নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলিল সাহেবের পিটিশনঃ হুমায়ূন আহমেদ

২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৫

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর কোন মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি যে এই দেশে রাজাকারদের বিচার হতে পারে। তাদের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

১৯৯২ সালে শহীদ জননী সর্বজন শ্রদ্ধেয়া জাহানারা ইমাম রাজাকারদের বিচারের দাবীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু চূড়ান্ত বিচার কাজ তিনি দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচার হয়েছে। বিচার হচ্ছে।

জলিল সাহেবের পিটিশন হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ একটি গল্প। গল্পটি পড়ে কেউ কেউ এতে শহীদ জননী জাহানার ইমামের কাজকে খুজে পাবেন। কেউ কেউ খুঁজে পাবেন নিজেকে। জলিল সাহেবের মৃত্যুর খবর জানার পর কোন কোন পাঠকের চোখে পানিও চলে আসতে পারে।

জলিল সাহেবের পিটিশন


তিনি হাসিমুখে বললেন, ‘আমি দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বাবা। সেভেনটি ওয়ানে আমার দুটি ছেলে মারা গেছে। আমি অবাক হয়ে তাকালাম। ভদ্রলোকের চেহারা বিশেষত্বহীন। বয়স প্রায় ষাটের কোঠায়। সে তুলনায় বেশ শক্ত-সমর্থ। বসেছেন মেরুদণ্ড সোজা করে। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ । চশমা-টশমা নেই। তার মানে, চোখে ভালোই দেখতে পান।

আমি বললাম, আমার কাছে কী ব্যাপার?

ভদ্রলোক যেভাবে বসেছিলেন, সেভাবেই বসে রইলেন। সহজ সুরে বললেন, ‘একজনের ডেডবডি পেয়েছিলাম। মালিবাগে কবর দিয়েছি। আমার ছোট মেয়ের বাড়ি আছে মালিবাগে।’
:তাই নাকি?
:জি, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া।
:আমার কাছে কেন এসেছেন?
:গল্পগুজব করতে আসলাম। নতুন এসেছেন এ পাড়ায়। খোঁজ-খবর করা দরকার। আপনি আমার প্রতেবেশী।
ভদ্রলোক হাসি মুখে বসে রইলেন। আমার সন্দেহ হলো, তিনি সত্যি সত্যি হাসছেন না। তার মুখের ফাটাটাই হাসি হাসি। ভদ্রলোক শান্ত স্বরে বললেন, ‘আমি আপনার পাশের গলিতেই থাকি।’
:তাই নাকি?
:জি। ১৩/২, বাসার সামনে একটা নারিকেল গাছ আছে, দেখেছেন তো?
আমি দেখিনি। তবু মাথা নাড়ালাম। ভদ্রলোকের চরিত্র স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সম্ভবত অবসর জীবন যাপন করেছেন। কিছুই করার দরকার নেই। সময় কাটানোই বোধ হয় তার এখন সমস্যা। যার জন্য ছুটির দিনে প্রতিবেশী খুঁজতে হয়।

:আমার নাম আব্দুল জলিল।
আমি নিজের নাম বলতে গেলাম। ভদ্রলোক বলতে দিলেন না! উঁচু গলায় বললেন, ‘চিনি, আপনাকে চিনি।’
:চা খাবেন? চায়ের কথা বলি?
:জি না। আমি চা খাই না। চা-সিগারেট কিছুই খাই না। নেশার মধ্যে, পান খাই।
:পান তো দিতে পারব না। এখানে কেউ পান খায় না।
:পান আমার সঙ্গেই থাকে। ভদ্রলোক কাঁধের ঝোলাতে হাত ঢুকিয়ে পানের কৌটা বের করলেন। বেশ বাহারি কৌটা। টিফিন কেরিয়ারের মতো তিন-চারটা আলাদা বাটি আছে। আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করলাম। ভদ্রলোক লম্বা পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন। সারা সকালটাই হয়তো এখানে কাটাবেন। দুঃখ-কষ্টের গল্প অন্যকে শোনাতে সবাই খুব পছন্দ করে। ভদ্রলোক একটু ঝুঁকে এসে বললেন, ‘প্রফেসার সাহেব, আপনি একটা পান খাবেন?’
:জি না।
:পান কিন্তু শরীরের জন্য ভালো। পিত্ত ঠান্ডা রাখে। যারা পান খায়, তাদের পিত্তের দোষ হয় না।
:তাই নাকি?
:জি। পানের রস আর মধু হলো গিয়ে বাতের খুব বড় ওষুধ।


