![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাস্তব কিন্তু ভৌতিক প্রকৃতির কিছু ঘটনা বলবো। যেগুলো কারও নিকট অবাস্তব মনে হতে পারে; কিন্তু ঘটনা একদম সত্য ছিলো। কেননা, নিজের চোখকে তো অার অবিশ্বাস করতে পারিনা। কারো জীবনে এমন ঘটনাগুলো হুবুহু না মিললেও কাছাকাছি কিছু ঘটনা থাকতে পারে। এজন্য সবার সাথে শেয়ার করার অভিপ্রায় থেকে লিখছি।
ঘটনা-১ঃ
অামাদের বাড়ীর দক্ষিণ পার্শ্বে একটা পুকুর ছিলো। বলা যায় বাগানের ভীতরই পুকুরটা। পুকুরের দক্ষিন পাড়ে বেশ বড় একটা বেতঝাড় বা বেতের বাগান ছিলো। অনেক সময় অামাদের স্কুলের মাষ্টার মশাইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ঐ বেতের ঝাড় থেকে পাকা বেতের লাঠি তৈরী করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া লাগতো অামার মত অধম ছাত্রদের সাইজ করারা জন্য।
একদিন রাত ১২:০০ কি ১২:৩০ টা হবে ঠিক মনে নাই; প্রচন্ড বৃষ্টিতে পুকুরের পানি উপছে গিয়ে একটা স্রোতধারা পার্শ্ববর্তী বিলে গিয়ে পড়তে শুরু করেছে। পুকুরের মাছ বেরিয়ে যেতে পারে এই ভয়ে একটা টর্চ লাইট অার একটা ছাতা নিয়ে সেই মৃদু স্রোতধারার নিকট গিয়ে দাড়ালাম এবং কি করনীয় তা ভাবছিলাম।
চর্ট লাইট দিয়ে দেখি অনেকগুলো দেশি মাগুর মাছ পুকুর থেকে উঠে সেই জলধারার উপর বেশ অায়েশের সাথে স্রোত খাচ্ছে। মাছগুলো হাতছাড়া করা যাবেনা। যেভাবে হোক মাছগুলোকে ধরতেই হবে। দেশি মাগুর মাছ বলে কথা। কিন্তু এতটাই ঘুটঘুটে অন্ধকার যে লাইট ছাড়া একহাত সামনে দেখা যাচ্ছেনা। বাসায় একটা ছাতা হওয়ায় এত গভীর রাত্রে বৃষ্টিতে ভিজে কেউ অামাকে সাহায্য করবে বলে মনে হলোনা। একাই কাজ শুরু করলাম।
খেয়াল কইরা... রাত ১২:০০ কি ১২:৩০ টা বাজে তখন।
হঠাৎ বেতঝাড়ের দিক থেকে মিউ মিউ অাওয়াজ হলো। টর্চ লাইটটা সেদিকে ঘুরালাম। দেখি একটা সলিড ব্লাক ক্যাট অর্থাৎ একদম কালো রঙ্গের একটা বিড়াল বেতঝাড়ের দিক থেকে অামার দিকে এগিয়ে অাসছে। অামি ভাবলাম, হয়তো মাছের লোভে বিড়ালটি এমন করছে। অামি কোন গুরুত্ব না দিয়ে অামি মাছ ধরার কাজে মনোনিবেশ করলাম।
কয়েক মিনিট পরে অাবারও মিউ মিউ অাওয়াজ শুনতে পেলাম। টর্চ লাইটটা অাবারও সেদিকে ঘুরালাম। যা দেখলাম তাতে অামি প্রায় হতোভম্ম হয়ে গেলাম। ধবধবে সাদা একটি বিড়াল পূর্বের সেই মিচমিচে কালো বিড়ালটির যায়গায় স্থলিভিষিক্ত হয়েছে। মানে, কালো বিড়াল সাদা হয়ে গেছে। যাহোক, মনে সাহস সঞ্চয় করে দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে লাগলাম।
এর কিছুক্ষণ পরে কেমন একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম। কেমন যেন চপচপ শব্দ। টর্চ ঘুরিয়ে দেখি সেই বিড়ালের যায়গায় একটা কালো কুকুর লকলকে চোখে অামার দিকে তাকিয়ে অাছে। কুকুরের পিছনে কিন্তু বেতঝাড়। এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম। এক দৌড়ে বাসায় চলে এলাম। মাছ রেখেই দৌড় । বুকটা ধরফড় করছে। রাত্রে কাউকে কিছু বলেনি। সকালে যখন বিষয়টি মুরুব্বীদের বললাম; তখন উনারা বললো, এগুলো তোরা বুঝবিনা। অামি বললাম, ঠিক অাছে তোমরাই বুঝো; অামার বোঝার দরকার নাই।
ঘটনা-২ঃ
প্রচন্ড তাপদাহ চলছে। সম্ভবত বৈশাখের প্রথম দিক হবে। বাহিরে লোকজন নেই বললেই চলে। একেবারে ভর দুপুরে দাদা অামাকে ডেকে বললেন, চলতো বাঁশ বাগানে।
অামি বেশ বিরক্ত বোধ করে বললাম, এই ভর দুপুরে বাঁশ বাগানে কি করত যাবো?
