নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষা ও মাতৃভাষা আল্লাহর বিশেষ দান

ভাষা ও মাতৃভাষা আল্লাহর বিশেষ দান

মুফতী সাহেব

ইন্টারনেট মানেই হচ্ছে সবার জন্য সংরক্ষিত

মুফতী সাহেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা ও মাতৃভাষা : আল্লাহর বিশেষ দান

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৩

মানুষের প্রতি আল্লাহর যেসব নিয়ামত ও দানের কথা প্রাতস্মরণীয় ভাষা তার অন্যতম। বৈচিত্র্যময় ভাষা আর নিরূপম বাক প্রতিভার গুণে মানুষ অন্য সব প্রাণী থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গণমাধ্যমের চরমোৎকর্ষের এ যুগে নিত্যনতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাকপ্রতিভা থাকাতেই মানুষ সেসব কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারছে। আল্লাহ মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন বলেই এত সব আবিষ্কার স্বার্থক হচ্ছে। বাকশক্তির বদৌলতে মানুষ গান গেয়ে আমোদিত হয়। কবিতা আবৃত্তি করে নিজে তৃপ্ত হয়। বক্তব্য দিয়ে শ্রোতাকে মুগ্ধ ও বিনোদিত করে। তাই ভাষার এ নেয়ামতের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,

﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ﴾ [الرحمن: ١، ٤]

‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা।’ {সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪}

নিপুণ শিল্পকুশলতায় আল্লাহ যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বসুন্ধরা সৃষ্টি করেছেন, তেমনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি নানা বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক বানিয়ে। মানুষের গোত্র ও গাত্রবর্ণ, স্বরের রুক্ষ্মতা-কোমলতা, দৈহিক উচ্চতা-খর্বতা আর রুচি-অভিরুচির ভিন্নতার মতো তার ভাষায়ও দিয়েছেন নান্দনিক বিভিন্নতা। আল-কুরআনুল কারীমে তাই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি আর রকমারি সৃষ্টির মতো ভাষার বিভিন্নতাকেও আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ ٢٢ ﴾ [الروم: ٢٢]

‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। {সূরা আর-রূম, আয়াত : ২২}

পৃথিবীতে ঠিক কতগুলো ভাষা রয়েছে তা অনুমান করা খুব কঠিন। তবে ধারণা করা হয় এর সংখ্যা প্রায় ৩০০০ থেকে ৮০০০ হবে। ঈথনোলোগ (Ethnologue) নামের ভাষা বিশ্বকোষের ২০০৯ প্রকাশিত ১৬তম সংস্করণের হিসেব মতে জীবিত ভাষার সংখ্যা প্রায় ৬৯০৯। ইউকিপিডিয়ার তথ্যমতে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৭৩৩০টি ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এতগুলো ভাষার মধ্যে প্রত্যেক জাতির কাছেই নিজ মাতৃভাষা অতুলনীয়। মাতৃভাষার গুরুত্ব সব জাতির কাছেই আলাদা। মাতৃভাষার প্রতি আবেগই অন্যরকম। মাতৃভাষায় যেভাবে মানুষ মনের কথা তুলে ধরতে পারে অন্য ভাষায় তা পারে না। আমাদের হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনা কিংবা বৈরিতা-মিত্রতা আর আশা-হতাশার সবই প্রকাশ করে মাতৃভাষা। শিশুর প্রতি মা জননীর তুলনারহিত স্নেহ, মায়ের প্রতি শিশুর অস্ফূট ভালোবাসা আর তরুণ-তরুণীর নন্দিত-নিন্দিত সব ভালোবাসারই দূতিয়ালি করে এই মাতৃভাষা। পৃথিবীর প্রত্যেক জাত-বর্ণের লোকই তাই মায়ের মতোই ভালোবাসে তার মাতৃভাষাকে।