আমি ঘড়ি দেখলাম। সাড়ে দশটা। আজ ইউনিভার্সিটি নেই। থাকলে ভালো হতো। বলা যেত, ‘কিছু মনে করবেন না, এগারটার সময় একটা ক্লাস আছে, আপনি অন্য আরেক দিন সময় হাতে নিয়ে আসুন।’ ছুটির দিনে এ রকম কিছু বলা যায় না।

ভদ্রলোক তার পানের কৌটা খুলে নানা রকম মসলা বের করলেন। প্রতিটি শুঁকে শুঁকে দেখলেন। পান বানালেন অত্যন্ত যত্নে। যিনি পান বানানোর মতো তুচ্ছ ব্যাপারে এতটা সময় নষ্ট করেন, তিনি যে আজ দুপুরের আগে নড়বেন না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু আশ্চর্য, ভদ্রলোক পান মুখে দিয়েই উঠে দাঁড়ালেন। হাসি মুখে বললেন, ‘যাই, আমি অনেকটা সময় নষ্ট করলাম।’ বিস্ময় সামলে আমি আন্তরিকভাবেই বললাম, ‘বসুন, এত তাড়া কিসের?’ তিনি বললেন, ‘না।’ আমি তাঁকে সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম।

ফেরার পথে দেখি, বাড়িওয়ালা ভ্রূ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘প্রফেসর সাহেবকে ধরেছে বুঝি? সিগনেচার করেছেন?’
:কী সিগনেচার?
:জলিল সাহেবের পিটিশনে সিগনেচার করেননি?
:পিটিশনটা কিসের?
:আমাকে বলতে হবে না। নিজেই টের পাবেন। হাড় ভাজা করে দেবে। কোনো প্রশ্রয় দেবেন না।

অস্পষ্ট একটা অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরলাম। নতুন পাড়ায় আসার অনেক বিরক্তিকর ব্যাপার আছে। নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে হয়। সে পরিচয় অনেক সময়ই সুখকর হয় না। তবে জলিল সাহেব প্রসঙ্গে ভয়টা বোধ হয় অমূলক। এরপর তাঁর সঙ্গে দুবার দেখা হলো। বেশ সহজ-স্বাভাবিক মানুষ। একবার দেখা গ্রিন ফার্মেসির সামনে। তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এলেন,—প্রফেসর সাহেব না? ভালো আছেন?
:জি, ভালো। আপনি ভালো আছেন? কই, আর তো আসলেন না?
:সময় পাই না। খুব ব্যস্ত পিটিশনটার ব্যাপারে।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। ক্লাসের দোহাই দিয়ে রিকশায় উঠে পড়লাম। দ্বিতীয়বার দেখা হলো নিউ মার্কেটের একটা নিউজ স্ট্যান্ডের সামনে। দেখি, তিনি উবু হয়ে বসে একটির পর একটি পত্রিকা খুব দ্রুত পড়ে শেষ করছেন। হকার ছেলেটা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকে দেখছে।