দাদা বললেন, অামাকে একটা বাঁশ কেটে দিবি(অামাদের নিজস্ব বাঁশ বাগান/বাঁশঝাড়)।
কি অার করার। অনিচ্ছার সত্বেও দাদার পিছু পিছু বাঁশবাগানের দিকে রওনা হলাম। কোনটি কাঁটা যায় সেটা উনি সিলেকশন করছেন। একে তো প্রচন্ড গরম, তারপর চিটেফোঁটা বাসাতের বালাই নেই। গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ছেনা। তারপরও বাশগাছের ছায়ায় একটু হলেও স্বস্তি পাচ্ছি।
দাদা বললেন, এই বাঁশটা কেটে দে।
প্রস্তুতি নিচ্ছি , এমন সময় দেখি অামার সামনের ৪-৫ গজ সামনের একটি বাঁশগাছ ভীষণভাবে ঝাঁকুনী খাচ্ছে। মনে হচ্ছে, কে যেন গাছটিকে ধরে প্রবলভাবে ঝাকাচ্ছে। ভাবলাম, ভূমিকম্প হচ্ছে না তো। কিন্তু দেখি, শুধু সেই নির্দিষ্ট বাঁশটিই প্রবলভাবে দুলছে। অামার দাদা অার অামি বেশ ভড়কে গেলাম। পরক্ষণেই দেখি, বাঁশগাছটির অগ্রভাগ বেঁকে নিচের দিকে চলে অাসছে এবং খুবদ্রুতই সেই অাকাশের দিকে থাকা বাঁশের অগ্রভাগ নীচের দিকে নুইয়ে পড়লো এবং সাথে সাথে অাবার শো শব্দ করে উপরের দিকে উঠে গেলে।
অামি দাদাকে রেখেই একদৌড়ে বাড়ী চলে অাসলাম। বুকের ভীতর তখনও দুড়ুম দুড়ুম করছে। একগ্লাস পানি খেয়ে ফ্যালফ্যাল করে দাদার দিকে চেয়ে রইলাম।
ঘটনা-৩ঃ
এমন এক সময় ছিলো, মামার বাড়ী যাওয়ার কথা শুনলে চোখমুখ চকচক করে উঠতো। যে দিন মামার বাড়ী যাওয়ার প্রােগাম থাকতো তার অাগের দিন রাত্রে বহু চেষ্টা সাধনা করেও দু'চোখের পাতা এক করতে পারতাম না।
মামার বাড়ী এলাকাটা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় অপেরা,যাত্রাপালা, পালাগান, কবিগান একটু বেশি হতো। পিতা-মাতার অনুশাসের কারণে কোনদিন এগুলো দেখার সাহস পাই নাই।
তো, একদিন রাত্রে সেই অভুতপূর্ব সুযোগ এসে গেলো। কেবল কৈশরে পা দিয়েছি। রুখবে অামায় কে? রাত এগারোটা; সবাই তখন যে যার ঘরে ঘুমাচ্ছে।
মামাতো ভাই অার অামি ছোট একটা পেন্সিল ব্যাটারীর লাইট নিয়ে গোপনে বেরিয়ে গেলাম। বিশাল বিল পাড়ি দিতে হবে । বিলের অপর প্রান্তে বিলের ভিতরই যাত্রা এবং কবিগানের অায়োজন। একেবারে শুকনো ঘাস সমৃদ্ধ বিল। এই বিলে অগ্রাহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটার পর অার কিছু চাষ করা হতোনা। শুধু গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ইত্যাদির চারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হতো।
অামাবস্যার রাত। ঘুটঘুরে অন্ধাকার। শীত বিদায় নিয়েছে। অাকাশের তারাগুলোর মিটমিটি অালোয় অামরা দু'জন দূরের যাত্রার মঞ্চের অালোর ঝলকানি দেখতে পাচ্ছি। ওখানে অাবার নাকি মেলাও বসেছে। মনটা বেশ উত্তেজিত এবং উৎফুল্ল অবস্থায় অাছে। কেমন যেন এ্যাডভেন্সার এ্যাডভেন্সার ভাব লাগছে। প্রথম এমন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি বলে কথা।
অামার শুধু যাত্রামঞ্চের অালো অনুসরণ করে এগুচ্ছি। বিলের অনেক ভীতর প্রবেশ করেছি। ক্যাসিও হাত ঘড়িটির লাইট জ্বালিয়ে দেখি রাত সাড়ে এগারোটা পার হয়ে গেছে। অাশে পাশে কারও অস্তিত্ব টের পাচ্ছিনা। হঠাৎ ঘোড়ার ডাকের অাওয়াজ শুনতে পেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি কয়েকটি ঘোড়া(অাবছা অাবছা দেখা যাচ্ছে-মনে হলো লাল বর্ণের) কেমন যেন লাফালাফি করছে। অামরা দু'জন খানিকটা সরে গিয়ে ঘোড়াগুলোকে অতিক্রম করার চেষ্টা করলাম। অামার মামাতো ভাই লাইট ব্যবহার করতে দিলোনা কেন বুঝলাম না। মিনিট তিনেক হাটার পর অাবার সামনে ঐ একই ভঙ্গিমায় কতকগুলো ঘোড়া দেখতে পেলাম; সেগুলো কেমন যেন ধবধবে সাদা টাইপের(অাবছা অাবছা দেখা যাচ্ছ)।
