| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

"সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করেনা" এই এক ভাবসম্প্রসারণ আয়ত্ত্ব করেনাই এমন কোন শিক্ষিত লোকই খুজে পাওয়া যাবেনা। আসলেই কি সময় কারও জন্য অপেক্ষা করেনা! বা সময় কে আটকানো যায় না? মূল ব্যাখায় যাওয়ার আগে চলুন সময় সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে নিই।
সময় জিনিস টা বরাবর ই বিজ্ঞানে আপেক্ষিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ সর্ব প্রথম সময়ের ধারণা মূলত দিন-রাতের নিয়মিত আবর্তন থেকে বের করে। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে একবার আবর্তন করতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড যা ১ বছর হিসাব করা হয়। অন্য দিকে এক মাস বা ত্রিশ দিন সাধারণত চাঁদের পূর্ণ একটি পরিক্রমকালের উপর ভিত্তি করে উদ্ভব।
আর পৃথিবীর নিজ অক্ষে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। যে সময়টি একদিন সূর্যোদয় থেকে পরদিন সূর্যোদয় পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিকে থাকে সে অংশে দিন এবং বিপরীত অংশে রাত হয়। প্রাচীন মানুষ প্রকৃতির এই নিয়মিত পরিবর্তনকে একটি আদর্শ সময় মান হিসাবে বিবেচনা করত। এরপর সূর্যঘড়ি অর্থাৎ সান-ডায়াল দিয়ে সময় মাপার প্রচলন শুরু হয়। সান-ডায়াল যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দিনকে কতগুলো ঘণ্টায় ভাগ করা হয়। পেন্ডুলামের দোলন কালকে আদর্শ মানদণ্ড ধরে ঘণ্টাকে মিনিটে ও মিনিটকে সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। কোয়ার্টজ ক্রিস্টালের কম্পনকে কাজে লাগিয়ে এই সেকেন্ডকে আরও ক্ষুদ্রতম এককে ভাগ করা হয়।
সময়ের শুরু হয়েছে কখন?
বিজ্ঞানের মতে 'বিগ ব্যাং' এর সূচনাই সময়ের সূচনা। তখন থেকেই ঘটনার প্রবাহ মহাবিশ্বে ক্রমান্বয়ে অন্তিম পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তা পৃথিবীর হিসেবে আনুমানিক ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে।
সময়ের শেষ কবে হবে?
যে অবস্থায় এসে মহাবিশ্বের সকল ঘটনা ঘটে যাবে সেটাই সময়ের এনডিং পয়েন্ট। মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। এক. ভর (পদার্থ)। দুই. শক্তি। ভরকে ভাঙলে শক্তি পাওয়া যায়। তেমনি শক্তি রূপান্তরিত হয়ে ভর এ পরিনত হয়।
একটা সময় মহাবিশ্বের সকল শক্তি ভরে পরিনত হবে। সমস্ত কিছু ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকবে। সমস্ত জায়গায় তাপমাত্রা একই বিন্দুতে চলে আসবে। সমস্ত নক্ষত্র নিভে যাবে। পুরো মহাবিশ্বে শক্তি বলতে কিছু থাকবে না। তখন মহাবিশ্ব হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন অসীম ভর ছাড়া আর কিছুই নয়। এই পয়েন্টে এ এসে সময় অর্থহীন হয়ে যাবে। আর কোনো ঘটনা ঘটার বাকি নেই। এটাই সময়ের শেষ।
সময়ের আসলে সব কিছুই গতির উপর নির্ভরশীল। সময় হলো প্রকৃতির গতিয় অবস্থা।
গতিয় অবস্থা এর মানে বুঝতে হলে আগে জানতে হবে
প্রকৃতি কি? প্রকৃতির উপাদানসমূহ নিয়ে প্রকৃতি গঠিত।
সহজ কথায় আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সবই প্রকৃতির উপাদান। একদম গ্যালাক্সী টু অণু বা পরমাণু সবই প্রকৃতি। আমরা সবাই ই প্রকৃতির উপাদান। প্রকৃতি মূলত গতিশীল। প্রকৃতির প্রতিটা উপাদানই গতিশীল। এমন কোনো উপাদান
