![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নতুন কম্পিউটার ইউজার । ভালবাসি স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে । সেই ভাল লাগা থেকেই এই বৃহৎ পরিবারে আসা । যেহেতু নতুন সেহেতু এখানে স্থান পাওয়ার পর ও সাথে সাথে কিছু লিখিনি । এখানে নিয়মিতদের সেই মূল্যবান লেখা গুল পড়েছি এবং জানার চেষ্টা করেছি এখানে লেখার নিয়ম -কানুন সম্পর্কে ।আজ থেকে আমার ভাবনা গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আজ প্রথম আলোর একটি পুরানো সংখ্যা ( Click This Link )পড়ছিলাম।
সেখানে একজন লেখক খুব রসাত্মক ভাবে অন্য একটি দেশের সাথে তুলনা করে আমদের দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন । আপনাদের মাঝে আমার প্রথম দিনে সেটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।
" বিষ্যুদবার রাতে ভেবেছিলাম, বাঁচা গেল। কোনো রকমে রাতটা পোহালে জীবনের যাবতীয় ঝামেলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে। যাঁরা কাগজে সম্পাদকীয় পাতায় নিবন্ধ লেখেন, তাঁদের আর সে কষ্ট করার প্রয়োজন হবে না। যাঁরা গোলটেবিল আর মানববন্ধন করেন তাঁরা বাঁচবেন। কারণ, ওগুলো করবেনটা কোথায়? তোপখানা রোড, প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সিরডাপ ভবন থাকলে তো! যাঁরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করবেন না বলে স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বেঁচে গেলেন তাঁরাও। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাসিমুখের তাগাদাটা তাঁদের আর শুনতে হবে না। বিদেশে যাঁরা নিয়মিত বস্তা বস্তা টাকা পাচার করেন, বাঁচলেন তাঁরাও। দেশ আর বিদেশ বলে কিছু থাকছে না। সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড—কোনোটাই আর থাকছে না, সুতরাং অবৈধভাবে উপার্জিত টাকাগুলো পাচার করবেন কোথায়? হল-মার্কওয়ালারা গেলেন বেঁচে। পদ্মা নদীর ওপর সেতু বানানোর প্রয়োজনও ফুরিয়ে গেল। কারণ, নদীটাই থাকছে না, তা পারাপারের মানুষও থাকছে না, বাংলাদেশকে সেতু বানানোর জন্য ঋণ দেওয়ার বিড়ম্বনা থেকে বিশ্বব্যাংকও বেঁচে গেল। তাদের আনীত দুর্নীতির অভিযোগ অকার্যকর হয়ে গেল। দুদকের কর্তাদের কাজ রইল না। যাঁরা লাগাতার হরতাল আর গাড়িতে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা করছিলেন, তাঁদেরও আর সে ঝামেলায় যাওয়ার দরকার হবে না। কারণ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রয়োজন রইল না। ২১ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ তো ভালো, দুনিয়ার কোনো দেশেই আর নির্বাচন হবে না। মহাজোটের নেতাদের সান্ত্বনা এইটুকু যে ১৮ দলীয় মেগাজোট ক্ষমতায় গেল না। মেগাজোটের নেতাদের সান্ত্বনা, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করেও মহাজোট আর পুনর্নির্বাচিত হতে পারছে না। জামায়াত নেতাদের নির্মল আনন্দ যে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় ঘোষণার আগেই দুনিয়া শেষ।
কিন্তু শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যেও সূর্য উঠল। লোকজন গায়ে কাপড়চোপড় জড়িয়ে মাছ-মাংস তরিতরকারি কিনতে রাস্তায় বেরোল। কারণ, মরে নাই যখন তখন দুপুরে ও রাতে খাবে কী? সুতরাং বাঁচতে বাঁচতেও দুনিয়ার মানুষ জাগতিক ঝামেলা থেকে বাঁচতে পারল না। তার কারণ এই যে, এই গ্রহের মানুষ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে এবং তাতেই তাদের বিশ্বাস। মায়ান ক্যালেন্ডার নয়। মায়ান ক্যালেন্ডার মতে, ২১ ডিসেম্বর এ দুনিয়া শেষ হওয়ার কথা।
যেদিন দুনিয়া ধ্বংস হওয়ার কথা, ঠিক সেই দিনই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার দুই দিন আগে ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান ভবিষ্যদ্বাণী করল, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। তাতে বোঝা গেল, ২০৫০ সালের আগে পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে না। ২০২১ সালের আগে তো নয়ই।
