নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লক্ষ্যহীন

ইহা কঠোরভাবে একটি রাজনীতি মুক্ত ব্লগ ।।

লক্ষ্যহীন

গন্তব্যহীন যাত্রা, লক্ষ্যের সন্ধানে ছুটছি , মায়া, ভালবাসা আর বাস্তবতার বন্দরে নৌকা ভিড়াই কিন্তু লক্ষ্যের দেখা পাইনা, আবারো ছুটে চলি দিক হারা নাবিকের মত ------চলার পথে ছায়া হয়ে থাকে মানুষের অপার মমতা আর ভালবাসা।

লক্ষ্যহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলোমেলো -২

০৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪০

১।

‘এই রিক্সা, এই রিক্সাওয়ালা দাড়াও’- পিছন থেকে চিৎকার শুনে রিক্সাওয়ালার সাথে সাথে আমার পাশে বসা ইমনও পিছনে ফিরে তাকালো। ইমন বলল, ‘ভাই ট্রাফিক পুলিশ আমাদের দাড়াতে বলতেছে’।বললাম তাহলে দাঁড়াও, সমস্যা কি ? ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে এসে বলল, আপনাদের ডাকতেছে আমার স্যার । এবার আমি পিছন ফিরে দেখলাম, দূরে দাড়ানো সানগ্লাস পরিহিত সুদর্শন পুলিশ অফিসার একটি মাইক্রোবাস দাড় করিয়ে কাগজ পত্র চেক করছে। রিক্সা ঘুরিয়ে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। রিক্সাওয়ালা বলছে, স্যার আমিতো সিগ্নাল মাইনাই চালাইতেছি। আমি বললাম, ‘তোমার সমস্যা নেই তুমি যাও’। কাছে এসে দাড়াতেই সার্জেন্ট সুন্দর একটা হাসি দিয়ে মাইক্রো’র ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে। মাইক্রোর মধ্যে দেখলাম ফুল প্যাকেজ ফ্যামিলি গাদাগাদি করে বসা। বিভিন্ন বয়েসের মেয়ে আর মহিলা সেজে গুজে বসে আছে, সবাই উদ্বিগ্ন- হয়ত ওদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। টুপি পরা এক মুরুব্বি সামনের সিটে বসা, চরম বিরক্তি নিয়ে সার্জেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে । এবার সার্জেন্ট এগিয়ে এসে আমাকে বলল, আসসালামুয়ালাইকুম ভাই, কেমন আছেন ? চিন্তে পারছেন এই ছোট ভাই কে ? আমি চিনতে পারলাম না, বুকে লাগানো ব্যাচটির দিকে তাকাতেই সে বলল আমি মেহেদী। ভাই এইবার চিনছেন ? এক ঝলকেই চিনে ফেললাম, আমার খুব ঘনিষ্ট পুলিশ অফিসার বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল সদ্য জয়েন করা ইঊনিভার্সিটি পাশ হাস্যজ্জল ছেলেটির সাথে। আমি রিক্সা থেকে নেমে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, তোমার সুন্ধর চোখ দুটা দেখতে দাও, ঢেকে রাখছ কেন ? হেসে বলে, কি যে বলেন ভাই। আপনি সেদিনো একই কথা বলেছিলেন। আসলেই অসাধারন মায়াবী দুটি চোঁখের মালিক এই ছেলেটি। আমার সাথের ইমন, রিকশাওয়ালা দুজনেই একটু অবাক। আর মাইক্রোবাসটির সবার ক্রুদ্ধ দৃষ্টি এখন আমার দিকে, যেন আমার কারনেই ওদের এত সাধের যাত্রা ভংগ হচ্ছে , আর মেয়ে গুলির মেকাপ গরমে ঘেমে যাচ্ছে। মেহেদি বলল, বস ৫ মিনিট দাড়ান হাতের কাজটা শেষ করি। আমি বললাম, সমস্যা কি এই গাড়ির, ও তখন হাতে থাকা সব কাগজপত্র দেখিয়ে বলল, দেখেন একটা কাগজও ঠিক নাই। আমি বললাম, ঢাকা শহরের ৬০ % গাড়িরই একই অবস্থা। যদি রেন্ট এ কারের হয় তবে, মালিকের নাম মোবাইল রেখে ছেড়ে দাও- যাত্রী গুলো ভোগান্তিতে আছে। মেহেদি তাই করল, ড্রাইভার আমাকে বলল, ধন্যবাদ স্যার। কিন্তু যাত্রীদের দৃষ্টি নরম হল না। অনেক্ষন আড্ডা দিলাম পুলিশ বক্সে বসে। রিক্সাওয়ালাকেও দেকে নাস্তা খাওয়ালাম, দেখলাম সে খুব ভাব নিয়ে আশে পাশের অন্য রিক্সাওয়ালাদের দিকে তাকাচ্ছে আর রয়ে সয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। এটা বোধহয় ওর জীবনের স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে যে, ট্রাফিক পুলিশ ওর হাতে চায়ের কাপ তুলে দিচ্ছে। যাই হোক চাকরীর প্রয়োজনে ঢাকা শহরে বাসিন্দা হতে হল। আত্মীয় সজনহীন এই শহরে নিজেকে খুব একা একা লাগছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একে একে অনেক পুরোনো ও ভাল ভাল নতুন মানুষের সাথে দেখা ও পরিচয় হয়ে যাচ্ছে। আর এই শহরও করে নিচ্ছে আমায় আপন। ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, এই ঢাকা শহরের জীবনটাতো আসলে খারাপ না ।

