![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই গল্পটা অনেককেই বলব বলে অনেকবার ভেবেছিলাম। কিন্তু কাউকে কখনো বলা হয়নি। কেনো বলা হয়নি,তাও জানিনা। অনেকবার ভেবেছিলাম একটা গল্পের মাধ্যমে এই ঘটনাগুলো বলি।তাও বলা হয়নি। আমি আসলে সুন্দর করে গুছিয়ে গল্প লিখতে পারিনা। কিন্তু আজ আবার যখন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল,তখন ভাবলাম গল্পে গল্পে বলেই দেই।মানুষের ভিতর যে কত রকম ক্ষমতা ভর করতে পারে মানুষ জানুক।
আমি অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করছি আমি যা ভাবি তাই সত্যি হয়। এমনকি আমি যা চাই তাই পেয়ে যাই। ব্যাপারটা শুধু আমি নিজেই জানি এবং বুঝি। আর কাউকে বলিনি। না বলার পিছনে আমার একটা ভয়ও ছিল। ভয়টা হলো কাউকে বললে যদি আমর ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে যায়! সেই ভয়ে।
আমি একদিন একটা চটপটির দোকানে গিয়েছিলাম।চটপটি খাওয়ার জন্য। চটপটির প্রতি আমার যে বিশেষ দুর্বলতা আছে এমন নয়। প্রায় প্রতিদিনই দেখতাম,এই চটপটির দোকানটা ক্রেতাশুন্য থাকে। একদিন আমার খেয়াল হলো আজ ওনার চটপটি খেয়ে দেখব ওনার চটপটির সমস্যাটা কী। কেনো ওনার চটপটি মানুষ খেতে চায় না। নিজের পরখ করে দেখতে ইচ্ছে হলো। আমি চটপটি খেলাম। অনেকক্ষন ক্রেতাশুন্য থাকার পর একজন ক্রেতা পেয়ে চটপটিঅলা খুব খুশি। অনেক যত্ন করে চটপটির প্লেটটা সাজিয়েছেন। দেখলেই বোঝা যায়।আমি চটপটি মুখে দিয়ে হতবাক। এত সুন্দর চটপটি আমি অনেকদিন খাইনি। অথচ মানুষ এই চটপটি না খেয়ে কেনো পাশের দোকানে চলে যায়,বুঝতে পারলাম না। আমি চটপটিঅলাকে বললাম-আপনার চটপটি তো অনেক ভালো লাগলো,মানুষ খায়না কেনো? বলল আপনে যত সুন্দর বলেছেন,আমার চটপটি আসলে অত ভালো না,আমি জানি মামা। আমারে ফুলাইয়েন না।
পরদিন একই সময় আমি চটপটির লোভ সামলাতে পারলাম না। ভাবলাম যাই,আজকেও ঐ চটপটি খেয়ে আসি। কিন্তু আমি দোকানটার কাছে পৌছানোর আগেই লক্ষ করলাম,দোকানটায় প্রচুর কাষ্টমার।সবাই গোগ্রাসে চটপটি গিলছে। বসা তো দূর থাক,পাশে দাঁড়ানোর জায়গাও নাই। যাবো কী যাবোনা ভাবতে ভাবতে চটপটিঅলার একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। একজন কাষ্টমারকে পানি দেয়ার জন্য ড্রাম থেকে পানি তুলতে গিয়েই আমার দিকে চোখ পড়ল চটপটিঅলার। আমাকে দেখেই একরকম চিৎকার করে উঠল।আরে মামা,আপনে ঐ খানে ক্যান? এদিকে আসেন,এদিকে আসেন। দোকানের ছোটো ছেলেটাকে বসার টুলটা ছেড়ে দিতে বলল। ছেলেটা চটপটিঅলার ছেলেও হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।কিন্তু ছেলেটাকে আমি আগে দেখিনি। জানতে চাইলাম-এটা কি আপনার ছেলে? বলল-হ,আইজকা বেশি কাষ্টমার। সামলাইতে পারতেছিনা,বাচ্চার মারে ফোন কইরা অরে আনাইছি। কথা বলতে বলতে চটপটির প্লেট সাজানো হয়ে গেলো তাঁর। প্রচুর কাষ্টমার। কেউ বসে আবার কেউ দাঁড়িয়েও খাচ্ছে। ছেলেটাও ভীষণ ব্যাস্ত। একে চটপটি দিচ্ছে তো এর প্লেট নিচ্ছে। লোকটা চটপটি বানিয়েই যাচ্ছে। আমি খাওয়া শেষ করে বিল দেবার জন্য পিছন পকেটে হাত দিলাম। মানি ব্যাগ হাতে নিতেই চটপটিঅলা আমার হাত চেপে ধরল। বলল-আইজকা আপনার কাছ থেইকা টাকা নিমুনা। বললাম-ক্যান? টাকা নিবেন না কেন? কোনো কথা না বলে চটপটিঅলা আমার পায়ে হাত দিয়ে ছালাম করার জন্য ঝুকে পড়ল। আমি কোনো রকম পা সড়িয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। বললাম-একি!