নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
-ঠাণ্ডা চা খাইবেন স্যার?
:দেও খাই। বেশি করে দুধ দিয়ে দেও।
-জ্বে স্যার।
চায়ের কাপ হাতে মহারাজা চারপাশে কৌতূহলী তাকায়। তার মনে আজ বড় আনন্দ। ছেলেটা রাজাকে না ন্যাংটা, না মাঝি বলে ডাকছে। রাজা না বলুক স্যার অন্তত বলছে। ছেলেটার চোখে মায়া, আর ভাব প্রকাশে অসহায়ত্ব। এসব ভাবতে গিয়ে রাজার কপিলার কথা মনে পড়ে যায়। আর কুবেরের উপর রাগ হয়। শালা মাঝির বাচ্চা। কপিলারে লইয়া হোসেন মিয়ার চরে লটরপটর করতে যায়। কত্তোবড় কইলজা হারামজাদার।
চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর সাগরের হুহু কান্নার আওয়াজ। মধ্যরাতে সাগরে মানুষের চাপ যখন কমে আসে তখন সে সন্তান হারা মায়ের মতো হুহু কাঁদে। তার শোকের আহাজারিতে হাহাকার করে উঠে ধরনী। এই শীতের রাতে সাগর তীরে কেউ নেই। কেউ না। শুধু রাজা একা।
এমন আমাবশ্যায় সাগরের কাছে যাওয়া যায় প্রেমিকার সাথে একান্ত নির্জনতায় মেতে উঠার মতো করে। আহ্লাদে আটখানা হওয়ার সময় এ সময়। সঙ্গমের উত্তেজনায় ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ বনে যাওয়ার মুহূর্ত। রাজা আবেগাক্রান্ত হোন। চলে যান অন্য এক ভাবের জগতে। আজ সাথে কপিলা থাকলে! আহা! তার আফসোস বেড়ে যায়। এই মেয়েটা রাজার ভালোবাসাটা দেখল না। দেখল কেবল অন্য নারীতে আসক্তি। তার ছেনির কুপের দাগ এখনো রাজার পিঠে দগদগ করে। নিষ্ঠুর মেয়ে মানুষ। বড় নিষ্ঠুর।
ছেলেটার ডাকে সম্বিত ফিরে পায় রাজা।
-স্যার, স্যার
:আরেক কাপ চা দাও।
-এই ঠাণ্ডার রাইতে আবার ঠাণ্ডা চা?
:শোন, চা যখন গরম থাকে তখন সেটা গরীবেরও খাবার। কিন্তু চা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে সেটা হয়ে যায় শুধু বড়লোকের খাবার। তারা বলে কোল্ড টি। অবশ্য ইউরোপে মানুষ যা খায় সেখানকার কুত্তা-বিলাই তারচেয়েও ভালো খায়। মুসলমানের দেশে ঈমান আছে কিন্ত ইসলামী মূল্যবোধ নাই। পশ্চিমারা ঈমান আনেনি ঠিকই। কিন্তু ইসলামের সবকিছু আত্মীকরণ করেছে। এজন্যই এদের দেশগুলো এত সুন্দর। হায় হতভাগা মুসলমানের দল। দুর্ভাগ্য এই জনপদের।
-স্যার এইডা জানতাম নাতো। আমিতো ঠাণ্ডা চা ফেলাই দেই। বড়লোকের খাবার এইরম কেন স্যার?
:তারা মানুষই এমন। অদ্ভূত। তাদের কাজ কাম আরো বেশি অদ্ভুত। তারা মানুষের টাকা চুরি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে। আর সে টাকার একটা অংশ মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করে। এরেই বলে চুরির উপরে বাটপারি। বুঝলা। ধর্ম আজ জোচ্চুরের দখলে চলে গেছে। বদমাইশরা হয় মসজিদ কমিটির সভাপতি।
:আচ্ছা তোমার নাম কি বলো?