২।

সেদিন দেখলাম জিগাতলার মোড়ে খুব জ্যাম। একটি এ্যাম্বুলেন্স জ্যামে দাঁড়িয়ে অনবরত সাইরেন দিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ভিতরে রুগী শুয়ে আছেন আর সাথে ৩/৪ জন সহযাত্রী চরম উদ্বিগ্ন চোখে কাঁচের ওপাশ থেকে অসহায় চোখে আশে পাশের জ্যামের দিকে তাকাচ্ছেন। প্রতিটা সেকেন্ড তাদের কাছে এখন মহা মুল্যাবান। সামনের রিকশা গাড়ি গুলো সরে কিছুটা জায়গা করে দিল যেন এ্যাম্বুলেন্সটা বের হয়ে যেতে পারে। তারা কি শব্দের অত্যাচারে জায়গা দিল নাকি সহানুভুতি থেকে সেটা একটা প্রশ্ন। যখনই এ্যাম্বুলেন্সটি বের হতে গেল তখন ডান পাশের রাস্তা থেকে একটি প্রাইভেট কার সদ্য তৈরি ফাকা জায়গাতে ঢুকে দীর্ঘস্থায়ী জ্যামের ব্যবস্থা করে দিল। অবাক হয়ে দেখলাম ভিতরে একজন অরোহী বসে আছেন, যার কোন বিকার নেই এই এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে। উনি মনে হয় এক প্রকার শিওর ওনার কখনও এই রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না বা উনি কোনদিন মারা যাবেন না। মনে মনে ভাবলাম, ‘শালার মানুষের বিবেক, মানবিকতা দিনে দিনে এরকম হারিয়ে যাচ্ছে কেন ? এটা কি এই শহরের দোষ নাকি চলমান আর্থ সামাজিক অবস্থা আমাদের কে অনুভুতিহীন যন্ত্র বানিয়ে দিচ্ছে !!!!’