আপনি এগুলো কী করছেন? বলল-মামা,আপনে আমার বেবসার লক্ষী। কাইলকা আপনে আমার দোকানে আইবার পর থেইকা খালি কাষ্টমার আর কাষ্টমার। আমি একলা সামলাইতে পারতেছিনা। পোলারে খবর দিয়া আনাইছি। আপনে লক্ষী মামা,আপনে লক্ষী।
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। লোকটির কথা শুনে শুধু হা করে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম,মানুষ এখনো কত কুসংস্কারে বিশ্বাস করে!
তারপরদিন থেকে আমি আর ঐ দোকানে চটপটি খেতে যাইনি।
কিন্তু ঐ পথ দিয়ে গেলে আমি দোকানটার দিকে এখনো তাকিয়ে থাকি। এখনো প্রচুর কাষ্টমার। দাঁড়িয়ে আছে,বসে আছে। চটপটি খাচ্ছে। প্রায় পাঁচ বছর পর আজ আবার সেই দোকানে গেলাম, চটপটি খাওয়ার জন্য। আগেই চটপটিঅলাকে বলে দিলাম-চটপটি খেতে পারি,কিন্তু আজ টাকা নিতে হবে। রাজি? এক গাল হেসে লোকটি বলল-আইচ্ছা,আগে বহেন।
সেই থেকে এই পাঁচ বছরে আরো অনেক কিছু ঘটেছে। অবিশ্বাস্য সব ঘটনা। এই পাঁচ বছরে আমি যা চেয়েছি সব পেয়েছি। আমি যা ভেবেছি তাই সত্যি হয়েছে। সবগুলো ঘটনা আপনাদের বললে আপনারা বিশ্বাস নাও করতে পারেন। আজো আপনাদের এই গল্পটা বলতাম না। কিন্তু বলছি আজ যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। অনেকে বড় খুশির সংবাদ। তাই ভাবলাম এই পাঁচ বছরে অনেক কিছুইতো পেলাম। আপনাদের বলার পরে যদি আমার ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে যায়,তাহলেও কোনো আফসোস থাকবে না। তাই খুশির সংবাদটা আপনাদের বলতে চাই।
কেকার সাথে আজ দশ বছর পর আমার যোগাযোগ হলো। কেকা। আমার প্রথম প্রেম। কলেজে আমরা একসংগে পড়তাম। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব ভালো গান গাইতাম। গলায় সুর ছিল। যদিও আমি গান শেখার কোনো সুযোগ কখনো পাইনি। কেনো পাইনি? সেটা আর একটা গল্প।অন্য একদিন বলব। আজ কেকার কথাই বলি। গান গাওয়ার সেই অভ্যাসটা আমি কলেজে উঠেও ছাড়তে পারিনি। ক্লাশ টিচার না আসা পর্যন্ত আমি বেঞ্চ টাকিয়ে গান গাইতাম। মানে বেঞ্চটাকে তবলা বানাতাম আর কী। আমার চার পাশে ক্লাশের বন্ধুরাও সুরে সুর মেলাত। অপর পাশে বসত মেয়েরা। গান মনে হয় একটু বেশি ই ভালো গাইতাম। শুরু করলেই দেখতাম কিছু মেয়ে ওপাশ থেকে উঠে আমাদের কাছাকাছি এসে বসত। গান শুনত। আমি আরো উৎসাহ পেতাম। গলা খুলে গাইতে চেস্টা করতাম। একটা মেয়েকে দেখতাম,ওপাস থেকে কখনোই এপাসে আসেনি। আমার ধারনা ছিল মেয়েটা আমার গান পছন্দ করে না। আমার চোখ শুধু ঐ মেয়েটার দিকেই চলে যেত। একদিন আমার ধারনা ভুল প্রমানীত হলো।ক্লাশ শেষ হলে সবাই যখন চলে যেত , আমি সবার পিছনে বের হতাম। সেদিন মেয়েটা আমার পাশাপাশি হাটছিল। আমার কাছাকাছি এসে আমাকে জিগ্ঞাস করল-আপনি কোথায় গান শেখেন? বললাম-আমি গান শিখিনাতো। মেয়েটা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। বলল-তাহলে এত সুন্দর গান কী করে? বললাম জানিনা।