মাতৃভাষার গুরুত্ব শুধু ভৌগলিক বা ঐতিহাসিক কারণ অবধি সীমিত নয়; ধর্মীয়ভাবেও মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যুগে যুগে মানুষকে সুপথ দেখাতে আসা সব মহামানবই গুরুত্ব দিয়েছেন মাতৃভাষার প্রতি; কেননা স্বজাতির হৃদয় স্পর্শ করতে এরচে উত্তম ভাষা আর হয় না। সেহেতু তাঁরা আল্লাহর দেয়া নবুওয়তের দায়িত্ব পালনে মাতৃভাষাকেই বাহন হিসেবে করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ ﴾ [ابراهيم: ٤]

‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৪}

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ পয়গম্বর তথা আল্লাহর দূত মুহাম্মদ রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করেন নি। আল্লাহর বিশেষ হিকমতের কারণে উম্মী তথা নিরক্ষর থাকা এই নবীও দেখা যায় দাওয়াত তথা স্বজাতির কাছে রবের বার্তা প্রচারে মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বের ইঙ্গিত করেছেন। অন্যসব ক্ষেত্রের মতো তিনি বরং মাতৃভাষায়ও শ্রেষ্ঠ আরব ছিলেন। এ কোনো কবি-সাহিত্যিক বা ঐতিহাসিকের দাবি নয়। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী লোকটিই ভাষা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি নিজে আরবদের মধ্যে সবচে শুদ্ধভাষী ব্যক্তি ছিলেন; কারণ, তিনি কুরাইশ বংশীয় সন্তান আর তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ভাষার দিক থেকে প্রসিদ্ধ আরবের তৎকালীন সা‘দ ইবন বকর গোত্রে।

যত্নসহ ভাষা লালন তথা শুদ্ধভাবে জানা এবং চর্চা করা মাতৃভাষার গুরুত্বের অপরিহার্য দাবি। শুদ্ধভাবে মাতৃভাষা বলতে ও লিখতে পারা যে কোনো দায়িত্বসচেতন নাগরিকের কর্তব্য। আর মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানকারী মুবাল্লিগ ও দীন প্রচারক আলিমদের জন্য এর গুরুত্ব আর সবার চেয়ে বেশি। সব ভাষাই আল্লাহর নেয়ামত বা দান হিসেবে কোনোটাই অকারণ পূজনীয় বা বর্জনীয় নয়। কেবল পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ভাষা এবং ইসলামী জ্ঞানের সবচে বড় ও বিশ্বস্ত ভাণ্ডার হিসেবে আরবিই যা আলাদা গুরুত্ব ও মর্যাদার অধিকারী সকল মুসলিমের কাছে। কিন্তু আরবীর গুরুত্ব যদি হয় ইসলামী জ্ঞান আহরণের স্বনির্ভর ঠিকানা বলে তবে সেই জ্ঞান প্রচারের অপরিহার্য দায়িত্ব ও দাওয়াতে দীনের জিম্মাদারির কারণে অনন্য গুরুত্বের দাবি রাখে মাতৃভাষা। আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক ফেরাউনের কাছে অমোঘ সত্যের বাণী পৌঁছানোর দায়িত্ব পেয়ে তাই মুসা আলাইহিস সালাম আপন ভাই হারুনকে চাইলেন সহযোগী হিসেবে। নিজের ভাষায় কিছুটা জড়তা আর ভাইয়ের ভাষা উন্নততর হওয়ায় তিনি এ আবেদন জানান। চলুন কুরআন খুলে দেখি :

﴿ وَأَخِي هَٰرُونُ هُوَ أَفۡصَحُ مِنِّي لِسَانٗا فَأَرۡسِلۡهُ مَعِيَ رِدۡءٗا يُصَدِّقُنِيٓۖ٣٤ ﴾ [القصص: ٣٤]

‘আর আমার ভাই হারূন, সে আমার চেয়ে স্পষ্টভাষী, তাই তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে।’ {সূরা আল-কাসাস : ৩৪}

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮

nkarimdu বলেছেন: ধন্যবাদ, লেখাটি সুন্দর হয়েছে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৪

মুফতী সাহেব বলেছেন: ইসলামহাউজ থেকে নেয়া..।
http://www.islamhouse.com/p/414342

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.