![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি। ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/sarxilkhan
ময়মনসিংহে আসলাম লেখালেখির জন্য। ভেবেছিলাম দুই চারটা কমার্শিয়াল লুতুপুতু গল্প লিখবো। গল্প লেখার জন্য পয়া স্থান কলেজ রোডে বেয়াইয়ের মেসেও উঠলাম। নিকোটিনের স্বাদ নিতে নিতে লেখার গভীরে যাওয়া যায়। এরকম সুন্দর সুযোগ হাতছাড়া করে কে? তাছাড়া এখানে বসেই আমার লেখা বেশকিছু প্রিয় গল্পও লিখেছিলাম। সেই অনুভূতি থেকেই এখানে ওঠা।
কোন এক সময় বেয়াই ও তার মেসের লোকদের নিয়ে রাত জেগে কিছু টালিউডের কমার্শিয়াল কমেডি ফিল্ম দেখেছিলাম। বেয়াই সেই মজাদার মশলাদার সিনেমা মেসের সবাইকে নিয়ে দেখার অনুভূতি মাথায় রেখে দিয়েছে। এবার সেই পুরনো অনুভূতিকে মাথায় রেখেই বললো,
-ও বেয়াই কিছু ফিল্ম ছাড়ো।
-আচ্ছা দিনের বেলা ছাড়ি।
-দিনে তো অফিস থাকে। তুমিও বাইরে বাইরে থাকো, দেখার তো আর চান্স নাই।
-আচ্ছা আজকে রাতে বাদ দাও, কাল নাহয় কোথাও যাবো না। ইফতার সেরেই মুভি দেখবো।
-না! ইফতারের পরে ফিল্ম দেখতে জুইত লাগে না।
-আসলে হচ্ছে কি, এবার তো আর ঘুরাফেরা করতে আসিনি। লিখতে এসেছি। অথচ এক লাইনও লেখা হয়নি। আজকে নাহয় লিখি, কাল দেখো?
-আচ্ছা লেখ।
প্লট সাজিয়ে দুই চার প্যারা লেখার পরেই,
-ও বেয়াই, কদ্দুর লেখলা?
-এইতো।
-কি লেখলা, একটু পইড়া শুনাও দেখি?
-আচ্ছা আগে লিখে নেই। তারপর শোনাই?
-তা কি-ই এমন লেখলা যে কইতেই শরম পাও।
-লজ্জা পাবো কেন? এখনো তো সেভাবে শুরুই করিনি।
-তা কি-ই এমিন লিখলা? এতক্ষণে একটা ছবি ছাড়লে কম কইরা হইলেও নাইচ গান শুরু হইয়া যাইতো।
-আচ্ছা, এখন ছাড়ছি।
ল্যাপটপের মধ্যে থেকে আমার একটা জেপিএজি ছবি রান করলাম।
-ও মা। এইত্তা দেহি তোমার ছবি। নড়েও না চড়েও না।
-না তুমি না ছবি ছাড়তে বললে?
-তাই বইলা খাড়া ছবি।
-আচ্ছা দাড়াও, পাশ ছবি দিচ্ছি।
-আরে রাখো। বই দাও, বই।
-সংগে তো বই আনিনি।
-কি মশকরা দেহো তো দেহি! ফিল্ম দাও।
-ও আচ্ছা। তাহলে লিখবো কিভাবে?
-আজকের দিনটা দয়া কইরা অফ দাও।
-আচ্ছা। কি সিনেমা ছাড়বো?
-ছাড়ো একটা ভালো দেইখা বই।
-কিং আর্থার দেখেছো? ওটা দেখা হয়নি। চলো তাহলে এটাই দেখি।
-এইডা ক্যাডা? কাহিনী ক?
-ব্রিটিশ রাজ পরিবারের গোড়াপত্তনকারী কিং আর্থার। তার বায়োগ্রাফির উপরে মুভি।
-কে করছে? শাকিব খান? ওর বই দেখি না।
-শাকিব খান করবে কেন?
-না। কিং কিং শুনলাম তো তাই। আচ্ছা ভালো কোন হিন্দী বই নাই?
-খেলে হাম জি জান সে দেখেছো? এটা দেখতে পারো।
-কাহিনী কি নিয়া?
-মাস্টারদা সূর্যসেনকে নিয়ে সিনেমা। ভালো লাগবে।
-ক্যাডা করছে?
