নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহানা ঢাকা

শাহানা ঢাকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর বীরাঙ্গনা

২৬ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

প্রফেসর ইকবাল সাহেবের কাজের েময়ে রাশিদা েকান কারনে বাড়ির েমইন দরজা খুলে বাইরে যায়। তখন সন্ধ্যা, চারদিকে অন্ধকার েকবল বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। এমন সময় সুযোগ েপয়ে সাহেদ নামের একটা েলাক সবার অজান্তে বাড়ির েভতরে প্রবেশ করে। েস সিঁড়ি েবয়ে উপরে উ?ে ইকবাল সাহেবের স্ত্রী রুবিনা যে ঘরে শুয়ে ছিল েসাজা েসখানে চলে যায়। ঘরের েভতরের বাতি বন্ধ কিন্তু বাইরের আলোতে ঘরটি েমাটামুটি আলোকিত হয়েছে। আর েসই আলোতেই সাহেদ রুবিনার ঘুমন্ত মায়া ভরা মুখখানি েদখছে। ছলছল েচাখে েস রুবিনার পায়ের কাছে েফ্লারে েবশ কিছুক্ষন বসে থাকে।
একসময় েস রুবিনা পায়ে হাত েদবে কি েদবেনা তাই ভাবছে। যদি ঘুম েভঙ্গে যায়, েস কথা েভবে তার পায়ে আর হাত রাখে না। বরং পায়ের কাছেই নিজের হাত েরখে মাথা নুইয়ে নিরবে কান্না করে। আর ঐ দিকে রাশিদা কাজ েশষে েভতরে এসে েমইন দরজা বন্ধ করে দেয়।
হ?াৎ রুবিনা নড়ে উ?লে তার পা েযয়ে র্স্পশ্ব করে সাহেদের হাত। পায়ের কাছে কিছু একটা উপলব্ধি করে তার ঘুম েভঙ্গে যায় আর সাহেদ মুখ তুলে রুবিনাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে েদখে। রুবিনা সাহেদকে ভাল করে লক্ষ করলে, ভয়ে তার েচাখ বড় বড় হতে থাকে। সাহেদ বুঝতে েপরে তাকে সামলে েনয়ার জন্য পায়ের কাছ হতে উ?ে হাত বাড়িয়ে কাছে আসতে চাইলে, রুবিনার েচাখে েভসে উ?ে ৭১ সালে ঘটে যাওয়া েসই ঘটনা। েস েদখছে এক হানাদার বাহিনী তার দিকে এগিয়ে আসছে। তাই েস ভয়ে চিৎকার করে ও?ে এবং নিজেকে বাঁচানোর জন্য হাতের কাছে যা পায় তাই ছুরে মারে। সাহেদ বার বার মা বলে শান্ত করার েচষ্টা করে। রুবিনা খাট েথকে েনমে যায়, তার চিৎকার শুনে প্রফেসর ইকবাল ও তার েময়ে ইরিন ছুটে আসে। দরজা খুলতেই ইকবাল সাহেদকে েদখতে পায় ইরিন কাছে এসে মাকে ধরতে চাইলে েস ধাক্কা েমরে তাকে সরিয়ে েদয় এবং হাতের কাছে রাখা ভাড়ি বস্তু ছুরে মারলে তা এসে ইরিনের কপালে লাগে। ব্যাথা েপয়ে ইরিন বসে পরলে ইকবাল দ্রুত এসে েময়েকে ধরে।
সাহেদ এ অবস্থা েদখে কষ্ট েপয়ে ঘর হতে েবরিয়ে েযতে নিলে ইরিনের েময়ে এশা চলে আসে। এশা মায়ের কাছে ইকবালকে েদখতে েপয়ে ছুটে চলে যায় রুবিনার কাছে। রুবিনা সবসময় এশাকে েদখলে শান্ত হয়ে যায়। েস রুবিনাকে জড়িয়ে ধরে। ইরিন মায়ের অবস্থায় কষ্ট েপয়ে েদŠড়ে তার ঘরে চলে যায়। ইকবাল রুবিনাকে শান্ত েদখে চলে যায় মেয়ের কাছে।
সাহেদকে সিঁড়ি েবয়ে নিচে নামতে েদখে রাশিদা ভাবে, “ েস কি করে েভতরে এলো ? এই েলাকটি বাড়িতে এলে চাচী আম্মার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়!”