নাই যেটা স্থির। যেমন : চন্দ্র,সূর্য, গ্রহ,
নক্ষত্র, উদ্ভিদকূল প্রাণিকুল এর বৃদ্ধি, মাথার চুল, নখ, বয়স এসবের বৃদ্ধি সব কিছু গতিশীল।
আর সময়ের সাথে এই ব্যাপারটা ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। যেমন ধরা যাক আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো হাটতে বের হই। প্রতিদিনের মতো পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে সূর্য যাচ্ছে।
গাড়ি বা মোটরযান প্রতিদিন এর মতোই চলতেছে। মাছি ভ্যান ভ্যান করতেছে আর পাখি উঠতেছে। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু থেমে গেছে শুধু আমরা বাদে। আমাদের শরীরের বৃদ্ধিও থেমে গেছে। তো আমরা রাস্তার পাশে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন বিকাল হবে। তো সময় তো আর শেষ হয় না। ঘড়ি দেখেও তো লাভ নাই ঘড়ির কাটাও থেমে গেছে। তো এখন এই অবস্থায় কি সময়ের অস্তিত্ব আছে বা আমরা কি অনুধাবন করতে পারছি যে কতটুকু সময় গেলো বা আদৌ বুঝতে পারবো কি না সময় কি। না অবশ্যই পারবো না। তাহলে প্রকৃতির গতির কারনেই সময়ের উৎপত্তি হচ্ছে। আর যেহেতু প্রকৃতি কখনই স্থির না তাই সময়ও কখনও স্থির না। এবং প্রকৃতি সৃষ্টির সাথে সাথে গতির উপর ভর করে সময়ের সৃষ্টি হয়।।
তাই গতি ও সময় পরম বা নিরপেক্ষ নয় বরং আপেক্ষিক। ধরা যাক আপনি একটি গাড়ি দিয়ে ষাট কিলোমিটার পার আওয়ার বেগে সামনের দিকে ছুটছেন এবং আপনার সাথে আপনার বন্ধু ও আছে। এখন আপনাদের হিসাবে আপনার এবং আপনার বন্ধুর একে অপরের গতি শুন্য কিন্তু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কোন এক ব্যাক্তির নিকট আপনাদের গতি ষাট কিলোমিটার পার আওয়ার। এবার ধরে নিন আপনার সামনের দিক থেকে ষাট কিলোমিটার পার আওয়ার বেগে আরেকটি গাড়ি আপনার দিকে আসছে এখন আপনাদের কাছে আপনাদের গতিবেগ মনে হবে ১২০ কিলোমিটার পার আওয়ার কারন আপনার গাড়ির গতি ৬০ কিলোমিটার আর আপনার সামনে থেকে আসা গাড়ির গতি ৬০ কিলোমিটার পার আওয়ার। তো এখান থেকে বুঝা যায় গতি আপেক্ষিক অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে গতি ও পরিবর্তন হয়। সময়ের ক্ষেত্রেও তাই।মহাবিশ্বের সব জায়গায় সময় একই হারে পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ কোথাও সময় ধীর গতিতে আবার কোথায় সময় দ্রুত গতিতে পরিবর্তন হয়। এর উপর ভিত্তি করেই মূলত আইনস্টাইন তার থিওরি অফ রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন।
সহজ ভাষায় আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ (theory of relativity) পদার্থের অপেক্ষিক গতিবেগ এর সঙ্গে ভর , অতিবাহিত সময় ও দৈর্ঘ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। নিউটন তার গতির সমীকরণগুলি প্রতিষ্ঠা করার সময় ধরে নিয়ে ছিলেন যে পদার্থের গতি সকল জায়গায় একই থাকবে। কিন্তু আইনস্টাইন বলেন পদার্থের গতি পরিদর্শক বা পর্যবেক্ষকের উপর নির্ভরশীল। আপেক্ষিক তত্ত্বে সকল সূত্রে আলোর গতিবেগ সর্বোচ্চ ও স্থির ধরা হয়েছে। আপেক্ষিক তত্ত্বকে অতিরিক্ত সহজভাষায় প্রকাশ করতে চাইলে এমনটা দাঁড়ায় যে, পরিমাপ নির্ভর করে পরিদর্শক বা পর্যবেক্ষকের ওপর। কোন পর্যবেক্ষক বা পরিদর্শক যদি কোন কিছু পরিমাপ করে তবে তার সাপেক্ষে গতিশীল অন্য কোন পর্যবেক্ষক ভিন্ন পরিমাপ করবে।