৩।

গেলাম শুক্রবার ধান্মন্ডির এক মসজিদে নামাজ পড়তে। বাইরে চামড়া পুড়িয়ে দেওয়া কড়া রোদ। ছোট বেলার চর্চা, সুন্ধর ও দামি একটি পাঞ্জাবী পরে পড়তে গেলাম। ৫ তলা মসজিদের কোথাও জায়গা নাই। আছে শুধু ছাদে। কিন্তু এমনই গরম পড়েছে যে মসজিদ সিড়ি বেয়ে ঊঠতেই ঘেমে গোসল হয়ে গেছি। আবারও নিচে নেমে এলাম। দেখলাম কিছু লোক মসজিদে ঢোকার মুখেই লোক চলাচলের জন্য একটু জায়গা রেখে চট ও জায়নামাজ বিছিয়ে কাতার তৈরী করে বসে খুদবা শুনছে। আমিও পিছন্দিকে বসে গেলাম। অবাক হলাম যে নীচতলায় এ সি আছে। এই এসির পানির পাইপ রাস্তায় বের করে দেওয়াতে বছরের ৯ মাস এই রাস্তায় নাকি কাদা থাকে। খুদবা শেষ হলে হঠাত করে এক লোক এসি রুমের জানালা খুলে একটু ঠান্ডা বাতাস উপহার দিলেন কিন্তু তিনি যে ভাষায় আমাদের কে এখানে কাতার করার জন্য রাগারাগী শুরু করলেন তা কোন ভদ্র লোকের ব্যবহার হতে পারে না। উনি বলে যাচ্ছেন আমাদের ছাদে যেতে। আমার পাশের লোক বলল যে ছাদে অনেক রোদ, আমরা ফিরে এসেছি। কিন্তু তিনি নাছোড় বান্দা, এদিকে নামাজ শুরু হয়ে গেছে আর উনি চিৎকার করে যাচ্ছেন। কিছু বলার নাই, শুধু মনে মনে বললাম যে বেয়াদবের দল, তোদের কবরেও এসি লাগায় নিস। এর মধ্যে আর এক জ্ঞানী অল্প বয়সী মুসল্লী এসে আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করলেন যে, কোথায় নাকি একটি মসলা আছে যে বহুতল মসজিদের নিচে ঢোকার মুখে দাড়ালে নামাজ হবে না। এটাও শুনে গেলাম। মনে মনে বললাম, এই মসলার বয়ান দিতে যেয়ে তুই বেটা নিজেই এক রাকাত মিস করবি, আর নবিদের আমলে বহুতল মসজিদ ছিল এইডা তুই জানলি কেমনে ? দিন দিন মসজিদের শান শওকত দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই, এ যেন কে কত সুন্দর বাড়ি বানাতে পারবে , দামী গাড়ি কিনতে পারবে ঠিক সেরকম এক অসুস্থ প্রতিযোগীতা। মসজিদ যত আধুনিক হচ্ছে তত যেন মসজিদের শান্তি চলে যাচ্ছে। গ্রামের কাচা ছোট মসজিদ গুলোয় ঢুকলে মনে হয় যেন প্রিথিবীর বাইরে এক শান্তিময় স্থানে চলে এসেছি। নামাজ শেষ হলেও আরও কিছুক্ষন থাকতে ইচ্ছে হয়, যে অনুভুতি শহরের এই শ্বেত পাথরেরর মাঝে পাওয়া যায় না।

