নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডিজিটাল

আমাদের ছড়া গুলো সমাজের আয়না,যার কাছে কোন কিছু ঢেকে রাখা যায়না!

সুমন আহমাদ স্বাধীন

সহজ সরল শাদামাটা !!!

সুমন আহমাদ স্বাধীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলোনা-বেলোনা (শিশুতোষ গল্প )

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৩

স্বাধীন শুভনীল



এলোনা-বেলোনা ঝুমকো পাতা ঝুম

বাবুকে সালাম কর- সালামালাই কুম,

মালা ডলি মনি আর বাবু প্রতিদিন এই খেলাটা খেলতে আসে নদীর পারে , বিকেল বেলা যখন রোদ থাকেনা আর নদী থাকে জলে টই-টুম্বুর, জোয়ারের পানি নদীর পার ছুঁই ছুঁই করে নদীর নাম তুলাতলি , আর ওদের গ্রামের নাম খেজুর তলা , তোমরা আবার ভেবেনো যে গ্রামের নাম খেজুর তলা হওয়াতে এখানে অনেক খেজুর গাছ আছে , এ গ্রামে খেজুর গাছ যদিও আছে তবে তার সংখ্যা অনেক কম এ গ্রামে যে গাছটা অনেক বেশি তা হলো কলা গাছ এ গ্রামের সব রাস্থার দু পাশ ঘেরা অসংখ্য কলা গাছের সারি প্রতিটি বাড়িতেও অন্যন্য গাছের থেকে কলা গাছের পরিমাণ এতই বেশি যে এ গ্রামের নাম খেজুর তলা না হয়ে কলা তলা হলেই মনে হয় সঠিক হত ! কে যে এসব জায়গার নাম করন করে বেশির ভাগ জায়গার নামই তার পরিবেশের সাথে ঠিক মেলেনা বাবু ভাবে ওর যদি সুযোগ থাকতো তবে এই গ্রামের নাম ও খেজুর তলি বাদ রেখে কলা তলা রেখে দিত ! ওরা যে তুলাতলি নদীর পারে খেলছে সেখানে কাঠ আর বাশ দিয়ে একটা ঘাট পাতানো আছে আর সেই ঘাটের দুই দিকেও আছে অনেক গুলো কলা গাছের সারি , প্রতিদিন ষ্কুল থেকে ফিরে এই ঘাটেই ওরা দল বেঁধে গোসল করে, যে দলে থাকে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন, ওদের সবার বয়সই ১/৩ বছর ব্যাবধানের মধ্যো মালা পড়ে ক্লাশ ফোরে মনি আর বাবু ফাইবে ওদের দলে ডলিই শুধু পড়ে ক্লাশ সিক্সে , ওরা সবাই একই বাড়ির সন্তান সবুজ সারি সারি কলা পাতা ঘেরা গ্রামে ওরা যে বাড়িতে থাকে তার নাম হাওলাদার বাড়ি, এই বাড়িতে বাস করে নয়টি পরিবার সবাই একে অপরের ভাই বোন,মালা ডলি মনি আর বাবু সহ এ বাড়িতে ছোট ছেলে মেয়ে আছে মোট ১৮ জন ওদের মাঝে কোন রকম ঝগড়া হয়না সবাই এতটাই মিলে মিশে থাকে যে গ্রামের এই হাওলাদার বাড়িটাকে চমৎকার একটি সুখি পরিবারের দৃষ্টান্ত বলা যায় ।

মালা ডলি মনি আর বাবু সর্ম্পকে চাচাত ফুপাত ভাই-বোন এই চারজন পড়াশোনা নাওয়া-খাওয়া ও খেলাধুলায় একে অপরের পরিপুরক , ওদের দৈনন্দিন খেলার তালিকায় যে খেলা গুলো আছে তা হলো- ছি কুত কুত , আমের বাড়া, টিলো-এডপ্রেস,বরফ-পানি ,সাতপাতা, রাজা কোর্তাল, ফুলের টোকা, রুটি চোর এমন আরো অনেক, ওদের অনেক খেলার মাঝে এই এলোনা-বোলোনা খেলাটা ছিল খুব প্রিয় খেলা, খেলাটার নিয়ম হচ্ছে এই খেলায় চার থেকে দশ বারোজনও অংশ নিতে পারে সবাই গোল হয়ে বসে একে অন্যের হাত ধরে হাত দোলাতে দোলাতে - এলোনা-বেলোনা ঝুমকো পাতা ঝুম/বাবুকে সালাম কর সালামালাই কুম, বলেই হাত ছেড়ে যে যার মত স্থির হয়ে বসে থাকবে তারপর এরমধ্যো থেকে যে নড়বে সে আউট হবে বাকি যারা থাকবে তারা একই নিয়মে আবার খেলাটা চালিয়ে যাবে এমন প্রতিবারই দু একজন করে আউট হয়ে শেষ পর্যন্ত যে দুজন থাকবে তারাই হবে রাজা-রানী, মানে বিজয়ী , ওদের দলে বাবু আর মনি এই রাজা-রানী হওয়ার সুযোগটা বেশি পেতো ।

