নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
বাংলাদেশে ঈদ মানে যে আবেগীয় উন্মাদনা তুর্কিদের কাছে তা একদমই অচেনা। পর্যটন নগরী ইস্তাম্বুলের ঈদের সকাল দেখে কে বলবে এটা মুসলমান অধ্যুষিত কোনো জনপদ। অন্য ৮-১০টা সকালের মতোই এখানকার ঈদের সকাল। খুব সকালে কিছু দোকানপাট খোলা হচ্ছে, স্টেশনে কম বেশি মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে, কেউ বাসায় ঘুমাচ্ছে। এদের কেউ কেউ মসজিদে গেছেন ঈদের নামাজ পড়তে। নামাজ পড়ে যে যার বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কারও গায়ে নতুন জামা কাপড় নেই। ওদের আলাদা করে কোনো ঈদগাহ নেই। নামাজ শেষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের বালাই নেই। বলতে গেলে ঈদ বলে আলাদা কোনো উৎসাহ, উদ্দীপনা নেই। নেই ঈদের জন্য বাড়তি কোনো আয়োজন।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পড়তে আসার পর এমন নিরাবেগের মধ্য দিয়েই কেটে গেল বেশ কয়েকটি ঈদ। রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্কের বাইরের যে ধর্মীয় আবরণ তা যেন ভেতরের সঙ্গে একদমই মেলে না। তাদের জীবনাচার ইউরোপীয় ধাঁচের। মেয়েরা চলনেবলনে আধুনিক, স্মার্ট। ধর্মাবেগকে এদের অধিকাংশই বোধ হয় দৈনন্দিন জীবনের বাইরে নিয়ে গেছে।
এবারের কোরবানি ঈদের সকালও অনেকটা নিরাবেগেই কাটল। মসজিদে নামাজ পড়ে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসি। সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে আয়োজিত ঈদ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মনটা কেমন যেন হয়ে ছিল। দুপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মিলে বিরিয়ানি রান্না করে খেয়েছি। তারপরও কীসের যেন অভাব অনুভব হচ্ছিল। ঈদ হলো, অথচ হই-হল্লা, ছোটাছুটি হলো না এটা ঠিক যেন একজন বাংলাদেশির সঙ্গে যায় না?
সন্ধ্যা ৭টায় ছিল আমাদের প্রোগ্রাম। এর আগে থেকেই কনস্যুলেট অফিসে প্রবাসীরা আসতে শুরু করেন। যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের অধিকাংশই আবার দেশটির সব থেকে পুরোনো ও প্রভাবশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
দেখতে দেখতে মিলনমেলায় পরিণত হলো ছোট কনস্যুলেট অফিস। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস, ইস্তাম্বুলের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দীন ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কনসাল মো. আনিসুজ্জামান। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনসাল অফিস নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায়। তবে ইস্তাম্বুলের পরিবেশটা একদমই ভিন্ন। নতুন কনসাল জেনারেলকে প্রথম দেখায় মনে হলো, এদিকে তিনি যেমন ভিন্ন রুচির অন্যদিকে দক্ষ একজন কূটনীতিক। তার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও ভালো কিছু করার প্রত্যয় আমাদের আশাবাদী না করে পারে না।
কনসাল জেনারেলের সঙ্গে লেখকসহ প্রবাসী শিক্ষার্থীদের কয়েকজনশুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শুরু হয় খাবার পর্ব। ঈদ উপলক্ষে দেশীয় টাইপ কোনো খাবার খাব ধারণা করছিলাম। এর আগেও আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কনস্যুলেট অফিসের পক্ষ থেকে ইন্ডিয়ান বিরিয়ানি খেয়েছি। কিন্তু এবার খাবার দেখে চোখ রীতিমতো ছানাবড়া। দেশীয় পোলাও, ঝাল গরু, মুরগি, ডাল, সবজি, ডিম। এ যেন ঢাকার কোথাও চলা বিশেষ অনুষ্ঠান! খাওয়ার শেষ পর্বে বসায় তৈরি দেশীয় ফিরনিটা ছিল আচমকা সারপ্রাইজের মতো। যা কালেভদ্রেই জোটে প্রবাসীদের কপালে।
খাওয়া শেষে কনসাল জেনারেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাদা করে মতবিনিময় করলেন। বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুরস্কের মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য তিনি ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানালেন। বললেন, ইস্তাম্বুলে ভাষা শহীদদের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণে কাজ করে যাবেন তিনি। প্রিয় বাংলাদেশকে ঘিরে এমন আরও কত পরিকল্পনা নিয়ে কথা হলো। এক সময় ফুরিয়ে আসে কথার ঢালি। ভাঙে হাট। যে যার মতো ফেরার পথ ধরে। তবে রেখে যায় টান, অমোঘ ভালোবাসা। যা পবিত্র ও সতত। আর যাই হোক, মা বা দেশমাতাকে অস্বীকার করে বাঁচা যায় না। দেশের বাইরে না আসলে এই বাস্তব উপলব্ধিটা কে জাগাত আমাদের ভেতরে। আমাদের অতীত ঐতিহ্য আছে। এখন উন্নয়ন দরকার। ভালো থাক বাংলাদেশ। গরিব রাষ্ট্রের তকমা গা থেকে মুছে ফেলে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো গর্বিত উদাহরণ হও। তুমি গর্বিত হলে যে আমরা গর্বিত সন্তান হই। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
লেখাটি আজকের প্রথম আলোয় প্রকাশিত।নিরাবেগ ইস্তাম্বুলে তবু ঈদের আনন্দ
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২০
কালীদাস বলেছেন: ঈদের দিন পাবলিক হলিডে দেয় তো, নাকি তাও নেই?
টার্কিশদের কাজকর্ম সামনাসামনি দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না যে এরা মুসলিম। স্মার্টনেসের ঠেলায় ইউরোপিয়ানদের চেয়ে কোন অংশে কম যায়না এরা আর ইয়াং জেনারেশনের বড় অংশই ধর্মের ব্যাপারে খুব একটা কেয়ার করে না।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮
সরোজ মেহেদী বলেছেন: হলিডে থাকে।তবে নতুন কেউ এখানে বেড়াতে আসলে বঝুবে না, ঈদ হলিডে চলছে!
৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা।
খুৃব ভালো লাগলো।
৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৫
গেম চেঞ্জার বলেছেন: লেখাটায় যতটা না খুশি তারচেয়ে খুশি বাংলাদেশ কনসালের বাঙালিত্ববোধে । ভাল থাকুন ।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮
সরোজ মেহেদী বলেছেন: হাসি এবং খুশি থাকাটাই বড় ব্যাপার।আপনিও ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১
প্রামানিক বলেছেন: বর্ননা ভাল লাগল। ধন্যবাদ