কোনো বিদেশি মেহমান সফরে এলে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়, চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আগে থাইল্যান্ডের নাম ছিল শ্যামদেশ। প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সফরের সময় বাংলাদেশ ও শ্যামদেশও ৩১ দফা যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করেছে। তাতে বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিনিয়োগ সহযোগিতা, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রভৃতি বিষয় রয়েছে।
আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয় লম্বা টেবিলের দুই দিকে বসা দুই পক্ষের মন্ত্রী-আমলাদের মধ্যে। তার বাইরে অনানুষ্ঠানিক খোশগল্পও হয়। উভয় পক্ষের মানুষই কখনো হো হো করে হেসে ওঠেন। সিনাওয়াত্রার সফরের সময় কী ধরনের খোশগল্প হতে পারে বা হতে পারত, তা আমি কিছুটা আন্দাজ করেছি। আন্দাজ বা অনুমান জিনিসটা এমন যে তা ১০০ ভাগ অসত্য হতে পারে।
গুরুপাক ভোজনের পর বাংলাদেশের একজন শ্যামদেশের একজনকে বললেন, ‘দুই দিনের মধ্যে আপনাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আপনারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে তো কোনো কথাই বললেন না।’ থাই কর্মকর্তা: ‘আমাদের স্বাধীনতা ও পরাধীনতার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ১১ শতক থেকে একভাবেই কোনোমতে চলে যাচ্ছে। ১৯৪১ সালে জাপান দখল করেছিল, তাদের বিতাড়িত করেছি। তার পর থেকে জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো।’
৪৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি তাঁর লাল রঙের টাইতে বুড়ো আঙুল দিয়ে টোকা মেরে বলেন: আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন করলাম। ২৩ বছরে পাকিস্তানিরা সব শেষ কইরা দিয়া গেছে। তারপর দুইবার সামরিক শাসন। আপনাদের ভাগ্য ভালো, তাই উন্নতি করতে পারছেন।
আমাদের খোশালাপীকে থামিয়ে দেন শ্যামদেশি। হেসে বলেন: মিলিটারি শাসন কি আমরাই কিছু কম ভোগ করেছি? বর্তমান রাজা ভূমিবলের আমলেই আটবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। কে ক্ষমতা দখল করল, তা নিয়ে মাথা না চাপড়ে, জনগণ ও প্রশাসন তাদের কর্তব্য যথারীতি পালন করে গেছে।
আমাদের লোক: তাজ্জবের ব্যাপার ভাই! কন কী? আটবার মিলিটারি ক্যু-দেতা হয়েছে? তার পরেও আমরা আপনাদের দেশেই মরতে এবং মার্কেটিং করতে যাই?
শ্যামদেশি: মার্কেটিং করতে যান বুঝলাম, কিন্তু মরতে যান কথাটার মানে বুঝলাম না।
বাঙালি: ওই হলো আরকি! একই কথা। চিকিৎসার জন্য গিয়ে অনেকে মারাও যায় কিনা। এখন বাংলাদেশের রাজনীতিক, আমলা ও বড়লোকদের মারা যাওয়ার ভেন্যু লন্ডন, আমেরিকার পরেই ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুর— বামরুনগ্রাদ ও মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল। আমাদের ইকোনমি যে হারে চাঙা হচ্ছে এবং বড়লোকের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ২০২১ সালের মধ্যে আপনাদের আরও কয়েকটি বড় হাসপাতাল বানাতে হবে বাংলাদেশিদের জন্য।
সুখী মানুষের হাসি হাসেন শ্যামদেশি। বলেন: ‘আপনাদের ভালো হাসপাতাল, ডাক্তার নাই?’
বাংলাদেশি: আরে ভাই, নাই কোন জিনিসটা? ৪০-৫০ বছর আগে ঢাকা মেডিকেল, পিজি হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ছিল সেরা হাসপাতাল। ধনী-গরিব, মন্ত্রী-আমলা, কেরানি-পিয়ন সবারই চিকিৎসা হতো। এখন তা সম্ভব না। আচ্ছা, আমাদের যেমন স্বাধীনতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী ডাক্তার আছেন, আপনাদের সে রকম কোনো বাদী ডাক্তার সমিতি আছে কি?
শ্যামদেশি: না, তা নাই। তা থাকলে আপনাদের রোগীদের বামরুনগ্রাদে মৃত্যুর হার হতো অনেক বেশি।
দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্দীপ্ত বাংলাদেশি বলেন: ‘আচ্ছা, বাই দ্য বাই, আপনারা যে প্লেনে কাল আসলেন, সেটা দেখি এখানে রাইখা দিলেন। ওদিকে আপনাদের ফ্লাইটে সমস্যা হবে না? উড়োজাহাজ মোট কয়টা আছে আপনাদের?
