নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি শফিক বলছি

তোমার আমার ভালোবাসা আরব্য রজনীর কল্পকাথা নিশ্ছুপ হয়ে শুনবে সবাই যেন নিঝুম রাতের নীরবতা

আমি শফিক বলছি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দূর দ্বীপবাসিনী

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩

শফিকুল ইসলাম

..............................

জীবন কখনো থেমে থাকে না। জীবনে শেষ গন্তব্য বলে কিছু নেই। কড়া বাস্তবতা। মাঝে মাঝে এই জীবন চায়ের কড়া লিকারের মত যেখানে এক আধটু চিনি মিশালেও তার তিক্ততার রেশ যায় না। ভিতর বাহির কাঁপিয়ে তুলে।

আজ আকাশ খুব নীল। নীল? ঠিক আজকেই কি নীল?

উত্তর মনে হয় “না”। আমার চোখই মনে হয় কোন দিন এই নীলের আধিপত্যকে ঠিক সেভাবে ধরতে পারিনি। চোখোগোচর হয়ে নি। আজকে কিছুটা উদাস বলেই হয়তো আকাশের দিকে এতো নিবিরভাবে তাকিয়ে আছি।

“দোস্ত”

চমকে উঠলাম। গভীর মনোযোগে বাধ সাধল। ভাবনার অতলে ডুব দেয়ার আগেই ডাঙ্গায় উঠে এলাম।

“ দোস্ত দেখ দেখ কি সুন্দর মেয়ে আমাদের সেকশনের মেয়ে। হেব্বি সুন্দর তাই না। ওর নাম অহনা ? “

হুম

“ওই বেটা ওই বাসা থেকে কি কেউ জীবনে বাইরে থাকে না। তুই কি একাই এইরকম নাকি? সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখ তাও তো মন ভালো লাগবো। এইরকম চুপচাপ না থাইকা চারিদিকে ঘুরাঘুরি কর, আড্ডা দে দেখবি সব ঠিক হইয়া যাইব। উঠ, চল রঙ চা খাইয়া আসি।“

কিছুক্ষণ আগে যেই তিক্ততার কথা বললাম ঘুরে ফিরে সে আবার আলোচনায়। কড়া লিকারের চা। হা হা হা। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় নামক জায়গায় তিন টাকায় যে চা বিক্রি হয় সেখানে লিকার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বুড়িগঙ্গার সমস্ত জল মিশিয়ে যতপারে পরিমাণ বাড়ানোতে বদ্ধপরিকর চা মামারা! অনেকটা হলে ফ্রী দেওয়া সুখাদ্য ডাল!! পানিময় জীবন!

এই অখাদ্য প্রতিদিনই গিলতে হয়। ফ্যাকাল্টির কাছে যেতে না যেতেই এই অত্যাচার শুরু হয় আর ফিরে না যাওয়া শেষ অবধি চলতে থাকে। মামা চা লাগবে, আমা চা খান, মামা চা দিবো ইত্যাদি। কখনো এড়িয়ে যাই না শুনার ভান করে, কখনো বিরক্তির সাথে না বোধক শব্দ উচ্চারণ করে চুপচাপ বসে থাকি।

মামা চা দিমু ?

: তোমার কাছে তো মামা আইছি এই রঙ পানি খাওয়ার জন্যই। আজকে চা’য়ে কয় ড্রাম জল মিশাইছো?