-আমার নাম হানিফ স্যার।
তুমিও এক কাপ চা খাও হানিফ। টাকা আমি দেবো।
- হানিফ মৃদু হাসে। বড়লোকের খাবার কেমন হয় জানতাম না স্যার। আজ নিজে খাইতেছি।
:দুনিয়াটাই হলো অজানা আর রহস্যে ভরা হানিফ। এই যে তুমি আর আমি। দেখ কেউ কাউরে চিনি না। কিন্তু দুনিয়ার কথা বলে যাচ্ছি। তুমি খুব ভালো ছেলে মাশাআল্লাহ।
খানিক পর,
-মজা না স্যার। তিতা তিতা লাগে। ওয়াক।
-স্যার একটা বিষয় জানার ছিল। কতদিন ধরে ভাবছি কাউরে জিগাইতে পারি না।
:আমারে জিগাও দেহি তোমার বিষয়।
- এই যে ঢাকা থেকে ছোট ছোট ছেলেরা এখানে বেড়াতে আসে। তারা দেহি আমার চেয়ে লাম্বায় ছোট। পরের বছর আসলে দেহি আমার থেকে বেশি লাম্বা।
এইডা কেমনে হয়!!!
:খুবই চিন্তার কথা। যারা আসে তাদের সবায় পরের বছর লম্বা হয়ে যায়?
-জ্বে স্যার।
:তুমি লম্বা হওনা?
-না স্যার।
-স্যার
:বলো।
তারা কি খায়?
:তারা ঘুষ খায়। আসলে তাদের বাপেরা খায়। সে ঘুষের টাকায় তারা খানাখাদ্য কিনে খায়। ভালো ভালো পোশাক কিনে পরে।
-কিন্তু বাপগুলাতো লম্বা হয় না স্যার। এক রকম থাহে।
:যারা সরাসরি ঘুষ খায় তারা লম্বা না হয়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। বুঝলা। তারাও লম্বা হয়। সেটা হলো নাভির নিচ দিয়া। মাথার উপর দিয়া একি থাকে।
:তুমি আমাকে আরেক কাপ চা দাও হানিফ। খালি মুখে গল্প জমে না।
-চা নাই স্যার।
:পানি আছে?
-জ্বে।
:তাহলে চায়ের কাপে পানি দাও। ধরে নাও এটা হলো কফি। কফি অবশ্য এখন গরীবেরও খাবার। তবে আমাদেরটা ধরে নাও দামী তুর্কি কফি।
-এইটা কি কফি স্যার?
:খুব দামী কফি। বিদেশী। সুন্দরী মেয়েরা বেশি খায়। কল্পনা করতে থাক, তুমি খুব সুন্দরী একজন ম্যাডামের পাশে বসে পায়ের উপর পা তুলে কফি খাচ্ছ। একটা জোশ আসবে।
-হিহি।
-স্যার,
:বলে ফেল। সময় বয়ে যায়।
-আমি লাম্বা অইতে চাই। কেমনে অমু?
:প্রতিদিন বাসে ঝুললেই তুমি লম্বা হয়ে যাবা। বাসে ঝুলতে হবে রেগুলার।
- এখানেতো বাস নাই স্যার।
:কি আছে?
-লৌকা।
:মুশকিল। তাইলে কি করবা?
-কি করমু স্যার।
:একটা গাছ খুঁইজা বাইর কর। ঐটার ডালে ঝুইলা থাইকা দেখ। কাজ হয়ে যাবে। সকাল বিকাল ঝুলবা।
-কতোদিন জুলমু স্যার।
:ঝুলতেই থাকবা। সরকারি কাজ দেখ না। রাস্তা হইতেই থাকে। হইতেই থাকে। শেষ আর হয় না।
এক শীত গিয়ে আরেক শীত আসে। কিন্তু কাজ শেষ হয় না। যাকে বলে পারফেক্ট উন্নয়ন। তার কোনো শেষ নেই। শুরুও নেই।
হানিফ ভাবনায় পড়ে যায়। কিভাবে লম্বা হবে সেই ভাবনা তাকে তাড়িত করে। সে আবার জিগায়।
-স্যার। ওরা যা খায় তা ঢাকা থেইকে পাডাইতে পারবেন?
:ওরা যা খায় তার সবই ভেজাল। তারা যা কয় সবই মিছা। তাদের বেশিরভাগই হাসে শয়তানি হাসি।
বললাম না, এদের বাপেরা খায় ঘুষ। আর এরা খায় ঘুষের টাকায় দুই নাম্বার জিনিস।
তুমি যা খাও সব খাঁটি। তাজা মাছ, খাঁটি শাক, সবুজ সবজি। যা দেখ সব স্বাস্থ্যসম্মত। তোমার চোখের পাওয়া এদের চেয়ে অনেক ভালো।
- স্যার, ঢাকায় কি অনেক বাস?
