নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লক্ষ্যহীন

ইহা কঠোরভাবে একটি রাজনীতি মুক্ত ব্লগ ।।

লক্ষ্যহীন

গন্তব্যহীন যাত্রা, লক্ষ্যের সন্ধানে ছুটছি , মায়া, ভালবাসা আর বাস্তবতার বন্দরে নৌকা ভিড়াই কিন্তু লক্ষ্যের দেখা পাইনা, আবারো ছুটে চলি দিক হারা নাবিকের মত ------চলার পথে ছায়া হয়ে থাকে মানুষের অপার মমতা আর ভালবাসা।

লক্ষ্যহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখনও আমি হিমু,মিসির আলী, শুভ্র'র নেশায় নেশাগ্রস্থ :( :(

২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭



গত রাত থেকে নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি অবিরাম যে আমি খুব ব্যস্ত কাজ নিয়ে, এখন লেখা লেখি করার সময় নেই কিন্তু নিজের কাছে নিজেই হেরে গেলাম। কারন সত্তার গভীর থেকে উথলে উঠছে আবেগ আর ভালোবাসা যা প্রকাশ না করলে সেই মহান ব্যক্তিটির প্রতি অশ্রদ্ধা করা হবে। হ্যা হুমায়ুন আহমেদ স্যারের কথাই বলছি। যিনি ছিলেন একজন স্বপ্ন দ্রষ্টা। তার লেখা প্রথম বইটি পড়েছিলাম দারুচিনি দ্বিপ। প্রথমেই বলি বইটি কিভাবে পেলাম- তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, বছর খানেক হলো সেবা’র বই দিয়ে গল্পের বই পড়া শুরু করেছি। নেশা তৈরী হচ্ছে, নিজেই বুঝতে পারছিলাম এক না ফেরার নেশায় বন্দী হয়ে যাচ্ছি। মায়ের পিটুনী, শিখকদের পিটুনী কিছুই রুখতে পারছে না। আমার লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়া আম্মার কাছে চরম অপরাধের। খুজে খুজে বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা আমার সব বই গুলো আম্মা নিয়ে গেলো। স্কুলে এসে পড়ি, বাসায় ফেরার আগে বন্ধুর কাছে রেখে আসি। সকালে অধির হয়ে থাকি কখন আবার বইটি হাতে পাব। একদিন তুমুল বৃষ্টিতে স্কুল সহ স্কুলের সামনের রাস্তা ডুবে গেল। হাটু পানিতে হাটছি হঠাত দেখলাম একটি বই পানিতে ভেসে যাচ্ছে আমাদের পাশ দিয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে বইটি তুললাম। ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে, বইটির নাম “দারুচিনি দ্বীপ” লিখেছেন হুমায়ুন আহমেদ। চিনিনা লেখক কে। আমার বন্ধু বলল ফেলে দে, ফেলে দে। কিন্তু কেন যেন ফেলা হল না, বাসায় নিয়ে বইটি আপুকে দিলাম শুকানর জন্য। আমার আপু, কাঠের চুলার পিঠে রেখে। রোদে দিয়ে বইটিকে সযত্নে শুকিয়ে ফেললো। কিন্তু পাতা গুলো হয়ে গেল খড়খড়ে আর বাধাই খুলে গেলো। দেখলাম আপু পড়ছে সারাদিন ধরে। পড়ে আমাকে বলল, তুই পরে পড়িস, আমি আর একবার পড়ব- খুব ভালো বই। এতে আমার আগ্রহ বেড়ে গেল, স্কুল থেকে ফিরে পড়তে বসলাম আর শেষ না করে উঠতে পারিনি। নিজেকেই মনে হচ্ছিল বাস্তব কোন কাহিণীর অংশ অথবা আমি শুভ। এত চমৎকার লেখা !!! এরপর একবন্ধুর কাছে আবদার করলাম যে ওদের বাসায় হুমায়ুন আহমেদের কোন বই আছে কিনা। ও বলল, ওর আব্বু পড়ে, কাল এনে দিবে। এনে দিল “নন্দিত নরকে”, বইটি পড়ে পৃথিবীকে খুব কঠিন মনে হল, নন্দিত নরকের ঘোর অনেকদিন ছিল আমার ভিতর। এরপর সেবা প্রকাশনির পাশাপাশি হুমাউন আহমেদের বই পেলেই পড়তে লাগলাম। অনেকদিন পরে পড়লাম “দেবী”, পড়ার পরে নিজেকে মিসির আলী মনে হতে লাগল। দীর্ঘ দিন মিসির আলী বাস করলেন আমার ভিতর। দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতা আসল, প্রতিটি জিনিস খুটিয়ে দেখা শুরু করলাম। এরপর আমার বন্ধু তুহিনের মধ্যমে পেলাম হিমুর বই। অসাধারন সেই বইটি পড়ে ফেললাম কয়েকবার। চরম ভাবে ডুবে গেলাম হিমু, মিসির আলী তথা হুমায়ূন এর নেশায়। খুজে খুজে পড়ে ফেলতে লাগলাম তার লেখা সব বই অপেক্ষায় থাকতাম নপ্তুন বই বের হবার । প্রেমে পড়ে গেলাম এই যাদুকর লেখকের সাবলিল ভাবে তুলে ধরা তার বাস্তবতা পূর্ন লেখার। আর তার তৈরী নাটকগুলো তো এখনও স্মৃতিতে অম্লান। এরপর দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছর ধরে তার বই পড়ে যাওয়া। দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে খুজে খুজে তার বই পড়তাম, ইউটিউবে নাটক দেখতাম। যেদিন জানতে পারলাম এই যাদুকরের ক্যান্সার ধরা পড়েছে- শুনে স্তব্দ হয়ে ফেলাম, শঙ্কিত হলাম এই ভেবে যে, মারা যাবেন নাতো আমার প্রিয় হুমাউন স্যার, আমার যাদুকর !!!! প্রতিদিন পেপার গুলো খুলে দেখতাম স্যারের কোন খবর আছে কিনা, আপডেট জানতাম যেভাবে পারতাম। খুবই ভালো লাগল যে আমেরিকায় চিকিৎসা রত অবস্থায় তিনি বই লিখলেন কয়েকটি। এরপর ওনার অপারেশন এর দিন, ফেসবুকে সবার কাছে দোয়া চাইলাম যেন স্যার সুস্থ হয়ে ওঠেন। অপারেশন সাক্সেস্ফুল হল, হলাম শংকামুক্ত। ভাবলাম স্যার দেশে ফিরে আসলে, ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দিবেন, হাত পাতবেন সবার কাছে পায়ে হেটে। আমিও দেশে ফিরে যাবো, শামিল হব স্যারের সেই মহান যাত্রায়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিলো অন্য রকম। নিউজে পড়লাম ওনার অবস্থা আবার আশঙ্কা জনক। এর পর একদিন রাতে এক ছোটভাই আমার রুমে ফোন দিয়ে বলল, “আপনার হুমায়ূন স্যার তো মারা গেছেন”। শুনে খুব রাগ হল ওর উপর, বললাম না জেনে বাজে কথা বলিস কেন ?? কোণ পত্রিকায় তো আসেনি। ও বলল, ফেসবুকে নাকি দেখছে কোন একটা পেইজে। চরম শংকা নিয়ে আমিও লগিন করে খুজতে থাকলাম, এর কিছু ক্ষন পর দেখি নিঊজেও আসছে। আমি পড়ছি আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মনে হল কোন এক আপনজনকে হারালাম চিরতরে। অস্রু সজল চোখে তখন লিখলাম :