ছিঃ ছিঃ ছিঃ। তওবা তওবা। এগুলা কি কন মামা। হারামে কইতাছি খাঁটি পাতি দিয়া বানাইছি। দোকানে যা খান তার চেয়ে অনেক গুণ ভালা। খাইলেই বুঝবেন কিরম মজা।

: হ হ বুঝছি। তোমারটাই ভালো আর দোকানে যা বিক্রি হয় এক কথায় জঘন্য। আল্লায় তোমারে জন্মের পর চাবি মাইরা ছাইরা দিছে। তোমার মুখ থামবো না। আমিই অফ মারি।

আমিই এইবার রিয়াজকে থামিয়ে দিতাম। ওর কপাল ভালো আগেই থামছে। যেখানেই যায় হুদা প্যাঁচাল পারে। উফ

না আজকের চায়েও ইতর বিশেষ পার্থক্য নাই। বরঞ্চ আজকে মনে হয় পানির ড্রাম একটু বেশি ব্যবহার করছে। 

ওই শুভ দৌড় দে। ম্যাডাম ক্লাসে চলে আসছে

: ওই বেটা চা খাইতে ডাইকা আনলি; চা এর টেস্টই তো বুঝলাম না। শেষ করতে দে

যে চা তার আবার টেস্ট। জীবনে অনেক চা খাইতে পারবি মাগার ক্লাস মিস করলে পাবি না। ৭৫% এর নিচে উপস্থিতি হইলে তখন বুঝবা ম্যাডাম জিনিসটা কি ? দৌড়াইয়া কূল কিনারা পাবি না। চল দৌড় দে......



ক্লাসে বসে বসে কলম কামড়াচ্ছি। অসময়ে খাদ্যের চেয়ে অখাদ্য শ্রেয়তর মনে হয়। কলমের মধ্যে চিনি লবণ কিছুই নাই তবে এই মুহূর্তে তাকেই স্বর্গীয় খাদ্য মনে হচ্ছে। ভাবনার গভীরে যেতে উৎকৃষ্ট উপাদান।

এরই মাঝে মেসেজ টিউন বেজে উঠলো। অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আর ক্লাসের সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। Selective Attention এখন আমার দিকে। I am now a storm in the cup of tea! আমি কিছু না বুঝার ভান করে নীচ দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে আল্লাহ্‌কে জপতে থাকলাম। হে আল্লাহ্‌ এই দাজ্জাল ম্যাড্যামের হাত থেকে এইবারের মত শেষ রক্ষা করো।

: How long will it take time to develop your common sense?? You are mature enough but attitude is like that you are studying in the Primary School.

তুমি একে তো ক্লাসে দেরিতে আসছো উপরন্তু বসে বসে ধ্যান করছিলে। স্যার এটা ধ্যানের জায়গা নয়। এতোই যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে গভীর বনে যেয়ে সাধনার কাজটা করলে ভালো হয়। অন্তত আমরা কিছুটা রেহাই পাই। স্যার বুঝাতে পারলাম? আমি কি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি ? নাকি আমার কথা সংস্কৃতি ভাষা মনে হচ্ছে হচ্ছে। ছাত্রনং অধঃয়ন তপ

আমি মুখ কাঁচুমাচু করে কোনোরকমে বললাম” স্যরি ম্যাম’

:জি বসেন। আমিই স্যরি। আপনাদের বুঝাতে পারি না।

উফ। এইবারও শেষ রক্ষা হল না। আজ তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছি। বিপদে পড়বি পর; স্বাভাবিক কিন্তু এই যমের কাছে কেন রে ??

নাহ এই মেয়ের কাছ থেকে রক্ষা পেলাম না। ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর থেকে সেই যে যন্ত্রণা শুরু হইছে ক্রমাগত তার মাত্রা বেড়েই চলেছে। আজও জানলাম না কে সেই দূর দ্বীপবাসিনী। তবে আমার ক্লাসের যে কেউ এটা নিশ্চিত। ক্লাস আওয়ারে প্রতিদিনই এই রকম দুইএকটা SMS হজম করতে হয়। অন্যদিন মোবাইল সাইলেন্ট রাখি কিন্তু আজকে অতর্কিতে হামলায় মানসম্মান নিয়ে টানাটানি।

রিয়াজঃ কি মামা আজকেও কি সেই মেয়েটা? তোরই কপাল। আমরা খুঁজেও পাইনা। আর তুই হেলায় ফেলায় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করোছ। ওই মামা চা দাও

জানলে তো হেলা ফেলার তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের প্রশ্ন আসবো। কে যে এই জ্বালাতনটা করতাছে কে জানে? SMS টা পড়লামঃ

“এই যে মিস্টার কুমড়ো পটাশ

জীবন নিয়ে কেন হতাস”

হা হা হা......

