নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ

সরোজ মেহেদী

The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)

সরোজ মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধু পূর্ণিমায় মহারাজা তিন নদীর মোহনায়

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৯

মহারাজা এক পৃথিবী ঘুরে দেখবেন বলে পন‌ করেছিলেন। এক সকালে ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করেন, তার সেই মনও নেই, পন‌ও নেই।‌ এই জীবনে আসলে জীবন‌টাই নেই। রাজা হাহাকার করে উঠে, চারদিকে কেবল‌ই শূন্য বালুচর…

রাজা দুঃখের দীর্ঘশ্বাস যেন আরও দীর্ঘ হয়। বুকটা হালকা করবেন বলে সোজা হাঁটা দেন। হাঁটতেই থাকেন পাগল রাজা।‌ সকাল পেরিয়ে বিকেল আসে। বিকেল ঢেকে যায় গোধূলী রংয়ে। তারপর দিনের আলো হারায় সন্ধ্যার পেটে।‌ তবু রাজা হেঁটে হেঁটে পৃথিবী দেখবেন বলে সামনে এগুতে থাকেন। রাজাকে যেন জেদ পেয়ে বসে। তিনি দেখবেন মা, মাটি, মাছ ও মায়াদের খেলা। তিনি উপভোগ করবেন দিবস ও রজনী, দিনান্তে আস্ত সূর্য গোধূলী লগলে নাই হয়ে যাওয়ার পালা। রাতের নিকষ কালো অন্ধকারে সাথে জোনাকিদের পাঞ্জা লড়া। রাজা হাঁটতেই থাকেন। হাঁটতেই থাকেন। পলকা মানুষ ভাবে, এই পাগলার আবার কী হলো!

আরও কিছুটা পথ মারিয়ে, রাজা দেখেন সামনে বিশাল সাগর দাঁড়িয়ে। সাগরপ্রিয় রাজার যেন সোনায় সোহাগা। তিনি এবার থামেন। তার দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। গা শীতল হয়। রাজা পথিকের কাছে জানতে চান এই সাগরের নাম কি?
একজন রাজার কাঁধে হাত রাখে। তারপর সুধায়, এটা সাগর নারে মাছি। পদ্মা নদী। পদ্মা।
রাজা অবাক না হয়ে পারে না। পদ্মা তাহলে এখনো এতোবড় নদী। পদ্মার ঢেউ রে–ও মোর শূন্য হৃদয়-পদ্ম নিয়ে যারে…
রাজার ভেতরটা খাঁ খাঁ করে উঠে। পদ্মার মতো রাজারও শূন্য হৃদয়। কেউ জানে না। কউ না। সংগীতের মূর্ছনায় রাজা আকুল হোন। সোডিয়াম লাইটের আবছায়ায় নদীর জলে যেন নিজেকে দেখতে পান। তার নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। রাজার রাজত্ব থাকার দিনগুলোর কথা। সে সময় নদীগুলো ছিল সাগরের মতো। গায়ের খাল ছিল ভরা নদীর মতো প্রমত্তা। বর্ষা মানে ছিল পুরা দেশটার উত্তাল সাগর বনে যাওয়া। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সময়, সেই দেশ! সেইসব মানুষ! আশপাশে তাকালে এখন আর মানুষ না কেবল ইতর-বান্দর দেখা যায়। এখন কেউ হাস্যকর বিজ্ঞানী তথা লেখক বাল বা তথাকথিত কবি ঠক। সব ভণ্ডের দল মিলে দখল করেছে সব। এই জনপদে অন্ধ যারা তারা নিয়েছে আলো বিলানোর দায়িত্ব।

