![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহজ সরল শাদামাটা !!!
শুরুতে তাজুল ইসলাম সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, যেকোনো কঠিন রোগই নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত রোগীরা নিয়ম মানেন না। এ কারণে ভালো হওয়ার পর আবারও মাদকাসক্ত হন। আমরা লক্ষ করেছি, যাঁরা নিয়ম মানেন, তাঁরা ভালো থাকেন।
আজকের অনুষ্ঠানে বিশেষ কয়েকজন উপস্থিত আছেন। তাঁরা একসময় তীব্র মাদকাসক্ত ছিলেন। এখন ভালো আছেন। ভালো থাকার একমাত্র কারণ তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে পালন করেছেন এবং জীবনের চলাফেরার পদ্ধতি সবকিছু বদলে ফেলেছেন। আপনারা অনেক অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা নিলেন, কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ শুনলেন না। নিয়মনীতি মানলেন না। তাহলে চিকিৎসা করে কোনো লাভ হবে না। সবাইকে বলব, চিকিৎসার পর ভালোভাবে চিকিৎসকের দেওয়া নিয়মনীতি মেনে চলুন। জীবনপদ্ধতি বদলে ফেলুন।
প্রশ্ন: আমি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। নিয়মিত ধূমপান করি। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেদিন ধূমপান ছাড়তে পারব, সেদিন আপনাদের অনুষ্ঠানে আসব। ধূমপান ছেড়েই এ অনুষ্ঠানে এসেছি। কিন্তু আমার ধূমপান করতে ইচ্ছা করে। কীভাবে আজীবন ধূমপানমুক্ত থাকতে পারি?
উত্তর: আমরা সবাই আপনাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাই। আপনার মতো তরুণেরাই সমাজ বদলে দিতে পারবেন। আমরা অনেক মাদকাসক্ত রোগী দেখি। এঁদের অধিকাংশই ধূমপান থেকে নেশা শুরু করেছেন। ধূমপান না করলে মাদক গ্রহণের আশঙ্কা কম থাকে। তা ছাড়া ধূমপানের ভয়াবহ ক্ষতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭ হাজার মানুষ ধূমপানের কারণে মারা যান। তাহলে প্রতিদিন মৃত্যু হয় ১৫৬ জনের।
কোনো স্বামী ধূমপান করলে তাঁর স্ত্রীর ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে। ছেলেমেয়েদের শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ (ব্রঙ্কাইটিস) হতে পারে, সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। ধূমপানের বিশেষ কিছু ক্ষতিকর দিক হলো, ফুসফুসে ক্যানসার, মুখে ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ, স্ট্রোক, বিকলাঙ্গ ইত্যাদি। এক জরিপ থেকে জানা যায়, ধূমপানের জন্য বিশ্বে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মুখের ক্যানসার হয়। ধূমপানের ক্ষতিকর তথ্যগুলো জানার পর ধূমপান করবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে। তবে ধূমপান ছাড়ার জন্য কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
প্রশ্ন: আমি একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমি মাদক গ্রহণ করি। আপনাদের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছি। কিন্তু এখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আর কোনো দিন মাদক নেব না। আমার জন্য আপনাদের পরামর্শ কী?
উত্তর: আমাদের সবার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আপনাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের এই ফিরে আসাই আমাদের অনুষ্ঠানের সফলতা। আপনার জন্য পরামর্শ হলো, আপনি এখনো মাদক নিচ্ছেন। আমরা অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো জানি না। যেমন, আপনি কত দিন মাদক নিচ্ছেন। কী কী মাদক নিচ্ছেন। মাদকের ফলে আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কোন মাত্রায় থাকে। আপনার জন্য আমাদের প্রধান পরামর্শ হলো, আর দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অথবা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলে আমরাই আপনাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। আপনার শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে কিছু ওষুধ দিয়ে দেব। সেগুলো নিয়মিত খাবেন আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। মাদকের ওপর নির্ভরশীল হলে আপনাকে ভর্তি হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তারপর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে এবং নিয়মিত ওষুধ খেলে আপনি আর মাদকাসক্ত হবেন না। আপনাকে আবারও অভিনন্দন।
প্রশ্ন: আমার সন্তানকে নিয়ে এসেছি। সে মামার বাড়িতে থাকে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। বন্ধুদের কাছ থেকে মাদক নেওয়া শিখেছে। এখন ভালো থাকতে চায়। কিন্তু মাদক দেখলে ঠিক থাকতে পারে না। এখন কী করণীয়?
