![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। কৃষি বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিচ্ছে লবণাক্ততার আগ্রাসী থাবা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় লবণাক্ততা ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানিকেও গ্রাস করতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গোটা দক্ষিণ উপকূল অঞ্চলের নদ-নদী ও ফসলি জমিতে। প্রতি বছর লবণাক্ততার আগ্রাসী থাবায় উপকূলীয় জনপদ ক্রমেই পরিণত হচ্ছে বিরানভূমিতে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা ২০০ পার্স পার মিলিয়ন (পিপিএম)। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা তিনগুণ বেশি ছয় শ’ পিপিএম; কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নলকূপগুলো থেকে যে পানি উঠছে, তাতে লবণাক্ততার পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে ঢের বেশি। পিরোজপুর জেলার নলকূপের পানিতে এখন লবণাক্ততার মাত্রা সাত শ’ পিপিএম। কাছের জেলাগুলোর অবস্থাও প্রায় অভিন্ন। আগে শহরাঞ্চলে নয় শ’ থেকে এক হাজার ফুট এবং গ্রামাঞ্চলে সাত শ’ থেকে আট শ’ ফুট গভীর নলকূপ থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যেত। এখন শহরাঞ্চলে এক হাজার থেকে বার শ’ ফুট এবং গ্রামাঞ্চলে আট শ’ থেকে এক হাজার ফুট গভীর নলকূপ না বসালে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও লবণাক্ততার মাত্রা চার হাজার পিপিএম পর্যন্ত পৌঁছেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য পরিণতিতে দেশের দক্ষিণ উপকূলজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বাড়ছে, তেমন বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ভারত থেকে আসা নদীগুলোর উৎসমুখে বাঁধ দেয়ায় সুপেয় পানির উৎস সঙ্কুচিত হচ্ছে, নদ-নদীতে ঢুকছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি। ফলে কৃষি জমিতেও লবণাক্ত পানির আগ্রাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) তথ্য অনুযায়ী দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গড়ে ২০ শতাংশ আবাদি জমি প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে ঐ জনপদের প্রায় ৮০ লাখ একর আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এর ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে উপকূল অঞ্চলে। বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী দেশের উপকূলীয় জনপদের প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি কম লবণাক্ত, প্রায় ৮০ লাখ হেক্টর জমি ঈষৎ লবণাক্ত, ছয় লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমি মধ্যম লবণাক্ত এবং প্রায় সাত লাখ হেক্টর জমি খুব বেশি লবণাক্ত। উপকূলভাগের কৃষিজমির ৩০ শতাংশই এখন লবণাক্ততার শিকার। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে কৃষিজমির পরিমাণ জনসংখ্যার তুলনায় এমনিতেই যনেক কম। সে জমির উল্লেখযোগ্য অংশ লবণাক্ততার শিকার হওয়ায় তা দেশের সামগ্রিক কৃষির জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তবে, আশার কথা এই যে – বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার জনবান্ধব এবং কল্যাণমূখী মানসিকতায় উজ্জীবিত। সরকার অনতিবিলম্বে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ততার আগ্রাসনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশিত।
©somewhere in net ltd.