নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লক্ষ্যহীন

ইহা কঠোরভাবে একটি রাজনীতি মুক্ত ব্লগ ।।

লক্ষ্যহীন

গন্তব্যহীন যাত্রা, লক্ষ্যের সন্ধানে ছুটছি , মায়া, ভালবাসা আর বাস্তবতার বন্দরে নৌকা ভিড়াই কিন্তু লক্ষ্যের দেখা পাইনা, আবারো ছুটে চলি দিক হারা নাবিকের মত ------চলার পথে ছায়া হয়ে থাকে মানুষের অপার মমতা আর ভালবাসা।

লক্ষ্যহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলোমেলো - ১

১০ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪

১।

বাংলাদেশে এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট হল। সকল পত্রিকাগুলির নিঊজ ফটো অনুযায়ী কোন ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল না, সব মেয়ে আর তারা সফল ভাবে পাশ করেছে। আমার মেঝ খালাত বোন ঊর্মী আশাতীত ভালো রেজাল্ট করেছে। জরুরী মিটিং এর মাঝখানে কল পেয়ে, খবর শুনে আমি মোটামুটি টাস্কি খেয়েছি। কারন, গোবেচারা টাইপ মেয়েটা, কথা বলে খুবই কম আর আমার সামনে তো বলেই না। ও যে এতো ভাল রেজাল্ট করবে তা আমি কল্পনাও করিনি। কেন জানিনা সব মামাতো-খালাতো ভাই বোন গুলো আমাকে শ্রদ্ধাও করে আবার ভয়ও পায়। আর মেয়েরা যে খুব দ্রুত বড় হয় এটা ওদের দেখেই বুঝলাম। গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে, মামাতো-খালাতো সব বোনগুলোকে খবর দিলাম যেন বাসায় আমার সাথে দেখা করে। আমার আপুদের কাছে শুনলাম, সকাল থেকে ওদের টেনশন বেড়ে গেছে। সবাই নাকি খুব ভয়ে আছে, হঠাৎ করে আমি কেন ডাকলাম আর সবাইকে একসাথে। নানা বাড়ি থেকে বিকাল বেলা সবাই হাজির হল আমাদের বাসায়, সবাই ড্রইং রুমে বসে আছে। আমি যাওয়া মাত্র সবাই একসাথে ঊঠে দাড়াল। ভেবে অবাক লাগে, এই গুলা আমাকে এত ভয় পায় কেন ? এদের সাথেতো আমার কথাও হয় না ঠিক মত, আর যুতটুকু হয় আমি তো হাসিমুখেই বলি। কাহিনীটা কি ? এত মানুষ আমাকে পছন্দ করে আর নিজের ফ্যামিলির লোকজন ভয়ে সিটিয়ে থাকে। ওদের বললাম যে তোমরা সবাই অনেক বড় হয়ে গেছ, আমি বাইরে থেকে এসে তোমাদের কয়েকজন কে তো রাস্তায় চিনতেই পারিনি। তোমাদের নতুন বছর একটু নতুন ভাবে শুরু হোক। কাল সবাই শাড়ী পরে আসবে। ওরা একজন আর একজনের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ী করতে থাকল। এরপর যখন আপু পাঁচটা শাড়ির প্যাকেট এনে ওদের সামনে দিল, ওদের সবার চোখ ছানাবড়া। ঊর্মীতো লজ্জায় লাল, ও ভাবতেই পারেনি ও এতো ছোট যে, ওকে কেঊ শাড়ী গীফট করতে পারে। আর ওর শাড়ীটাই আমার সবথেকে বেশী পছন্দ ছিল কেনার সময়। ওদের চোখে মুখের উচ্ছাস দেখে সেদিন মনটা ভরে গিয়েছিল। সবচেয়ে বড়টা, নাম সোনিয়া, ডিগ্রী পড়ে। বলল, আপু এগুলো তো অনেক দামী শাড়ী। শুনে যেই আমি তাকালাম, সাথে সাথে বলল সরি, আর বলবনা। এর পর ওরা সেগুলো পরেছিল কিন্তু শুধু বড় খালাত বোন তমা ছাড়া আর কাঊকেই শাড়ি পরা দেখা হয়নি। তমাকে যেদিন লাল শাড়িটা পরা দেখেছিলাম, শুধু আমি নই, আমার আব্বা, ছোট ভাই কেউই প্রথমে চিনতে পারিনি। দেখতে দেখতে মেয়ে গুলো বড় হয়ে যাচ্ছে, এদের সবাই কেই বিয়ে দিতে হবে। খালার বাসায় কিছুক্ষন আগে ফোন দিলাম, সবাই খুব খুশি। উর্মীর সাথে কথা বলতে চাইলাম, ধরেই বলল ভাইয়া আমি দুপুরে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি ধরেননি। আপনি আম্মুকে বলে দেন যে আমি সিটি কলেজে পড়ব। আপনি বললেই হবে। আমি বললাম ঠিক আছে বলে দেব,আর তোমার জন্য গীফট পাওনা থাকল, এই রেজাল্ট ধরে রাখতে হবে। ফোন রাখার পরে নিজেকে অনেক দায়ীত্ববান বড় ভাই মনে হল।