৪।

থাকি পশ্চিম ধানমন্ডির এক চার তলা বাসার নিচতলাতে। ভালোই লাগে, ঢাকা শহরে এইরকম পরিবেশ পাওয়া দুস্কর। বাসার পাশেই অনেক গাছপালা সমৃদ্ধ এক সরকারী কোয়ার্টার, ফলগুলোর বেশীর ভাগই আশেপাশের মানুষই সৎকার করে থাকে । আর ভোর হতে না হতেই হরেক রকম পাখীর কলকাকলি। সেটা বাগান বাড়ির জন্য নয়, কারন আমাদের বাড়ি ওয়ালা খুব সৌখিন মানুষ। ছাদের উপর তিনি প্রায় ২০ লক্ষ টাকার দেশী বিদেশী পাখি পালন করেন। সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাংলে না হয়ে বিষয়টা অনেক কাব্যিক হত। তা না প্রায় দিনই ঘুম ভাঙ্গে ফেরিওয়ালার চিৎকারে। ঢাকা শহরের যত ফেরিওয়ালা আছে সব মনে হয় ভোর বেলা থেকে হাজির হয় এই বাসার সামনে। মাছ, গাছ, শাক, আলু, চাল, পোলাও চাল, নকশী কাঁথা, মেয়েদের পোশাক, ছেলেদের লুঙ্গী, আরও যে কত কি !!!! শুধু বেচতে নয় ওরা আবার কিনতেও আসে- যেমন পুরান বই-খাতা, হাড়ি পাতিল, জামা কাপড় ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে সারা রাত কাজ করে ভোরের দিকে ঘুমাই কিন্তু শান্তি নাই এই ফেরিওয়ালাদের জন্য। একদিন ঘুম ভাঙল এক অদ্ভুদ চিৎকারে, শুনি কে যেন অনেক জোরে জোরে চিৎকার করছে “আই লাভ ইউ” “আই লাভ ইউ” বলে। হঠাত ঘুম ভেঙ্গে ভাবলাম ভুল শুনছি। না ঠিকই আছে, বার বার বলে যাচ্ছে। ভাবলাম তিনতলার মেয়েগুলোর মধ্যে কারো প্রেমিক কিনা। আমাদের তিন তলা আবার ইউনভার্সিটির মেয়েদের ম্যাচ। নাহ, এভাবে কি চিৎকার করে কেউ “আই লাভ ইউ” বলে !!! বিরক্তির চেয়ে কৌতুহুল নিয়েই দরজা খুলে গেটের কাছে গিয়ে মেজাজটা চড়ে গেল। দেখি শালার লেবু ওয়ালা চিৎকার করছে “আই ল্যাবু”, “আই ল্যাবু” বলে। এক ধমক দিয়ে বললাম, সকাল সাড়ে সাতটার সময় লেবু খায় কেউ !!! যাও মিয়া !!! আর একদিন ভোরে শুনলাম চিৎকার করছে ‘এই কাঁদো’, ‘এই কাঁদো’ বলে। গেলাম ঘুম থেকে ঊঠে। যেয়ে দেখি বিছানার চাদর ওয়ালা বলছে “এই চাদর” ‘এই চাদর’। মেজাজটা গরম হয়ে গেল। দিলাম ঝাড়ি, বললাম এই সাত সকাল বেলায় কেউ বিছানার চাদর কেনে!!!! যান মিয়া বিকালে আসেন। কিন্তু চাদর ওয়ালা বলল, উপরের এক আপা আসতে বলছে সিঙ্গেল চাদর নিয়ে। আমি সজরেই বললাম, আপা এখন ঘুম থেকে ওঠে নাই, ১১ টার পরে আসেন। হঠাত শুনি উপর থেকে এক কোকিল কন্ঠী বলছে ‘এই আপনি দাড়ান, চাদর দেখব’। বিরক্তি নিয়ে উপরে তাকালাম, দেখি আমার থেকেও বেশি বিরক্তি নিয়ে তিনি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কি আর করা !!!! রাতে আর্লি ঘুমাতে হবে এখন থেকে।

