![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডিআর কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশের মাম্বাসায় রয়েছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ক্যাম্প বোগোরো সিওবিতে। এখানেই রয়েছে কঙ্গোর গৃহযুদ্ধে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার বিশ্বের বিপন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির নৃগোষ্ঠী পিগমি এবং বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণী ওকাপিদের বসবাস। ওকাপি হচ্ছে জেব্রা আর জিরাফের মিশ্রণ। এ প্রাণীদের জন্য এখানে একটি গবেষণাকেন্দ্রও রয়েছে। ২০১২ সালে এ কেন্দ্রে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রের ১৪টি ওকাপির মধ্যে ১৩টিকে মেরে ফেলা হয়।
মাম্বাসায় আরো আছে পাহাড়ি নদী ইপুলো। কিছুটা দূরেই রয়েছে লেক আলবার্ট। এ মাম্বাসায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার হাজার ফুট ওপরে বোগোরো সিওবিতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা এক বেদনাদায়ক স্মৃতি বহন করছেন। ২০০৫ সালের ২৫ মার্চ ডিআর কঙ্গোর বিদ্রোহী সশস্ত্র একটি দলের অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হলে ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে এখানেই রাখা হয় এবং কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে এই সিওবি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল ইপুলো গ্রামের কাছের জঙ্গলে পিগমিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের হাতে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেয়। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন শান্তিরক্ষীদের ইতুরি ব্রিগেডের কমান্ডার বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মোহাম্মদ কায়সার হোসেন ও ব্যান-এয়ারের (বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কন্টিনজেন্ট) কমান্ডার এয়ার কমোডর নজরুলসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সংশ্লিষ্ট শান্তিরক্ষী কর্মকর্তারা। বন্যজীবনে অভ্যস্ত পিগমিদের শরীরের বিশেষ কটু গন্ধও সাধারণ সভ্য মানুষ থেকে অনেকটা আলদা করে রেখেছে। পিগমিদের বন্য প্রাণীর মতো শিকার করে পুড়িয়ে খেয়েছে তাদেরই দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ। সেসব নরখাদকের বিশ্বাস, পিগমিদের মাংস খেলে বিশেষ ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা লাভ করবে তারা। এসব কারণে পিগমিরা সাধারণত লোকালয় এড়িয়ে চলে। আক্রমণকারীরা অন্ধকার নেমে আসার পর জঙ্গলের মধ্যে পিগমিদের আবাসস্থলে চলে আসে। এরপর শুরু হয় পৈশাচিক কাণ্ড। তারা ওদের মেরে ফেলে খেতে শুরু করে। কঙ্গোর নর্থ কিভু প্রদেশে একটি দলের মধ্যে নরমাংস ভক্ষণ প্রথা চালু আছে। ওই দলটি খনিজ সম্পদ দখল করার জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের নির্মূলের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ব্যাপকভাবে পিগমিদের নিধন করা হয়। প্রচারণা চালানো হয়, পিগমিদের মাংস ভক্ষণে ম্যাজিক্যাল পাওয়ার বা ঐন্দ্রজালিক শক্তি অর্জন করা যায়। ওই সময় ডিআর কঙ্গো ও পার্শ্ববর্তী দেশ রুয়ান্ডায় ৭০ হাজার পিগমিকে মেরে ফেলা হয়। পিগমি শিশুরা ১২-১৩ বছর পর্যন্ত মোটামুটি স্বাভাবিক আকৃতির হয়ে থাকে। কিন্তু এরপর তাদের দেহ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। পিগমিদের উচ্চতা সাধারণত চার ফুট থেকে পাঁচ ফুটের মধ্যে হয়ে থাকে। জঙ্গলবাসী যাযাবর এ নৃগোষ্ঠী আগে শিকার করেই জীবন ধারণ করত। বর্তমানে তাদের সমাজে চাষাবাদের প্রচলন হওয়ায় তারা কিছুটা স্থায়ী হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে আফ্রিকার বিষুবীয় অঞ্চলে পিগমিদের একাধিপত্য ছিল। ক্রমেই বানাঞ্চল উজাড় ও অন্যান্য গোষ্ঠীর আগ্রাসনে বর্তমানে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। ডিআর কঙ্গোতে এ নৃগোষ্ঠীকে রক্ষা ও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অন্যতম কর্তব্য। পিগমিরাও এখন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিজেদের রক্ষাকর্তা হিসেবেই মূল্যায়ন করছে। আতঙ্ক ভুলে স্বপ্ন দেখছে নিরাপদ জীবনের।
©somewhere in net ltd.