রাজা আরও বেশি আবেগী হয়। আবেগে তার নদীর জলে গা ভেজাতে মন চায়। কিন্তু কাপড় নিয়ে নদীতে নামার মানে হয় না। নদীর জলে নামতে হয় ন্যাংটা হয়ে, করতে হয় উদাম ও উদ্দাম সাঁতার। তাহলে নদী-মন খুশি হয়। নেচে উঠে দোল হিন্দোল। রাজার এসবে সমস্যা নেই। রাজা একছত্র কাপড়ে ঢাকা সভ্যতায় বিশ্বাসও করেন না। কিন্তু সমস্যা হলো দুষ্টু ছেলের দল। তারা রাজাক ন্যাংটা দেখলে সমস্বরে চিৎকার করে উঠবে-ন্যাংটা রাজা, ন্যাংটুরে। রাজার দিকে পাথর ছুড়ে মারবে।
ভাবতেই রাজা দাঁতে জিভ কাটে। আবার ভাবে ন্যাংটা হলে কি সমস্যা। এই দেশেতো সব‌ই ন্যাংটা। বিচারপতি, তার বিচারালয় ন্যাংটা। মন্ত্রী ন্যংটা তার পাইক পেয়াদারা সব ন্যাংটা। রাজা ন্যাংটা হতে পারেন কিন্তু তাদের মতো বেলাজতো না। পিতা রাজত্ব হারানোয় রাজার শাহজাদা থেকে সেই অর্থে রাজা হওয়া হয়ে উঠেনি ঠিকই কিন্তু তিনি হারামজাদা হয়ে যাননি। শত চেষ্টা করেও হতে পারেননি। রাজা পারেন না এমন অনেক কিছুই। তিনি তেলে মাথায় তেল মারতে পারেন না। এই দেশে মানুষের মুখে এত তেল থাকা সত্ত্বেও কেন তেলের দাম বাড়ে বুঝতে পারেন‌ না। রাজা তাই দিন যতো যায় ততোই বোবা হয়ে যান।

এসব ভাবতে ভাবতে রাজা নদীর জলে পা ভেজান, গা ভেজাবেন বলে পা বাড়ান। তাকে আঁকড়ে ধরে বন্ধু হাসান। বলে, ব্যাডা নদীতে ডুবে মরতে চাইলে মাওয়া কেন? চাঁদপুর চল! তিন নদীর মোহনায়, ডাকাতিয়া নদীতে তাজা ইলিশ কাঁচা খাইতে খাইতে ডুইবা মরবি। ভাবসাবই আলাদা। মাওয়ায় কেউ মরতে আসেরে পাগল!

রাজা অবাক হয়, চাঁদপুর কেন? কেন চাঁদপুর?
কারণ রাজার চাঁদপুরেই মরার কথা ছিল (নিজের নিজের উত্তর খুঁজে নেয় মহারাজা)। সেখানেই মন‌ দিয়ে, চূড়ান্ত মরবেন বলে পন‌ করেছিলেন। এক মানবীর অবহেলায় আর মরতে পারেননি। সেই মানবী কথার ধার ধারেনি। রাজাকে বুঝতে পরেনি। রাজা তাই কষ্টের যন্ত্রণায় ঘর ছেড়ে অমরত্বের খুজে বের হোন। তারপর আর ঘর নেয়া হয়নি। রাজা আজ অসীমের পথে। ঘর, নারী বা অর্থ নামক সসীমের মায়া যেন তাকে না পোড়ায়। এসব কালনাগিনী যেন তাকে ক্ষুদ্রতা ও ধ্বংশের দিকে আর টেনে না নিয়ে যেতে পরে সারাটা জীবন চেয়ে এসেছেন। যে প্রেম বঞ্চনার সে প্রেম আর আসতে দেননি কখনো জীবনে।
তবু‌ আজ এই অবেলায় প্রথম প্রেমের আগুন যেন রাজাকে উস্কে দেয়। চারপাশটা যেন দাও দাও করে জ্বলছে। রাজা চুয়াল শক্ত করে বলে,
আমি না হয় ভালবেসে ভুল করেছি, ভুল করেছি
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায়?
এক জীবন কতটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতটা আর কষ্ট দিবে?
না, না এখানে আর না। হয় ডাকাতিয়া না হয় মেঘনা। এখানে আর না। রাজা বন্ধুকে রেখে চাঁদপুর যাবেন বলে একাকী সামনে হাঁটা শুরু করেন। হাঁটতে হাঁটতে আরেকটু সামনে এগুলে দেখেন নদী থেকে বেরিয়ে গেছে বিশাল এক দীঘি। সে‌ দীঘিতে চাঁদের আলোর সাথে জোছনা খেলা করছে। আজ যে মধু পূর্ণিমা রাজার সে খেয়াল নেই। রাজা যেন জোছনার সাথে কৈশরে হারিয়ে যাওয়া সেই প্রেয়সীকেও দেখতে পান। যে ছিল ভীষণ রকম প্রণয়ীও। প্রেয়সী রাজার সামনে একেবারে উদাম হয়ে। রাজা তাহলে কি করে অতীতের সেসব কথা আর মনে রাখে। আমাদের প্রেমিক রাজা বলে কথা।
এবার রাজা আর স্থির থাকতে পারে না‌। সব দুঃখ ভুলে, দিঘীর জলে নাইবে বলে সব খুলতে শুরু করে। রাজার যেন তর সয় না। পারে না সব নিয়ে এখনি ঝাঁপিয়ে পরে। কিন্তু প্রেয়সী উদাম বলে রাজাকেও উদাম হতে সময় নিতে হয়। রাজা নামবেন বলে ঝাঁপ দেবেন। দিচ্ছেন দিচ্ছেন করছেন।