: কিরে দোস্ত কি লিখছে? দ্যাখা না

কিছু না। চল ক্যান্টিনে যাই। নাস্তা করে আসি

: শালা, বলবি না তাই বল। চল

যখন প্রথম প্রথম মেসেজ আসতো তখন খুব আগ্রহভরে পড়তাম। সুন্দর সুন্দর কবিতার লাইন। নির্মলেন্দু গুণ, পূর্ণেন্দু পত্রী, সুনীল ইত্যাদি। কয়েকবার ফোনও দিয়েছি ধরেনি কিন্তু মেসেজ রিপ্লাই পেয়েছি।

“কি মিস্টার অপরিচিত নাম্বারে ফোন দেন কেন? ভদ্র ছেলেরা এই কাজ করে না”

কেমন একটা অপ্রস্তুত পরিস্থিতির মুখোমুখির সম্মুখীন হলাম। পরে SMS সেন্ড করলাম।

“ কে আপনি? আমাকে কি চিনেন? Kindly আপনার পরিচয়টা দেন।

“ আমি দূর দ্বীপবাসিনী”

তো দ্বীপের কন্যা এই বান্দার কাছে কি চান?

: কিছু চাই না। আপনাকে দেখেই সন্তুষ্ট। বেশি চাইলে হারালে কষ্ট পাবো যে”

পেতেও তো পারেন। হাত বাড়িয়ে একবার চেয়ে দেখেন না

: জি না জনাব। ভয় করে ভীষণ ভয়। কত সুন্দর সুন্দর বালিকা আপনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। তাদের সামনে আমি তুচ্ছ নগণ্য। দূর থেকেই ভালো আছি ।

আমিতো ভালো নেই। প্রতি মুহূর্তে অস্থিরতায় থাকি। কিছু ভালো লাগে না। আপনি একবার সামনে এসে দাঁড়ান। প্লিজ

: জি না দূর দ্বীপবাসিনী দূরত্বকে কল্যাণকর মনে করে। কাছে গেলে হারাবার ভয় থাকে।

এই হচ্ছে শুভ’র অশুভ পরিণতি। এই কয়দিন আরও উদাসীন হয়ে গেছি। একে তো তার ভাবনা আর অন্যদিকে বাসা ছেড়ে দূরে। সব মিলিয়ে একটা গুবলেটে অবস্থা। রাস্তায় এলোমেলোভাবে হাঁটি। বন্ধুদের আড্ডায় চুপচাপ বসে থাকি আর ক্লাসে কোথায় যেন হারিয়ে যাই। পড়াশুনার জানাজা কবেই শেষ। কিন্তু যার জন্য এমন আমি তাকেই তো খুঁজে পাচ্ছি না। একটা বছর চলে গেলো এমন করে। মাঝখানে তার অবস্থান জানার একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিলাম। আমার এক আত্মীয় মোবাইল কোম্পানিতে জব করেন। তাকে দিয়ে ট্র্যাকিং করে মেয়েটির অবস্থান জানার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরও জটিলতর হল। তিনি একটা হলের ঠিকানার কথা বললেন আর রেজিস্ট্রেশনে যে নাম লেখা আছে সেই নাম বললেন। ঐ নামে কাউকে চিনি না। কাকে সন্দেহ করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ওই হলে বেশ কয়েকজন ক্লাসমেট থাকে। উফ আমি শেষ।

আজ বৃহস্পতিবার। আঁটটায় ক্লাস আছে। একটিমাত্র ক্লাস তাও আবার আঁটটায়। হলে যারা থাকে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কি মহামান্য শিক্ষকদের কোন জ্ঞান নেই। রাত ১-২ অবধি জেগে থেকে আড্ডা আর মুভি দেখা, ফোনে কথা বলা আর পড়ালেখার একটা বৃথা চেষ্টা করাই তো আমাদের বিশাল দায়িত্ব !! দেশ গঠনের ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। হা হা হা। আবার ক্লাস কেন রে বাপু ??