:ঢাকা হলো বাসের শহর। খালি বাস আর বাস। বাস ছাড়া আর কিছু নাই।
-তাইলে মানুষ থাহে কই?
:মানুষ বেশিরভাগ সময় বাসেই থাকে। সকালে বাসে উঠলে বিকালে নামে। রাতটা কোথাও কোনোরকম কাটাইয়া আবার সকালে বাসে উইঠা বসে।
-বাসের জাম লাগেনা স্যার?
:সেতো লাগেই। তুমি বুঝ নাই। উন্নয়ের চাপে জট লাগে বৈকি। তবে তার দোষ আমার মতো কিছু অপাঙতেয় মানুষের।
-কেন স্যার? এইডা কি কন।
:ধরো আমরা বাসে উঠলে বাসগুলো থেমে যায়। আর আমরা বাস থেকে নেমে গেলে বাস চলতে শুরু করে। তার মানে হচ্ছে, সমস্যা বাসেরও না। ঢাকারও না। সমস্যা হলো আমার মতো মানুষগুলোকে নিয়ে। বাসরা যেমন আমার মতো মানুষগুলোকে পছন্দ করে না। আবার যারা বাসের ভগবান তারাও চায় না আমরা বাসে উঠি।
-স্যার কি বলেন?
:প্রাচীন কালে মানে আজকে থেকে কয়েক শ বছর আগে পাপ মুক্তি বা শহরের কল্যাণের জন্য মানষ ধরে জবাই করে দেয়া হতো, বুঝলা। সেই মানুষের রক্ত দিয়ে দেবতার পূজা করা হতো। এখনো হিন্দুরা পাঠা বলি দেয়। সরকার আমার মতো কয়েকজনরে ধরে বলি দিতে পারে। এতে যদি রাস্তা তুষ্ট হয়। আর বাসগুলো চলতে শুরু করে। আরতো অন্য কোনো উপায় দেখি না।
হানিফ অবাক হয়ে তাকায়। তার মাথায় এতকিছু ঢোকার কথা না। সবকিছু সে বোঝেও না। আন্দাজ করার চেষ্টা করে। মানুষ কাইট্টা তার রক্ত শহরে ঢাইলা দিব-এইডা কিমুন কতা।
:হানিফ তোমার বয়স কতো?
- জানিনা!
-স্যার
:বলো
-গত কয়েক বছর ধরে আমি আর লাম্বা হই না। আমার বয়স কত অইতে পারে?
:লম্বা হও না ঢাকা শহরের বাসে ঝুলনা এইজন্য। তোমার এখনও লম্বা হওয়ার বয়স আছে।
-ঢাকার বাস কেমন স্যার
:খুব ভালো। তুমি যদি ফুটপাতে দাঁড়াই থাকো তাহলে বাস তোমারে দেখে তোমার সাথে কোলাকুলি করার জন্য লাফ দিয়া ফুটপাতে উইঠা পড়বে। এইবার বুঝ।
:হানিফ তোমার প্রিয় খাবার কি
-জানিনা স্যার
:ঠিক আছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি বলো।
- আমি কেমনে কমু স্যার।
:যে পুরো দেশটার প্রধান তারে তুমি চেনো না। তোমাদের এমপি সাব যেমন এই এলাকার প্রধান। সে হইলো গিয়া পুরা দেশের। সে টিভিতে ভাষণ দেয়। সেতু উদ্বোধন করে। সারাদেশ তার কথায় চলে। সবায় তার নামে স্লোগান দেয়। মিছিল করে।
-যে মহিলাডারে টিভিতে দেখা যায় সে স্যার
:হ্যাঁ
-জানতাম ভুলে গেছি স্যার। হানিফ মৃদু হাসে। মাথা চুলকায়।
-হচেনা স্যার। মনে পড়ছে। মনে পড়ছে।
:পুরো নাম বলো।
- হচেনা বেগম।
তার আগে আরেক মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিল। সেই মহিলারেও আগে টিভিতে দেখা যাইতো। তার নাম জানো?