:কী জলিল সাহেব, কী পড়ছেন এত মন দিয়ে?
জলিল সাহেব আমার দিকে তাকালেন। মনে হয়, ঠিক চিনতে পারছেন না। তাঁর চোখে চশমা।
:চশমা নিয়েছেন নাকি?
:জি। সন্ধ্যা হলে মাথা ধরে। প্লাস পাওয়ার। ভালো আছেন, প্রফেসার সাহেব?
: জি, ভালো।
:যাব একদিন আপনার বাসায়। পিটিশনটা দেখাব আপনাকে। চৌদ্দ হাজার তিন শ সিগনেচার জোগাড় হয়েছে।
: কিসের পিটিশন?
:পড়লেই বুঝবেন। আপনারা জ্ঞানী-গুণী মানুষ, আপনাদের বুঝতে কষ্ট হবে না।

আমার ধারণা ছিল, সরকারের কাছে কোনো সাহায্য চেয়ে পিটিশান করা হয়েছে। সেখানে চৌদ্দ হাজার সিগনেচারের ব্যাপারটা বোঝা গেল না। আমি নিজে থেকেও কোনো আগ্রহ দেখালাম না। জগতে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা কম নয়। সিগনেচার সংগ্রহ যদি কারও নেশা হয়, তা নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু উদ্বিগ্ন হতে হলো। জলিল সাহেব এক সন্ধ্যায় তাঁর চৌদ্দ হাজার তিন শ সিগনেচারের ফাইল নিয়ে আমার বাসায় উপস্থিত হলেন। হাসি হাসি মুখে বললেন, ‘ভালো করে পড়েন, প্রফেসর সাহেব।’ আমি পড়লাম। পিটিশনের বিষয়বস্তু হচ্ছে—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দশ লাখ ইহুদি মারা গিয়েছিল। সেই অপরাধে অপরাধীদের প্রত্যেকের বিচার করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু এ দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ মেরে অপরাধীরা কি করে পার পেয়ে গেল? কেন এ নিয়ে আজ কেউ কোনো কথা বলছে না। জলিল সাহেব তাঁর দীর্ঘ পিটিশনে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, যেন এদের বিচার করা হয়।

আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম। তিনি শান্ত স্বরে বললেন, ‘আমার দুটি ছেলে মারা গেছে। সেই জন্যই যে আমি এটা করছি, তা ঠিক না। আমার ছেলে মারা গেছে যুদ্ধে। ওদের মৃত্যুর জন্য আমি কোনো বিচার চাই না। আমি বিচার চাই তাদের জন্য, যাদের ওরা ঘরে থেকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার কথা বুঝতে পারছেন?’
:পারছি।
:জানি পারবেন। আপনে জ্ঞানী-গুণী মানুষ। অনেকেই পারে না। বুঝলেন ভাই, অনেকে মানবতার দোহাই দেয়। বলে, বাদ দেন। ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা এত সস্তা? অ্যাঁ, বলেন সস্তা?
আমি কিছু বললাম না। জলিল সাহেব পানের কৌটা বের করে পান সাজাতে বসলেন। শান্ত স্বরে বললেন, ‘আপনি কি মনে করেছেন, আমি ছেড়ে দেব? ছাড়ব না। আমার দুই ছেলে ফাইট দিয়েছে। আমিও দেব। মৃত্যু পর্যন্ত ফাইট দেব। দরকার হলে বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের সিগনেচার জোগাড় করব। ত্রিশ লক্ষ লোক মরে গেল, আর কেউ কোনো শব্দ করল না? আমরা মানুষ না অন্য কিছু, বলেন দেখি?’
আমি সিগনেচার ফাইল উল্টে দেখতে লাগলাম। খুব গোছানো কাজ-কর্ম। সিগনেচারের পাশে বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা। স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত আত্মীয়-স্বজনের নাম-ঠিকানা।
:অনেকেই মনে করে, আমার মাথা ঠিক নাই। এক পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলাম, সম্পাদক সাহেব দেখাই করলেন না। ছোকরা মতো একটা ছেলে বলল, ‘কেন পুরোনো কাসুন্দি ঘাটছেন? বাদ দেন, ভাই।’ আমি তার দাদার বয়সী লোক, আর আমাকে বলে ‘ভাই’।
:আপনি কী বললেন?
:আমি বললাম, তুমি চাও না এদের বিচার হোক? ছেলেটি কিছু বলে না। সরাসরি না বলারও সাহস নাই। অথচ এই ছেলেরা কত সাহসে সাথে যুদ্ধ করেছে। করে নাই?
:জি, করেছে।
:আপনার বাড়িওয়ালার কথাই ধরেন। তার এক শালাকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। অথচ এই লোক সিগচেনার করেনি। ত্রিশ লক্ষ লোক মরে গেল। কোনো বিচার হলো না। মনে হলেই বুকের মধ্যে চিনচিন করে ব্যথা হয়। আমি অত্যন্ত অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ভদ্রলোক দ্বিতীয় একটি পান মুখে পুরে বললেন, ‘সরকারি লোকজনদের সাথে দেখা করেছি। তারা আমি কী বলতে চাই, সেটাই ভালো করে শুনতে চায় না। একজন আমাকে বলে, আপনি একটা পরিত্যক্ত বাড়ির জন্য দরখাস্ত করেন। আপনার দুটি ছেলে মারা গেছে। বাড়ি পাওয়ার হক আছে আপনার।’
:আপনি কী বললেন?
:আমি আবার কী বলব? বাড়ির জন্য পিটিশন করেছি নাকি? বাড়ি দিয়ে আমি করবটা কী? আমার দুই ছেলের জীবন কি সস্তা? একটা বাড়ি দিয়ে দাম দিতে চায়? কত বড় স্পর্ধা, চিন্তা করেন। আমি চাই—একটা বিচার হবে। একটা বিচার চাই। আর কিছুই না। সভ্য সমাজের নিয়মমতো বিচার হবে। বুঝলেন?
:জি, বুঝলাম।
:আপনারা জ্ঞানী-গুণী মানুষ। আপনাদের বুঝতে কষ্ট হয় না। অন্যরা কেউ বুঝতে চায় না। একেকটা সিগনেচারের জন্য তিনবার করে যেতে হয়। তাতে অসুবিধা নাই। আমি ছাড়বার লোক না।


আমার সিগনেচার নিয়ে ভদ্রলোক চলে গেলেন। তারপর অনেক দিন তাঁর সাথে দেখা হলো না। একটা কৌতূহল জেগে রইল। রাস্তাঘাটে দেখা হলে জিজ্ঞেস করেছি, কী ভাই, কত দূর কী করলেন?
:চালিয়ে যাচ্ছি, প্রফেসার সাহেব। দোয়া রাখবেন।
:লোকজন দস্তখত দিচ্ছে তো?
:সবাই দেয় না। ভয় পায়।
:কিসের ভয়?
:ভয়ের কি কোনো মা-বাপ আছে? ভয় পাওয়া যাদের স্বভাব, তারা ভয় পাবেই। বুঝলেন না, আমি আছি লেগে। আদালতে হাজির করে ছাড়ব। কী বলেন, প্রফেসর সাব?
:তা তো ঠিকই।
:ডিস্টিক্টে ভাগ করে ফেলছি। এখন সব ডিস্টিক্টে যাব। কষ্ট হবে, উপায় তো নাই। আপনি কী বলেন?
:ভালোই তো।
তা ছাড়া শুধু দস্তখত জোগাড় করলেও হবে না। কেইস চালানোর মতো এভিডেন্স থাকতে হবে। বিনা কারণে নিরাপরাধ লোকজন ধরে ধরে মেরেছে, এটা প্রমাণ করতে হবে না? ওরা ঘাগু ঘাগু সব ল-ইয়ার দেবে। দেবে না?
:তা তো দেবেই।
: আপনার জানা মতে কোনো ভালো ল-ইয়ার আছে?
:আমি খোঁজ করব।
:তা তো করবেনই। আপনি তো অন্ধ না। অন্যায়টা বুঝতে পারছেন। বেশির ভাগ লোকই পারে না। মূর্খের দেশ।