সেই থেকে কেকার সাথে আমার বন্ধুত্ব। কেকা আমার গানের ভক্ত। আমি গান শুরু করলেই কেকা মনযোগ দিয়ে শুনতে থাকে। আমার বন্ধুদের সাথেও কেকার বেশ ভাব জমে গেলো। আমরা একসাথে আড্ডা দিতাম। হাসি তামাশা করতাম। দলবেধে ক্যান্টিনে গিয়ে চা সিঙ্গারা খেতাম।
ধিরে ধিরে কেকার প্রতি আমি দুর্বল হতে লাগলাম। কেকার প্রতি আমার প্রেম জন্মাল। আমি অনুভব করতে লাগলাম,আমি সারাক্ষন কেকার কথাই ভাবি। বলব বলব করে কেকাকে কোনোদিন আমার ভালোলাগার কথা বলতে পারিনি। বন্ধু হয়েই ছিলাম। মাঝে মাঝে ভাবতাম কেকাও কী আমাকে ভালোবাসে! বুঝতে পারতাম না। কলেজ জীবন শেষ করে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। তারপর থেকে কেকার সাথে আমার যোগাযোগ কমতে শুরু করল। কমতে কমতে একদিন থেকে কেকার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু কেকার কথা আমার সব সময় মনে পড়তো। অনেক চেস্টা করেছি কেকাকে ভুলে থাকতে। কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারিনি।
এইভাবে কেটে গেছে দশটি বছর। আমার ভিতর সেই আলৌকিক ক্ষমতা ভর করার পর থেকে কেনো যেনো মনে হচ্ছিল কেকাও আমাকে ভালোবাসতো। দিনে দিনে আমার এই ধারনা বদ্ধমুল হতে থাকল এবং কিছুদিন ধরে আমার মনে হতে লাগল কেকার সঙ্গে আমার শীঘ্রই কোথাও দেখা হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে গতকাল রাতে আমি কেকাকে স্বপ্নে দেখলাম। দেখলাম নীলক্ষেতে একটা বইয়ের দোকানে আমি কী একটা বই কিনতে গিয়েছি। কেকাও সেই বইয়ের দোকানে বই কিনছে। কেকা আমাকে দেখতে পায়নি। আমি কেকার সাথে কথা বলতে যাবো ঠিক তখনি আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি বিছানায় ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। এক গ্লাস পানি খেতে খেতে আমার মনে হলো কাল কেকার সাথে আমার দেখা হবে। দেখা হবে বইয়ের সেই দোকানটাতেই।
সকাল এগারটা। আমি নীলক্ষেত নেমে সোজা বইয়ের দোকানটার সামনে গেলাম। যে দোকানটা আমি গেল রাতে স্বপ্নে দেখেছি। দোকানটার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। আমি চমকে উঠলাম। আমার হাতের পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল,আমি পরিস্কার টের পাচ্ছিলাম। মেয়েটার মুখ ওরনা দিয়ে ঢেকে রাখার কারনে আমি মেয়েটাকে দেখতে পারছিলাম না। আমি মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম-আপনি কি কেকা? চট করে আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি দেখলাম কেকা আমার সামনে দাঁড়িয়ে।আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি নির্বাক হয়ে কেকার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কেকা বলতে থাকল-গত রাতে আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। বললাম-আমিও। কেকা মিস্টি হেসে বলল-তুমি আগের মতোই দুষ্ট রয়ে গেছো।