উত্তর: আপনার প্রশ্নের মধ্যে উত্তর রয়েছে। আপনি বলেছেন, মামার বাড়িতে থাকে। বন্ধুদের কাছ থেকে মাদক নেওয়া শিখেছে। মাদক দেখলে ঠিক থাকতে পারে না। অধিকাংশ প্রশ্নের সমাধান আপনার কাছে আছে। প্রথমত, ছেলেকে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেসব বন্ধুর কাছ থেকে মাদক নেওয়া শিখেছে, তাদের থেকে দূরে রাখতে হবে। মাদক থেকেও দূরে রাখতে হবে। বাবা হিসেবে এ বিষয়গুলো আপনি লক্ষ রাখবেন।
ও এখনো অনেক ছোট। মাত্র অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। ওকে আপনি ঠিকমতো বোঝাতে পারলে সে আপনার কথা শুনবে। তা ছাড়া সবচেয়ে ভালো দিক হলো, ও নিজে ভালো থাকতে চায়। এবং মাদক ছেড়ে দিয়েছে। মাদক ছাড়ার প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সোম ও বুধবার দুই দিন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের দেখা হয়। সেখানে আনলে আমরা তাকে ভালো করে দেখব। কিছু ওষুধপত্র লাগলে দেব। আপনারা ঠিকমতো দেখাশোনা করলে ও সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: আমার বড় ভাই ধূমপান করেন। বোঝাতে চেষ্টা করেছি। কারও কথা শোনেন না। এখন মাদকাসক্ত। তাঁকে কীভাবে ভালো করতে পারি?
উত্তর: আপনারা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। এটা ভালো দিক। প্রথমে পরিবার থেকে উদ্যোগ নিতে হয়। তবে সাধারণত মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা পরিবারের মানুষের কথা শুনতে চান না। তাঁকে চেষ্টা করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনতে পারেন। বা ভালো কোনো নিরাময়কেন্দ্রে দেখান। তাঁর অবস্থা খুব বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে কিছু ওষুধ দেবেন। তিনি কারও কথা শোনেন না। তাই তিনি বাসা বা বাড়িতে নিয়মিত ওষুধ খাবেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কিছুদিন হাসপাতালে থাকলে ভালো হবে। তখন যাতে আর মাদক গ্রহণ না করেন, সে ব্যাপারে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্ন: আমার স্বামী দীর্ঘদিন মাদকাসক্ত। দুবার চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসার পর কিছুদিন ভালো থাকেন। আবার মাদক নেন। আমি চাকরি করার জন্য তাঁকে দেখে রাখতে পারি না। নিয়মিত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিতে পারলে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁকে কীভাবে ভালো করতে পারি?