শ্যামদেশি: জি, তা তো বটেই। আমরা এসেছি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বিমানে। আমাদের বিমানের সংখ্যা আমার জানা নাই। শ খানেক তো হবেই। আপনাদের অবস্থা কী?
দেশপ্রেমিক বাঙালি: আর বইলেন না! আমাদের কমতে কমতে অবস্থা এমন দাঁড়াইছে যে হাজিদের আনা-নেওয়া করা তো দূরের কথা, বড়লোক রোগীদের যে ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরে নেব, সে অবস্থাও নাই। এখন থাই এয়ার, ব্যাংকক এয়ারই আমাদের রোগীদের লাশ বহন করে। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট অর্ধেক খালি আসে।
থাই কর্মকর্তা: কারণ কী? আমাদের বিমানে আপনাদের যাত্রীদের সিট দিতে পারি না, আর ওদিকে আপনাদের বিমান অর্ধেক খালি আসে!
বঙ্গসন্তান: আমাদের উড়োজাহাজের অবস্থা বেহাল। আমাদের পাইলটরা দক্ষ বলে কোনো রকমে চালাচ্ছেন। কেউ চড়তে চায় না। তা ছাড়া সিট খালি থাকলেও বিমানের কর্মকর্তারা বলেন, সিট নাই। থাইতে যান গিয়া।
থাই অতিথি: ভেরি গুড। তবে মধ্যপ্রাচ্যে আপনাদের যেসব শ্রমিক যাতায়াত করেন, তাঁদের আনা-নেওয়া করলেই তো আপনাদের আর কোনো দেশের যাত্রী বহনের প্রয়োজন হয় না। বামরুনগ্রাদের রোগী ও তাদের সঙ্গী আত্মীয়স্বজনকে নাহয় আমরাই আনা-নেওয়া করলাম।
বঙ্গসন্তান এবার কিছুটা বিরক্ত হন। বলেন: আরে ভাই, বিমানের কথা বাদ দেন। উড়োজাহাজ ওঠানামার জায়গাটাই তো ঠিক করতে পারলাম না ৪১ বছরে। এই রানওয়েতে অন্য দেশি পাইলটরা নামতে চান না। এখন তো রাতে প্লেন ওঠানামা সম্পূর্ণ বন্ধ। আপনাদেরও দিনের আলো থাকতে থাকতেই উড়তে হইব। এই বিমানবন্দর দিয়া চলবে না। চরের মধ্যে আরেকটা এয়ারপোর্ট করার পরিকল্পনা আছে। এত দিন হইয়া যাইত। কিছু বেহুদা লোকের বাগড়া দেওয়ায় কাজ শুরু হয় নাই। সেইটা হইব ব্যাংককের সুবর্ণভূমির মতো আলিশান।
থাই কর্মকর্তা: আপনাদের পদ্মা ব্রিজের কথা কি শুনলাম? কখনো শুনি হবে, কখনো শুনি হবে না। কোনটা ঠিক?
বাঙালি কর্মকর্তা: আপনি মাত্র দুই রকম কথা শুনেছেন। বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলাদের কথা প্রতিদিন শোনার সৌভাগ্য হয় না আপনাদের। পদ্মা ব্রিজ নিয়ে এ পর্যন্ত কথা হয়েছে অন্তত ৯৭ রকম। কয়েক দিনের মধ্যেই সেঞ্চুরি হবে। আসলে দুর্নীতি তো নয়, অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন সেটাই ঠিক। দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে।
শ্যামদেশবাসী: দুর্নীতি জিনিসটা বুঝি। ওটা আমাদের দেশেও হয়। কিন্তু ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্র’ জিনিসটা কী?
ফ্যাক ফ্যাক করে হাসেন আপাদমস্তক সৎ বাঙালি: দুর্নীতির ষড়যন্ত্র কথাটার মানে আমরাও বুঝি নাই, কথাটার শানে নজুল অনেক রকম। এই কথার টীকা-ভাষ্য লিখতে গেলে অনেকগুলো পিএইচডি থিসিসের প্রয়োজন হবে। দুর্নীতি নয়,দুর্নীতির ষড়যন্ত্র। কার বাপের সাধ্য এ কথার অর্থ উদ্ধার করে। এতে একটা মরমি ভাব আছে। সিলেটের হাসন রাজার গানের মতো—আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য: আপনারা ব্যাংককে এত বড় বড় দুই-তিনতলা ফ্লাইওভার করলেন কীভাবে? গার্ডার ভেঙে চাপা পড়ে আপনাদের দেশে কী পরিমাণ লোক মারা গেছে?
