নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোবা পর্যটক

খুবি আশাবাদী আর চরম ভ্রমন পাগল

বোবা পর্যটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিথঙ্গল আখড়া বাড়ি

২৩ শে মে, ২০১৩ ভোর ৪:২৭

বিথঙ্গল বড় আখড়া



অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম গতানুগতিক ভ্রমনের বাইরে আলাদা রকমের একটা ট্যুর এ যাওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনেক জায়গাই আছে তবে বিথঙ্গলের কথা খুব যে একটা আগে শুনেছি তেমন নয় তবে প্রথমবার জায়গাটার কথা শুনেই যাওয়ার এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম সময় সুযোগের। সেখানে যাওয়ার পথে নৌকায় হাওর ভ্রমণ সাথে হাওরের বুকে রাতে বসে জ্যোৎস্না খাওয়া আর ঐতিহাসিক আখড়া তো রইলোই সব মিলে আলাদা একটা স্বাদ। সব কিছু ঠিকঠাক করে রওনা করালাম। আমাদের বহর ছিলো মোট সাত জনের দলনেতা মিঠু ভাই সবাইকে নিয়ে মোটামুটি একটা বানী টাইপের টিম মিটিং করেই বাসে করে যাত্রা শুরু করলাম হবিগঞ্জের উদ্দেশে । হবিগঞ্জ শহরের নিকটে কালাডুবা ঘাট সেখান থেকেই ট্রলার ভারা করে যেতে হয় বিথঙ্গল আখরা। কালা ডুবা ঘাটে এসেই নাস্তা সেরে নিলাম সবাই ঘাটের ছোট্ট বাজারটাতে । সকাল হওয়ার কথা না টাই এখানে বলে রাখা ভালো আমরা রাতে আমাদের বাস ফেল করায় অন্য বাস এ আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ঘাঁট থেকে বিথঙ্গল বাজার যেতে সময় লাগবে প্রায় দু ঘণ্টার মতো যাই হোক দরদাম করে মিলিয়ে ফেললাম ট্রলার। বিথঙ্গলের উদ্দেশে সাথে হাওর ভ্রমন প্রচণ্ড রোদ তবে মিষ্টি বাতাসের তোরে যেন রোদ কোন পাত্তা পাচ্ছে না। পথে যেতে যেতে স্বচ্ছ পানিতে দৃশ্যমান পানির জগত আর বুক পানিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছ কি অপরূপ দৃশ্য। এসব দেখতে দেখতেই বিথঙ্গল বাজারে এসে পরলাম।

ঘাঁট থেকে আখড়া যেতে পায়ে হেঁটে ২/৩ মিনিটের পথ । অবশ্য এর মধ্যে ঘাঁট থেকে নেমেই একটা মোটামুটি বেশ জমজমাট একটা বাজার। বাজার পেরিয়ে আখড়ার প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে যেতেই বুজলাম জুতা খুলে প্রবেশ করতে হবে । আমরা ভিতরে যাবার পরপরি একটা মিশ্র অভিজ্ঞতা স্বাদ পেলাম যথেষ্ট বড় একটা জায়গা নিয়ে আখড়াটা বিশাল কক্ষ বিশ্রাম নেয়ার জন্য আমাদের একটা বড় ঘর দেয়া হলো ভিতরে দুইটা চৌকি বালিসও আছে কিন্তু আবার আখড়ার মূল যে মন্দির সেখানে আবার প্রবেশ নিষেদ ভিন্ন ধর্ম অনুসারিদের । তারপর সেখানে বসবাসকারী বৈষ্ণবদের কাছ থেকে এর ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা যদিও আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম । বিশাল এই আখড়া বাড়িতে মোট ঘর বা কক্ষ আছে ১২০ টির মতো লোক মুখে জানা যায় কক্ষগুলোতে ১২০জন বৈষ্ণব থাকতেন । তবে এখন কয়েকজন বৈষ্ণব আছেন। তবে দুঃখের বিষয় হলো প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই স্থাপনাটি দেশের অন্যসব পুরনো স্থাপনার মতোই খুব করুন । জরাজীর্ণ ভবন গুলো যেকোনো সময় ভেঙ্গে পরে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। দুপুরের খাওয়া দাওয়া বলতে আখড়াতেই এক প্রকার প্রসাদ দেয়া হয় অনেকটা সবজি আর খিচুরির মিশ্রণ অবশ্য অসাধারন স্বাদ তবে সেটা সবাইকে একবারই দেয়া হয় । অবশ্য ষে ক্ষেত্রে আপনি চাইলেই পাশের বাঁজারে যেয়ে ভরপেট খেয়ে আসতে পারেন ডাল ভাত মাছ যা ইচ্ছা। দিনভর ঘুরাঘুরির পর আখড়া থেকে বেরোনোর সময় একটা বিষয় অনেক বেশিই ভালো লাগলো আখড়ার প্রধান ফটকের পাশেই এলোমেলো স্কুল বেঞ্চে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়াশোনায় ব্যাস্ত জানতে পারলাম এই আখড়ার মাধ্যমেই চলে এদের পড়াশোনা। খুব থেকে যেতে ইচ্ছে করছিলো জায়গাটাতে কিন্তু ফিরতে যে হবেই অবশ্য রাতের জ্যোৎস্না দেখার লোভ হেলায় ফেলা যায় না তাই বেঁচে থাকলে আবার আসার শক্তপোক্ত ইচ্ছা নিয়েই ফিরে আসলাম । আসতে আসতে উপভোগ করলাম নৈসর্গিক এক ব্যাপার আঁকাসের চাঁদ আর জলের জ্যোৎস্না অসম্ভব এক মুহূর্ত। এই মুহূর্তে ঠিক একটি কথাই বলতে ইচ্ছে করছে

লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশের মাটিতে ঘুরতে যাওয়ার আগে আমাদের এই ছোট্ট বাংলাদেশটা ঘুরে দেখুন সত্যি সুন্দর...।।

কথা দিলাম ভালো লাগবে।



এই আখড়ার ইতিহাসঃ

হবিগঞ্জের তৎকালীন রিচি পরগনার অধিবাসী রামকৃষ্ণ গোস্বামী এই আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা। উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্হান সফর শেষে তিনি বিথঙ্গলে এসে এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। আখড়ায় পালিত উৎসবের মধ্যে আছে কার্তিক মাসের শেষ দিন ভোলা সংক্রান্তি কীর্তন, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল পূর্ণিমা উৎসব। চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ভেড়ামোহনা নদীর ঘাটে ভক্তগণ স্নান করেন। স্নানঘাটে বারুনির মেলা ও আষাঢ় মাসে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি উৎসবে হাজার হাজার ভক্ত যোগদান করেন।

জানা যায়, আগরতলার মহারাজা উছবানন্দ মানিক্য বাহাদুর প্রতি বছর তার রানিসহ আখড়ায় এসে কয়েকদিন অবস্হান করতেন।



যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ সাধারনত শরৎ কালেই এখানে যাওয়ার ভালো সময় বর্ষার বিদায়ী আমেজটা উপভোগ করা যায় তাছাড়া তখনো ভরপুর পানি থাকে হাওর জুড়ে। তবে অবশ্যই পূর্ণিমার সময়টা খেয়াল রেখে যাওয়ার আয়োজন করা উচিৎ কারন ভরা চাঁদের আলো ছারা পুরো ভ্রমনই অপূর্ণ রয়ে যাবে।





যেহেতু হাওরের মাঝে ছোট গ্রাম তাই থাকার জায়গা বলতে কোন হোটেল নেই তবে হবিগঞ্জ এসে থাকতে পারেন তবে খাওয়া দাওয়া সারতে পারেনন অনায়েসে বাজারের ভাতের হোটেলগুলোতে সর্বসাকুল্লে গুনতে হবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ।



যাতায়েতঃ ঢাকার সায়দাবাদ বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড থকে বাস যায় হবিগঞ্জ ভারা নন এসি ২০০ এসি ২৫০টাকা। হবিগঞ্জ শহরে নেমে সেখানে থকে কালা ডুবা ঘাঁট মেক্সিতে ভারা জন প্রতি ১৫ টাকা এই ঘাঁট থেকে বিথঙ্গল যাওয়ার ট্রলার ভারা করতে হবে সেক্ষেত্রে ৬/৭ জনের একটা দল গেলে খরচ অনেক কম পরবে। একটু দরদাম করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই ট্রলার ভাড়া করতে পারবেন।



ঢাকা-হবিগঞ্জ রুটে চলাচলকারি কিছু বাসের সময়সূচি

অগ্রদুত পরিবহন দিগন্ত পরিবহন বিছমিল্লাহ পরিবহন

সকাল ৭:১০ সকাল ৯:১০ সকাল ৬:৩০

সকাল ৮:৩০ (এসি) সকাল ১১:৫০ সকাল ৭:৫০

সকাল ৯:৫০ দুপুর ১:৫০ সকাল ১০:৩০

সকাল ১১:১০ বিকাল ৩:১০ (এসি) দুপুর ১২:৩০

দুপুর ১:১০ বিকাল ৫:৫০ (এসি) দুপুর ২:৩০

বিকাল ৪:৩০ (এসি) সন্ধ্যা ৭:৪৫ বিকাল ৫:১০

সন্ধ্যা ৬:৩০ সন্ধ্যা ৭:১০





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৩ ভোর ৪:৩২

বোবা পর্যটক বলেছেন: চলবে

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:০৬

বোবা পর্যটক বলেছেন: কি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.