নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোলা জীবন, খোলা বই, খোলা পাতা

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

শাফ্‌ক্বাত

একজন মা এই ব্লগের কোন ছবি, লেখা বা মন্তব্য (সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে) লেখকের পূর্ব-অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবেনা। ধন্যবাদ।

শাফ্‌ক্বাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের ইস্কুল

০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:০৪

প্রথমবার যা লিখেছি

এবছর নভেম্বরে জাইবা তিনে পা দেবে। কিন্তু তখন তো ওকে স্কুলে দেওয়া যাবেনা। স্কুলগুলোতে ভর্তি হয় জুলাইয়ে, তখন আবার ওর বয়স তিনের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। আমি এবার স্কুল থেকে ফর্ম নিতে গেলাম, আমার মেয়েকে তিনের আগেই স্কুলে দিতে চাই। এবছরেই। কিন্তু স্কুল থেকে আমাকে ফর্ম দিলোনা। সামনের বছরে প্লে-গ্রুপ, তারপরে নার্সারি, তারপরে কেজি-ওয়ান-টু, এরপরে আসে ক্লাস-ওয়ান।



তারমানে ক্লাস ওয়ান শুরু করবে তারা ৭ বছর বয়সে। জাইবার ক্ষেত্রে সেটা ৭ বছর আট মাস।



দেরী হয়ে যাচ্ছেনা? আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম চার বছরে; সেটাই ছিল কেজিওয়ানে। ৬বছরে গিয়ে উঠলাম ক্লাস ওয়ানে। বয়স হিসেবে ইংলিশ মিডিয়ামে আমার মেয়েরা এক বছর পিছিয়ে যাচ্ছে মনে হয়। অথচ স্কুলে ভর্তি হচ্ছে তারা সেইইই তিন বছর বয়সে। তবে মেইন্সট্রিমে আসতে চারটা বছর পার করার মানে কী? আমি যদি মেয়েকে দেরীতে ভর্তি করাতে চাই, নার্সারি বা কেজিতে, সেই উপায় নেই। কারণ সিটগুলো প্লেগ্রুপে থাকতেই ভর্তি হয়ে যায়। স্কুলে যখন জিজ্ঞেস করি মাত্র তিনে বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে কী শিখবে? প্রেশার পড়েনা ওদের উপর? তখন স্কুল থেকে বলা হয় প্লেগ্রুপে বাচ্চারা খেলে, ছবি আঁকে, ছড়া শেখে জড়তা কাটানোর জন্য। তাই যদি হয় তবে মাঝে মাঝে তারা নার্সারিতে একজন দুইজন বাচ্চাকে রীতিমত পড়া-টড়া ধরে ইন্টারভিউ নিয়ে ঢোকায়, দেখলাম!! যেন সেই বাচ্চা প্লেগ্রুপে না-পড়ে অনেক পিছিয়ে আছে! আর এমন যদি হয় প্লেগ্রুপের সময়টা আমার বাচ্চা অন্য কোনও স্কুলে যায়নি, ঘরেই বসে ছিল তবে তো তার ফর্মই আমলে নেওয়া হবেনা। ইন্টারভিউতে ডাকা দূরে থাক।



ক্লাস টু পর্যন্ত আমি পড়েছিলাম পাড়ার এক কিন্ডারগার্টেনে। মডেল-কেজি স্কুল ছিল স্কুলটার নাম। বেড়ার ক্লাসরুম, টিনের চালা দেওয়া সেই স্কুলে খুব মায়া-মায়া একটা ভাব ছিল। টিচারদের ‘আপা’ বলে ডাকতাম। কিছু হিন্দু টিচার ছিলেন। শুনতাম তাঁদের অন্য টিচাররা ডাকছেন নীলিমাদি/শচিদি এভাবে। আমরা ওনাদের ডাকা শুরু করলাম নীলিমাদি-আপা, শচিদি-আপা এইভাবে। স্কুলের সামনে বড় একটা মাঠ ছিল। অনেক পরে একদিন সেই স্কুলে ঘুরতে গিয়ে দেখি বড় মাঠটা ছোট হয়ে গিয়েছে। অথচ মাঠের আকার আয়তন কিন্তু আগের মতই আছে। ছোটবেলার চোখে যে মাঠকে বিশাল মনে হতো, বড়বেলার চোখে তার মাপ কমে গিয়েছে। সেই স্কুলে আমার ১৭ বছরের বড় ভাই থেকে শুরু করে আমার আড়াই বছরের ছোট ভাই পর্যন্ত একনাগাড়ে পড়েছিলাম। ক্লাস ফোরের পরে সেই স্কুলের ছাত্ররা বেশিরভাগ ভর্তি হতো সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে আর মেয়েরা বেশিরভাগ যেত খাস্তগীরে।