সাহেদ নিচে েনমে এসে দরজা খুলতেই েদখে একটা েময়ে ও একটা েছলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটি েবল বাজানোর উদ্দেশ্যে হাত েদবার আগেই সাহেদ এসে দরজা খুলে। েছলেটির নাম জসিম আর েময়েটির নাম আরিফা তারা দুজনই ইকবালের এক্স স্টুডেন্ট। তারা সাহেদকে কিছু বলতে চাইলে, েস তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সাহেদকে এভাবে েযতে েদখে তারা কিছুই বুঝতে পারে না একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে। রাশিদা দরজা বন্ধ করতে এসে তাদের েদখে বলে,
“আপনারা, কাকে চান? ”
জসিম বলে, “জ্বি আমরা প্রফেসর ইকবাল স্যারের সাথে েদখা করতে চাচ্ছি। স্যার কি আছেন?”
রাশিদা মাথা েনরে বলে, “ জ্বি আছেন, আপনারা েভতরে এসে বসেন আমি খবর দিচ্ছি।”
আরিফা বলে, “ জ্বি ধন্যবাদ আপনাকে।” তারা েভতরে েযয়ে বসে আর রাশিদা উপরে উ?ে যায়।
ইকবাল তার েময়ের কপালে ব্যান্ডেজ করে েচাখের পানি মুছে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিয়ে বলে, “সব?িক হয়ে যাবে, েভবোনা।”
ইরিন েবদনা ভরা কন্?ে বলে,“ আর কবে ?িক হবে বাবা- কবে?” এমন সময় রাশিদা এসে জানায় “চাচাজান, একটা েছলে ও েময়ে এসেছে। তারা আপনার সাথে েদখা করতে চায়।”
ইকবাল বলে,“এই সময়ে - েযয়ে বলে দাও আজ আমি কারও সাথে েদখা করতে পারবোনা।”
কথাশুনে রাশিদা চলে েযতে নিলে ইরিন তাকে থামিয়ে বলে, “দাড়াও রাশিদা, তাদের বসতে বল বাবা আসছে।”
রাশিদা বলে, “ জ্বি আপা।“সে চলে েগলে ইকবাল বলে, “ইরিন, ওদের বসতে বললে েকন?
“হয়তো জরুরি কিছু হবে, নইলে এই সময় েকউকি আসে। তুমি যাও বাবা, আমি ?িক আছি।” েময়ের কথা শুনে ইকবাল তার মাথায় হাত বুলিয়ে ও?ে চলে েযতে নিলে এশা ঘরে প্রবেশ করে। ইকবাল তার দিকে তাকালে েস হাসি মাখা মুখে েচাখের ইশারায় সব ?িক আছে জানায়। ইকবাল এশার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। এশা মায়ের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,“তুমি ?িক আছ মা?” ইরিন শুধু “হু” শব্দ করে।”
রাশিদা নিচে েযয়ে বলে, “ আপনারা অপেক্ষা করেন চাচাজান আসছে।”
ইকবাল নিচে এলে তারা দুজনে দাড়িয়ে সালাম েদয়। ইকবাল সালামের উত্তর নিয়ে বলে, “তোমরা এ সমেয় হ?াৎ কি মনে করে?” জসিম বলে, “ সরি স্যার এই সময় আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। ইকবাল বলে, “না ?িক আছে, বস েতামরা। ” দুজনেই ধন্যবাদ জানিয়ে বসে যায়। ইকবাল আবার বলে, “হ্যা, বল কি বলবে?”
