নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাঙালি শিক্ষিত সমাজ

স্বাধীন বাংলা

মেহ্দী হাসান দোহা

স্বাধীন বাংলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পিছনের খবর

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০২

মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পিছনের খবর



১৭ এপ্রিল। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন মেহেরপুর জেলার বৈদ্যেরনাথতলার আম্রকাননে শপথ নেয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। শুরু হয় নতুন এক রাষ্ট্রের পথচলা। বৈদ্যেরনাথতলার নতুন নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। প্রবাসী সরকারের নাম হয়ে যায় মুজিবনগর সরকার। এ বিষয়টি নিয়ে আমার অনুসন্ধান-গবেষনার আলোকে এ লেখাটি তৈরি করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এমএনএ, এমপিএ’দের বৈঠকে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমনের মুখে ৭০’র নির্বাচনে নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধি ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। তবে তখনই প্রবাসী সরকার সিদ্ধান্তের পিছনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শও কাজ করেছে! ভারতে পৌঁছবার পর তাজউদ্দিন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তখন তাকে পরামর্শটি দেন। প্রতিদিন হাজার হাজার শরণার্থী তখন ভারতে ঢুকছিল। ভারত সরকার মানবিক কারনে শরণার্থীদের আশ্রয় দিলেও তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাজউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দিরা সরকার গঠনের পরামর্শ দিয়ে বলেন বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলে ভারত সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের তাদের পাশে দাঁড়ানোর একটি আইনগত ভিত্তি সৃষ্টি হবে। তাজউদ্দিন এবং তার বিশেষ সহকারী ব্যারিষ্টার আমির উল ইসলাম ইন্দিরার সঙ্গে ওই বৈঠকে অংশ নেন। মিডিয়ার নজর এড়াতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি মালবাহী বিমানে করে কলকাতা থেকে তাদেরকে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

১০ এপ্রিল আগরতলা বৈঠকের সিদ্ধান্তই সেদিনই মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়া হয়। খবরটি প্রচারে তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই’র আগরতলা প্রতিনিধি অনিল ভট্টাচার্যের। তার আগরতলার বাসভবনটি তখন ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামরিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে একরকম প্রেসক্লাব হয়ে গিয়েছিল! সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও কৌশলগত কারনে শপথ অনুষ্ঠানের দিন ও স্থানটি গোপন রাখা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রবাসী সরকারের শপথ হবে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ আসাবুল হক(হ্যাবা ডাক্তার) কথাচ্ছলে এক বিদেশী সাংবাদিককে তথ্যটি বলে দিলে পাকিস্তানি বাহিনী চুয়াডাঙ্গা দখল করে নেয়। চুয়াডাঙ্গাও তাই এ ধরনের ইতিহাসের অংশ হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

এরপর সিদ্ধান্ত হয় মেহেরপুরের বৈদ্যেরনাথতলার স্থানটির। চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী সহ আরও কয়েকজন অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রস্তুতির দায়িত্ব পান। এ নিয়ে পদে পদে দেখা দেয় নানান সমস্যা! অতিথিদের জন্য এত চেয়ার কোথা থেকে পাওয়া যাবে? গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জোগাড় করা হয় চেয়ার! এগুলোর কোনটির ছিল হাতল ভাঙ্গা! কোনটির ভাঙ্গা পা! যেগুলোর পা ভাঙ্গা সেগুলোর নিচে ইটের সাপোর্ট তৈরি করে দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার দিতে জোগাড় করা হয় কয়েকজন আনসার ও গ্রাম পুলিশের সদস্য! কিন্তু নতুন দেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে জানেন এমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না! জানা গেল সীমান্তের ওপারে কৃষ্ণনগরে একটি মেয়ে আছে যে আমার সোনার বাংলা গাইতে জানে। অতএব লোক পাঠিয়ে কৃষ্ণনগর স্কুলের ক্লাস এইটের ছাত্রী মেয়েটিকে তার অভিভাবক সহ নিয়ে আসা হয়। এভাবে অনুষ্ঠান সাজাতে অনেক জোড়াতালির ব্যবস্থা করতে হয়েছে! অনুষ্ঠানের দিন সকালে এবং অনুষ্ঠান শেষে একটি অভিনয়েরও কাজ হয়েছে! কি সে অভিনয়? সে কথায় আসছি পরে।

