![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের উল্টো পিঠেও আমি বৃত্তের মত বাস্তবতার কাছে বন্ধী
কিছু কথা ইদানিং আমার মাথায় এত বেশি গণ্ডগোল শুরু করেছে যে সেখান থেকে কথাগুলকে গুছিয়ে বের করতে গেলে হয় একটা আত্মপক্ষ হরতাল ডেকে গণ্ডগোল থামিয়ে নিতে হবে নয়তো সেখানে ১৪৪ধারা জারি করেতে হবে।
ছোটবেলা থেকে একটা পরিপূর্ণ মুসলিম চেতনামূলক পরিবেশের মুসলিম পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপক্ষে নিজের নৈতিক অবস্থানটাকে যেভাবে নিশ্চিত করতে পারছি না ঠিক তেমনিই পারছিনা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে দেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে নিজেকে দাড় করাতে।মাঝে থেকে প্রিয় দেশটাকে শকুনের ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হতে দেখাটা মেনে নেওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব না।
মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি সম্বন্ধে যেটুকু ক্ষুদ্র জ্ঞান আছে তার উপর নির্ভর করে করতে পারি আজকে যারা লাঠিসোটা নিয়ে ইসলাম রক্ষার জন্য রাস্তায় নেমেছে বিশেষ করে যেসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক জিহাদিরা তাদের অধিকাংশেরই কোন ভালমন্দ বিচার করে নিজের সিদ্ধান্ত নিজের নেওয়ার ক্ষমতা বা অধিকার কোনটাই তাদের নিজেদের আয়ত্তে নেই।
দুইটা ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার থাকেনা বা তাদের থামিয়ে রাখা সম্ভব না,প্রথমত যদি ইসলামের উপর কোন আক্রমন আসে এবং দ্বিতীয়ত যদি মাদ্রাসার বড়হুজুরের কোন নির্দেশ হয় তাহলে। কিছু কিছু ডমিনেটিভ হুজুরদের মতধারার সাথে আমার অনেক দিক দিয়েই মতবিরোধ আছে,অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বড় বড় খেতাবধারী হুজুরকে পরিস্থিতি তাদের পক্ষে নেওয়ার জন্য ইসলামকে ব্যাবহার করতে আমি দেখেছি।তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে সেই সব হুজুর মানেই কিন্তু সমগ্র মুসলিম জাতি নয়। তবে দুখের বিষয় হল এই ধরনের হুজুরের সংখ্যাই আমাদের দেশে এখন অনেক বেশি,এবং বর্তমানের এই বিশাল জন বিদ্রোহের বাদ্ধগত সরল চেতনার কিশোর জিহাদিদের অধিকাংশের নীতিনির্ধারকই হল ওই সমস্ত হুজুরেরা। ঠিক এই সবকিছুর উলটো পিঠে একজন ছোটখাটো ব্লগার এবং সর্বোপরি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে কিছু বিকৃত চিন্তাধারার বড়মাপের ব্লগারের নির্বুদ্ধিতামূলক চরম ইসলাম বিদ্বেষী লেখাকেও ছেড়ে কথা বলা উচিৎ বলে আমার মনে হয়না।কারন সবকিছুর আগে আমি মুসলমান। বনে যখন আগুন লাগে এবং আগুনটা যদি দাবানলে পরিনত হয় তখন নিমেষেই সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একদিকে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি অন্যদিকে ইসলামের উপর আঘাতের ইস্যুর সংঘর্ষে যে দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে তাতে পুড়ে ছাই হতে চলেছে সমগ্র দেশটাই।আমি বুঝিনা আমারা কিভাবে ভুলে যাই যে আমাদের জাতীয় এবং ধর্মীয় সত্ত্বা একই সুতোয় বাধা!! অন্যদিকে কোটি বাঙ্গালি আর বাঙালি দেশাত্মবোধকে নাচের পুতুল বানিয়ে তাদের ইচ্ছেমত পুতুলনাচের মঞ্চ সাজিয়ে যাচ্ছে দেশের কথিত কিছু দেশ প্রেমিকরূপি ভণ্ড রাজনৈতিক দল।