![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনো একদিন মানুষ হবো। আশায় আছি....
ভাবুন তো একবার !! কলেজে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কয়েক বন্ধু মিলে চলে গেলেন কোন এক নদীর পাড়ে আড্ডা দিতে। অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা আর খুব প্রিয় কিছু মানুষ একসাথে। সবাই একেবারে হরিহর আত্মা। প্রিয় বন্ধুদের নাম- কাহ্নপা, লুইপা, কুক্কুরীপা, ভুসুকুপা, সরহপা আর শবরপা।
অ্যাঁ !!! এইগুলান আবার কেমনতর নাম ????? Are they pom gana ?????
আচ্ছা, যাই হোক। আরেকবার ভাবুন তো। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছেলেটার চোখে এক অজানা ভয়। ছেলেটা থমকে দাঁড়ালো। মেয়েটার সামনে এলো। কি অদ্ভুত সুন্দর চোখ!! কি মিষ্টি চেহারা!!! কিছু একটা ভেবে সে হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। মেয়েটার হাত ধরে বলল, " তোএ সম করিবে ম সাঙ্গ "
ধুর!!! এইডা কিছু হইলো!!!! কি কন মিয়া ???
আসলে উপরের নামগুলো আমাদেরই পূর্বপুরুষদের। ওনারা সবাই চর্যাপদের কবি। আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন এই চর্যাপদ। আর ছেলেটা কি বলেছে তা তো সব্বাইই বুঝতে পারছেন। কথাটির অর্থ হচ্ছে- ' আমি তোমাকে বিয়ে করবো।'
হাজার বছর আগে এমনই ছিল আমাদের বাংলা ভাষা।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ৯০০ বা ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে মাগধী অপভ্রংশ থেকে জন্ম নেয় আমাদের বাংলা ভাষা। এ হিসেবে বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার একশো বছর। কিন্তু একটুও বুড়িয়ে যায়নি আমাদের প্রিয় ভাষা। সে যে অনন্তযৌবনা!!!
ফিরে আসি চর্যাপদের কথায়। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালে যান। নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থশালায় তিনি আবিষ্কার করেন চারটি পুঁথি। ঐ পুঁথিগুলো তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ থেকে প্রকাশ করেন। এ গানগুলোই এখন চর্যাপদ নামে পরিচিত।
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
'চর্যা' শব্দের অর্থ হল আচরণ। বৌদ্ধ ধর্মের সিদ্ধপুরুষেরা এতে নির্দেশ দিয়েছেন, সাধনার জন্য কি আচরণ করা যাবে ও কি আচরণ করা যাবেনা। অর্থাৎ এগুলো হলো তান্ত্রিক গাথা। আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জন্য এটা রচিত নয়। শুধুমাত্র সিদ্ধপুরুষদের জন্যই এই রহস্যময় গানগুলো।
এর একটি পদাংশঃ
"নগর বাহিরেঁ ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ
ছই ছোই যাই সো বাহ্ম নাড়িআ
আলো ডোম্বি তোএ সম করিবে ম সাঙ্গ
নিঘিণ কাহ্নকপালি জোই লাঙ্গ"
এর অর্থঃ
"নগরের বাইরে, ডোম্বি, তোমার কুঁড়েঘর
তুমি ব্রাহ্মণ নেড়াকে ছুঁয়েছুঁয়ে যাও
ওগো ডোম্বি আমি তোমাকে বিয়ে করবো
আমি ঘৃণাহীন কাহ্ন-কাপালিক, যোগী ও উলঙ্গ"
কথাগুলো হয়তো সহজবোধ্য মনে হচ্ছে। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে এক রহস্যময় অর্থ, যা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভভ নয়। এর ভেতরের ভাব একমাত্র সিদ্ধপুরুষেরাই জানেন।
চর্যাপদে ব্যবহৃত কিছু শব্দের অর্থঃ
উইএ = উদিত হয়
নঈ = নদী
জাণহুঁ = জানি
নঅ বল = দাবা খেলা
উএস = উপদেশ
গঅণ = আকাশ
গুহাড়া = অনুরোধ
বিআলী = বিকেল
হাউঁ = আমি
হিঅহি = হৃদয়ে
অকিলেসেঁ = বিনা পরিশ্রমে
.................................