এদিকে চলে আরেকদিকের আরেক প্রস্তুতি! ১৬ এপ্রিল বিকেলে কলকাতা প্রেসক্লাবে যান ব্যারিষ্টার আমির উল ইসলাম। সাংবাদিকদের বলেন, পরেরদিন সকালে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হবে। সাংবাদিকরা যারা যেতে চান তারা যেন ভোরবেলা প্রেসক্লাবে থাকেন। এখান থেকে গাড়িতে করে তাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু কোথায় অনুষ্ঠান, কিসের অনুষ্ঠান সে জবাব না দিয়েই ঝড়ের বেগে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যান ব্যারিষ্টার আমির উল ইসলাম! কিন্তু খবরটি কলকাতার মিডিয়া পাড়ায় মূহুর্তে চাউর হয়ে যেতে সময় লাগেনি! সকালে যদি আবার গাড়ি মিস হয় সে আশংকায় অনেকে রাত কাটান প্রেসক্লাবে!

১৭ এপ্রিল সকাল। যথারীতি প্রেসক্লাবে এসেছেন ব্যারিষ্টার আমির উল ইসলাম। তার সঙ্গে আরও কয়েকটি গাড়ি। কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি এমন একশ প্রশ্ন সবার। কিন্তু আমির উল ইসলাম এর কিছুরই জবাব না দিয়ে সবাইকে গাড়িতে উঠতে অনুরোধ করেন। যে কয়েকটি গাড়ি এসেছে সাংবাদিক তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু কারও এ নিয়ে কথা তোলার সময় নেই। যে যেভাবে পেরেছেন গাদাগাদি করে চড়েন গাড়িতে! গাড়ির বহর চলতে থাকে বাংলাদেশ সীমান্তের উদ্দেশে।

এদিকে মেহেরপুরের বৈদ্যরনাথ তলায় চলে আরেকটি পর্ব। বিদেশি সাংবাদিকরা আসার আধাঘন্টা আগে সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দিন সহ নেতৃবৃন্দ সেখানে পৌঁছেন। অনুষ্ঠানস্থলের কিছুদূর একটি ঝোপের মতো এলাকায় একটি ইপিআর ক্যাম্প। নেতৃবৃন্দকে সেই ইপিআর ক্যাম্পে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। সে কারনে বিদেশি সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানস্থলে এসে দেখেন বাংলাদেশের নেতারা বাংলাদেশের ভিতর থেকে অনুষ্ঠানস্থলে আসছেন! অনুষ্ঠান শেষে নেতারা আবার হেঁটে হেঁটে চলে যান সেই ইপিআর ক্যাম্প! বিদেশি সাংবাদিকরা দেখেন বাংলাদেশের নেতারা আবার চলে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ভিতরে! বিদেশি সাংবাদিকরা চলে যাবার আধাঘন্টা পর শপথ নেয়া নেতারারাও আবার চলে যান ভারতে। এ ব্যাপারে অনুষ্ঠান সংগঠকদের অন্যতম এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী এই প্রতিবেদককে বলেছেন, যুদ্ধে অনেক কৌশলগত অবস্থান নিতে হয়। তখন বিদেশি সাংবাদিকদের আস্থা অর্জনে কৌশলগত অভিনয়টি করা হয়েছে! শপথ নেয়া প্রবাসী সরকারের নেতারা ভারতে চলে যাবার আধাঘন্টার মধ্যে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী পৌঁছে যায় মুজিবনগরে! তারা ক্রোধে লন্ডভন্ড করে দেয় গোটা এলাকা। কিন্তু তার আগেই বিশ্ব জেনে গেছে নতুন এক দেশ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খবর। সে দেশ বাংলাদেশ। যার শ্লোগান হয় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.