অনেক দিন আর জলিল সাহেবের দেখা পাই নাই। হয়তো সত্যি সত্যি জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছেন। বগলে ভারী ভারী ফাইল। দস্তখতের সংখ্যা হয়তো বাড়ছে। বারো হাজার থেকে পনের হাজার। পনের থেকে বিশ। এমনকি, সত্যি সত্যি হতে পারে যে চল্লিশ পঞ্চাশ লাখ দস্তখত জোগাড় করে ফেলবেন তিনি। পঞ্চাশ লক্ষ লোকের দাবি অত্যন্ত জোরালো দাবি।

বর্ষার শুরুতে খবর পেলাম, জলিল সাহেব অসুখে পড়েছেন। হাঁপানি, সেই সঙ্গে রিউমেটিক ফিবার। বাড়িঅলা বললেন, ‘পাগলা মানুষ। শরীরের যত্ন তো আর কোনো দিন করে নাই। এ যাত্রা টিকবে না।’
:বলেন কী?
:হ্যাঁ, গ্রিন ফার্মেসির ডাক্তার সাহেব বললেন। আমি নিজেও গিয়েছিলাম দেখতে।
:অবস্থা কি বেশি খারাপ?
:বর্ষাটা টিকে কি না…
:বলেন কী?
:খুবই খারাপ অবস্থা।
বর্ষাটা অবশ্যি টিকে গেলেন। ফাইলপত্র বগলে দিয়ে ঘুরতে বেরোলেন। আমার সঙ্গে দেখা হলো দুপুরে। আমি চিনতেই পারি না, এমন অবস্থা। তিনি এগিয়ে এলেন, ‘প্রফেসার সাহেব না?’
:আরে, কী ব্যাপার ভাই? একি অবস্থা আপনার?
: বাঁচব না বেশি দিন।
: না বাঁচলে চলবে? এত বড় একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন।
:ওইটার জন্য টিকে আছি।
: সিগনেচার কত দূর জোগাড় হয়েছে?
:পনের হাজার। মাসে তিন-চার শয়ের বেশি পারি না। বয়স হয়েছে তো। তবে ছাড়ার লোক না আমি।
: না, ছাড়বেন কেন?
: কাঠগড়ায় দাঁড় করাব শালাদের। ইহুদিরা পেরেছে, আমরা পারব না কেন? কী বলেন?
: তা তো ঠিকই।
:ত্রিশ লাখ লোক মেরেছে বুঝলেন, একটা-দুইটা না। বাংলাদেশের মানুষ সস্তা না? মজা টের পাইয়ে দেব।



আজিমপুরের ওই পাড়ায় আমি প্রায় দু-বছর কাটালাম। এই দু-বছরে জলিল সাহেবের সঙ্গে মোটামুটি ঘনিষ্টতা হলো। মাঝে-মধ্যে যেতাম তার বাসায়। ভদ্রলোকের নিজের বাসা। দোতলাটা ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়ার টাকায় সংসার চলে। স্ত্রী নেই। বড় ছেলের বউ তাঁর সঙ্গে থাকে। ফুটফুটে দুটি মেয়ে আছে সেই বউটির। যমজ মেয়ে বোধ করি। খুব হাসি-খুশি। ভালোই লাগে ও বাড়িতে গেলে। বউটি খুবই যত্ন করে।

পিটিশন সম্পর্কে বাচ্চা দুটির ধারণাও দেখলাম খুব স্পষ্ট। একটি মেয়ে গম্ভীর গলায় আমাকে বলল, ‘দাদার খাতা লেখা শেষ হলে যারা আমার বাবাকে মেরেছে, তাদের বিচার হবে।’ এই টুকু মেয়ে এত সব বোঝার কথা নয়। জলিল সাহেব নিশ্চয়ই ব্যাপারটা ওদের বুঝিয়ে বলেছেন।
ওপাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে যেতাম। এরপর ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমে গেল। এক সময় দীর্ঘ দিনের জন্য দেশের বাইরে চলে গেলাম।

