![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লাল শাড়ী দিয়ে পেচানো এক জীবন্ত মূর্তির চারিপাশ ঘিরে আছে অনেকগুলো মানুষ। সমস্যা হচ্ছে মূর্তিটা কথা বলছে না। দ্বিতীয়বারে যখন ঘিরে থাকা মানুষগুলোর মধ্য থেকে একজন মহিলা বললেন কবুল ক মা কবুল ক। পেচানো মূর্তিটি এবার কথার বদলে গোঙ্গানোর মত শব্দ করল। মূর্তির শরীরটা কাপুনী দিল। কেউ আরেকজন বলল মেয়েদের শরম একটু বেশী, "কবুল না কইলেও চলবে শুধু মাথাটা ঝাকালেই হবে"। এরই মধ্যে আরও দু একজন বলল এইত মাথা ঝাকাইছে মাথা ঝাকাইছে। প্রবল কান্না চাপাতে গিয়ে এরকম মাথা ঝাকিয়ে উপর নিচ হয়। আর তাই দিয়ে একটা মানুষের সারাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার আদায় হয়ে যায়? শাড়ী দিয়ে পেচানো ইন্টারমিডিয়েটে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শায়লা নামের জীবন্ত এই মূর্তি না বুঝলেও আমি বুঝেছিলাম।
এবার কবুল বলার পালা এল বরের। বর দৃষ্টিশক্তিহীন, এলাকায় পরিচিত কানা কালু হিসেবে। কাজী শপথ বাক্য শুনালেন। কানা কালুকে উদ্দেশ্য করে বলা হল আলহামদুলিল্লাহ বল। কানা কালু কানেও কম শুনে। এই কানা কালু যে হাবাগোবা সবাই এটা জানে। আর এই কানা কালুর সাথেই বিয়ে হচ্ছে শায়লার। ছোটকালে শায়লার মা মারা গিয়েছিলেন। এস.এস.সি পাশ করার পর হঠাত একদিন তার বাবাও মারা গেলেন। এরপর আপন বলতে এই কানা কালুর মা শায়লার ফুফু । বাবার সব সহায় সম্পত্তির মালিক শায়লা। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে ইচ্ছে হল শায়লার ফুফুর। একেতো হাবাগোবা ছেলের জন্য সুস্থ সুন্দরী বউ আর সাথে আছে সম্পত্তি। এই সম্পত্তিই বিষফোড়া হল শায়লার।
কাজী সাহেবের কথা ভালো করে শুনতে পেলো না কানা কালু। কানা কালুর পিঠে গুতো দেওয়া হল। কানের কাছে একপ্রকার চিতকার করে বলা হল আলহামদুলিল্লাহ কউ। সূরা ফাতেহা মুখস্থ করেছিল ছোটকালে সেটাই আবৃত্তি করতে শুরু করল কানা কালু। পিঠে আবার গুতো দেওয়া হল। এবার কানা কালু আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ পড়তে আরমম্ভ করল। আবার গুতো দেওয়া হল। কানা কালু চিত্কার করে বলল “এহন তো ভুল হয় নাই”। বলা হল শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলল্লেই হবে। কানা কালু মানল না । অগত্যা তাকে পুরো সূরোটা পড়তে সুযোগ দেওয়া হল।
আর একটা অসহায় মেয়েকে বেধে দেওয়া হল কানা কালুর সাথে। আমার কান্না পাচ্ছিল। বিয়ের আসর থেকে উঠে গেলাম। বললাম এ বিয়ে অন্যায়। একজন গণ্য মান্য মুরব্বি বলল্লেন “কি যে কন না মাষ্টার সাব, একটা গরীব মাইয়ার বিয়া ভাইঙ্গা দিবার চান? আপনার ও তো একটা মাইয়া আছে”। আমার ইচ্ছা হচ্ছিল ওর গালে একটা চড় মারতে, কিন্তু সম্ভব না। তাই বললাম “হ্যা আমারো একটা মাইয়া আছে, দোয়া করবেন ওর বিয়েও যদি এরকম জোর-জবরদস্তির হয় তাহলে যেন ভেঙ্গে যায়।
©somewhere in net ltd.