![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরী বসে আছে বিশাল এক হোটেল এর রুম এ। রুম টা খুব সুন্দর, এক পাসে ২ টা সোফা সেট তার পাশে চীনা মাটির ফুলদানী। সোফা টা খুব নরম বসলেই অর্ধেক শরীর ডুবে যায়। সামনের টেবিল টা শ্বেত পাঁথরের। টেবিলের উপর প্লেটে কিছু পিঁজার টুকরা। পিঁজার দিকে তাকিয়েই পরীর মনে হলো সে সকালের পর থেকে কিছু খায়নি। সকালে বাসা থেকে বের হয়ার সময় একটা রুটি চা দিয়ে খেয়ে বের হয়েছে। পরী বসে আছে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে। যেই লোকটার কাছে পরী এসেছে তাকে সে চিনে না, তার নামও জানে না। কিন্তু লোকটা যে বড় শিল্পপতি টা বোঝা যাচ্ছে। কারন তার কাছে যে ফোন গুলো আসছে তার কথপতথন শুনলেই বোঝা যাচ্ছে ফোন গুলো গুরুত্বপূর্ণ। লোকটা পরী কে বসিয়ে রেখে বাথরুম ঢুকেছে। পরী যে কারনে এখানে এসেছে তার প্রয়োজন শেষ। তারপর ও কেনও তাকে বসিয়ে রেখেছে তা পরিস্কার না। প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে তাদের মত মেয়েদের কেউ বসিয়ে রাখেনা। পরীর আজ তারাতারি বাসায় যেতে হবে, কারন তার মা রহিমা বেগম পরীর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। বাসায় বাজার নেই। পরী বাজার করে নিয়ে গেলে তার মা রান্না বসাবে। পরী ঘড়ি দেকলো আটটা পঁচিশ বাজে। পরীর এই অবস্তায় বসে থাকতে খুব ঘিন্না লাগে। তারপর ও তাকে বসে থাকতে হবে, সে এখনও টাকাটা হাতে পায় নি। পরী মনে মনে চিন্তা করছে আজকে বাজার থেকে একটু মাংস কিনতে হবে। তার ছোট বোনটা খারাপ খাবার একদম ই খেতে চায় না। পরীর ছোট বোন সীমার বয়স ১৬ বছর। এই বয়সের মেয়ে রা সংসারের অবস্তা ভালো করেই বুঝার কথা, কিন্তু সীমা একদমই বুঝতে চায় না। যেমন গতকাল রাতে সে ভাত খেতে বসেই বলল রোজ রোজ আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে আমার ভালো লাগে না। সাথে সাথে রহিমা তার মেয়ের গালে জোড়ে চড় বোসিয়ে দিল। সীমা মার দিকে হতভম্ব হয়ে কিছুখন তাকিয়ে থেকে উঠে চলে গেলো। পরীর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, সে মনে মনে বলল বেচে থাকার জন্য যে গ্লানি মাখা জীবন সে বেছে নিয়েছে সেই আঁচ সীমার গায়ে কখনওই সে লাগতে দিবে না।
লোকটা বের হয়েই বলল আপনি এখনও জাননি? পরী কে সবসময় সবাই তুমি বলেই সম্বোধন করে, তার মত মেয়েদের কেউ আপনি বলে না। কিন্তু এই লোকটা প্রথম থেকেই আপনি করে সম্বোধন করছে।
-পরী কিছু বলল না।
-ওহো আপনাকে তো টাকাই দাওয়া হইনি। বলেই সে তার মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাঁকার একটা নোট পরীর দিকে বের করে দিলো। পরী নোট টা তার ব্যাগ ভরতে ভরতে উঠে দাঁড়ালো।
পরী বাইরে পা রাখতেই ঝির ঝির বৃষ্টি পরতে শুরু করলো। তার ব্যাগ এ সবসময় ছাতা থাকে কিন্তু আজ কি মনেকরে যেন ছাতাটা আনেনি। পরী রিক্সা নিতে পারছে না কারন এক হাজার টাঁকার নোট টা ছাড়া তার ব্যাগ এ শুধু মাত্র পাঁচ টাঁকার একটা নোট আছে।
পরী বাজারে ডুকেই আধা কেজি মাংস কিনল। পাঁচ কেজি চাল আর কিছু তরিতরকারি কিনে বাসার দিকে রওনা হোলো। পরী বাসায় ঢুকেই দেখে তাদের বাড়িওয়ালা রশিদ মোল্লা বসে আছে। পরীকে ঢুকতে দেকেই সে বলল -
আম্মা জি কেমন আছেন?
-জি ভালো, আপনার শরীর কেমন চাচা?
-বুড়া মানুষের আবার শরীর জর ঠাণ্ডা কাশি লেগেই থাকে। যাই হোক। একটু আগেই আপনার মার সাথে আপনার বিষয় নিয়েই কথা বলছিলাম। আপনার মত মেয়ে এখন দেখাই যায় না, পরিবারের জন্য জীবন দিয়ে দিচ্ছেন।
-তো আম্মাজি একটা কথা, লোকজন বলতেসে আপনি নাকি প্রায় রাতেই দেরি করে বাসায় আসেন। তবে লোকজন যাই বলুক আমি কিন্তু বলসি আমার আম্মাজির মত মানুষই হয়না।
-ধন্যবাদ চাচা
- আমি অন্য একটা কথা বলতে আসছিলাম আপনার আম্মার সাথে আলাপ হইসে, তারপরও আপনি যখন আসছেন আপনাকে বলেই যাই। তো আম্মাজি বাড়িটা যে সামনের মাসে ছাইরা দিতে হয়।
-বলেন কি এই বারো দিনে আমি বাসা খুজব কোথায়?
-তাতো ন্যায্য কথা, কিন্তু আম্মাজি আমি যে নিরুপায়। আমার শালা আসতেসে তার পরিবার নিয়া।
-চাচা দয়া করে আরেকটা মাস সময় দিন।
- সময় দিতে পারলে আমার চেয়ে বেসি খুশি কেউ হইত না কিন্তু আম্মাজি আমি যে নিরুপায়। তো আম্মাজি আমি আসি, এক তারিখে কিন্তু আমি আমার বাসা খালি চাই। আপনে তো জানেনই আমি আবার একদম নির্বিরোধী লোক।
পরী তার মার সাথে কিছু বলল না সোজা চলে গেলো বাথরুমে,তাকে আগে গোসল করতে হবে। রহিমা বেগম রান্না বসিয়েছে, সীমা মার পাশে এসে বসেছে। সে একটু পর পর বলছে মা রান্না কত দূর। পরী এসে বোনের পাশে বসলো। আজ পূর্ণিমা চাদের আলোয় ফকফক করছে সারা বাড়ি, রহিমা তাকালো তার দুই মেয়ের দিকে। চাদের আলোয় তার মনে হোলো তার পাশে দুটা পরী বসে আছে। তার মন টা হঠাৎ খুব ভালো হয়ে গেলো। তিনি মনে মনে ভাবলেন বেচে থাকার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে।
পাঠকদের অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্ট করে পরার জন্য। কেমন লাগলো প্লিজ জানাবেন।
২| ২৯ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬
এম এস আরেফীন ভুঁইয়া বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প তবে অল্প সময়ে শেষ করে দিলে, আমাদের দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন
শুভ কামনা ,,,
৩| ৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৬
আরাফাতুল আলম বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩
এহসান সাবির বলেছেন: বঁচে থাকার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে......