নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।\" আল কোরআন | সূরা ইমরান | আয়াতঃ ১৩৯

শফিউল আলম চৌধূরী

কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

শফিউল আলম চৌধূরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাটিম ঘোরানোর ছেলে বেলা!

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৩৫

আমাদের বাড়ির সামনে ছোট্টো একটা মাঠ ছিলো। মাঠ ছোট হলে কি হবে, একই মাঠে এক পাশে আমরা খেলতাম স্যাডো ক্রিকেট, অন্য পাড়ার ছেলেরা খেলতো স্যাডো ক্রিকেট। আর এক পাশে এলাকার ছোট মেয়েরা খেলতো গোল্লাছুট কিংবা ডিম কুসুম কিংবা অন্য কিছু।



এলাকায় মিজান নামে একজন ছিলো; সবাই তাকে মিজান নেতা বলে ডাকতো। সব কিছুতেই তার নেতাগিরি; শুধু কাজের সময় খোঁজ থাকতো না। ভোটের সময় সে কোন দলের হয়ে কাজ করবে এটা হিসাব করে শেষ করতে করতেই ভোট পার হয়ে কেউ একজন নির্বাচিত হয়ে যেতো। তারই মেঝ ভাই মিলন, আমার ক্লাসমেট, প্রতি বছরই গোটা ৩/৪ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতো। মোটামুটি এটা তার হেমন্ত থেকে বৃষ্টির আগ পর্যন্ত আয়-ইনকামের পথ। বৃষ্টির সময় ঐ একই মাঠে কখনও কখনও ফুটবলের টুর্নামেন্ট আয়োজন করতো সে।

মাঠের মাঝে ক্রিকেট বল প্রাক্টিসের জন্য একটি কনক্রিটের ক্রিজ তৈরী করেছিলাম আমরা।

হোক সে গ্রীষ্ম, বর্ষন, শরৎ, হেমন্ত, শীত কিংবা বসন্ত; আমাদের মাঠ খালি পড়ে থাকতো না। এমনকি পরীক্ষার সিজনেও ছেলে-মেয়েদের মাঠে যেতে না দিলে কান্নাকাটি পড়ে যেতো।

গ্রীষ্মে প্রায় প্রতিদিনই বিদ্যুৎ যেতো; লোড সেডিং। বিদ্যুৎ যাওয়া মানেই ছেলে মেয়ের আর এক দফা বাইরে বের হওয়া। এই মাঠের দক্ষিন পাশটা বেশ খোলা বলা চলে, মফস্বলে যেমন হয় আরকি। দক্ষিন খোলা, তাই ফুরফুরে বাতাস। বিদ্যুৎ চলে গেলেই যেন সবাই আনন্দ, শুধু ছোটদের নয়, বড়দেরও। আর বিদ্যুৎ চলে আসলেই যত কষ্ট।

যদ্দুর মনে পড়ে, তখন বিটিভি ছাড়া চ্যানেল ছিলো না। বড় একটা এ্যান্টেনা লাগালে ভারতের ডিডি১ চ্যানেল আসতো, তাও ঝির ঝিরে। খুব বেশী স্ক্রীণ টাইম আমরা পেতাম না।

আমাদের পুরা একটা নয়, চোখের সামনে প্রায় দেড়টা জেনারেশন এই মাঠ কেন্দ্রিক গড়ে উঠতে দেখেছি। আমাদের হাসি-দুঃখ-আনন্দ সবই ছিলো এই মাঠ কেন্দ্রিক।

ক্রিকেটের পাশাপাশি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যন্ত আমাদের সকাল বেলার ক্রেজ ছিলো ডান্ডা কুলুপ বা ডাঙ্গুলি খেলা। এর সাথে চলতো লাটিম খেলা। এই সময়টাতে স্কুল বন্ধ। আমাদের আর মাঠের থেকে ঘরে ফেরায় কে?