২।

"গুড টু সি ইঊ আফটার মেনি ইয়ারস, মাই এক্স হিরো এন্ড আয়রোন ম্যান। ইউ বিকাম মোর হান্ডসাম এন্ড স্মার্টার"- আন নোন নম্বর থেকে আসা মেসেজটা পেয়ে মোবাইলের দিকে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। নাম্বারটা পরিচিত কিনা বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ হল না, পরিচিত মনে হল না। বসুন্ধরা সিটির নীচতলায় দাঁড়িয়ে উপরে তাকিয়ে কল্পিত কাঊকে খোজার চেষ্টা করলাম, কিন্তু অজস্র মানুষের ভীড়ে পরিচিত কাঊকেই চোখে পড়লনা। আমার ফ্রান্স থেকে আসা বন্ধু আমাকে ডেকে বলল, "ইস এভ্রিথিং ওকে? আর ইউ লুকিং ফর সামওয়ান ? " নিজেকে বোঝালাম, নাহ এটা হয়ত ভুল করে আসছে আমার কাছে, কেউ হয়ত নাম্বার টিপ্তে ভুল করেছে। সো, শুধু শুধু কল ব্যাক করে টাকা নষ্ট করার মানে হয়না। বন্ধুর হাত ধরে বললাম, "লেটস গো টু টপ ফ্লোর অ্যান্ড হ্যাভ সাম ফুড"।



৩।

আমার হাতে গোনা কিছু ফেসবুক আর ব্লগ ফলোয়ার আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করে অস্থির করে দিচ্ছে, আমার কি হয়েছে ? আমি কেন কোথাও নেই ? না ফেসবুকে না ব্লগে ? বলি, যে প্রচণ্ড ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছি, তারপরেও বলে, 'না অন্য কিছু', বিয়ে করেন্নিতো!!!" আমি হাসি, রহস্যময় হাসি। আর কিছু অন্য ক্যাটাগরীর শুভাকাঙ্ক্ষী একটু বেশীই কেয়ার করে। আমাকে ব্লগ লিখতে নিষেধ করে, কারন ব্লগার দের জীবন নাকি এখন অনেক রিস্কি। আমার যদি কিছু হয় এই ভাবনায় তারা অস্থির। শুনে আমি হাসি, অবিশ্বাসের হাসি। এরকম অনেক শুনেছি, এবং সেদিন বা ব্যক্তি খুব বেশী দূরে নয়। সো ওই পথে আর না, নিজের প্রতি মাঝে মাঝে খুব ঘেন্না লাগে। কত মুল্যবান সময় নষ্ট করলাম জীবনের!!!! সেই পাগলের মত, নদী সাতরে প্রায় শেষ মাথায় এসে দূরত্বের ভয়ে আবার ফিরে যাওয়া। যাই হোক, অনেক বেশী ব্যস্ত সময় কাটে, দিনে ১৬/১৭ ঘন্টা কাজ করি। অনেক অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হই, ঢাকা শহরের বস্তিবাসীদের নিয়ে একটা কাজ করতেছি। ওটা আমার নিজস্ব প্রজেক্ট, ঢাকা শহরের বস্তীবাসিদের জীবন যেন এক অন্য জগত। অনেক অনেক প্রেজেন্টেশন দেই, মিটিং অ্যাাটেন্ড করি, বাহবা পাই, ভালই লাগে। যাক দেশের জন্য কিছু করতে পারছি এটাই ভাল।



