নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
অবেশেষে মহারাজা জন্মভিটায় এসেছেন ফিরে। ফিরে এসে ঘর ছেড়ে বাহির হয় গাঁ দেখবে বলে,
কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে মুখ ভার করে থাকা গাছ, হাঁস আর পাখিদের দেখে রাজা বুঝতে পারে, সেই গ্রাম আরেক গ্রামের পেটে কবেই সাবার হয়ে গেছে! শহরায়নের নামে কাঁচাপাকা দালান গাঁয়ের সব মায়া আর সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে। কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই আর। কিচ্ছু না। হয়তো একদিন ভূমিকম্প এসে এই দালানকোঠা আর লোভী মানুষ সব একসাথে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যাবে। সেদিন ইতিহাসে লেখা হবে আরেকটি অভিশপ্ত, ধ্বংশপ্রাপ্ত জনপদ ও জাতির কথা।
মহারাজার মনটা বিষাদে ছেয়ে যায়। ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। রাজা একাকী গিয়ে গোমতী নদীর তীরে দাঁড়ায়। তার শৈশবের সাথী, আমোঘ কল্পনার একমাত্র সঙ্গী যে নদী। যার সাথে তার আজন্ম মিতালী। সেই নদ।
রাজা গোমতীকে সুধায়, সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া- মন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
কিন্তু কোথায় সেই চিরযৌবনা গোমতী? ছোট হতে হতে সে যেন আজ সরু এক খালে পরিণত হয়েছে। তবু বর্ষা বলে এখন গোমতীর বুকে ঢেউ। চারপাশে পাড় ভাঙ্গার শব্দ। রাজা কান পেতে যেন নদীর কান্না শুনে। তিনি স্পষ্ট শুনতে পান গোমতী নদী মানুষের অত্যাচারে কাঁদে। নদীর এই কান্না দেখে রাজার বুকটা হু হু করে ওঠে।
রাজা না রোদ হতে চেয়েছে না সমূদ্র। রাজা না ছুঁতে চেয়েছে আকাশ, না বিশ্বজয়। রাজা চেয়েছিল এতটুকু শুধু, প্রকৃতি থাকবে সবুজ, শ্যামল। আর মানুষ হবে সুখী। সেসবের কিছুই হয়নি। যা হয়েছে তাতে হয় কেবল রক্তক্ষরণ। অবশিষ্ট আছে যা তার সবই আবর্জনা।
সময়ের ব্যবধানে সব হারিয়ে যায়। মানুষ মরে গেলে পচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়। বদলাতে বদলাতে নষ্ট হয়, নষ্ট করে। মানুষের হাতে নদী-নালা-খাল-বিল পশুপাখি সব ধ্বংস হয়। নষ্ট মানুষের ধ্বংসেই আনন্দ।
রাজা মহাশয় হায় হায় করেন আর হাঁটেন। এ যেন কারবালার মাঠে হায় হোসেন, হায় হোসেন বিলাপের মতো। রাজা আফসোস করে, হয়তো প্রাচীনের চোখে তিনিও নষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। যেমন তার চোখে আজ সব নষ্ট আর ভ্রষ্টদের দখলে। আজ তব চারদিকে নষ্টদের জনজোয়ার। এই দেশে যেন অদ্ভুত আঁধার এসেছে এক। অন্ধ যারা তারাই চোখে দেখে বেশি। যাদের জ্ঞান নেই তারাই আজ দেশের আলোর দিশারী।
রাজা নিতে পারে না এসব অধঃপতন। দালালের আলখাল্লা, কপর্দকহীন যোচ্চুরের দাঁত কেলানো অট্টহাসি রাজা মেনে নিতে পারে না।
রাজা তাই আবার ফিরতি পথ ধরে হাঁটা শুরু করে। সঙ্গী হয় স্বপ্নভঙ্গের মোহ। আর দিকভ্রান্তের উড়নচন্ডী ভাবনা। রাজা এই জনপদে আর কোনদিন ফিরবে না।
রাজা আর ফিরবে না। ফিরবে না আর কোনোদিন। তবে রাজা প্রতিদ্বন্দ্বী হবে, অনাচার, অবিচার, দুষ্টাচারের বিরূদ্ধে একদিন প্রতিরোধ হবে। সেদিন লড়াই হবে সমানে সমান-সোয়ানে সোয়ান।
রাজা যেতে যেতে ফিরে ফিরে তাকায়।
(লেখকের প্রকাশিতব্য বই 'মহারাজার মহাভ্রমণ' সিরিজের শেষের পর্ব থেকে।)
(নোট: অদূরেই গোমতী নদী)
২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৪৮
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ভালো বলেছেন। তবে কষ্ট হচ্ছে, যারা ফিল করলে কাজে লাগত তাদের বোধহয় ইমোশন লোপ পেয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:২০
রাজীব নুর বলেছেন: গোমতী না, প্রায় সব নদীর করুণ দশা।