![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের উল্টো পিঠেও আমি বৃত্তের মত বাস্তবতার কাছে বন্ধী
প্যারিসে হামলার প্রসঙ্গটা বেশ সতর্কতার সঙ্গেই বিচার করা উচিত। কারণ এই হামলাটা হয়েছে প্রথম সারির উন্নত এক রাষ্ট্রে, যারা আগে থেকেই হামলার হুমকির মধ্যে ছিল এবং কার্যত হামলায় তারা কোনো প্রতিরোধই দেখাতে পারেনি। এটা এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন বিশ্ব শক্তিগুলো একটা নয়া মেরুকরণের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছিল। এই হামলা যদি সেই সমীকরণে প্রভাব ফেলে তাহলে অবশ্যই এর আগাপাশতলা বিচারের যুক্তি রয়েছে।
আইএসকে যদি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে ধরি, তাহলে আমরা দেখব যে, তারা যুদ্ধের মধ্যে আছে। সম্প্রতি পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের একের পর এক পরাজয়ের খবর ছাপছে। রাশিয়া, ইরাক, ইরান, লেবানন, তুরস্ক, আমেরিকাসহ বিরাট বিরাট সব দানবরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করছে। যুদ্ধের এই স্তরে তাদের দরকার যুদ্ধবিরতি! কিন্তু শুক্রবার রাতের হামলার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, আইএস আসলে এই যুদ্ধের ফ্রন্টএলাকা আরও বড় করছে। প্রতিপক্ষের তালিকায় এবার তারা যুক্ত করেছে ফ্রান্সকে। সাধারণ হিসাব অনুযায়ী যা তাদের করার কথা নয়।
আইএস অবশ্য স্বাধীন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এখনো তাদের রাষ্ট্র আর অবস্থান যেন বেশ খানিকটা দূর গ্রহের ব্যাপার। আর আমাদের স্যাটেলাইটগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না, তাই আইএস রাষ্ট্রের ভেতরের কল্লা কাটা ছাড়া আর কোনো ফুটেজ আমরা পাই না। আসলে কোথায় আইএস, কিভাবে তারা থাকে, খায়, চলে, এর কোন কিছুই অনলাইন নয়, এটা এক রহস্য। আইএস যদি স্বাধীন হতো, তাহলে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়ার কথা ইজরায়েল। আগের হিসাব বাদ, গত একমাস ধরে ইজরায়েল প্রায় প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। আইএসের স্বাধীনতা থাকলে, ইসলামপ্রেম থাকলে তারা তো ফ্রান্সে নয়, হামলা করার কথা ইজরায়েলে। সেটা তাদের নিকটে এবং ওই হামলায় মুসলিম বিশ্বে তাদের সমর্থনও বাড়ত। কিন্তু তা দেখা গেল না!
যাই হোক, তারা যদি স্বাধীন না হয়ে মার্কিনের ক্রীড়নক হয়, তাহলে কিন্তু এই হামলায় তাদের বেশ স্বার্থ আছে। হামলার পরপরই জন কেরী সাহেব মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার জন্য সংলাপের দিকে মনোযোগ দিতে বলেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, সিরিয়া ইস্যুতে মার্কিন কিছুটা বিপাকে পড়ে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে। রাশিয়ার হস্তক্ষেপ আবার ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে বেশ আলোড়িত করে। আমেরিকা যখন রাশিয়াকে তথাকথিত মধ্যপন্থী আলকায়েদাভুক্ত আন নুসরাহকে হামলা না চালাতে বলে, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ তখন ঘোষণা দেন যে, মধ্যপন্থিরাও সন্ত্রাসী, তাদের হামলা করা হলে তার দেশের আপত্তি নেই। এর মাধ্যমে সিরিয়া প্রশ্নে মার্কিনের সমর্থক কমতে থাকে।
সিরিয়া ইস্যুতে মার্কিনের জন্য বিশ্ব পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ হিসাব বলে, এই পরিস্থিতি যদি লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে মার্কিন আরও মিত্র হারাবে। সেক্ষেত্রে তাদের দরকার ছিল, এ মুহূর্তে কিছু একটা ঘটানো, যাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। সে লক্ষ্য নিয়ে তারা প্রকাশ্যে যুদ্ধ সূচনা করেছে আইএসের বিরুদ্ধে আর কুর্দিদের সঙ্গে নিয়ে নিজেদের বিশ্বস্ততা প্রমাণের চেষ্টাও করছে। এরকম অবস্থায় ফ্রান্সে হামলা তাদের জন্য কি সুখবর বয়ে আনতে পারে?