.................................
চর্যাপদ প্রাচীন বাংলা ভাষার নিদর্শন। মধ্যযুগের বাংলা ভাষা কেমন ছিল তা আমরা জানতে পারি ' শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ' নামের একটি পুঁথি থেকে। এটি একটি বড় কাহিনীকাব্য। এর কবির নাম বড়ু চণ্ডীদাস। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম মহাকবি। ধারণা করা হয় এটি ১৩৫০-১৪০০ সালের মধ্যে কোন এক সময়ে রচিত হয়েছে।
কৃষ্ণ ও রাধা
চর্যাপদ সাধারণ মানুষদের জন্য লেখা হয়নি। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে উঠে এসেছে রাধার কষ্ট, তার আবেগ-ভালবাসা। উঠে এসেছে রাধার রূপ দেখে কৃষ্ণের মুগ্ধতা। রাধার অশ্রুকণায় মিশে টলমল করতে থাকে আমাদের মধ্যযুগের বাংলা ভাষা। কৃষ্ণের বাঁশির মায়াবী সুরের তালে নেচে উঠে আমাদের মধ্যযুগের বাংলা ভাষা।
এ কাব্যের একটি পদাংশঃ
" কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নইকুলে
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন "
এর অর্থ দাঁড়ায় এমনঃ
" কে বাঁশি বাজায় বড়ায়ি কালিন্দী (যমুনা) নদীর কূলে
কে বাঁশি বাজায় বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে (যমুনা পারের গ্রাম)
আমার শরীর আকুল আর মন ব্যাকুল "
এই প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষা সম্পূর্ণরূপে আমরা বুঝতে পারিনা। তবে রোমাঞ্চিত হই এই ভেবে যে, আজ থেকে হাজার বছর আগে বাংলার পথে-প্রান্তরে এই ভাষাতেই কথা বলতেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। তাদের হাসি-কান্না, ভালবাসা, রাগ, ঘৃণা, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা সবকিছু মিশে আছে এই ভাষার সাথে। এ আমাদের জন্য এক স্বপ্নের ভাষা। রূপ আলাদা হতে পারে। তবে হাজার বছর ধরে এ ভাষায়ই আমরা কথা বলছি, হাজার বছর ধরে এই ভাষায়ই আমরা কথা বলে যাবো..........
যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান এ বিষয়ে -
১. কতো নদী সরোবর বা বাংলা ভাষার জীবনী - হুমায়ুন আজাদ
২. Click This Link
৩. Click This Link
৪. Click This Link
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৬
শাফী আব্দুল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৪৭
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার পোস্ট ভাইয়া। কিন্তু এতো ভালো পোস্ট এত কমজন পড়েছে আর কমেন্ট নেই বললেই চলে এই ব্যাপার গুলো খুব হতাশা জনক।
আশা করি এই হতাশা আপনাকে স্পর্শ করবেনা। আপনি পোস্ট করে যান। অনেক শুভকামনা থাকল।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫২
শাফী আব্দুল্লাহ বলেছেন: লেখালেখি শুরু করেছি খুব বেশিদিন হয়নি। সত্যি কথা বলতে কি ভাইয়া, প্রথম প্রথম বেশ খারাপই লাগতো এ ব্যাপারে। আজকাল আর সেটা হয়না। কারণ লেখে এবং পড়ে প্রচুর আনন্দ পাচ্ছি। তবে সামনে অ্যাডমিশন পরীক্ষা বলে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিনা অবশ্য। ঝামেলাটা শেষ হলেই আবার পুরোদমে শুরু করবো।
পোস্ট পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট ভালো লাগলো।