এবার আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্র E=mc2 অনুযায়ী, "Twin age of Paradox" সম্পর্কে জেনে নিলে সময়ের আপেক্ষিকতা পুরোপুরি ভাবে পরিস্কার হয়ে যাবে আশা করি।
ধরা যাক, জমজ দুইজন ভাই। ওদের নাম সাইদিন এবং বেলাল । এখন দুজনেরই বয়স ৩০ বছর। সাইদিন পেশায় বিমান বাহিনীতে জব করে আর বেলাল নৌ বাহিনী তে জব করে। সাইদিনের জন্য একটা সুংসবাদ এসেছে সে যাবে মহাকাশ ভ্রমণে। ধরা যাক, যে মহাকাশযানে চড়ে সাইদিন মহাকাশে পাড়ি দেবে তার গতি আলোর গতির প্রায় সমান। আলোর গতি বেগ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার এবং প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। এস আই এককের সংজ্ঞা অনুসারে আলোর দ্রুতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার সাধারণভাবে এর মান ৩×১০`৮ ধরা হয়।
তো একসময় মহাকাশে উড়াল দিল সাইদিন। আরাম আয়েশ করে ঘুরে ফিরে আসল মহাকাশের বিভিন্ন স্থানে। মনে করে নেয়া যাক সাইদিন কোথাও থামেনি, তার সময়ে ঠিক তিন বছরের মাথায় সে পৃথিবীতে ফিরে এলো। কিন্তু সাইদিন তার যমজ ভাই বেলাল কে দেখে অবাক।
হঠাৎ একজন আরেকজনে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। কারণ সাইদিন দেখবে এই তিন বছরেই তার জমজ ভাই বেলাল বুড়িয়ে গেছে। তার বয়স এখন ষাট এর মত। শুধু বেলাল নয়, পৃথিবীতে যাদের বুড়ো দেখে গিয়েছিল তাদের প্রায়ই সবাই এতদিনে মরে গিয়েছে। আর যাদের সে কমবয়স্ক দেখে গিয়েছিল, তারা সবাই প্রায়ই বুড়ো হয়ে গেছে। তাদের চোখও বিস্ময়ে কপালে উঠে গেছে। দুইভাই যখন হতভম্ব তখন তাদের মনে পড়ল আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিতার কথা। বিশেষ আপেক্ষিকতা তো তাই বলে।
তো কী বলে এই বিশেষ আপেক্ষিতা?
১৯০৫ সালে আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায় আলোর বেগ অপরিবর্তনশীল। গতিশীল কিংবা স্থির যে কোনো অবস্থাতেই হিসাব করলে আলোর বেগ সমান পাওয়া যাবে। তবে আলোর গতির বিষয়টা ক্লিয়ার করতে গিয়ে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে আরও কিছু তত্ত্ব পাওয়া যায় সেগুলো হলো ভরশক্তির নিত্যতা সমীকরণ, কাল দীর্ঘয়ন, দৈর্ঘ্য সংকোচন ও ভরবৃদ্ধি।
কাল দীর্ঘায়ন হলো সময়ের আপেক্ষিকতা। আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরী অব রিলেটিভিটি প্রমাণের আগে সময়কে ওভাবে হিসাবের মধ্যে আনা হয় নাই। কিন্তু আইনস্টাইন দেখিয়েছেন মহাবিশ্বের কার্যকলাপে সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে মনে করা হতো যেকোনো বিষয় বা জিনিস পাঠানোর সাপেক্ষে সময় একইরকম ক্রিয়া করে। আসলে তা নয়। প্রসঙ্গ কাঠামো সাপেক্ষে সময়েরও হেরফের হয়ে থাকে আইনস্টাইন দেখিয়েছেন, স্থির অবস্থানের তুলনায় গতিশীল জায়গায় সময় ধীরে চলে। এটা থেকে বুঝা যায় যে মহাকাশের এক স্থান এ সময় একরকম অন্য স্থানে আরেক রকম। আপনি যদি কোন মহাকাশ যান এ আলোর বেগে ছুটতে পারেন তাহলে আপনি আসলেই আপনার সময় কে ধরে রাখতে পারবেন পৃথিবীতে থাকা অন্যজনদের তুলনায়। যদিও আলোর (৩×১০`৮) বেগে আমরা কবে যেতে পারব তার কোন ভবিষ্যৎদ্বানী আপাতত কেউই করতে পারবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:৫৯
"আহসান" বলেছেন: বিশাল লেখা।