৪।

বড় বোনটা ঢাকায় এলো ওদের একটা ট্রেনিঙে দুদিনের জন্য, ওর জীবনে এটা প্রথমবার। এখানেও আফসোস প্রথম দিনটা ওকে নিয়ে ঘুরতে পারলাম না। আমি এয়ারপোর্টে বসে আছি, প্লেন লেট। সো অনেক রাত হল আসতে আসতে। পরদিন ওর ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে ওকে নিয়ে আসলাম। ঘুরলাম কয়েকঘন্টা ঢাকা শহরে। বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম ওকে নিয়ে, খুব খুশি মনে ঘুরলো। ওর মুগ্ধ চোখ দেখে খুব ভালো লাগল। নিজেকে অনেক সার্থক মনে হল। তারপর তিন বোনের জন্য শপিং করলাম। এখানেও আফসোস ওকে খাওয়াতে পারলাম না, তার আগেই যাবার টাইম হয়ে গেল। ওকে গাড়িতে তুলে দিয়ে কেন যেন নিজেকে এই শহরে অনেক একা একা আর আপনজনহীন মনে হল।

৫।

দেশের যে অবস্থা তাতে সবার জীবনটাই রিস্কি হয়ে গেছে। আর যারা ঢাকা শহরে বাস করে তাদেরতো কথাই নেই। কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না যে বাড়ি থেকে সুস্থ ভাবে বের হয়ে আবার সুস্থ ভাবে ফিরে আসতে পারবে। বাবা মা দিনের মধ্যে কয়েকবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে আমি কোথায়, ভাল আছি কিনা। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি, মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও রাগ করতে পারি না। হয়ত আমি যেদিন পিতা হব সেদিন এর থেকেও বেশী টেনশন করব। এই দেশে আসলে আর থাকা যাবেনা। ভাবতেছি আবার চলে যাবো। এই শহরটা কেন যেন কখনোই ভালে লাগেনা। ট্রাফিক জ্যামকে আমি দোষ দেই না, কারন আমি নিজেও জ্যামের একটা কারন। এতো পপুলেশনের শহরে জ্যাম স্বাভাবিক। কিন্তু আমি ঢাকা শহরের ধূলাকে ভয় পাই, ঘৃণা করি। অনেক বেশী ডাস্ট চারদিকে। প্রায় প্রতিদিন রাতেই ১০টার পরে ঘুরতে বের হই। সাথে থাকে এক ছোটভাই ইমন, দুজনে রিক্সায় করে নিরিবিলি রোডগুলোতে ঘুরে ঘুরে ১২টার আগেই ফিরে আসি। একমাত্র এই সময়টাই খুব ভাল কাটে, মনে হয় যেন বিদেশের সেই নির্মল পরিবেশে আছি। আজ ধানমন্ডির দিকে গেলাম, অসাধারন পরিবেশ বাইরে, একটু আগে ফিরলাম। মনটা জুড়িয়ে গেল লেকের ঠান্ডা বাতাসে। প্রতিদিন রাতের মত মনে হল- ঢাকা শহরটাতো খারাপ না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

আরমিন বলেছেন: বাহ!
ভাল লাগলো !
:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.