যাওয়ার আগে দেখা করতে গিয়েছি। শুনলাম, তিনি ফরিদপুর গিয়েছেন সিগনেচার জোগাড় করতে। কবে ফিরে আসবেন, কেউ বলেতে পারে না। তার ছেলের বউ অনেক দুঃখ করল। দুঃখ করার সঙ্গত কারণ আছে। একমাত্র পুরুষ যদি ঘর-সংসার ছেড়ে দেয়, তাহলে জীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে।

বাইরে থাকলে দেশের জন্য অন্য রকম একটা মমতা হয়। সেই কারণেই বোধ হয় জলিল সাহেবের কথা মনে পড়তে লাগল। মনে হতো, ঠিকই তো, ত্রিশ লক্ষ লোক হত্যা করে পার পেয়ে যাওয়া উচিত নয়। জলিল সাহেব যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। এটা মধ্যযুগ না। এ যুগে এত বড় অন্যায় সহ্য করা যায় না।

উইকেন্ডগুলোতে বাঙালিরা এসে জড়ো হতো আমার বাসায়। কিছু আন্ডাগ্র্যাজুয়েট ছেলে, মুরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটির অংকের প্রফেসর আফসার উদ্দিন সাহেব। সবাই একমত, জলিল সাহেবের প্রজেক্টে সাহায্য করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। বিদেশি পত্রিকায় জনমতের জন্য লেখালেখি করা হবে। আমেরিকার ফার্গো শহরে আমরা এক সন্ধ্যাবেলায় ‘আব্দুল জলিল সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ফেললাম। আমি তার আহ্বায়ক। আফসার উদ্দিন সাহেব সভাপতি। বিদেশে বসে দেশের কথা ভাবতে বড় ভালো লাগে। সব সময় ইচ্ছা করে, একটা কিছু করি।

দেশে ফিরলাম ছয় বছর পর।
ঢাকা শহর অনেকখানি বদলে গেলেও জলিল সাহেবের বাড়ির চেহারা বদলায়নি। সেই ভাঙা পলেস্তাঁরা ওঠা বাড়ি। সেই নারিকেল গাছ।

কড়া নাড়তেই চৌদ্দ-পনের বছরের ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল। অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে।
:তুমি কি জলিল সাহেবের নাতনি?
:জি।
:তিনি বাড়ি আছেন?
:না, দাদু তো মারা গেছেন দু-বছর আগে।
:ও। আমি তোমার দাদুর বন্ধু।
:আসুন, ভেতরে এসে বসুন।

আমি বসলাম কিছুক্ষণ। মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা ছিল। ভদ্রমহিলা বাসায় ছিলেন না। কখন ফিরবেন, তারও ঠিক নেই। উঠে আসার সময় জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার দাদু যে মানুষের সিগনেচার জোগাড় করতেন, সেই সব আছে?’
:জি, আছে। কেন?
:তোমার দাদু যে কাজটা শুরু করেছিলেন সেটা শেষ করা উচিত, তাই না?
মেয়েটি খুব অবাক হলো। আমি হাসিমুখে বললাম, ‘আমি আবার আসব, কেমন?’
:জি-আচ্ছা।
মেয়েটি গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসে নরম গলায় বলে, ‘দাদু বলেছিলেন, একদিন কেউ এই ফাইল নিতে আসবে।’
আর যাওয়া হলো না।

উত্সাহ মরে গেল। দেশের এখন নানা রকম সমস্যা। যেখানে-সেখানে বোমা ফোটে। মুখ বন্ধ করে থাকতে হয়। এর মধ্যে পুরানো সমস্যা টেনে আনতে ইচ্ছে করে না।

আমি জলিল সাহেব নই। আমাকে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়। মিরপুরে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি কেনার জন্য নানা ধরনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। জলিল সাহেবের মতো বত্রিশ হাজার দরখাস্তের ফাইল নিয়ে রাস্তায় বেরোনোর আমার সময় কোথায়?