থাইবাসীর মুখে বিষাদের ছায়া নামে। বলেন: হ্যাঁ, গত মাসে কাগজে দেখলাম, আপনাদের বহদ্দারহাটে নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৪ জন মারা গেছেন। এর আগেও নাকি ওখানে গার্ডার ধসে পড়েছিল। নিম্নমানের কাজের জন্য কারও শাস্তি হয়নি?
বাংলাদেশি: ওই ফ্লাইওভারের ঠিকাদার আমাদের দলের নিজস্ব লোক। তিনি সিডিএর চেয়ারম্যান। নিম্নমানের মালমসলা দিয়ে কাজ তিনি করাতেই পারেন না। তবে দেখুন, এখন ধসে পড়ে ভালো হয়েছে। ১৪-১৫ জন মারা গেছে। বানানোর পরে ধসে পড়লে হাজার খানেক মারা যেত। তা ছাড়া দেখুন, জনবহুল দেশ। মানুষ কমাও দরকার।
থাইবাসী আরও বেশি বেদনায় ম্লান মুখে: একই সময় আপনাদের নিশ্চিন্তপুরে পোশাকশিল্প কারখানায় ১১১ জন মারা গেল আগুনে পুড়ে। শ্রমিকদের পুড়ে কয়লা হওয়ার খবরে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রথম দিনের দুর্ঘটনায় খুব দুঃখ পাই। কিন্তু দুই দিন পরের আগুন লাগানোর ঘটনায় হতবাক হই। ২০ হাজার টাকা নিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন লাগানো অতি কাঁচা কাজ। ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে একটি বিশ্বাসযোগ্য রূপ দিতে আর কয়েক দিন পরে ওটা গুছিয়ে করলেই হতো। মেয়েটি তো জানত যে ফ্যাক্টরিতে সিসি ক্যামেরা আছে। সে যা করছে, তা সবই ধরা পড়বে। গরিব অশিক্ষিত নারী শ্রমিকদেরও এত বেআক্কেল মনে করা ঠিক নয়। বাইরের দেশের মানুষ এতে বিরক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের অনেক বিষয়ই থাইবাসীরা জানেন দেখে বঙ্গবাসী এবার বিরক্ত হন। তাঁকে এবার ঘায়েল করতে চান। বলেন: আপনাদের দেশেও তো দুর্নীতি, রাজনৈতিক বিক্ষোভ কম হয় না। এই তো গত মাসের ২৫ তারিখে পার্লামেন্ট ঘেরাও করল বিরোধী দল। অনাস্থা আনল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সব দেশেই আছে।
শ্যামদেশি বাধা দেন। বলেন: রাজনৈতিক আন্দোলন, বিক্ষোভ আছে। ষড়যন্ত্র নাই। প্রয়োজনে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারও করা হয়। লম্বা রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করা হয় না। যুবসমাজ রাজনৈতিক বিক্ষোভে অংশ নেয়, টেন্ডার নিয়ে মারামারি করে মাথা ফাটায় না। ছাত্রনেতারা ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য করে কোটিপতি হয় না। ক্যাম্পাসগুলোতে অনাবিল শান্তি। যখন ছাত্রবিক্ষোভ হওয়ার তখন হয়েছে। এত বড় ব্যাংকককে ঢাকার মতো উত্তর-দক্ষিণে, পূর্ব-পশ্চিমে ভাগাভাগি না করেও বেশ চালাচ্ছি। তবে থাইল্যান্ডকে আপনাদের মতো ডিজিটাল করতে পারিনি।
এ কথা শুনে খুশিতে দাঁত বের করেন বঙ্গবাসী। আগ্রহ নিয়ে জানতে চান: কী করে জানলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা?
থাই কর্তা: ঢাকার রাস্তায় যাতায়াতের সময়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়ার রাস্তায়। ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন রাস্তার ডাইনে-বাঁয়ে আইল্যান্ডে তিন গজ পর পর। তাতে নেতাদের রঙিন ছবি। তাতে মনে হয় বাংলাদেশের প্রতি বর্গমিটার জায়গা আজ ডিজিটাল।
বঙ্গবাসী দেখলেন, শ্যামবাসীর সঙ্গে কথা বলে লাভ নাই। তাঁর মাথায় ঘুরছে অন্য জিনিস। যে চুক্তি হলো তা নিয়ে আরও আলোচনার জন্য কয়েকবার ব্যাংককে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সহাস্যে শ্যামবাসীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ধন্যবাদ। অনেক খুশি হলাম আপনার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলে।’
শ্যামবাসী মাথা নুইয়ে করমর্দন করেন।"
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
এটি আপনাদের মাঝে আমার প্রথম উপস্থাপনা । কোন ভুল হলে আশা করি শুধরে দিবেন ।
©somewhere in net ltd.