণনা সৎ মনে হয়েছে, বাকিটুকু জানিনা...

৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

রফিক মাহমুদ বলেছেন:
পাকিস্তানী বিজ্ঞানী আবদুস সালাম কাদিয়ানী বলে পাকিস্তানে জায়গা পান নি। কিন্তু তিনি খুব ধার্মিক ছিলেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিশ্চয়ই ভালো বুঝতেন, ওটাই তো তাঁর বিষয় ছিল। সবাইকে সম্মান করে কথা বলতেন। বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী করে, পরমতসহিষ্ণু করে। বিট আর বাইট শিখেই বিদ্বান হওয়া যায় না।

৫| ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩০

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন...সহমত+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.