জলিল সাহেবের নাতনিটা হয়তো অপেক্ষা করে আমার জন্য। দাদুর পিটিশনের ফাইলটি ধুলো ঝেড়ে ঠিকঠাক করে রাখে।

এই বয়সী মেয়েরা মানুষের কথা খুব বিশ্বাস করে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৬

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: অনেক আগে পড়েছিলাম জলিল সাহেবের পিটিশন। ত্রিশ লাখ মানুষকে মেরে ফেললো- তার কোন বিচার হলো না!

২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আমি প্রায়ই হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন লেখা পড়ি ‌ । এই লেখাটিও আমি অনেক বার পড়েছি। তার এই লেখা গভীরতা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। আসলেই অসাধারণ একটি লেখা।

২| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংগালীর প্রানের গল্প

২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, স্বাধীনতা নিয়ে আরো গল্প কবিতা নাটক প্রবন্ধ রচনা করা দরকার‌ । মুক্তিযোদ্ধাদের বেঁচে থাকাকালীন এই জাতীয় লেখা গুলো লিখে শেষ করা দরকার।

সুন্দর সুন্দর এই লেখা এলাকা ভিত্তিক এই সব লেখা প্রকাশিত হলে এক সময় যখন মুক্তিযোদ্ধারা থাকবেন না তখন এই লেখাগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল ও অতুলনীয় এক সম্পদে পরিণত হবে।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:০৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গল্পটি ভাল লাগলো,কেন যে পড়া হয় নাই

২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: যাক শেষ পর্যন্ত আপনি লেখাটি পড়তে পেরেছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো।

আসলেই অসাধারণ একটি লেখা একটি। এই জাতীয় আরো লেখা বাংলা সাহিত্যে আসা দরকার।

৪| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হৃদয় ছোঁয়া গল্প !!!

২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আসলেই খুবই সুন্দর একটি লেখা ।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৫| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েছি।
দারুন গল্প। এবং এই গল্পটি সত্য ঘটনার আলোকেই লেখা।

২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সেটা হবার সম্ভাবনা বেশি।

৬| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০০

সত্যপীরবাবা বলেছেন: রঙ্গ দেখতে বসলাম। কতজন রাজাকার-বান্ধব আপনার এই পোষ্টে তাদের 'হৃদয়াবেগের' ছাপ রেখে যায়।

২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: একসময় বাংলাদেশে রাজাকাররা থাকবে না।

৭| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:৫৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