আর এই নিয়ে অন্যরা ঠাট্টা মশকরাও কম করতো না ! তবু প্রায় পতিদিনই চলতো এই খেলা ।

ওদের দলে বাবু ছিল বেশ চটপটে আর মেধাবী, পড়াশোনায় যেমন খেলায়ও তেমন শুধু সাতারে ছিল সে কাঁচা, গ্রামের ছেলে হয়েও কেন যেন সাতারটা সে অন্যদের মত জানতো না যদিও তুলাতলি নদীর পারেই ছিল বাবুদের বাড়ি এছাড়াও ওদের বাড়ির ভেতরেই ছিল শান বাঁধানো পুকুর , অন্য ছেলে মেয়েরা যখন দুপুর রোদে নদীতে নেমে ইচ্ছেমত সাতার কাটতো ,ডুবোসাতারে কে কতটা দুরে যেতে পারে এমন খেলা খেলতো বাবু তখন ঘাটে বসে মগ দিয়ে গায়ে পানি ঢেলে গোসল করতো মাঝে মাঝে বড়জোর পানিতে নেমে ঘাট হাতে ধরে রেখে দু একটা ডুব দিত মালা ডলি মনি বাবুকে অনেকবার বলেছে যে - আয় আমরা তোকে সাতার শিখিয়ে দেই, বাবু বলেছে- আমার ভয় করে ! এভাবেই দিন যায় বাবুর আর সাতার শেখা হয়না । সবুজ কলাগাজ ঘেরা খেজুর তলি গ্রামটা কোন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সারা বছরই থাকে প্রানচঞ্চল , এখন চলছে আষাঢ় মাস, প্রতি বছরই শুধু আষাঢ় মাসের সময়টা একটু সাবধানে চলাচল করতে হয় , এ সময়ে ঢল নামে, নদীর পানি বেড়ে যায় মাঠ-ঘাট বানের পানিতে থই থই করে এ সময়ে বড়দের চেয়ে ছোট ছেলে মেয়েদের অসুবিধা একটু বেশিই হয় ,ওদের বাড়ির বাইরে নেমে খেলাধুলার সুযোগ প্রায় বন্ধই হয়ে যায় বাড়ির ভেতরে বসে খাতায় নম্বর লিখে চোর-পুলিশ অথবা খেজুরের বিঁচি দিয়ে রাজা-কোর্তাল এই জাতিয় কয়একটা খেলা খেলতে পারে, ষ্কুলেও যাওয়া আসা করতে হয় খুব সাবধানে ।

সেদিন মালা ডলি বাবু আর মনি সহ ওরা প্রায় ছয় সাতজন একই সাথে স্কুল থেকে ফিরছিল ওদের বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব প্রায় দের কিলো , পুরোটাই মেঠোপথ কোথাও কোথাও মাঠের আলের মত সরু, তাই পুরো পথটাই হেটে যাওয়া আসা করতে হয় পথের খুব বড় একটা অংশ তুলাতলি নদীর পার ঘেষা, অন্য সময় নদীর পানি রাস্তা থেকে অন্তত এক দের ফুট নিচে থাকে কিন্তু এখন আষাঢ় মাস হওয়াতে নদীর পানি রাস্তার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে । ওরা স্কুলে যদিও একসাথে যাওয়া আসা করে কিন্তুু ফেরার পথে বাবু পিছিযে যায়, যারা সবসময় গ্রামে থাকে গ্রামের সবুজ নির্মল পরিবেশ তাদেরকে মুগ্ধ করেনা, শুধু বাবুকে অনেক বেশি মুগ্ধ করে কাছে টানে নিবির ভাবে ওর যখন কোন কাজের তারা থাকেনা তখন ও খুব ধিরে ধিরে হাটে ,আকাশ দেখে সবুজ দেখে আর দেখে নদী ,তুলাতুলি নদী, বাবু এই নদীটাকে যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয় আরও দেখার ইচ্ছে হয় !













স্কুল থেকে ফেরার পথে ওর দলের সবাই বেশ দুরে এগিয়ে যায় আর হাটে আপন মনে , নদীর সাথে ওর যেন কোন গোপন আলাপ আছে ! হেটে হেটে সবাই যখন বাড়ি পৈাছে যায় বাবু তখন বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দুরে , যেখানে নদীর সাথে সংযুক্ত একটা গভীর খাদ আছে এই খাদে বাবুর ছোট চাচা জাল দিয়ে আটকে মাছ চাষ করে যে কারনে খাদে অনেক গুলো বাঁশের কঞ্চি আর গাছের ডাল ফেলে রাখা আছে , যদিও এখন পানি বেড়ে যাওয়াতে মাছ চাষ সাময়িক বন্ধ আছে, খাদের পার দিয়ে হেটে যাচ্ছিল বাবু হেটে যেতে যেতে দেখলো তিন চার বছরের দুটি বাচ্চা ছেলে খেলতে খেলতে একজন হঠাৎ করেই খাদে পরে গেল আর সাথের ছেলেটা বোকার মত তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোন শব্দই করতে পারলোনা, বাবু এ দৃশ্য দেখে দৈাড়ে এসে ঝাপিয়ে পরলো , বাবু ভুলেই গেল যে , সে সাতার জানেনা ! বাবু ছেলেটাকে তুলতে খাদে ঝাপ দেয়ার সাথে সাথেই ওর মনে হলো কেই বুঝি ওর বা পা টা টেনে ধরেছে .. যতটুকু মনে পরে বাবু খুব জোরে একটা চিৎকার করেছিল , এরপর কি ঘটেছে ওর আর মনে নেই ।





