নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
ছোটবেলায় আমাদের আনন্দ-উৎসবের বড় একটা উপলক্ষ্য ছিল শবে বরাত। সারারাত মসজিদে দোয়া দুরুদ চলত। মুরুব্বিরা যে যার মতো করে ইবাদত বন্দেগীতে সময় কাটাতেন।
আর আমরা ছেলের দল দস্যিপনা করে বেড়াতাম। এশার নামাজের পর প্রথমবার জিলাপী নিয়ে, খেয়ে-দেয়ে আমাদের মিশন শুরু হতো।
রাত ১ টার পর বড় পর্দার বিরতির মতো একটা ইন্টারভাল। আবার সদলবলে মসজিদে ঢোকা। সেটা ইবাদত না, দ্বিতীয় দফা জিলাপী (আমিত্তি) পাওয়ার আশায়। জিলাপী পাওয়া হয়ে গেলে ফের ঘোরাঘুরি শুরু হতো। গেরস্থ মহিলারা বিশেষ সতর্ক থাকতেন। কার বাড়ির গাছের ফল যেন কার পেটে যায়। যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে খোয়ারে ডিম আছে হাঁস নাই। কড়া পাহাড়ার মধ্যেও অবশ্য অনেক কিছু ঘটে যেত।
এর আগে সন্ধ্যা রাত থেকে নানা জায়গায় চলতো আতশবাজি-পটকা ফুটানো। দলাদলি, লাফালাফি, ফালাফালি, কখনো সখনো মারামারি। প্রতি ঘরে চালের পিঠা, ফিরনি এসব বানানো হতো। সবায় সবার ঘরে বানানো খাবার পাঠাত। সন্ধ্যায় গরু/মুরগী দিয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকত। কারো কারো বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসত।
মনে পড়ে আমার শৈশবের বরাত ছিল শীতে। আর তখনকার সময় শীত মানেই ছিল সন্ধ্যার পর আগুন জ্বালানো। বরাত যেন রোজার আগমনী গান শুনিয়ে যেত। রমাদান মানে ছিল উৎসবের এক শুরু। ঈদের চাঁদ দর্শনে যার সমাপ্তি হতো। রমাদান কারিমের শেষ ক’দিন সে কি উত্তেজনা। চাঁদ দেখার জন্য সদলবলে বহুদূর চলে যেতাম। ২৯ রোজায় চাঁদের দেখা না পেলে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতাম। ফিরে ফিরে আসমানে তাকাতাম। যদি এখন দেখা যায়! আমাদের বরাত ও রোজার সেই দিনগুলো ছিল এমনই আনন্দময়। যা এখনো স্মৃতিকাতর করে তুলে।
এই বয়সে এসে দেখি সেসবের সবই বন্ধ যা যা আমরা শৈশবে করতাম। বা নিষিদ্ধ। হুজুরদের ‘বিশুদ্ধ ইসলামে’র জেরে উৎসব-সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। বরাতের রাত আসে কিন্তু টের পাওয়া যায় না। আমি অন্তত পাই না। কেমন যেন নিরবে চলে যায়। ক’দিন আগে শবে মেরাজ গেল, জানলামই না মেরাজের রাত ছিল কোনটা। আম্মার কাছ থেকে শুনলাম শবে মেরাজ চলে গেছে। তারপর কয়েকজনের সাথে কথা বলে দেখি তারাও জানে না, শবে মেরাজ কবে ছিল।
বরাতের রাতে আজকাল আর উৎসব হয় কি না জানি না। রমজান কি এখনো মানুষের ঘরে ঘরে, শিশুদের মনে ততটা আনন্দ নিয়ে উপস্থিত হয়? নাকি নানা ফতোয়ার বেড়াজালে সবকিছু রং হারিয়েছে! হয়তো অনেক কিছু পথও হারিয়েছে!
আমরা হয়তো ভুলে গেছি কেবল ধর্ম দিয়ে মানুষ বা সমাজ হয় না। শিল্প সংস্কৃতিও লাগে। আর কোনো বিশ্বাস বা মতবাদ সংস্কৃতি ছাড়া একলা চলতে পারে না। বিশ্বাস-সমাজ-মতবাদ সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে পারলেই কেবল তা থেকে ভালো কিছু হয়। ইসলামের আগমনের পর আরবে কিন্তু তাই হয়েছিল। আবার ইসলাম বাংলায় এসেছিল ঠিক তার মতো করে। এখানকার স্থানীয় উপাদানের সাথে মিশে যেতে পেরেছিল বলেই মানুষ রাতারাতি নতুন এই ধর্মটিকে নিজের করে নেয়। এবং এখনো খুব মমতায় আকড়ে ধরে আছে।
যদি বাংলায় বাংলার মতো করে ইসলাম না আসতো তাহলে এখানে সুফিবাদের দরকার হতো না। খানকা একটা বিশেষ জায়গা দখল করে থাকত না। বাংলার ইসলাম আরবের চেয়ে ধারে ভারে ভিন্ন হওয়ার দরকার ছিল না। আসলে আমরা ভুলে যাই, আমাদের এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বেঁচে আছে চাষা-ভূষা, সাধারণ মানুষের বুকে। তাদের অপার ভালোবাসায়। আর এইসব শিক্ষাহীন মানুষগুলো এই ধর্মটাকে কেবল আবেগ দিয়ে নিজের করে নিয়েছিলেন বলেই আজকে আমরা 'কথিত শিক্ষিতরা' মুসলমান।
আগমনের শুরুতেই মোল্লাদের পাল্লায় পড়লে হয়তো এটা মানুষ দাড়গোড়ায় পৌঁছাতই না।
আমার মনে হয়, আমাদের হুজুরেরা ও আমরা ‘বউ’ মানে কেবল শিশুদের মতো করে ‘নতুন বউ’ বুঝি। অথচ ‘বউ’ মানে এক বিশাল সাগর যেখানে কন্যা, জায়া, মা, বিজয়ী, মহীয়সী কতোকিছু লুকিয়ে আছে। খালি আবিষ্কারের অপেক্ষায়। সবার সুমতি হোক।
শবে বরাতের শুভেচ্ছা।
(আমার হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের প্রতি রইল হলির শুভেচ্ছা)
১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:০৯
সরোজ মেহেদী বলেছেন: বুঝি নাই। একটু বুঝিয়ে বলুন।
২| ১৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৫২
তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: সব রং হারিয়ে গেছে , মোল্লা ফতোয়ার দোষ নেই ,সকল ছুটির নাইট এখন পাবজি ফেসবুক নাইট
১৯ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৫
সরোজ মেহেদী বলেছেন: এটাও একটা কারণ হতে পারে।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: এখন শবে বরাতে আনন্দ নাই।
ছোটবেলায় অনেক আনন্দ হতো।
১৯ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৬
সরোজ মেহেদী বলেছেন: গ্রাম হয়তো এখনো আছে।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৩০
জ্যাকেল বলেছেন: বাত্তির রাইত' মানে শবে বরাত
১৯ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৬
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ভালো।
৫| ১৯ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:০২
লিংকন১১৫ বলেছেন: আসলে এখন কার পোলাপানদের ইন্টারনেট আসক্তি
নাহয় টিক্ টক নাহয় গেম নিয়ে বেস্ত
১৯ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২১
সরোজ মেহেদী বলেছেন: এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হওয়া, গবেষণা প্রয়োজন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৫৯
জ্যাকেল বলেছেন: বাত্তির রাইত' এইসব জিনিস কি করে যে ইসলামে এত বেশি স্থান দখল করিয়া ফেলিল।