৫।

জামিল নামে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছিল ২০০৮ সালে রম্না পার্কে। ত্তখন ঢাকায় প্রথম প্রথম এসেছি চাকরীর সুবাদে। ভোর বেলায় রম্না পার্কে যাই এক্সারসাইজের জন্য। একদিন দেখি এক ছেলে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, ভাইয়া এই দড়িলাফ টা কি আপনার ? আমি বললাম হ্যা। সে জিজ্ঞেস করল, একটু নিতে পারি ? আমি তখন বেলী দিচ্ছি। বললাম ‘থিঙ্ক এ্যাজ ইয়োরস বাট ডোণ্ট ফরগেট টু গিভ ঈট ব্যাক’। বুঝলাম বোঝে নাই। প্রায় প্রতিদিনই এটাকে কাউকে না কাঊকে ধার দিতে হত, আর এই একই ডায়লগ দিতাম সবাইকে। বললাম নেন সমস্যা নেই। তারপর থেকে প্রতিদিনই ও আসত নিতে , কিছু ক্ষন পরে আবার ফেরত দিয়ে যেত। এভাবে আস্তে আস্তে পরিচয় হল। ও পুরান ঢাকায় থাকে, ব্যবসা করে। এরপর সপ্তাহে তিনদিন রাত দশটার দিকে আমার বাসায় আসত। আর প্রতিদিনই কিছু না কিছু খাবার নিয়ে আসত, আর কোন কাজ নেই শুধু বসে থাকত। আমি আমার মত কম্পুটারে কাজ করতাম ও বসে থেকে টুক টাক গল্প করত। একবার ওর বাসায়ও বেড়াতে গেলাম আমার ম্যাচের ছেলেপেলেদের নিয়ে। পুরান ঢাকা ঘুরিয়ে দেখাল আমাদের। বছর খানেক পর আমি বিদেশে চলে গেলাম, বলেছিলাম ওকে ফোন দিব মাঝে মাঝে। কিন্তু পড়াশুনার ব্যস্ততায় তা হয়ে ওঠেনি। এরপর দুবছর পর ফিরলাম কিছুদিনের জন্য। হঠাত দেখি জামিলের ফোন কয়েকদিন পরেই। অবাক হলাম, জিজ্ঞেস করলাম , আমি দেশে জানলা কিভাবে ? ও বলল যে, আমি যাবার পর ২ মাসের মধ্যে ওকে ফোন না দেওয়ায় ও খুব কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু প্রায় আমার নাম্বারে ও রিঙ দিত। এভাবেই আমার নাম্বারে ঢূকে গেল হঠাত। আমি দেশে জেনে, সেতো খুশি আর আমার সাথে দেখা করার জন্য পরেরদিনই আমার বাড়ি খুলনায় আসতে চায়। বললাম, আমি আবার কিছুদিনের মধ্যে ফিরে যাবো, ঢাকায় আসতেছি দেখা হবে। এর পর দেখা হয়েছিল এবং যথানিয়মে আমি আবারও চলে গেলাম বাইরে। ও মাঝে মাঝে আমাকে ওখানেও ফোন দিত কিন্তু আমার দেওয়া হত না নানান ব্যস্ততায়। প্রায় দু বছর পর, ৬/৭ মাস হল আবার দেশে ফিরলাম। চাকরী নিলাম এক বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। অনেক ব্যাস্ত থাকি । জামিলকেও ফোন দেওয়া হয়না আর দিলেও ধরতে পারিনা সেই একই অজুহাত, ব্যস্ততায়। এখন বুঝি সময়ের মূল্য কি জিনিস। কাজ করতে করতে মাথা খারাপ হবার জোগাড় হয়। সেদিন কথা হল ওর সাথে। শুনলাম বিয়ে করেছে। আমাকে দেখতে চায় ও আর ওর বৌকেও দেখাতে চায় আমাকে। কিছুটা ভাঙ্গা গলায় বলল, আপনি আমাকে পছন্দ করেন না জানি, কিন্তু আপনাকে আমি খুব ভালবাসি। আপনাকে দেখলে কেন যেন খুব আপন মনে হয়। মনে হয় যেন আমার আপন বড় ভাইয়ের থেকেও বেশী। আপনাকে দেখলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। আপনি খুব ভাল আর সুন্দর মনের একজন মানুষ। আপনার নতুন বাসাটা কোথায় বলেন আমি আসব। কিন্তু ওকে আবার আগের মত আসত দিব কিনা ভাবছি। রক্ত সম্পর্ক হীন, চলতি পথে দেখা হওয়া এইরকম আরও অনেক মানুষের ভালোবাসায় আমি সিক্ত সর্বদা, নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। কিন্তু জামিলের মত এই রকম মানুষের ভালোবাসা আর তার প্রকাশ অনেক সময়ই বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে । জামিলের বলা কথাটা নিয়ে সেদিন ভাবলাম, আসলে আমি ভাল নই আমার আশে পাশের মানুষেরাই ভাল আর তাদেরই প্রতিফলন আমার মাঝে হয়ত দেখা যায় ; আর আমি সুন্দর নই, আমার জীবনটাই আসলে অনেক সুন্দর।



এলোমেলো-১

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: আই লাভ ইউ= অ্যাই লেবু!! ;) ;) ;) ;)

০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৭

লক্ষ্যহীন বলেছেন: হাসেন ক্যান ভাই :) :)

২| ০৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: ভাল লাগছে................. থ্যাংকু

০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮

লক্ষ্যহীন বলেছেন: আমাবর্ষার চাঁদ আমার ব্লগে দেখে আমারও ভাল লাগছে :D :D

৩| ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০২

সালমা শারমিন বলেছেন: খুব ভালো লাগছে! মানুষেট গোপন সত্ত্বার ভালবাসাটাকে আমরা বেশির ভাগ সময় ই মূল্যায়ন করতে পারি না। যদিও গোপন ভালবাসাটাই সত্য, স্বার্থহীন আর চিরন্জিব।

০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১

লক্ষ্যহীন বলেছেন: হুম ঠিক কথা শারমিন। আমার মনে হয় মায়ের পরে পৃথিবীতে অল্প কিছু মানুষ আছে যাদের এই নিঃশ্বার্থ ভাবে ভালোবাসার ক্ষমতা আছে । ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.