এবারও সামনে বিপত্তি । সেই কপিলা! বুকে ব্লাউজ নেই কিন্তু হাতে ছেনি। রাজার সামনে সটান দাঁড়িয়ে। মুখ ভেংচে বলে, চরিত্রহীন বদমাইশ। সব সময় তোর রেডি হইয়া থাহে। খালি খোলার সুযোগ পাইলে হইল। এতো রস কেড়ে তোর ভেতরে।
রাজাকে এতবড় অপমান। রাজা এসব নিতে পারে না। আবার কপিলার রাগের সামনে এসব নিয়ে ভাবার ফুরসৎ হয় না।
কপিলা আবার চেঁচায়, বজ্জাত তোর স্বাভাব আর পাল্টাইত না। আজ তোরে না, তোর সব ডান্ডা কাইট্টা ঝুনঝুনি বানাইয়া তোরে ঠাণ্ডা কইরা লইয়া যামু। এরপর দেহি তুই কি করস। মাইয়া মানুষ দেখলেই তোর লটরপটর কেমনে চলে দেখমুনে। কপিলা রাজার দিকে তেড়ে আসে। ছেনি দিয়ে কুপাবে বলে হাত উঁচা করে। আর উপায় না দেখে রাজা অর্ধনগ্ন হয়ে ভূ দৌড় দেয়,

কোথায় পালাব সে? কোনদিকে চাঁদপুর? যেখানে সে প্রথম প্রেমে মজেছিল। যেই মানবী তাকে নষ্ট করেছিল! ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল। রাজা দিক ভুলে দৌড়াতে শুরু করে। মনে আশা গিয়ে ডুব দিবে ডাকাতিয়ায়। রাজা দৌড়াতেই থাকে।

কপিলার হাত থেকে বাঁচবে বলে রাজা দৌড়াই ঠিকই। কিন্তু এভাবে, এই বেঁচে থাকার অর্থ কি তা ভেবে মন খারাপও করে।
রাজা জানেনা জীবনের মানে…দৌড়াতে দৌড়াতে আবার রাজার বুকে দীর্ঘশ্বাস চেপে বসে… সেই মানবীর কথা মনে পড়ে…
রাজা সূত্র মেলাতে পারে না, এভাবে বোবা হয়ে বেঁচে থাকাকে কিভাবে বাঁচা বলা চলে!
একটা ছেলে রাজার পাশ দিয়ে হেঁটে যায় আর ছড়া কাটে,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা!

(বর্ণনা: লেখকের প্রকাশিতব্য 'মহারাজার মহাভ্রমণ' বই থেকে। ছবি: মধু পূর্ণিমা উপভোগ করতে চাঁদপুরে যাওয়ার পথে।)
(নোট: লেখাটি সম্পাদিত নয়।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.