সেই স্কুলে শুরু করেও কিন্তু আমার বা আমার ভাইবোনের প্রাথমিক শিক্ষায় কোনওভাবেই অন্যকোনও নামী স্কুলের চেয়ে কমতি ছিলনা। তার প্রমাণ মিলেছে যখন এই আমরাই অন্য স্কুলে গিয়ে ভাল ছাত্রীদের মধ্যে নিজেদের নাম লেখাতে পেরেছি। আমার সেসময়কার বান্ধবীরা পরে দেখেছি খাস্তগীর থেকে স্ট্যান্ডও করেছে।



আবার আজকালকার স্কুলগুলোর সাথে তুলনা চলে আসে। খুব কি কেউকেটা হয়ে যাচ্ছে আমাদের বাচ্চারা তিন বছর বয়স থেকে এমন নামীদামী স্কুলে পড়ে? তবে হ্যাঁ মেয়েদের আমার বাসায় পড়াতে হয়না। যা পড়ার স্কুলেই পড়ে আসে, বাসায় নিজে নিজেই হোমওয়ার্ক করে। তবুও যেন মনে হয় বিশাল কোনও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। বেড়ার ক্লাসরুমে বসে টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শুনতাম। মাঝে মাঝে ছাদের ফুটো দিয়ে টপটপ করে একদুইফোঁটা পানি ক্লাসে পড়তো। স্কুলে গিয়ে দুটো ছড়া বলতে শিখেছিলাম অন্যদের কাছ থেকে।

‘আমাদের ইস্কুল দুই/তিন তলা

টিফিনেতে খেতে দেয় পাউরুটি কলা।

আমাদের মাস্টার আইএবিএ পাশ।

লেখাপড়া না করলে মারে ঠুশঠাশ!’

মনে হতো ঠুশঠাশ মার খাওয়াটা কোনও ব্যাপারই না। সত্যি আসলেই কোনও ব্যাপারই ছিলনা টিচারদের হাতে মার খাওয়াটা। স্কুল ছুটি হলে হৈহৈ করে সবাই একসাথে বলে উঠতাম

‘ছু—টি !!

গরম গরম রু—টি!

এককাপ চা

সবাই মিলে খা—

খেয়ে চলে যা—!!’

এই ছড়া বলতে পারার মধ্যে যে দিলখোলা আনন্দ সেটা গল্প করে আমার মেয়েদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তার চোখে স্বপ্ন এঁকে দেওয়া ছাড়া এর বেশি আমি আর কিছুই করতে পারিনা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:২১

অর্ফিয়াস বলেছেন: স্মৃতিজাগানিয়া পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ। আপনার লেখাটি পড়ে আমার খুব মনে পড়ছে আমার ফেলে আসা স্কুল জীবনের কথা।

ভালো থাকবেন।

০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:২২

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: ধন্যবাদ অর্ফিয়াস।
ছেলেবেলা নিয়ে আরো লিখার ইচ্ছে আছে। দিন কত অদ্ভূতভাবে বদলে যায়!!

২| ০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:২৩

আতিকুল হক বলেছেন: আমার মায়ের সাহস ছিল। তাই আমরা তিন ভাই-বোন সবার শুরু একবারে ক্লাস ওয়ানে। ভাই-বোন বছর বছর ফার্স্ট হতো, আমি স্রেফ পাশ করে যেতাম। ওহ না, ক্লাস ওয়ানে ১ম আর ২য় সাময়িক দুটোতেই এক সাবজেক্টে ফেল করেছিলাম। একটুও খারাপ লাগেনি খারাপ রেজাল্টে। খেলাধুলায় এক্কেবারে বেকায়দা রকম ছিলাম। তবে তাই বলে খেলা আর দুরন্ত ছুটাছুটি কম করিনি। বাবা-মা বিকেলে পড়া একদম পছন্দ করতেন না। সেই সুখের দিন কি আর এখনকার বাচ্চাদের আছে!

ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালে শুরুতেই কিছু লং টার্ম গোল ভেবে নেয়া দরকার। যদি বুয়েট বা সরকারি মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে বাংলা মিডিয়ামে পড়াই ভালো।

০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:২৯

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: বলে লাভ নেই আতিক। আমার মেয়েরা বাংলা মিডিয়ামে চান্স পাবেনা। স্কুল গুলোতে চান্স পেতে হলে যে পরীক্ষা দিতে হয় তা বিসিএস এর চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। এত ছোট বয়সে ওদের কেন এত ভারী ভারী ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে বলো তো?

