![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
রতন অফিস থেকে বের হয়েই সারা শরীর ঘামে ভিজে গেলো। চৈত্রের প্রচণ্ড গরম পরেছে, মনে হচ্ছে এখুনি গরমে সিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রতিদিন সে হেটেই ব্যাংক এ যান কিন্তু আজ কিছুতেই হেটে যাওয়া যাবে না। সে রিকশা খুঁজতে থাকল। এম্নিতে প্রতিদিন রিকশার জন্য হাঁটা যায় না আজ একটাও রিকশা নেই। তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো এম্নিতেই তার মন টা আজ অনেক বিক্ষিপ্ত। নীলার সাথে আজও অনেক বড় ধরনের ঝগড়া হয়েছে, এবার মনে হয় সম্পর্ক টা ভেঙ্গেই যাবে। ঝগড়ার বিষয় টা খুবই তুচ্ছ। আজ নীলার ছোট বোনের জন্মদিন ছিল আর রতন সেটা ভুলে গেছে, মাঝে মাঝে রতনের মনে হয় মেয়েরা ঝগড়া করার জন্যই সম্পর্ক করে। আর হাঁটা যাচ্ছে না সে একটা গাছের নিচে দাঁড়ালো। রতন দেখলো দূর থেকে একটা খালি রিকশা আসছে। রতনের রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে মনে হোলো রিকশাওয়ালার বুঝি এখনি অজ্ঞেন হয়ে পরে যাবে, চোখ দুটোতে রক্তিম আভা, মনেহয় দুই তিন দিন ধরে সে ঘুমায় না। রতন বলল গুলসান ২ নাম্বার যাবা। রিকশাওয়ালা কোন জবাব দিলো না আবার চলেও গেলো না। তার মানে সে যাবে, রতন লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে গেলো। তখনই তার মনে হোল বিরাট ভুল হয়ে গেসে দাম ঠিক করে ওঠা উচিৎ ছিল। এরা বড়ই বদ প্রকৃতির হয় ভাব এমন করবে যে সে কিছুই জানে না। ভাড়া নাওয়ার সময় একটা ক্যাচাল করবে। রতন এগুলো ভাবতে ভাবতে যাচ্ছিলো তখন ই তার মোবাইল ফোন বেজে উটলো। সাথে সাথে ই সে বুঝল নীলা ফোন করেছে, কারন সে কিছুদিন আগে যে মোবাইল সেট টা কিনেছে সেটাতে আলাদা আলাদা নামে রিংটন দাওয়া যায়। নীলার নামে খুব সুন্দর একটা রিংটন দাওয়া আছে, শুনলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। ধরবে না ধরবে না করেও রতন ফোন টা ধরল সাথে সাথে ওই পাশ থেকে নীলা ঝাঁজালো গলায় বলল, তুমি যে এতো বড় একটা ভুল করেছো একবার ও কি তোমার মনে হচ্ছে না।
রতন কি বলবে বুজতে পারছে না,
নীলা বলল চুপ করে আছো কেন? আমার ভাবতেও কষ্ট হয় এক সময় এই তুমি আমার সব কিছু মনে করে রাকতে। এটা বলেই নীলা ফোন কেটে দিলো।
রতন মনে মনে ভাবলো এক সময় এই নীলার চোখেও আমার কোন দোষ ধরা পরত না। আগের দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে রতন রিকশা ভাড়া দিয়ে ব্যাংক এ ঢুকে গেলো। টাকা জমা দিয়ে তাকে আবার তারাতারি অফিস এ যেতে হবে। রতন স্লিপ লিখে কাউন্তার এ দাঁড়ানোর সাথে সাথে
তার সিরদ্বারা দিয়ে শীতল স্রত বয়ে গেলো কারন তার কাধে ঝুলানো ২৫ লাখ টাকার ব্যাগ টা নেই।
২
