নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক
৩২ বছর আগে ১৯৯২ সালেই এই দিনে (ডিসেম্বর ৬)বিজেপির প্রচারণায়, শোভাযাত্রায় ও নেতৃত্বে উন্মত্ত আরএসএস, শিবসেনা এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সংঘবদ্ধ সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে। গত বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল জাঁকজমক ও অর্থব্যয় করে বাবরী মসজিদের সাইটেই নির্মিত রাম মন্দির উদ্বোধন করা হয়েছে।কঠোর সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, অবিচল নীতিনিষ্ঠ, এবং শান্তি স্থাপনকারী অকুতোভয় যোদ্ধা হিসাবে রামচরিত্র ভারতীয় সমাজে আদরণীয়।রামায়ণ, রামের চরিত, রাবণের বিরুদ্ধে রামের রোমাঞ্চকর সিংহল অভিযান গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক বৃহৎ মানস-সম্পদ।কেবল পাক-ভারত-বাংলাদেশেরই নয়, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া পর্যন্ত এই মিথোলজির অগণিত ভার্সন পাওয়া যায়।গ্রাম থেকে গ্রামে রামায়ণ এক নয়, বহুভাবে বর্ণিত, গীত, মঞ্চস্থ ও পরিবেশিত হয়ে আসছে। ঠিক কখন থেকে রামায়ণের শুরু ঐতিহাসিক ভাবে বলা মুস্কিল।রামায়ণ ও মহাভারত এপিক বা মিথোলজি হিসাবে সেকুলার ইন্দোলজিস্টরা পাঠ করেন, রাম সেই হিসাবে ঐতিহাসিক চরিত্র বলে সাব্যাস্ত নয়।আধুনিক জমানায় রামের এক রকম পুনরাবিষ্কার ঘটে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দূরদর্শনে ১৯৮৭-৮৮ সালে প্রচারিত সিরিয়ালের মাধ্যমে।এই হিসাব মেলানো বড়ই কঠিন যে, কিভাবে বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য-প্রমাণ দেবতা রামের জন্মভূমি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়েছে।বিজ্ঞান দেবদেবীর অস্তিত্ব, জন্ম-মৃত্যু প্রমাণ করতে পারেন কিনা, বিজ্ঞানীদের কাছে প্রশ্ন করা যায়।উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ষোড়শ শতকের গোড়ায় মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি কর্তৃক নির্মিত মসজিদের নীচে হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থান নির্ণয়ের জন্যে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ক্যানিংহামের অনুসন্ধানকে ফলো করে কলোনিয়াল আর্কিওলজির টুলস অ্যান্ড টেকনিক ব্যাবহার করে সাক্ষ্য প্রস্তুত করা হয়েছে।আধুনিক ভারতের জুডিশিয়ারি আর্কিওলজির সেই সাক্ষ্য গ্রহণ করে র্যাশনাল যুক্তিতর্ক প্রয়োগ করে বাবরী মসজিদের সাইটেই দেবতা রামের জন্মভূমি স্মারক প্রাগৈতিহাসিক মন্দিরের অস্তিত্বকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন।সেই ২.৩৩ একর জমির উপরই নতুন করে রাম মন্দির নির্মাণ অনুমোদন করেছে, যেটি বিপুল ধনসম্পদ ব্যয় করে সাড়ম্বরে গত বছর উদ্বোধন করা হল।বাবরী মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড পৃথক জায়গায় মসজিদ নির্মাণের জন্যে জমি বরাদ্দ পেলেও সেই মসজিদের নির্মাণ অগ্রগতি আমাদের জানা নেই।রামজন্মভূমি আন্দোলন নামে একটি ধর্মীয় পুনঃজাগরন আন্দোলন একটা সুদীর্ঘ সময় ধরে "আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি" প্রয়োগ করে সত্যের সাথে কল্পনা, মীথের সাথে ইতিহাসকে গুলিয়ে দেবতার জন্মস্থান নির্ধারণ করে।ধর্ম ও বিজ্ঞানের জুটিবদ্ধ একই ধরণের মডেলে গোটা ভারতের আরও বহু মসজিদের নীচে মন্দির আবিষ্কার শুরু হয়েছে যার সর্ব শেষ উদাহরণ হল খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)এর দরগাহ আজমীর শরীফ।ভারত জুড়ে মসজিদ ও দরগার নীচে মন্দির আবিষ্কার করে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের মডেলে আগামীতে কি হতে যাচ্ছে, তা অনুমান করা কঠিন কি? আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার হর্তাকর্তারা তাদের বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞতা এবং তাদের বিরাট তহবিল বরাদ্দ দিয়ে একের পর এক মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করবার একটা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অনন্ত সহিংসতার ফাঁদ তৈরি করেছেন, যার থেকে উত্তরণের রাস্তা আমাদের অবশ্যই খুঁজে নিতে হবে।
ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
P/C: Babri Masjid at the top of the hill, seen from the Ghaghara River in 1783, drawn by William Hodges
#BabriMasjidDemolition
#BabriMasjid
#সায়েমারলেখা
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: মসজিদ মন্দির গীর্জা কোনো কাজের জিনিস না। এগুলো পুরো বিশ্ব থেকে ভেঙ্গে ফেলা দরকার।