![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বজ্রপাতের সময় বাতাসের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী। কিন্তু মেঘে জমা হওয়া বিদ্যুৎ অত্যন্ত উচ্চ বিভব শক্তির হয় যা পরিমানে প্রায় ১০ মিলিয়ন ভোল্ট। ফলে এটি বাতাসের একটা সরু চ্যানেলকে তা আয়নিত করে পরিবাহী পথ তৈরি করে ফেলে। এই আয়নিত পরমাণু গুলো থেকে বিকীর্ণ শক্তি তিব্র আলোক বা বিজলি তৈরি করে।
বাতাসের যে চ্যানেলের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তার তাপমাত্রা প্রায় ২৭০০০ ডিগ্রি সেঃ। যা সূর্যের তাপমাত্রা থেকে বেশি এবং চাপ স্বাভাবিক চাপ থেকে ১০ থেকে ১০০ গুন পর্যন্ত বেশি । এ চাপ ও তাপমাত্রায় পৌছাতে সময় লাগে মাত্র এক সেকেণ্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগ।
এত কম সময়ে বাতাসের এ তাপমাত্রা ও চাপের ব্যাপক পরিবর্তন চারপাশের বায়ু মণ্ডলকে প্রচণ্ড গতিতে সম্প্রসারিত ও কম্পিত করে। যা অনেকটা আণবিক বোমার বিষ্ফোরনের মতো। বাতাসের এ সম্প্রসারণ ও কম্পনে শব্দের উৎপত্তি হয় যা আমরা তীব্র গর্জন আকারে শুনতে পাই।
আমরা কেন আগে বিদ্যুৎ চমক দেখি পরে গুড় গুড় আওয়াজ পাই? আলোর বেগ শব্দের চেয়ে বেশী তাই আগে আমরা বিদ্যুৎ চমক দেখি, পরে গর্জন শুনি। আশেপাশের বিভিন্ন মেঘমালা, ইমারত এ প্রতিধ্বনির ফলে গর্জনের পর গুড় গুড় আওয়াজ হয়।
বিদ্যুৎ চমক দেখা ও শুনার মধ্যবর্তী সময় গণনা করলে বজ্রপাতের উৎস স্থল জানা যায়। বজ্রপাত এক মাইল দূরে হলে শব্দ শুনা যাবে প্রায় ৫ সে. পর।
ভূমি থেকে ৩ মাইল দূরের বজ্রপাত এ গড়ে এক বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন হয়। ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি দিয়ে একটি ১০০ ওয়াটের বাল্বকে ১১৬০ দিন বা প্রায় ৩৯ মাস অবিরাম জ্বালানো যায়।
বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপের একক হলো “কিলোওয়াট-আওয়ার” আর এ হিসেবে এ শক্তি ২৭,৮৪০ কিলোওয়াট-আওয়ার। বাংলাদেশে একটি পরিবার গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১০০- ১৫০ ইউনিট (কিলোওয়াট-আওয়ার) বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তার মানে একটি বজ্রপাতের বিদ্যুৎ শক্তি জমা করতে পারলে একটি পরিবার ১৮৫ মাস বা, প্রায় ১৫ বছর বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।
বজ্রপাতে উৎপন্ন বিদ্যুৎ শক্তি আটকে রেখে তা ব্যবহার সম্ভব। বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে চেস্টা করে যাচ্ছেন। এখন বজ্রপাতের মৌসুম। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। বজ্রপাতে মানুষ মরে চুম্বক হয়ে যায় এ ধারনাটি সত্য নয়। বজ্রপাতে লোহা মুল্যবান ধাতুতে পরিণত হয় এটা ও এক ধরনের ভাওতা বাজি। ইন্টার্ন থেকে শুরু করে এযাবৎ আমি বেশ কিছু মৃত দেহ এটেন্ড করেছি যারা বজ্রপাতে মারা গেছেন।
বজ্রপাতে মৃতদেহ গুলো সাধারণত ফ্যাকাসে হয়ে যায়। হিমোলাইসিস এর জন্যে এমন হয়। হিমোলাইসিস মানে রক্ত কনিকা গুলো ভেংগে যাওয়া। মৃতদেহের যে দিক দিয়ে ইলেকট্রিসিটি ঢুকে এবং বের হয় ঐ যায়গাটা টুকু কালচে হয়ে যায়। আমি খুব গভীর ভাবে মৃতদেহ গুলো দেখি, আমার কাছে ব্যাপারটি রহস্যজনক লাগে। প্রকৃতির কাছে মানুষ খুবই অসহায়। পবিত্র কোরান ছাড়াও অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে বজ্রপাত নিয়ে আলোচনা আছে।
ডা. মুহাম্মাদ সাঈদ এনাম ওয়ালিদ
চিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কলামিস্ট, জনস্বাস্থ্য গবেষক।
©somewhere in net ltd.