মুক্তিযুদ্ধনির্ভর সৃষ্টি সাহিত্য আমাদের সর্বাংশে চেতনাবাহিত রক্তধারাকেই যেন মূর্ত করে। আমরা বিভিন্ন চরিত্রসমেত ডুকে যাই ইতিহাসের বুকে, তুলে আনি আমাদেরই গৌরবময় প্রোজ্বল ইতিহাসের আলো, যদিও তাতে থাকে সমকালের যন্ত্রণা ।সমকালের যন্ত্রনা উপসমের রচনা করা কথাসাহিত্যের একটা কাজ।বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের অবস্থান অবশ্যই সর্বাগ্রে। সমকলের যন্ত্রনা উসমের রচনা’য় ভরা হুমায়ূন আহমেদের দারুণ ও শিল্পগুণ সম্পন্ন একটি ছোট গল্প ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’। আমরা যা ভাবিনি কিংবা আমাদের ভাবনার জগতে যে ফারাকটুকু আছে তা স্পস্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ এই গল্পটিতে। আমাদের রাষ্ট্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাধ্য করা সত্ত্বেও গল্পকার শোনান স্বপ্নের কথা, পাপ মোচনের কথা।‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পের শরীর খুব বেশি নাটকীয়তায় ভরপুর নয় কিন্তু সরল ও বাস্তবিক সংলাপে আমাদের সামনে মূর্ত হয় মনোজগত দগদগে হয়ে থাকা বেদনার প্রেক্ষাপট। জলিল সাহেব- মহান মুক্তিযুদ্ধে হারান তার প্রিয় দুই ছেলে। এক সময় চাকরি করতেন, এখন রিটায়ার্ড। অবসর জীবনকে উপভোগ না করে জলিল সাহেব নেমে পড়েন পিটিশনে স্বাক্ষর সংগ্রহে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন, বয়সের ভার, মানুষের নানারকম অসহযোগিতাকে পাশ কাটিয়ে নিয়োজিত থাকেন আত্মদায়ের চাপা বোঝাটি সরিয়ে ফেলতে।জলিল সাহেবের দাবি তো আর তার একার থাকে না, ত্রিশ লাখ শহীদের হয়ে তিনি দাবি উত্থাপন করতে চান, তার পক্ষে এই পিটিশন। হারার পাত্র নন তিনি, একাত্তরে পুত্র হারিয়েছেন, হারাতে চান না ন্যায্য বিচারের অধিকার। বয়সের কারণে হয়তো শারীরিক ব্যাধি তাকে আক্রমণ করে কিন্তু মনের জোর কমে না, থেমে থাকে না তার স্বাক্ষর-সংগ্রহ অভিযান।অনেক সময় গড়িয়ে যায় মহাকালের বুকে। আমরাও দেখেছি এই জনপদের রাজনৈতি সামাজিক আস্ফালন,উলম্ফন। আমাদের সুবিধামাখা সময় বরাবরই বুঝিয়ে দেয় এ জগত বড় নিষ্ঠুর, এখানে সবাই আত্মকেন্দ্রিক। নিজেকে দেখতে চায় কালের আয়নায়, দেশ যেখানে যাক, দশের ইতিহাস যেখানে যাবে যাক, পিটিশনে স্বাক্ষর করার সময় কোথায়, ব্যস্ত অথচ আত্মবিক্রয়ের এই সময়ে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তো ভালো করেই জানেন এই প্রজন্মের ইতিহাসমনস্কতার কথা, জাগরুক সত্তার কথা। তাইতো জাগরুক সত্তার প্রতিভু জলিল সাহেব মহত্তম আলোকবাহি উঁচুস্তরের মানুষ। গল্পকার আসলেই সময়কে জাগান, সময়ের কোলে বসে ন্যয়ের স্বপ্নকে উসকে দেন। হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ সাহিত্য-সাধনায় এ কাজটি করেছেন খুব সততার সাথেই। আমরা যখন একেবারেই ভুলে গেছি আমাদের দীর্ঘ ও জগন্যতম ঘটনার কথা তখনই হুমায়ূন আহমেদ তুলে ধরেছেন জলিল সাহেবের পিটিশনের কথা । আমরা, আজকের প্রেক্ষাপটেও ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’-এর পাঠ নিতে পারি। ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ পাঠ আমাদের সাহস জোগাবে, নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার অভয় দিবে। হুমায়ূন আহমেদকে আমাদের জাতিসত্তার জাগরূক প্রতিনিধিদের মহত্তম প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গন্য করবো অন্তত তার বিপুল সার্থক সৃষ্টি সম্ভারের দিকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে দৃষ্টি রেখে ।

এই গল্পটিকে এ সময়ে এখানে উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ ।

শুভে্ছা রইল



৮| ২২ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'আমি জলিল সাহেব নই।' এই প্যারাটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

অনেক দূরদর্শিতাপূর্ণ, একই সাথে হয়ত দোদুল্যমানতায়ও ভরা গল্প। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, এবং হুমায়ূন আহমেদ এটা দেখে গেছেন, এটাই এ গল্পের সার্থকতা।

গল্পটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ সাজাজদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.