নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
ইদের দিন খুব সকালে শুরু হতো আমাদের তোড়জোড়। মাঠ ঝাড়ু দেওয়া, হোগলা বিছানো, মাইক বাধানো—কত কাজ। এসব করতাম আমরা কয়েকজন। মাঠের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে নিজেরা তৈরি হয়ে এসে নামাজ পড়া।
নামাজ শেষে দল বেধে বাড়ি বাড়ি ঘোরা। অনেকগুলো বছর এই ছিল প্রতি ঈদে আমার রুটিন কাজ। কিন্তু গত কয়েক বছর কোনো ঈদেই ঘর ছেড়ে বের হইনি। ঈদের পুরোটা দিন কার অপেক্ষায় যেন থাকি। আমি হাসতে গেলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি শোকার্ত মুখ।
এই তো কয়দিন যেন হলো রমজানের ঈদ উদ্যাপন শেষে বাড়ি থেকে আসলাম। এখন আবার বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত রমজানের ঈদে নামাজ সেরে ঘরে ফিরতেই আম্মা খাবার খাওয়ার জন্য তাড়া দেন। সেমাইয়ের প্লেটটা সামনে রেখে চামচ ঘুরাই আমি। এখনো ফোন দেওয়া হয়নি খালাম্মাকে।
খালাম্মা মানে আমার বন্ধু হাসানের মা। একসঙ্গে পড়তাম আমি ও হাসান। স্কুল ও কলেজজীবন কেটেছে একই হোস্টেলে। এক রুমে ছিলাম অনেকগুলো বছর।
এইচএসসি পাস করার পর সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স মিলল আমাদের দুই ফাঁকিবাজের। এ আনন্দকে উপভোগ্য করতে সিদ্ধান্ত নিই সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়ার। চার কলেজ বন্ধু একসঙ্গে যাব বলে দিনক্ষণ ঠিক করি। ঈদের পরদিন গাবতলী থেকে বাসযোগে ছুটে চলি সাতক্ষীরার উদ্দেশে। শহরে পৌঁছে আরেক বন্ধু ফিরোজের বাড়ি উঠি। শুনতে অদ্ভুত শোনাবে হয়তো, ওই অঞ্চলের মানুষগুলোর কেমন যেন ঈদ আনন্দ নেই। তাদের দেখে ঠিক মনে হলো না এ অঞ্চলে ঈদ আছে। পরদিন সকালে খুলনা ও সাতক্ষীরার মাঝ দিয়ে চান্দগাঁও গ্রাম হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করি পাঁচজন। সন্ধ্যায় ফেরার পথে শিবশাহ মোহনায় যাব বলে গো ধরি আমরা। ফিরোজ না করে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, শিবশাহ একবার যাকে পছন্দ করে সে আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না। তবু একটি নৌকায় চেপে বসি পাঁচজন। শিবশাহ নিয়ে আজগুবি মনে হয় স্থানীয়দের রূপকথা। একেবারে শান্ত সে। যেতে যেতে বহু দূর চলে যাই। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তলিয়ে যায় নৌকাটা। আমরা চারজন তীরে পৌঁছতে পারলেও হারিয়ে যায় বন্ধু হাসান। তীরে পৌঁছে আমরা ওকে কতক্ষণ খুঁজি।
সেই ঘটনার আজ পাঁচ বছর। একমাত্র ছেলের ফেরার অপেক্ষায় থাকা খালাম্মা আমাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছেন। ঈদের সকালে আমি ফোন দিই খালাম্মাকে। হাসান বলেই কাঁদতে থাকেন তিনি। আমার চোখেও নির্বাক জল। আম্মা রান্নাঘর থেকে এসে আঁতকে উঠে বলেন, কিরে তোর চোখ দিয়ে আবার কবে থেকে পানি পড়ে, কিরে...
গল্পটি ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর দূর পরবাস পাতায় প্রকাশিত: গল্প স্মৃতির আয়না
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬
সরোজ মেহেদী বলেছেন: তাইতো। আমারইবা চোখ এড়িয়ে গেল কীভাবে!
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২
সুমন কর বলেছেন: ইদের দিন খুব সকালে শুরু হতো আমাদের তোড়জোড়। প্রথম লাইনেই মারাত্মক একটি ভুল প্রথম আলো এডিট না করেই প্রকাশ করে দিলো !!