মজিদ মিয়ার রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি সে পরে যাবে। সে মনে মনে বলল যত কষ্টই হোক তাকে রিকশা চালাতেই হবে। মজিদ মিয়া ঢাকা শহরে এসেছে প্রায় ১২ বসর। তার এখনও মনে আছে নিলুফা কে নিয়ে ঢাকা আসার কথা। কত কষ্টই না করেছে তারা। কিন্তু মজিদ মিয়া খুব পরিশ্রমী সে তার দিন বদল করেছে। এই ১২ বসরে সে একটি রিকশা কিনেছে। ব্যাংক এ নগদ প্রায় ১৬৩৬০ টাকা জমিয়াছে। তার ১০ বসরের একটা মেয়ে আছে আমেনা। আমেনা মজিদ মিয়ার খুব আদরের মেয়ে। প্রতিদিন বাসায় এসেই আমানাকে আগে না দেকলে তার অস্তির লাগে, মেয়ের একদিন বিয়ে হবে মেয়েটা চলে যাবে পরের বাড়ি ভাবতেই মজিদ মিয়ার চোখ ভিজে যায়। সব কিছু ভালই যাচ্ছিলো, মজিদ মিয়া ভাবত সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। একদিন মজিদ মিয়া দুপুর বেলা ভাত খেতে বাসায় এলো, এসেই বলল মা আমেনা এক গেলাস পানি দাও। বাবার গলা সুনে আমেনা পানি নিয়ে ছুটে এলো। তাকে পানি দিয়ে ই আমেনা বলল আব্বা মাথাডা অনেক বিষ করে, বলেই সে অজ্ঞেন হয়ে পরে গেলো। মজিদ মিয়া কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো । তারপর পাগলের মত মেয়েকে নিয়ে ছুটে গেলো ডাক্তার এর কাছে। নিলুফাকে বলার কথাও তার মনে রইলো না। ডাক্তারএর কাছে নিতে নিতে আমেনার জ্ঞেন ফিরে এলো, আমেনা বাবার দিকে তাকিয়ে বলল আব্বা বিষ গেসেগা। তবুও মজিদ মিয়া মেয়ে কে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলো। ডাক্তার রুহুল কবির কিছুক্ষণ আমেনাকে দেখে বলল ভয়ের কিছু নেই মাঝে মাঝে মাইগ্রেন এর ব্যাথা হলে রুগি অজ্ঞেন হয়ে যেতে পারে। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি ঠিক হয়ে যাবে। মজিদ মিয়া কিছুটা সস্তির নিশ্বাস নিলো। কিন্তু মজিদ মিয়ার সস্তি ৯ দিনের দিন চলে গেলো, আমেনা আবারও অজ্ঞেন হয়ে গেলো। এবার ডাক্তার অনেক গুলা টেস্ট দিয়ে দিলো। টেস্ট করাতেই মজিদ মিয়ার ব্যাংক এর সব টাকা চলে গেলো, তাতেও তার কোন আফসস নেই, টেস্টে ভালো কিছু আসলেই সে খুশি। সে তিনটা খাসী মানত করে ফেলল, দরকার হলে সে তার রিকশা বিক্রি করে খাসী করবানি দিবে। নিলুফা ২০০ রাকাত নামাজ মানত করে ফেলল। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন লাভ হলো না। সব কিছু ছাপিয়ে আমেনার ব্রেন টিউমার ধরা পরলো। গত ৬ মাস ধরে আমেনা পিজি তে, নিলুফা মেয়ের সাথে পিজিতেই থাকে। ডাক্তার বলে দিয়েছে আর বড়জোর ২ মাস, অপারেসন করা যাবে কিন্তু প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগবে তাও বাঁচার সম্ভবনা মাত্র ১০ ভাগ। এগুলো ভাবলেই মজিদ মিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে। মাঝে মাঝে ভাবে আল্লাহ্ পাক এতো নিষ্ঠুর কেন।
চলবে............
পাঠকদের অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্ট করে পরার জন্য। কেমন লাগলো প্লিজ জানাবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২
এহসান সাবির বলেছেন: চলুক..