-না স্যার।
:তার নাম হলো খুলেদা।
বুঝলা হানিফ। হচেনা ও খুলেদায় ঝুলে গেছে বাংলাদেশের কপাল। ঝাল আর ঝাল।
স্যার, বাজে কয়ডা?
ঘড়িতে তাকায় মহারাজা। হয়তো আরেকটু পর ভোরের আযান হবে। আযানের সাথে সাথে পাখিরা কিচিরমিচির করে জেগে উঠবে। হানিফকে বিদায় বলে মহারাজা সাগরের কাছে যায়। ভোরের সাগরকে এভাবে কখনো দেখা হয়নি আগে। সাগর নিজেও যেন ঘুমে। আচ্ছা সাগরও কি ক্লান্ত মানুষের মতো মায়ের আঁচল খুঁজে বেড়ায়! একটু শান্তির ছোঁয়া পাবে বলে!!!
হানিফের মতো এমন হানিফের সংখ্যা এই দেশে কতো কে জানে? রাজা নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে।
তারা কে সরকার আর কার সরকারে যাওয়া দরকার সে খবর রাখে না। তারা কেবল দু'বেলা দু'মুঠো খেতে চায়। সে খাবার তাদের জুটে না ঠিকই। কিন্তু ক্ষমতার প্রয়োজনে প্রায়ই তাদের জীবন কুরবানি করা হয়। আর সেই রক্ত-স্রোতে দাঁড়িয়ে একদল হেসেই চলে। সম্পদের পাহাড় গড়ে। এই দেশে তারা মাঝে মাঝে আসে। ভোট করে। আর বেগম পাড়া করে অন্য দেশে।
মহারাজার কিচ্ছু ভালো লাগেনা। কিচ্ছু না। চিৎকার করে কেবল বলতে ইচ্ছে করে,
আমি দেশ ভেঙ্গে ভেঙ্গে খানা খানা করেছি আপা ও ম্যাডামে
আমি এই চেতনা, সেই আদর্শ
সবই মানি সবই মানি
শুধু মানি না যখন রহিম রণেশ ভাইরা চুরি বন্ধ চায়
তারা দু'বেলা খেয়ে বাঁচতে চায়...
মহারাজা সব মানুষের মুক্তি চায়। মুক্তির স্লোগানে স্লোগানে ঘুমন্ত সাগরও যেন জেগে উঠে। সূর্য আড়মোরা ভেঙে হাসতে শুরু করে।
তবে কতদূর সেই মুক্তির মঞ্জিল!
০৬ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩০
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
মৃত্যুই আমাদের নিয়তি!
২| ০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: দেশের প্রধান ব্যাক্তি যদি নির্বোধ হয় তাহলে সেই দেশের জনগনের কপালে দুঃখ থাকবেই।
০৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২৬
সরোজ মেহেদী বলেছেন: নির্বোধ জনগণ নিয়েও পর্যালোচনা দরকার ভাই।
৩| ০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:২১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভোর হতে আর কত দেরী পাঞ্জেরী "!!
০৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২৭
সরোজ মেহেদী বলেছেন: আগে ঈদের পর আসলে কতদিন পর কোন ঈদের পর সেটা জানার চেষ্টা করি চলেন।
৪| ০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:২২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: সুদিন আর আসবে না।
০৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২৮
সরোজ মেহেদী বলেছেন: হয়তো আসবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৬
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: চাতক পাখি চেয়ে থাকে কখন এক পশলা বৃষ্টি হবে।
শকুন চেয়ে থাকে কখন একটি গরু মারা যাবে আর মাংস খাবে।
পৃথিবীই যখন অসুস্থ এখানে বসবাসরত সবাইকেই মরতে হবে একের পর এক মরতেই হবে।
সকলে মিলে গড়তে হবে একটি নিরাপদ পৃথিবী।
রাষ্ট্রীয় শকুন কেড়ে নিয়েছে ৪৯ টি তাঁজা প্রাণ।
এরা তো আমাদেরই কোন কোন মায়ের সন্তান।
কেন মারল? । কেন! কেনো!!!! ক্যান!!!!!!!
পোষ্ট ভাল্লাগছে।