৩| ০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:২৬

নুরুন নেসা বেগম বলেছেন: পুরানো সেই দিনের কথা...। অনেক ধন্যবাদ।

০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:৩০

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: পড়ার জন্যে আপনাকেও ধন্যবাদ নুরুন্নেসা আপা।

৪| ০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:৩৩

অর্ফিয়াস বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ অর্ফিয়াস।
ছেলেবেলা নিয়ে আরো লিখার ইচ্ছে আছে। দিন কত অদ্ভূতভাবে বদলে যায়!!

আসলেই। নাকি কিছুই বদলায় না, আমরাই বদলে যাই কে জানে।

০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:৪৩

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: ভাল বলেছেন। আমরাই বদলাই। দিনের আর কই করার আছে?

৫| ০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:৪৩

আতিকুল হক বলেছেন: গত বিশ বছরে ক'টা ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুল হয়েছে বলতে পারবেন? সরকার কিছু করবে না, আর ব্যবসা হিসেবে বাংলার চেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামই ভালো। কঠিন ভর্তি পরীক্ষা দরকার এই ভিড় সামলাতে, তদবির আর ডোনেশনকে একোমডেট করতে। বাচ্চাদের ভবিষ্যত গোল্লায় গেলে কার কী। আমি এর কোন সমাধান দেখি না।

০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ৯:৪৪

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: :(

৬| ০৩ রা মে, ২০১০ সকাল ১১:০৭

ভাঙ্গা পেন্সিল বলেছেন: একটু দেরি করে শুরু হলে ক্ষতি কি? লেখাপড়া যত্তো দেরি করে আসে ততোই ভাল।

০৯ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৫

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: তা তো বটেই। কিন্তু এরা স্কুলে ভর্তি করাবে ৩ বছরে অথচ প্রথম দুইবছর কেবল খেলাধুলা। তাহলে সে সময়টা বাসায় খেললেই তো পারে বাচ্চারা? বেতনও তো অনেক!

৭| ০৩ রা মে, ২০১০ দুপুর ১২:৫৩

মুহসিন বলেছেন: ছোটবেলার স্মৃতি সত্যিই মধুর। তবে দিন যত যাচ্ছে পড়াশোনায় যেন কৃত্রিমতার ছাপ বেড়ে যাচ্ছে, তাই মনে হয়না?

আমার বাচ্চারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা ইন্ডিয়ার গল্প। বইগুলো সেখানকার কিনা!

দেশের প্রতি ভালোবাসা কি তাতে বাড়বে? ধর্মশিক্ষাও তথৈবচ। ইতিহাসে ওরা রামায়ণ মহাভারত বা গ্রীক উপাখ্যান পড়ে, আমাদের মুসলমানদের গৌরবের ইতিহাস সেখানে নেই।

মানুষ সৃষ্টি বানর থেকে (আদম বা হাওয়া থেকে নয়)। এসবই পড়ায়।

অংককে কঠিন করে ফেলেছে। আমি ছোটবেলায় বাংলা মিডিয়ামে যত সহজে অংকের কৌশল রপ্ত করেছি, এখনো তাই অংককে যেখানে খুবই ভালবাসি; কিন্তু আমার মেয়েরা সে তুলনায় অংককে অনেক ভয় পায়। আসলে কিভাবে সহজ নিয়মে অংক করা যায়, তাই অনুপস্থিত ম্যাথ বইগুলোতে।

জিওগ্রাফি,-- আগাও নেই, গোড়াও নেই। অদ্ভুত তুলনা দিয়ে ভরা।

ভাবছি একটা সমালোচনামূলক বই লেখা যায় কিনা, সবাই মিলে!!

০৯ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: মন্দ হয়না। কী বলবো বলেন। সমালোচনা করেও তো মেয়েদের দিলাম সেই স্কুলে। দেশী স্কুলে চান্স পেতেই তো খবর হয়ে যায়!

৮| ০৩ রা মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৮

বড় বিলাই বলেছেন: এরকম তো চলতেই থাকবে। আমরা যেভাবে পড়াশুনা করেছি, আমার বাবা-মায়েরা তো তেমন করে পড়েন নি, তবুও তো তারা সুশিক্ষিত হয়েছেন। সময় বদলাবেই, প্রতিযোগীতাও বাড়বেই। এর মধ্যেই মা-কে দায়িত্ব নিতে হবে যেন সন্তান সুশিক্ষা পায়।

০৯ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.