আজ সকালে অফিসে যেতে যেতে নীলক্ষেতের মোরে গাড়ি জ্যামে আটকে ছিল। গাড়িতে বসে বসে ভাবছিলাম আজ রাতেই এই গল্পটা লিখে ফেলবো। অনেকদিন আমি কোনো স্বপ্নের গল্প লিখিনা।
(সমাপ্ত)
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
বাহ কবিতা, গল্প সবই দেখি আপনি খুব চমৎকার লেখেন।
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১২
সোহাগ সকাল বলেছেন: ভালো লাগলো।
শুভ কামনা।
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২৯
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: ভাই এইটা সইত্য ঘটনা ! ?
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪
রাইসুল নয়ন বলেছেন: আমার এমন ক্ষমতা আছে কবি !!
মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হই !!
আপনার গল্পটা দারুণ হয়েছে
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:০২
শিপু ভাই বলেছেন:
মূল গল্পের সাথে চটপটির দোকানের ঘটনার কোন সামঞ্জস্য পেলাম না।
কিন্তু গল্পটা বেশ লাগলো। লাস্টের টুইস্টটা দারুন হইছে!!!
আরো লিখুন!!!
শুভকামনা++++++++++++++++
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭
একজন আরমান বলেছেন:
ভাই একটা কথা বললে আপনি সিরিয়াসলি নিবেন কিনা জানি না। যদিও আমি কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না। তবুও বলছি।
আপনি আমার জন্য একটু দোয়া করতে পারেন যেন আমার চাকরিটা ২/১ মাসের মধ্যে হয়ে যায়।
৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৬
জেমস বন্ড বলেছেন: প্রথম গল্প হিসেবে ভাল হয়েছে । চটপটির ঘটনাটা দারুন টাচি করলো । আসলেই মানুষ আজকাল অনেক কিছুই ভাবে । মোবাইল হতে ব্লগিং করে ও একটা গল্প দিয়ে ফেললেন ভাই !! আসলেই আপনার হাত খুলছে ধিরে ধিরে । কবিতা থেকে গল্প ।
সব ক্ষমতার উৎস ওপরওয়ালা , কেউ নিজেকে ধরে নিয়ে তৃতীয় ইন্দ্রিয় দ্বারা উৎসাহী হতেই পারে তবে আপনি বিষয়টা সেভাবে নেননি এইটা ভালো লাগছে ।
প্লাস দিয়ে গেলাম
৯| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩০
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
ভালোলাগা।
১০| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩৫
স্বপনবাজ বলেছেন: ভালো লাগলো।
১১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
shfikul বলেছেন: এই গল্পটি যারা কষ্ট করে পড়েছেন,তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
১২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:১৪
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
ব্লগে ইদানিং সময় দিতে পারছিনা। বেসম্ভব ব্যস্ত। তাই অনেকদিন পর কমেন্ট করলাম।
আপনি তো দেখা যায় কবিতার পাশাপাশি ভাল গল্পও লিখেন। ভাল্লাগসে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৩
ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: ওহ!! সাধু সাধু!! একেই বলে ছোট গল্প, তবে আপনি গল্পে যে ক্ষমতার কথা বলেছেন তা কিন্তু বাস্তবেও অনেকের ক্ষেত্রে ঘটে, ব্যাপারটা হোল আপনি যদি কোন জিনিষ খুব তীব্র ভাবে কামনা করেন তাহলে দেখবেন সেটা আপনার জীবনে ঘটে গেছে।