মন মেজাজ চরম বিরক্ত। ক্লাস হবে না। বসে বসে বেরান্ডা ভাঁজছি। মোবাইল কেঁপে উঠলো। নিশ্চয়ই দূর দ্বীপবাসিনী। জি উনিই

“ এই যে খোকা বাবু ক্লাস যেহেতু হবে না

বাসায় যেয়ে ফিডার খান

আম্মু ডাকছে”

কয়েকটা স্পেস এর পর আবারঃ

“আমার এই খোকাবাবু ভীষণ রকম বোকা

আপন মানুষ পর করে সে খালি যে খায় ধোঁকা”

হা হা হা। আজকে কেন জানি মনে হল ফোন দেই। যেই ভাবা সেই কাজ। ফোন দিলাম। ওয়েলকাম টিউন বেজে উঠলো

‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী

তুমি থাক সিন্ধু পানে ওগো বিদেশিনী’

ফলাফল অন্যদিন যা হয় তাই হল। ফোন বেজেই গেলো। কেউ রিসিভ করার প্রয়োজন বোধ করলো না। আশাভঙ্গ। তবে খুব একটা আঘাত পাইনা। আশাভঙ্গ হতে হতে একটা সময় মানুষ আশা করা ভুলে যায়। তবে আজ কেন এতো আশা মনে জাগ্রত হয়েছিলো তার যুক্তিসংগত কারণ জানি না। বাড়ির জন্য মন ছটফট করছিলো। কাজেই নাস্তা এবং অতঃপর ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলাম।



রাস্তায় আনমনে হাঁটছিলাম। মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। এক বছরে কোন মেয়ের দিকে ভালো লাগার চোখে তাকায় নি। যতটুকু পারি নিজেকে নিয়মের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। কিন্তু যার জন্য এতোকিছু করি আজো জানি না সে কে? দেখতে কেমন? কবে তার দেখা পাবো? কবে? শুভ’র জীবন কবে শুভ হবে? একটা অনিশ্চয়তা প্রতি মুহূর্তে মনকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে আমায়। মনকে কোনভাবেই প্রশমিত করতে পারছি না। তাকে দেখতে পেলে বেঁচে উঠবো; ভিতরে ভিতরে দিন দিন মরে যাচ্ছি।



এরপর কি ঘটলো বলতে পারবো না। তবে যখন চোখ মেললাম তখন আমি হাসপাতালে। মাথায় এবং পায়ের আঘাতে প্রচণ্ড রকম কাতরাতছিলাম। মাথায় কয়েকটা সেলাই পড়েছে আর পায়ের হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। বন্ধুদের কাছে যা শুনলাম তা রীতিমত ভয়াবহ। আমি নাকি হাঁটতে হাঁটতে একটা সময় রাস্তার মাঝখানে চলে গিয়েছিলাম। বিপরীত থেকে একটা প্রাইভেট কার দ্রুতবেগে আসছিলো। তারা আমাকে বারবার হর্ন দিয়েছিল। যেহেতু গাড়িটি অনেক দূর থেকেই সতর্ক করছিলো তাই ভেবেছিলো আমি এতক্ষণে সরে যাবো। কিন্তু কাছে এসেও যখন দেখল আমি সরছি না তখন অনেক কষ্ট করেও ব্রেক কষেও কাজ হয়নি। আমার পায়ে আঘাত করে আর আমি পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাই। হায়রে দূর দ্বীপবাসিনী। দূর থেকে আর কত আঘাত করবে? আর কত ?

