নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সার্জিল খান

বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি।

নিরুদ্দেশ পথিক

বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি। ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/sarxilkhan

নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগদ্যঃ লালশাক রুটির গল্প

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৪

রোজ সাড়ে সাতটায় বাসে করে মতিঝিলে অফিসে যাওয়ার জন্য আজমপুর বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে থাকার সময় গ্রাম থেকে আসা কয়েকশো লেবারদের মাঝের একজনকে প্রায়ই দেখে দুই বক্সের টিফিন ক্যারিয়ার থেকে লাল শাক আর পরোটা বের করে খেতে। লোকটি বেশ তৃপ্তি নিয়েই খায়। খাওয়ার পর একটা বিড়ি আরামসে টানতে থাকে। কাউকে দেখে অনুকরণ করার স্বভাব আরিফের নেই। কিন্তু রোজ রোজ একই দৃশ্য দেখতে দেখতে তার কেন যেন মনে হয় সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকার পর এই খাবারটা বেশ উপদেয় লাগবে।



আজ শুক্রবার। অফিস বন্ধ। ঘুম থেকে ওঠার থেকেই আরিফের কেন যেন লাল শাক দিয়ে পরোটা খেতে খুব ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে আজ লাল শাক দিয়ে পরোটা না খেলে তার চলবেই না। নিকোটিন আসক্তদের একদিন সিগারেট না খেলে যেমন শরীর কামড়াকামড়ি করে, আরিফেরও ঠিক এমনটিই করছে। মাসে ৫ লাখ টাকা কামানো ইঞ্জিনিয়ারের যে ধরণের পোষাক পরে বাইরে বের হওয়া দরকার, সেরকম পোষাক না পড়েই সে আজমপুর বাসস্ট্যাণ্ডে এলো। গায়ে স্যাণ্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়া। পা খালি। কাঁধে কোদাল বা খাচা নিতে পারেনি। আগে থেকে অ্যাসিস্টেন্ট আলতাফ সাহেবকে বলে রাখলে সে ব্যবস্থা করে রাখতে পারতো। কিন্তু হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কাউকে জানানো যাচ্ছে না। আবার কেউ দেখে ফেললেও সমস্যা। তবে আজকে একটা সুবিধা আছে, শুক্রবার হওয়ায় সবাই এই সাতটা সময়েও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।



আজমপুর বাসস্ট্যাণ্ডের যে জায়গাটায় রোজ লেবাররা দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে গিয়ে আরিফ পৌছুলো। সেই লোকটি আজো আছে। লোকাল বাস থেকে একটু আগেই নেমেছে সবাই। লোকটি নেমেই নিত্যদিনের মতো টিফিন ক্যারিয়ার থেকে লাল শাক আর পরোটা বের করে চিবুচ্ছে। আরিফ লোকটির কাছে গিয়ে বললো,



-ভাই কি খুব ক্ষুধার্ত?



লোকটি বিরসমুখে তাকালো। গ্রাম্য পোষাক পড়ে শুদ্ধভাষায় কথা বলাটাকে সে কেমন যেন মেনে নিতে পারছে না। মুখে খাবার চিবুতে চিবুতেই বললো,



-আপনে খাইবাইন?

-না।

-কাম পাইছুইন?

-না।

-হাছা কথা কইন, হাছাই খাইছুইন?

-জ্বি।

-বিয়ালে কি খাইবাইন?

-জানি না।

-কাজ না পাইলে খাইবাইন কি? হাছা কইন তো দেহি, কাম লাগবো?

-জ্বি।

-খাড়ুইন খানা শেষ কইরা লই, এরপর আহুইন আমার লগে।



খাওয়া শেষ হলে একজন ঠিকাদার টাইপের লোক এসে আরিফ ও সেই লোকটিকে নিয়ে গেলো কুড়িল ফ্লাইওভারের জন্য মাটি কাটার কাজে। এরপর সারাদিন সেখানেই কাটলো মাটি কেটে। দুই ঘণ্টা মাটি কেটেই আরিফ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। এর কিছুক্ষণ পরেই সে ঠিক করলো কাজ না করেই চলে যাবে। সেই লোকটি তার পাশেই কাজ করছিলো। আরিফের অবস্থা দেখে সে তারও মাটি কেটে দিলো, আরিফেরও মাটি কেটে দিলো। দিনশেষে টাকা নেবার সময় আরিফের কপালে জুটলো মাত্র ১০০টাকা। লোকটিরও একই। সন্ধ্যা মেলাবার আগে লোকটি আবার আজমপুর বাসস্ট্যাণ্ডে আসলো। সঙ্গে সেই টিফিন ক্যারিয়ার। টিফিন ক্যারিয়ার খুলে লোকটি বাকী লাল শাক আর একটা পরোটা মুখে পুরতে লাগলো, যেটা তখন বাকী রেখেছিলো। আরিফ লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো লোকটির খাওয়ার দিকে। লোকটি আবারো আরিফের কাছে এসে বললো,



-এহন তো ট্যাকা পাইছুইন, খাইয়া লইন।

-জ্বি না খাবো না।

-আপনে কি ফিরিশতা? নাওন খাওন লাগে না?