বাবুর যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও সদর হাঁসপাতালের বেডে শুয়ে আছে, চোখ মেলে উঠে বসতে চাইলে বা পায়ে প্রচন্ড আঘাত অনুভব করলো , বাবুর মা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল- তোমার এখন উঠতে হবেনা । বাবু জানতে চায় আমার কি হয়েছে মা, আমি এখানে কেন ? বাবুর আর এক পাশে বসা আছে ওর বাবা তিনি বললেন- তুমি আমাদের নদীর সাথে যুক্ত খাদে পরে যাওয়া একটি শিশুকে বাঁচাতে ঝাপিয়ে পরেছিলে, সেখানে পুতে রাখা বাঁশের কঞ্চি তোমার পায়ে ঢুকে যায়, এরপর চিৎকার শুনতে পেয়ে তোমার ছোট চাচা তোমাকে সেখান থেকে তুলে আনে ।

এবার বাবুর মনে পরে যায় সেই ঘটনা দুইটি বাচ্চা খেলতে এস একজন খাদে পরে গিয়েছিল , - ছেলেটা কোথায় বাবা, ওকে কি তুলে আনা হয়েছিল ? বাবা বাবুকে শান্তনা দিয়ে বলল- তুমি চিন্তা করনা শিশুটি এখন সুস্থ আছে যদিও বেশ কিছু পানি খেয়ে নিয়েছিল তবে তোমার চাচুই শিশুটিকে তুলে এনে ওর পেট থেকে পানি বের করে দেয় আর তোমাকে নিয়ে আসতে হয় এই হাঁসপাতালে ।

বাবুর কপালের ভাজ থেকে দুশ্চিন্তার রেখা সরে যায় , বাবা তার ছেলেটাকে দেখে আর অবাক হয়, এতটুকু একটা ছেলে যে কিনা নিজেকে নিয়ে না ভেবে অন্য এক শিশুকে নিয়ে ভাবছে , যে কিনা পানিতে পরে যাওয়া শিশুটিকে বাঁচাতে নিজে যে সাতার জানেনা সে কথাও ভুলে যায় ! বাবা তার ছেলে বাবুর চোখে তাকিয়ে দেখে এই সবুজ অনাধুনিক গ্রামে বেড়ে ওঠা ছোট্ট ছেলেটা আসলে ছোট্ট না ওর ভেতরে আছে এক মহৎ ও উদার মানুষ যতটা উদার এই গ্রামের বহমান নদী তুলাতলি । বাবু জানতে চায়- বাবা আমি এখান থেকে কবে বাড়িতে যেতে পারবো ?

বাবা বলল- ডাক্তার বলেছে অন্তত এক সপ্তাহ থাকতেই হবে , তা না হলে তোমার পায়ের আঘাত পুরোপুরি সারবেনা ,

বাবু বলল- এরপরে কি আমি আবার নদীতে নামতে পারবো, মালা ডলি মনি ওদের সাথে খেলতে পারবো ?

এবার বাবা ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল- হ্যা বাবা অবশ্যাই পারবে , তোমার ভাই বোনেরা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে এখানে দেখার জন্য আসবে ।

এরপরের দিনই মালা ডলি মনি সহ ওর ভাই বোনেরা ১৪ জন হাঁসপাতালে আসে, ওদেরকে দেখতে পেয়েই খুশিতে বাবুর চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে ওঠে অনেক কষ্টে উঠে বসে, ডলি বলে - কিরে বাবু তুই কবে বাড়িতে যাবি, তোকে ছাড়া যে আমাদের সব খেলা বন্ধ হয়ে আছে, বাবু বলল- কেনরে বন্ধ থাকবে কেন তোরা খেলিস না ? মালা বলল – কি করে খেলবো বল আমাদের খেলায় তুইতো সবসময় রাজা , রাজা ছাড়া কি খেলা হয় ?

বাবু বলল - এই আয় এখন আমরা খেলি ! মনি বলল- কি বলিস তুই না অসুস্থ ? বাবু বলল - আমার মনে হয় তোদের সাথে খেললেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো !

বাবুর মা বাবা চাচা-চাচি ফুফু সহ সব বড় মানুষেরা বাবুর বেড থেকে উঠে পাশে গিয়ে দাড়ায় আর ওরা বাবুর বেডে গোল হয়ে বসে একে অপরের হাত ধরে খেলা শুরু করে

এলোনা-বেলোনা ঝুমকো পাতা ঝুম

বাবুকে সালাম কর- সালামালাই কুম ।



















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.