সন্ধ্যার দিকে একটা sms এলো দূর দ্বীপবাসিনীর। ঠিক এইরকম

“সত্যি আমি মনে হয় তোমার বড় ক্ষতি করে ফেললাম। তোমার সামনে আসলে, হয়তো তুমি আমাকে reject করতে কিন্তু আজ তো তোমার এই রকম ক্ষতি হতো না। আমি জীবনেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। দূর দ্বীপবাসিনী তোমার ভালোবাসা থেকে নিজেকে মনে হয় আরও দূরে ঠেলে দিলো। আমাকে মাফ করে দিও। ভালোবাসা যে আমাকে এভাবে কাঁদাবে জানা ছিল না।“

- দূর দ্বীপবাসিনী

আজকের মেসেজটা একটু অন্যরকম মনে হল। প্রথমত, আজকে আমাকে তুমি বলে ডেকেছে। দ্বিতীয়ত, তার ভালোবাসা এতোটা গভীর আজকে আরও ভালো করে জানা হল। তাকে দেখার সুপ্ত বাসনা কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে গেলেও মেসেজ পেয়ে আবার জেগে উঠলো। মেসেজ পাঠালামঃ

“ যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তবে কালকের মধ্যেই আমার সাথে দেখা করবে। দূর দ্বীপবাসিনী আমার এই অনুরোধ রাখবে বলেই বিশ্বাস করি। আমি আর আঘাত পেতে চাই না। ভালবাসার মানুষের কাছে আমি এতোটুকুই চাই। ফিরিয়ে দিলে এই দুর্ঘটনার চেয়েও বেশি আঘাত পাবো”

তড়িঘড়ি করে মেসেজ পাঠিয়ে তার রিপ্লাইয়ের প্রতীক্ষায় রইলাম। সন্ধ্যা রাত সকাল অবধি অপেক্ষা করলাম। কোন উত্তর পেলাম না। এর মধ্যে তার উদ্দেশে আরও কয়েকবার মেসেজ পাঠালাম কিন্তু মেসেজ গেলো না। ভিতরে ভিতরে আরও পুড়ে যাচ্ছি।

গতকাল থেকেই অনেক বন্ধু আমার জন্য অনেক ছুটাছুটি করেছে। বাসায় জানানো হলে বড় ভাইয়া এসেছেন। তিনি আমার এই অবস্থা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। বন্ধুদের আগেই হিন্ট দিয়েছি যে ভাইয়া আসলে যেন দূর দ্বীপবাসিনীর ব্যাপারে কিছু বলা না হয়।

রিয়াজ গতকাল থেকেই আমার সাথে আছে। অনিক, রুদ্র, অনিমা, তৌহিদ দেখতে আসলেও রাতে চলে গেছে। তবে আজ ক্লাসমেটের অনেকেই দেখতে এসেছে। কিন্তু আমি যার জন্য অপেক্ষা করছি তাকে এখন দেখছি না। অনিশ্চয়তায় অস্থির লাগছে।

সন্ধ্যার দিকে আরও কয়েকজন মেয়ে আসলো। অহনা, হৃদি, সুস্মিতা, শায়লা এসেছে ফুলের তোড়া নিয়ে। কষ্ট করে সব ঘটনা খুলে বলতে হল। যখন বলছিলাম ভিতর থেকে লজ্জা পাচ্ছিলাম। একটা বড় ছেলে কিভাবে রাস্তায় আনমনে হাঁটে? আর দূর দ্বীপবাসিনীর ঘটনাটা কিভাবে যেন সবার কাছে ছড়িয়ে গিয়েছিলো। সবাই মিটমিট করে হাসছিল। হয়তো আমার কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ post-mortem করে বের করেছে এবং সবার সাথে শেয়ার করেছে। যখন বলছিলাম সবার চোখের দিকে তাকিয়ে পরখ করে দেখছিলাম কার সহানুভূতি কেমন। হয়তোবা এটাই আমাকে সাহায্য করবে দূর দ্বীপবাসিনীকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু চোখ দেখে বের করা সম্ভব হল না। নাকি আদৌ ও আসেনি? ওর মোবাইল এখনো অফ আছে। গতকালের পাঠানো মেসেজ এখনো যায়নি। মেয়েগুলো সব চলে গেলো। আমি এখনো তাদের দিকে তাকিয়ে দূর দ্বীপবাসিনীকে খুঁজার চেষ্টা করছিলাম।