উত্তর: নিরাশ হবেন না। মাদকাসক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না। মাদকাসক্ত রোগী বারবার মাদকাসক্ত হতে পারেন। আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে সেটি হয়েছে। মাদকাসক্ত রোগীকে প্রথমবার চিকিৎসা করানো কঠিন। আপনার স্বামী দুবার চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর জন্য এখন সমস্যার কিছু নেই। আবার আসক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের মধ্যে হতাশা কাজ করতে পারে। কিন্তু মাদকাসক্ত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এমন, যেকোনো সময় মাদকাসক্ত হতে পারে। এ রোগ ডায়াবেটিসের মতো। সারা জীবন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সারা জীবন ভালো থাকার চেষ্টা করতে হয়।
একজন মাদকাসক্ত রোগী বিভিন্নভাবে ভাবতে থাকেন। এক. তিনি ভাবেন, তিনি ঠিক আছেন। তাঁর কোনো সমস্যা নেই। অন্যরাই বরং তাঁকে বুঝতে পারছে না। আপনার স্বামী এখন এই পর্যায়ে আছেন। দুই. তিনি মাদকের খারাপ দিকগুলো ভাবতে চেষ্টা করেন। অনেক বোঝানোর পর এটা ছাড়তে চান। তিন. তিনি মাদক ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চার. তিনি মাদক ছাড়ার পরিকল্পনা করেন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পাঁচ. চেষ্টাটাকে অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করেন। অনেকে চেষ্টাটাকে অব্যাহত রাখতে পারেন। অনেকে পারেন না। আপনার স্বামী পারেননি। তিনি পঞ্চম ধাপ থেকে প্রথম ধাপে চলে গেছেন। তাঁকে আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। আপনি তাঁকে জাতীয় মানসিক হাসপাতালে নিয়ে আসুন। আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত নেব।
প্রশ্ন: আমার সন্তান কলেজে পড়ে। ওর কিছু খারাপ বন্ধু আছে। তাদের কাছ থেকে মাদক গ্রহণ করে। এদের কাছ থেকে তাকে কীভাবে দূরে রাখব? বাসা ছেড়ে চলে যাব? তার মুঠোফোন নিয়ে নেব? বা কী করলে সে ভালো থাকবে?
উত্তর: একটি অসুস্থ পরিবেশে আমাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠছে। কিন্তু একজন সন্তানের ভালো থাকা অনেকাংশে নির্ভর করে তার পারিবারিক পরিবেশের ওপর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম হতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন হয়। কর্মশালা হয়। সেটা বড় কথা নয়। সবকিছুর ওপর পারিবারিক ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। পরিবার থেকে সন্তানেরা আত্মবিশ্বাসী হয়। আত্মমর্যাদাশীল হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়। এরা বন্ধুদের মাদক গ্রহণসহ অন্যান্য খারাপ কাজের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে পারে। না বলতে পারে। না বলতে না শিখলে সে কখনো নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। না বলার শক্তি অর্জন করতে হবে। যারা মাদকে জড়িয়ে পড়ে, তারা বন্ধুদের না বলতে পারে না। অনেকে মনে করে, না বললে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেতে যাবে। যে বন্ধু মাদক গ্রহণের প্রস্তাব দেয়, সে ধ্বংসের দিকে ডাকছে। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এরা কোনো বন্ধুর পর্যায়ে পড়ে না। এরা শত্রু। এদের সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে।
আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে অভিযোগ করছি। কিন্তু সন্তানের জন্য আমরা দায়িত্ব পালন করেছি কি না, সেটি ভাবছি না। পরিবার থেকেই সন্তানদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের সন্তানেরা কোথায় কী করে, আমরা কোনো খোঁজখবর রাখি না। সন্তান বিপদে পড়লে ভাবতে শুরু করি। আপনার সন্তানকে কোনো নিরাময়কেন্দ্রে দেখাতে হবে। তারপর দুই বছর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
প্রশ্ন: আমি খুব ধূমপান করি। ধূমপানে আমার অনেক টাকা ব্যয় হয়। সিগারেট কেনার মতো অর্থ এখন আর আমার কাছে নেই। আমি ধূমপানমুক্ত থাকতে চাই। কীভাবে এটা সম্ভব?
উত্তর: আমরা বারবার বলি। মাদকাসক্তের প্রধান কারণ ধূমপান। ধূমপানের ফলে মানুষ ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ধূমপান ছাড়ার জন্য আপনার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। ধূমপানের জন্য আপনার নিজের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষতি করছেন। পরিবেশের ক্ষতি করছেন। প্রচুর অর্থও ব্যয় হচ্ছে। মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। সে সবকিছু করতে পারে। এ ক্ষেত্রে দরকার শুধু ইচ্ছাশক্তি। আপনার চারপাশে যত মানুষ ধূমপান করে, তার কয়েক গুণ বেশি মানুষ ধূমপান করে না। তাই ধূমপান অনিবার্য হলে সবাই করত। প্রথম দিকে ধূমপান ছেড়ে দিলে কিছুটা খারাপ লাগে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি কিছু ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
©somewhere in net ltd.