বিরাট সুখবর! ফ্রান্সে হামলার কারণে ইউরোপীয় শক্তিগুলো এখন দ্রুত সমাধান চাইবে। সেই ওষুধ নিয়ে তো আমেরিকা প্রস্তুত। তারা বলবে, আমাদের নেতৃত্বে যুদ্ধে আসো! বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনো বিশ্বশক্তিই এক্ষেত্রে মার্কিন বলয়ের বাইরে গিয়ে রুশ বলয়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে চাইবে না। কারণ এখনও রাশিয়ার পক্ষে পরিস্থিতি অতটা পরিপক্ক হয়নি, বছর দুয়েক পরে তা হতে পারত। এভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে বিভাজনের জন্য যে সময়পর্বের দরকার ছিল, তা আর থাকল না। বরং সমাধানের নেতৃত্বটা এসে গেল মার্কিনের হাতেই। এর মাধ্যমে এমনকি ইউরোপীয় মিত্রদের পূর্ণ সমর্থনও নিশ্চিত হচ্ছে তার। ফলাফলের দিক থেকে বিবেচনা করলে তাই আমরা দেখি, এর মাধ্যমে আমেরিকার অনেক ধরণের লাভই হতে যাচ্ছে।
এই হামলা ফ্রান্সে নতুন নয়। তারা হুমকির মধ্যেই ছিল। এমনকি স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে জার্মান ফুটবলাররা গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, হামলার আশঙ্কার কথা তাদের জানা ছিল। অর্থাৎ ফ্রান্স অব্যাহত হুমকির মধ্যেই ছিল, আছে। দেশ হিসাবে তারা প্রথম সারির উন্নত, যা নির্দেশ করে, সিসিটিভিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আধুনিকই হওয়ার কথা। তাছাড়া আমেরিকার মতো ফ্রান্সে যেকেউ অস্ত্র রাখতে পারেন না। সেক্ষেত্রে এরকম ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়া, হামলা করাটা প্রমাণ করে যে, হয় ফ্রান্সের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই, নইলে খুবই উচ্চমাত্রার প্রাযুক্তিক ক্ষমতাসম্পন্নরা এই হামলা চালিয়েছে। যে সক্ষমতা আবার আজকের দুনিয়ায় মোসাদ ও সিআইএ ছাড়া খুব কম সংস্থারই আছে!
ফ্রান্সের নিজস্ব মুসলিম মৌলবাদীরাও এই হামলা পরিচালনা করতে পারে, তা একেবারে অসম্ভব নয়। তবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তু নির্দিষ্ট করে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে এর সঙ্গে সুপরিকল্পিত আধুনিক গোষ্ঠীর জড়িত থাকাটাই বেশি সম্ভব বলে মনে হয়। তা সত্ত্বেও এই ঘটনা স্থানীয়দের দ্বারা ঘটতে পারে। কারণ সম্প্রতি ফ্রান্সের জেলখানাগুলো মুসলিম বন্দিতে পরিপূর্ণ বলে কিছু সংবাদ সংস্থা খবর প্রকাশ করেছিল! এসব কারাগারের বন্দিদের সম্পর্কে বাইরে কোনো তথ্য দেয়া হয় না। ফ্রান্সের তথ্য আইন থেকে কারাগার মুক্ত, যা কিনা ওই অভিযোগকে শক্তিশালী করে। অর্থাৎ স্থানীয় মুসলিমদের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন নিপীড়নের ফল হিসেবেও এই হামলা হতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়,
ফ্রান্সে এই হামলার ফলে আইএসের কোনো লাভ নেই। উল্টো তাদের ওপর চাপটা আরও বাড়বে।
ইজরায়েলকে টার্গেট না করে ফ্রান্সকে টার্গেট করা দিয়ে বোঝা যায় যে, এর সঙ্গে ধর্মের বাইরে অন্য কিছুর শক্ত যোগসাজশ রয়েছে।
এই হামলার ফলে মার্কিনের নেতৃত্বে সিরিয়ায় যুদ্ধজোট আবার শক্তিশালি হবে, যা রাশিয়ার উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এই হামলা প্রমাণ করেছে যে, ফ্রান্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়ে হামলাকারী ও তাদের পালনকর্তারা বেশি শক্তিশালী।
অভ্যন্তরীণ কারণে হামলা, এটাকেও একেবারে উঁড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে সেটা মুসলিমদের ওপর ফরাসী সরকারের দমন নিপীড়নকে বৈধতা দিবে, যদিও সেক্ষেত্রে তারা একে অপর থেকে জাত!