আরিফ হাসলো। লোকটি তার লালশাকে ভরা রুটির একটি লোকমা আরিফের দিকে এগিয়ে দিলো। আরিফ হিতাহিত জ্ঞান ভুলে পাগলের মতো ছোঁ মেরে খাবারটি কেড়ে নিলো।



তার ধারণা ঠিকই ছিলো, মাসে ৫ লাখ টাকা কামিয়ে চাইনীজ খেয়েও যে তৃপ্তি সে পায়নি, আজ সারাদিন কামলা খেটে এক লোকমা রুটি, লালশাক খেয়ে তার থেকে শতগুণ তৃপ্তি সে পাচ্ছে। রুটির টুকরোটি বেশ কিছুক্ষণ মুখে নিয়ে বসে থাকলো সে, বাসী গন্ধ হয়ে যাওয়া লালশাক রুটির লোকমাটি যেন তার কাছে সত্যিই অমৃতের মতো লাগছে।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

হুম সত্যি অর্থই সকল অনর্থের মূল। আমাদের জীবনে এই সুখ হতে আমরা দূরে সরে যাই বলেই যত বিপত্তি।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৫

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: অর্থই অনর্থের মূল কখনোই না। আমাদের সংযমহীনতাই অনর্থের মূল। অর্থ অবশ্যই আমাদের সমৃদ্ধির কারণ। কিন্তু সেটা অর্জন করতে গিয়ে অহঙ্কারী হয়ে যাওয়া বা দাম্ভিকতা ঠিক না। :)

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪৬

সাজিদ ঢাকা বলেছেন: অনেক সময় টাকা থাকলেও জীবনের স্বাদ থাকে না

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: যদি না আমাদের মাঝে জীবনকে উপভোগ করার কামনা না থাকে। :)

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: সুন্দর উপলব্ধি, দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখায়।

ভাল লাগা রইল।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ :)

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর উপলদ্ধিময় লেখা।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

খেয়া ঘাট বলেছেন: , মাসে ৫ লাখ টাকা কামিয়ে চাইনীজ খেয়েও যে তৃপ্তি সে পায়নি, আজ সারাদিন কামলা খেটে এক লোকমা রুটি, লালশাক খেয়ে তার থেকে শতগুণ তৃপ্তি সে পাচ্ছে।+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৯

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: এই লাইনটায় কিছু যৌক্তিক ক্রুটি আছে। সেটা অবশ্য জানবার পরেও শুধরে নেইনি। কারণ অনুগদ্যে যৌক্তিক-অযৌক্তিক দোষ ক্রুটি ধরতে নেই। মূল ঘটনা প্রবাহ বুঝতে পারলেই হলো। তবে ছোটগদ্যে এরকম ভুল না করাই ভালো, এবং সেসব ক্ষেতে আমি বেশ সাবধানী।

এই ভুলটি চোখে পড়বার পরেও যে লাইনটা ভালো লেগেছে, এজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

৬| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩৬

বোকামন বলেছেন:
চমৎকার ! চমৎকার একটি লেখা।
ক্ষুধা নিবারণে খাদ্যেরই প্রয়োজন হয়.....।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০১

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য দরকার অর্থ। আর মনের ক্ষুধা নিবারণের জন্য দরকার মনুষ্যত্ব।

ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

৭| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন


অনেক ++++++++++

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০০

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

৮| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০৩

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: কান্ডারী অথর্ব বলেছেন:

হুম সত্যি অর্থই সকল অনর্থের মূল। আমাদের জীবনে এই সুখ হতে আমরা দূরে সরে যাই বলেই যত বিপত্তি।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০৩

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ব না থাকলে অর্থের কোন দাম নেই। কারণ মনুষ্যত্ব দীনহীনকেও অসীম শান্তি দান করতে পারে, আর ধনীকে অসীম যন্ত্রণা। অর্থ কখনোই অনর্থের মূল না। আমাদের মনের কুপ্রবৃত্তি যদি না আমাদের মনুষ্যত্বকে গ্রাস করে ফেলে। :)

৯| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৮

সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: চমৎকার। গল্পের টারনিং ভাল লেগেছে।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০৪

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

১০| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

আফসিন তৃষা বলেছেন: সুন্দর :)

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:৪৫

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। :)

১১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:০১

সোহানী বলেছেন: সিম্পল রুপকথা.... ইহার বাস্তবতার সহিত মিল খোজার ব্যার্থ চেস্টা না করাই শ্রেয়.......++++

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:৪৫

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। :) গল্প বাস্তবজীবনেরই প্রতিচ্ছবি। :)

১২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:২১

মাক্স বলেছেন: চমৎকার!

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:৪৬

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবা ভাইয়া। :)

১৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:২৮

কালোপরী বলেছেন: :)

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১১

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: :)

১৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:২১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: খুব সুন্দর ! আপনি মাঝে মাঝে অনুগদ্য না লিখে আমাদের জন্য বড় দুই একটা গল্প দিলে আমার ধারণা সবাই খুব উপভোগ করবে।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৪

নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার ভালো লাগার জন্য। :)

তবে সমস্যা একটা হলো, আমি ছোটগল্প লিখতে গেলে সেটি বড় গল্প হয়ে যায়, বড়গল্প লিখতে গেলে সেটি উপন্যাস হয়ে যায়। তবে ছোটগল্প বা অনুগদ্য লিখতে আমার ক্লান্তি লাগে। উপন্যাস লিখতে ক্লান্তি লাগে না। তবে উপন্যাস আমি আবার ভার্চুয়াল লাইফে প্রকাশিত করতে পছন্দ করি না। বই আকারে উপন্যাস প্রকাশিত হলেও এবার একই সাথে উপন্যাসের পাশাপাশি বড় গল্প প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে।

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.