এবার টর্চ ব্যবহার করলাম। কিন্তু টর্চ মারতেই দেখি সেখানে কিছু নেই। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম । এবার দু'জনে পাশাপাশি দৌড়ে সামনে এগুতে লাগলাম। কিন্তু কেন জানি, যাত্রার মঞ্চের কাছাকাছি হতে পারছিনা। ডানে, বামে, পিছনে শুধু ঘোরতোর অন্ধকার ছাড়া অার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শুধু সামনে দূরের অালো(যাত্রার প্যান্ডেলের অালো) অনুসরণ করে দৌড়াচ্ছি।
হঠাৎ কিসের যেন একটা ছায়া দেখতে পেলাম। লাইট ধরে দেখি, কতগগুলো গাছ। কি গাছ তা মনে নেই। এমনিতেই পেনসিল ব্যাটারীল লাইট । তারপর ব্যাটারী পুরোনো হয়ে গেছে। ভাবছি, এই বিলের ভীতর এতবড় গাছ থাকার কথা নয়। কেননা, দিনের বেলায় কোন গাছই অামরা এই বিলে দেখিনি। অারো ভড়কে গেলাম, অামি তো প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা। হঠাৎ কুকুরের ঘেউ ঘেউ অাওয়াজ শুনলাম। কিন্তু টর্চের অালোয় যতদূর দেখা যাচ্ছে ততদূর কোন কুকুরের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না। ভয়টা অারো বেড়ে গেলো। এবার দু'জনে প্রায় দিকই হারিয়ে ফেললাম। শুধু সামনের দিকেই দৌড়াতে থাকলাম। এর পরের কাহিনী অনেক লম্বা। শুধু বলি, অামাদের কপালে যাত্রা দেখা বা কবিগান শোনা জোটেনি। শুধুই একটা ভৌতিক অভিজ্ঞতা ছাড়া। এখনও গা ছমছম করে সেই ঘটনা মনে পড়লে।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩
সেলিম৮৩ বলেছেন: হয়তোবা।
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:১৪
সুমন কর বলেছেন: আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। ভালোই হয়েছে। ঘটনা -২ প্রায়ই শোনা যায়।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩
সেলিম৮৩ বলেছেন: ভৌতিক অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করেছি মাত্র। বিশ্বাস পাঠকের মগজে। ধন্যবাদ মতামতের জন্য।
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
আলোরিকা বলেছেন: ঘটনা- ৩ পড়ে মনে হচ্ছে ভুল্ভুলাইয়ার খপ্পরে পড়েছিলেন । ঘটনা -২ ও ১ গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই শোনা যায় । যাহোক পরিচিত হলেও বেশ গা ছমছমে বর্ণনা !
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১
সেলিম৮৩ বলেছেন: ভুল্ভুলাইয়ার খপ্পরে পড়েছিলেন হা হা হা..........অসাধারণ কথা।
৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২৫
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
গল্পগুলো গ্রামাঞ্চলের দিকে প্রায়ই শোনা যায়। যদিও আমার এসবে বিশ্বাস নেই।
আমার কাছে এটাকে সাবকনসাস মাইন্ডের ইল্যুশনই মনে হয়।
এমন না যে আমার সাথেই অদ্ভুত এসব ঘটেনা। ঘটে ঠিকই। তবে সবগুলোর পিছনে আমার চিন্তা ভাবনাই দায়ী।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০৪
সেলিম৮৩ বলেছেন: অাপনার সাইকিয়াট্রিস্ট লজিকগুলো সত্য হলেও হতে পারে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:০৯
আধাঁরি অপ্সরা বলেছেন: ভাল ভুতের গল্প লেখেন!