ফ্রান্সে হামলার পেছনে কারা জড়িত, এই প্রশ্নটা তুললেই কেউ কেউ ক্ষিপ্ত বোধ করবেন। তারা এর দায় মুসলিমদের কাঁধে চাপাতে আগ্রহী। এই পক্ষটা এমনকি সারা পৃথিবীর সব মুসলিমদেরই যেকোনো জঙ্গি হামলার জন্য দায়ী করে। যদিও মুসলিমদের মধ্যে রয়েছে নানা পথের অস্তিত্ত্ব। আজ আমরা দেখছি যে, এই পক্ষটা যেকোন হামলাকে প্রথমে 'জঙ্গি' শব্দ দিয়ে মুড়ে দেয়। তারপর এর সঙ্গে যুক্ত করে ধর্মকে। যদিও ইজরায়েলকে তারা ধর্মের ভিত্তিতে বিচার করে না। তাদের দ্বারা চালিত ধর্মীয় সন্ত্রাসকে তারা দেখে ন্যায়যুদ্ধ হিসেবে। এটা হচ্ছে, মুসলিম মৌলবাদ বিরোধিতা এবং ইহুদি ও খ্রীষ্টান মৌলবাদের পদলেহন।
বাস্তবে সাম্রাজ্যবাদীরা বিশ্বব্যবস্থাকে তাদের করতলগত করার জন্য, নানা ধরণের অস্ত্র ছেড়েছে বাজারে। উগ্র মৌলবাদী মুসলিম, জায়নিস্ট, খ্রীষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাই কেবল এদের অস্ত্র নয়। এমনকি উগ্র নাস্তিক, উগ্র অভিবাসন বিরোধী, উগ্র জাতীয়তাবাদীরাও তাদেরই প্রেরিত! এরা প্রত্যেকেই বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্কটকে ধর্ম ও জাতীয় সঙ্কট হিসাবে প্রচার চালায় এবং যে শাসকরা এসব অপকর্ম করছে তাদেরকে মানুষের কাছ থেকে আড়াল করে। কেউ এটা সচেতনভাবে করে, যেমন এনজিওগুলো! আর কেউ এটা করে অবচেতনে, যেমন পত্রিকা পড়ে ও টিভি দেখে বুদ্ধিজীবী হওয়া নাস্তিক, ধার্মিক ও জাতীয়তাবাদীরা।
সারা বিশ্বের মানুষ আজ সাম্রাজ্যবাদীদের এই দখলযুদ্ধে ক্লান্ত, আতঙ্কিত ও অনেকে উদ্বাস্তু! এই পরিস্থিতির অবসানকল্পে দরকার নিপীড়িতদের ঐক্য- জাতি, বর্ন, ধর্ম নির্বিশেষে। আর নিপীড়কদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামটা এগিয়ে নেয়া গেলেই আস্তে আস্তে জনগণের নিজের জায়গা তৈরী হবে। যারা আজকের এই বিশ্ব পরিস্থিতির অবসান চান, যারা এই ক্ষমতার যুদ্ধের শেষ দেখতে চান, যারা পৃথিবীতে শান্তি চান, তাদের সকলের জন্য আজকের কর্মসূচী একটাই- নিপীড়কদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচার চালানো ও সংগ্রাম গড়ে তোলা।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১১
আবরার রুমী বলেছেন: যুদ্ধ নয় শান্তি চাই
২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৫
৮৩১আবীর১৯৮৩ বলেছেন: এ পর্যন্ত এ বিষয়ে যত লেখা পড়লাম তার মধ্যে আপনার বিশ্লেষনটাই সবচেয়ে ভাল লাগল।
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
আবরার রুমী বলেছেন: বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করার জন্য় ধন্য়বাদ।
৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬
বিজন রয় বলেছেন: কারন ছাড়া ক্রিয়া হয় না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০
চাঁদগাজী বলেছেন:
"বাস্তবে সাম্রাজ্যবাদীরা বিশ্বব্যবস্থাকে তাদের করতলগত করার জন্য, নানা ধরণের অস্ত্র ছেড়েছে বাজারে। উগ্র মৌলবাদী মুসলিম, জায়নিস্ট, খ্রীষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাই কেবল এদের অস্ত্র নয়। এমনকি উগ্র নাস্তিক, উগ্র অভিবাসন বিরোধী, উগ্র জাতীয়তাবাদীরাও তাদেরই প্রেরিত! "
-অনেক লিখেছেন, ভাবনা মনে হয়, সঠিক নয়