-অভিষেক বচ্চন, দিপীকা পাড়ুকোন।
-আইচ্ছা ছাড়ো দেহি।
সিনেমা চলছে খেলে হাম জি জান সে। আধা ঘন্টা পার হলো। বেয়াইয়ের চোখ ঘুমু ঘুমু। জড়ানো কণ্ঠে বলছে আমাকে,
-ও বেয়াই, কি ফিল্ম ছাড়লা? সব দেহি ব্রিটিশ আমলের। তুমি কি জানো না, ওরা আমাগোর শত্রু?
-হুমম এজন্যই তো ছাড়লাম। এই। সিনেমা দেখলে ব্রিটিশদের প্রতি তোমার রাগ বাড়বে।
-ধুর বনধ করো। ঘুমই আয়া পড়ছে। আমার সময়ডাই নষ্ট হইলো।
- আচ্ছা।
-এই তুমি যে বই লেখছো, চলে কেমন?
-বই চলে না। গোডাউনে পচছে।
-পচবোই তো। সাড়াদিন এইত্তা ভারী ভারী ছবি দেখবা আর ভারী ভারী বই লেখবা। পড়ো তো হুদা হুমায়ূন আর সত্যজিত রায়, ভালো কিছু লেখবা কেমন, আর ভালো ফিল্ম দেখবা কেমনে? শাকিব খান, রজনীকান্তের বই চলে কেমন দেখছো? এক্কেরে হাউজফুল। ওগোর মতো কইরা তোমার লেখাডিরেও সাজাও, দেখবা ভালো চলবো। সোজা কথায় কমার্শিয়াল বই লেখবা। যারা বই পড়ে হলে গিয়া বই দেখে, ওরা কি পছন্দ করে, এইডা মাথায় রাখবা। ওগোর চাহিদা অনুযায়ী লেখবা।
-টু দ্যা পয়েন্ট ধরেছো। তবে শাকিব খান, রজনীকান্তে বই লেখলো কবে? আমি যতদূর জানি ওরা তো অশিক্ষিত।
-দেহো তো? বেহুদা মশকরা করে। নিজেরে কি খুব জ্ঞানি ভাবো? বিদ্যাসাগর?
-উহু। আমার সমস্যা হলো, আমি তো কমার্শিয়াল গল্পই লিখি, তাও তো আমার বই চলে না। তারমানে বোধহয় শাকিব খান, রজনীকান্তের সিনেমাগুলো খুব উচু মানের।
-না ঐগুলা উচু না। ঐগুলার মাঝে এমন কিছু আছে, যা আমরা ধরতে পারি না। দেখছো না, বেদের মেয়ে জোছনা কেমন হিট করছে? কাহিনী কি? আর দশটা নরম্যাল বইয়ের মতোই।
-টু দ্যা পয়েন্ট ধরেছো।
-যাক এতক্ষণে বুঝে আইছো। ভালা লাগলো। তোমরা লেখকরা যে নিজেগোরে কি মনে কর, দুনিয়ার ব্যাক ব্যাডাই কমার্শিয়াল, আর তোমরা নিজেরা মহান সাহিত্য লেইখ্যা ফালাইছো।
-এটাও টু দ্যা পয়েন্ট ধরেছো। তা আমি কি এখন তেমন কমার্শিয়াল গল্প লেখার চেষ্টা করতে পারি?
-করো করো। আমার সময়ডাই বেহুদা নষ্ট হইলো।
-সেহেরীর টাইমই তো চলে এলো। এতক্ষণ জেগে সেহেরীর পরে তো জাগার আর এনার্জি পাবো না।
-তাইলে কালকে লেইখো।
-আচ্ছা।
অতঃপর সেহেরী খেয়ে ঘুম শেষে ২৮ তারিখের ট্রেনের টিকেট ফেরত দিয়ে ৩১তারিখের টিকিট কেটে ঘরে ফিরলাম। বুকে একরাশ আশা বাকী কয়টা দিন শান্তিতে লিখতে পারবো। দিনশেষে আবারো একই ঘটনার চক্রে বন্দী। কমার্শিয়াল লেখকের বেকার বিনিদ্র রজনী, আশ ট্রে তে জমতে থাকা সিগারেটের নিরীহ ফিল্টার। মাথায় ঘুরে বেড়ানো গল্পের প্লটের আহাজারির সুর। সদা শাশ্বত দুই বেয়াইয়ের রসিকতার বলি কিছু অখাদ্য কমার্শিয়াল গল্প। রসিকতা হলেও কিছু কিছু তথ্য নির্মম বাস্তব সত্য।
ধরণী দ্বিধা হউ।
০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:১৭
নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১৭
মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে
+