দুপুরে কৃষি কলেজের পুকুরে এক সাথে গোসল, কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফেরা। তিনটা বাজতেই আবার মাঠে। খুব বিরক্ত লাগতো শীতের সময় দিন ছোট হয় বলে।

বৃষ্টিতে প্রায়ই আমাদের মাঠ তলিয়ে যেতো। সেটা ছিলো আর এক আনন্দের বিষয়। কোন এক অবাক করা কারণে এলাকার প্রায় সব বয়সী ছেলে-ব্যাটা-বুড়ো এবং কিছু ছোট মেয়েরা প্যান্ট ভাজ করে কিছু দূর উঠিয়ে এই পানির ভিতরেই হেটে বেড়াতো। কাউকে কাউকে দেখা যেতো কারও পুকুর ভেসেছে খবরে জাল মারছে মাঠের মধ্যে। একটা মাছ ধরা পড়লেই সবাই হই হুল্লোড় করে দেখতে আসতো। কখনও কখনও পুকুরের মালিককেও নিজের মাছ অন্য ধরেছে দেখে আনন্দ করতে দেখতাম।

এক-দুই-তিন করে বহু বছর পেরিয়ে গেছে। আমাদের বাড়িটাও গত ৬ বছরের মাঠের অন্য পাশে চলে গেছে। ঢাকায় এবং বিদেশে থাকার ফলে মাঠের দিকে চোখ পড়েনি তেমন। এ বছরের শুরুতে দেশে গিয়েছিলাম ছুটিতে। সেই জানুয়ারী..... কিন্তু মাঠে কেউ নেই। ঘাস বড় হয়ে গেছে, এত বড় যে সেই চির চেনা কনক্রিটের ক্রিজও দেখা যায় না আর। মাঠের একপাশ দখল করে নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এলাকার সব ময়লা এখানে ফেলা হয়।

ধীর পায়ে ক্রিজের কাছে গেলাম, ক্রিজের উপরের ময়লা বলে দেয় কেউ আর ক্রিকেট খেলে না এখানে। আশেপাশের মাঠ গুলিতে টুকটাক কিছু খেলা হলেও এখানে কিছু নেই।

যখন সংসার শুরু করেছিলাম, অনেক রঙ্গীন স্বপ্নের মধ্যে একটা ছিলো এই মাঠেই আমার ছেলে মেয়ে দৌড়াবে তাদের গুটি গুটি পায়ে। আমি মাঠের এক পাশে বসে তাদের আনন্দ দেখবো।

মাঠে আর কেউ নামে না। সবার দৃষ্টি এখন মোবাইলে। এই গেম, সেই গেম আর ভিডিও বানাতেই সবাই ব্যস্ত। এক সময় ফটোগ্রাফী করতাম, সেই সুবাদে মাঝে মধ্যে এলাকার ছোট ভাইয়েরা নক করে। জিজ্ঞাসা করে কোন রিং লাইটটা কিনলে টিকটকে ভিডিও বানাতে সুবিধা হবে। ক্যামেরা কিনবে নাকি দামী মোবাইল কিনবে।

দেশ থেকে চলে আসার আগে মাঠের দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজে উঠেছে। ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়েছে। রিক্সায় বসা স্ত্রী আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে। কিছু না বলেও একটা শান্তনার ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র।

--------------------------
ছবিটি আমার তোলা। ২০১৩ সালে, খুব সম্ভবত কুমিল্লা, অথবা বাগেরহাটে। আমার খুব প্রিয় কিছু ছবি আছে; মাঝে মধ্যেই বের করে দেখি সেগুলি। কিন্তু তেমন করে কখনও প্রকাশ করা হয় নি। এই ছবিটি সেই প্রিয় ছবি গুলিরই একটা।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



দেশ থেকে কোথায় চলে গেছেন?

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২১

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: সৌদী আরব আছি...........

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:০৮

আমি সাজিদ বলেছেন: ছবিটি বেশ চমৎকার হয়েছে। ভালো লাগলো ছেলেবেলার কথা। মাঠটি এখন সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার জায়গা হয়েছে শুনে কর্পোরেশনের লোকেদের উপর রাগ হচ্ছে।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২২

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: ছবি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো.......
মাঠের বিষয়ে কিছুই করার নাই। :( কারোই আগ্রহ নাই।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০০

ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিকথা।
মাঠ ভিত্তিক বেড়ে ওঠার যে চল ছিল তা এখন নেই। কত যে মার খেয়েছি, বকা খেয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। মনে আছে, ম্যাট্রিক পরীক্ষার এক মাস আগে আন্তঃস্কুল ক্রিকেট খেলায় আমাদের স্কুল টীম জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান হয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে খেলতে যাবে। আমি সে টীমের অন্যতম সদস্য! বাড়ি থেকে কিছুতেই যেতে দিবে না। অবশেষে আমাদের শিক্ষক মনি স্যারের অনুরোধে বাড়ি থেকে অনুমতি মেলে।

অথচ এখন বাচ্চাদের জোড় করে মাঠে নামাতে হয়!