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিটা চতুর্মাত্রিক কোনে পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার লক্ষ্য করা যায় যে একদিকে কিছু বিকৃত চিন্তাধারার ব্লগারের কিছু 'ভুল' বাঙালি দেশাত্মবোধের সাথে ধর্মকে জড়িয়ে জ্বালিয়ে দিল আগুন,অন্যদিকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতা ইসলাম রক্ষার নামে যে দাবিগুলোতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে তা দেশটাকে
আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে মধ্যযুগে,যা আরো বড় একটা 'ভুল'।বিরোধী দল একমুখী ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে লাগাতার ওই জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলে যে খুব বড় ধরনের 'ভুল' করছে তাতেও কোন সন্ধেহ নেই।যুদ্ধাপরাধী জামাত শিবির এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে অনবরত খুজছে জাতির ঘৃণার হাত থেকে তাদের মুক্তির পথ,তারা তাদের অপরাধ ঢাকতে
হয়ে উঠছে আর হিংস্র।...এবং অবশেষে সরকার,যারা সব ক্ষেত্রেই বাতাসের অভিমুখে পালতুলে দিতে একটুও দেরি করছেনা,সুযোগগুলোকে ব্যবহার করে টুকে নিচ্ছে ওই 'ভুল' নামক শব্দগুলোকে এবং ওই 'ভুল'গুলোকে ব্যাবহার করে খুব সূক্ষ্ম হাতে এই পুর খেলাটাকে পুরোপুরি একতরফায় খেলে যাচ্ছে এবং তাদের উদ্দেশ্য একটাই আর তা হল যে
কোন উপায়ে ফলাফলটাকে নিজেদের পক্ষে নেওয়া। কাদের মোল্লার বিচারের ঘটনাটা নিয়ে সরকারের কানামাছি খেলার বিষয়টা চুইঙ্গামের মতো আর চিবোতে ইচ্ছা করছেনা তাই এক্ষেত্রে কথাটা বাদ দিলাম,কিন্ত যেখানে হাজারো প্রতিবাদের বিরুদ্ধে তারা একাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটাকে আইনের মাধ্যমে বাতিল করে দিতে পারল সেখানে তারা দেশের
অর্থনীতি এবং দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা 'হরতাল'কে নিয়মের আওতায় আনতে বা নিষিদ্ধ করতে তাদের বিন্দুমাত্রও ইচ্ছা আছে বলে আমার মনে হয়না।অবশ্য থাকবেইবা কেন,এই হরতালের হাত ধরেই যে তারা ক্ষমতায় এসেছিল এবং ভবিষ্যতে বিরোধী দলে গেলে এই হরতালকেই যে তাদের "ট্রামকার্ড" হিসেবে ব্যবহার করতে হবে!! তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যদি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয় তাহলে আমি মনে করি এই হরতাল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য ভয়ানক মারণাস্ত্র,এবং যদি দেশের অস্তিত্বই না থাকে তাহলে গণতন্ত্রের জায়গা কোথায় থাকবে আমার জানা নেই!
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই পুরো পরিস্থিতিটার যে চিত্র আমি দেখতে পাচ্ছি তা ঠিক যেন আগের দিনের গম ভাঙানো জাতাকলের মতো, জাতার এক পাশ বাঙালি জাতীয়তাবোধ আর অন্য পাশ ইসলাম,মাঝখানে নিরিহ বাঙালি এবং জাতাটা ঘোরাচ্ছে নোংরা রাজনীতি,এবং মাঝখানে পিষ্ট হচ্ছে
সেইসব সাধারণ মানুষ যারা একদিকে মুসলমান অন্যদিকে বাঙালি এবং যাদের মত প্রকাশের এবং বাচার স্বাধীনতা জন্যই ৭১এ অজস্র রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।বাংলাদেশের বর্তমান এই পরিস্থিতি দুঃখজনক নাকি হাস্যকর তা আমার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছেনা!!!
©somewhere in net ltd.