“শুভ্র তার ভারি, মোটা কাচের চশমা পরে এই সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখবেনা, ছড়াবেনা তার শুভ্রতা। হিমু আর খালি পায়ে ঢাকা শহরের নির্জন অলিগলি তে হাটবেনা, রুপাকে আর জ্যোৎস্না ভরা বারান্দায় অপেক্ষায় রাখবেনা । মিসির আলী আর অলৌকিকতার ভিতর যুক্তি ও লৌকিকতা খুজবেনা। বিষাদে ভরে গেল মনটা, চোখ ফেটে কান্না আসছে। এরা সবাই চির নির্বাসনে চলে গেছে, তাদের এ অভিমান আর ভাংবেনা, আমরা আর পাবোনা তাদের আমাদের মাঝে। সন্ধ্যা থেকে ভাবছিলাম হুমায়ুন স্যারের সুস্থতা কামনা ও প্রার্থনা মুলক একটা পোষ্ট দিব আমার ব্লগে। এমনকি একটু আগেও ভাবলাম, যে ঘুম আসছেনা যখন এখনই দেই। আর মাত্র শুনলাম আমাদের আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন। তার ঋণ শোধ হবার নয়, এ এক অপুরনীয় ক্ষতি। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।”



এই যাদুকর আমাদের শুন্য করে, আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে শুন্য করে, কোটি ভক্তকে কাদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এই মৃত্যু তার লেখনীতে নেশাগ্রস্থ আমার কাছ থেকে যেন হঠাৎ করে কেড়ে নিল নেশার উপকরণ। কিন্তু এই নেশা এখনও ছাড়াতে পারিনি, তার লেখা পূরোনো বই গুলো বার বার একই রকম মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে যাই। গতকাল স্যারের মৃত্যুর একবছর পূর্ন হল। আল্লাহ এই যাদুকরকে বেহেশত নসীব করুন।



ছবি সুত্রঃ গুগল

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আল্লাহ এই যাদুকরকে বেহেশত নসীব করুন
সুন্দর পোষ্ট
শুভকামনা

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আল্লাহ এই যাদুকরকে বেহেশত নসীব করুন
সুন্দর পোষ্ট
শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.