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৪

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: ফাঁকা মাঠ দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে.............. :(

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



লেখক বলেছেন: সৌদী আরব আছি...........

-ওখান থেকে বেহেশত বেশ কাছে, মনে হয়।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৬

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: তাই কি?

৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে গেলো।
আমি লাটিম হাতে নিতে পারতাম না। তবু দিনের পর দিন চেষ্টা অব্যহত ছিলো।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: আমি লাটিম এবং ডাঙ্গুলী দুটিতেই কাঁচা ছিলাম।

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছোটকালে খেলার মজাই

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৫

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: .......আলাদা.....

৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন: তাই কি?

-আপনার এক পোষ্টে বলেছেন, আপনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৬

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া আর সৌদি আরবে থাকা দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়.....

৮| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমি লাটিম এবং ডাঙ্গুলী দুটিতেই কাঁচা ছিলাম।

ডাঙ্গুলী কখনও খেলি নাই।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৪

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: বহুৎ কিছু মিস করছেন....

৯| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৫

মেহবুবা বলেছেন: মধুর শৈশব।
এই সময়ের শিশু কিশোর যারা তারা পরবর্তীতে কি লিখবে ?
কৃষি কলেজ কোথায়?

২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫৪

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: তারা হয়তো পাবজি নিয়ে লিখবে!!!!
খুলনা....

১০| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি লাটিম খেলেছি, মার্বেল খেলেছি, ডাংগুলি খেলেছি। আমার বড় ভাই লাটিম মাটিতে পড়ার আগেই হাতের উপর নিতে পারতো। ফুটবল অনেকক্ষণ পর্যন্ত আঙ্গুলের উপর ঘুরাতে পারতো। সে সব খেলাতে ভালো ছিল।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৩

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: বেশ.....
আমি আঙুলের উপর ফুটবল ঘুরাতে পারতাম। কিন্তু ক্রিকেট বাদে কোন খেলাতেই কোনদিনও খুব একটা ভালো ছিলাম না...

১১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৪

জুন বলেছেন: আমরা ছোট বেলায় লাটিম, মার্বেল, ঘুড়ি ওড়ানো, বৌছি, কুমির কুমির, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ক্যারম লুডু এইসব খেলেছি প্রচুর। তখন মাঠ ছিল সবার বাসার সামনেই আর এইসব খেলতে খোলা জায়গা দরকার । ৫ পাউন্ডের এক টিন ভরা রঙ বেরংগের মার্বেল ছিল সব আমার খেলায় জেতা।
এখন বাচ্চারা প্লে স্টেশনে গেমস খেলে। এই আমার ছেলেই তো। ঠেলেও বের করতে পারি না। আর বের হলেই বা যাবে কোথায়? রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা ছাড়া।
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: ঘুড়ির কথা পোস্টে লিখতেই ভুলে গেছি.... লেখা ভাল লাগল জেনে আমারও ভালো লাগলো....

১২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৭

মেহবুবা বলেছেন: খুলনায় স্কুলজীবনে ছিলাম কিছুদিন বেশ আগে, তখন এন্টেনা Adjust এর বিষয় ছিল
কৃষি কলেজ খুলনার কোথায় ? এখনও কি আছে ?

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৮

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: দৌলতপুরের নাম শুনেছেন? এখনও আছে; খুব সম্ভবত দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাবে; বা হয়ে গেছে অলরেডি।

১৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১

মেহবুবা বলেছেন: দৌলতপুরের নাম জানি, এক সময়ে ওর উপর দিয়ে খুলনা যেতে হত।
কৃষি কলেজ আছে সেখানে জানতাম না।
জীবনে প্রথম শেরে বাংলা কৃষি কলেজের নাম শুনেছিলাম যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৩

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত.....

১৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০০

স্থিতধী বলেছেন: নিজে যে মাঠে খেলেছে, সে মাঠে সন্তানেরও খেলার সুযোগ হবে, এমন ভাগ্য বাংলাদেশীদের এখন খুব ই কম । স্মৃতি চারণের এ লেখাটা খুব ভালো লাগলো ।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫৩

শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.