একটু পর আবার অহনা ফিরে আসলো।

“ রাস্তায় এইভাবে চলাফেরা করবা না। মাথায় আঘাত পাইছো। সাবধানে থেকো। মোবাইল খুব একটা ব্যবহার করবা না। আর রেস্টে থাকবা। খুব দ্রুত ভালো হয়ে উঠো byeeeeeee”

আমিও ভদ্রভাবে বললাম” বিজ্ঞ পরামর্শের জন্য এবং আসার জন্য ধন্যবাদ। তুমিও ভালো থেকো।



না দূর দ্বীপবাসিনী আসেনি। মনটা খুব খারাপ হল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ও আসবে। বাচ্চা ছেলেদের মতো কান্না সামলাতে পারছি না। আশেপাশে বন্ধু তাই খুব একটা কাঁদতেও পারছি না। উদ্ভট পরিস্থিতি। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো। মেসেজ এসেছে।

“এই যে মিস্টার রাস্তায় একটু দেখেশুনে চললেই হয়। তুমি মারা গেলে তো আমাকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে সারাজীবন একা কাটাতে হবে। বুদ্ধি সুদ্ধি কবে হবে তোমার? কাছের মানুষকেও চিনতে পারো না? চোখ দিয়ে তো তন্নতন্ন করে খুঁজলে। কই পেলে? ”

-দূর দ্বীপবাসিনী

মানে কি? তাহলে ও এসেছিল? তার মানে এই কয়েকজনের মধ্যে সেও ছিল? নিজের মাথা নিজেরই নারকেলের মতো ভাঙ্গতে ইচ্ছে করছে। দেরি না করে তখনই ওকে মেসেজ পাঠালাম।

“তুমি এইভাবে কেন দূরে দূরে থাকো? পরিচয়টা দিলে কি হতো? আমিতো জানলাম না তুমি কে? সত্যি আমি হতভাগা। ভালবাসার মানুষকেও চিনতে পারিনা।“

মেসেজটা পাঠানোর পর মনে কষ্ট আরও বেড়ে গেলো আবার সেই সাথে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিলো। কারণ যারা এসেছিলো সেখানে আমার সেই দূর দ্বীপবাসিনীও ছিল। অথচ নিশ্চিত জানলাম না সে কে? উত্তরের অপেক্ষায় ছিলাম।

পাঁচ মিনিট পর একটা এসএমএস এলো। আমার দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিলো এই একটি এসএমএস। আমার সব দুর্ভাবনা আর একটি বছরের কষ্ট নিমিষেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। আমি তাকে পেলাম।

“রাস্তায় এইভাবে চলাফেরা করবা না। মাথায় আঘাত পাইছো। সাবধানে থেকো। মোবাইল খুব একটা ব্যবহার করবা না। আর রেস্টে থাকবা। খুব দ্রুত ভালো হয়ে উঠো। BYE. :P

- ইতি তোমার দূর দ্বীপবাসিনী”

আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। মন চাচ্ছিল দৌড়ে তার সামনে গিয়ে বসে পড়ি। কোমল আদরে হাতটি ধরে বলিঃ



"আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী

তুমি থাকো সিন্ধুপানে ওগো বিদেশিনী"



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২১

আলুমিয়া বলেছেন: গল্প ভাল হইছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.