আরিফা একটা চি?ি েবর করে ইকবালকে দিলে েস চি?ি হাতে নিয়ে পরে েদখে। েসখানে েলখা বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা পদে ভূষিত করার উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে তাই আগামীকাল সকাল ১১ ঘটিকার সময় সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। চি?ি পড়ার পর ইকবাল বলে,“ যুদ্ধের েততাল্লিশ বছর পর অবশেষে বীরাঙ্গনা নারীরা পাবে মুক্তিযোদ্ধার উপাধি।”
আরিফা বলে, “আপনিওতো তাই েচয়েছিলেন স্যার।”
ইকবাল বলে “ হ্যা - যদিও েদরি হয়েছে, যাক েস কথা কি খাবে েতামরা চা না কফি?”
জসিম বলে, “ সরি স্যার আজ নয় অন্য এক সময় এসে অবশ্যই খাব। আজ অনেক কাজ বাকি আছে।”
ইকবাল বলে,“তাই বলে এভাবে চলে যাবে কিছু না েখয়ে, তা কিকরে হয়। সারাদিন এত পরিশ্রম করেছে - েতামরা বস আমি আসছি।” আরিফা বলে, “ স্যার, আপনার এখানে এসে আমরা কখনো না েখয়ে যাইনি কিন্তু স্যার আজ সত্যি অনেক কাজ বাকি পরে আছে যা আজ রাতের মধ্যে সারতে হবে। তাই দয়া করে আপনি আর কষ্ট করবেন না কথা দিচ্ছি অন্য একদিন এসে কিন্তু আজ নয়।”
জসিম বলে, “আরিফা ?িক বলেছে স্যার। আজ আমাদের যাবার অনুমতি দিন।” তাদের কথা শুনে ইকবাল মাথা েনরে সম্মতি জানায়, “ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার আজ তাহলে আসি কাল েদখা হবে।” বলে তারা চলে যায় আর ইকবাল আনমনা হয়ে চি?ি হাতে করে উপরে উ?ে যায়।
ইকবাল হ?াৎ নিজের মধ্যে েকমন েযন অস্থিরতা অনুভব করছে তাই েস উপরে উ?ে েসাজা চলে যায় তার পড়ার ঘরে। েভতরে গিয়ে হাতের চি?িখানা পড়ার েটবিলের উপরে রাখে তারপর চলে যায় বুকসেল্ফের কাছে। েসখানে েস বাছাই করছে েকান বইটি আজ পড়বে কিন্তু যখনই কোন বইয়ে হাত রাখে তখনই তার েচাখে হ?াৎ েভসে আসে ৭১ ছবি। েস একে একে কয়েকটি বই হাতে েনয় আর েরখে দেয় অবশেষে একটি বই বাছাই করে েস েটবিলে বসে পড়ার প্রস্তুতি েনয়। কিন্তু বই এর পাতা খুলতেই আর পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না কারন েচাখের সামনে েকবলই দৃশ্যমান হচ্ছে যুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য গুলো। তাই েস বই বন্ধ করে চশমা খুলে েটবিলের উপর েরখে দিয়ে েচয়ারে েহলান দিয়ে েচাখ বন্ধ করে রাখে। েস পুনরায় আর একবার অতীতে চলে যায়।
সাল ১৯৭১ - একদিকে রাজাকার বাহিনীর সহযোগীতায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আক্রমন আবার অন্য দিকে শহর ও গ্রামের অসহায় নারীদের েজাড় পূর্বক ঘর হতে েবর করে েটনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজের েভাগের সামগ্রী হিসাবে। কখনো কারো চুলের মু?ি ধরে, কখনো হাতে ধরে েটনে আবার কাধে ও েকালে উ?িয়ে। েকউ বাধা দিতে আসলে তাকে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী ও রাজাকারারের দলগুলো।
যখনই শুনে েকান বাড়ি হতে েকউ মুক্তিবাহিনীতে েযাগ দিয়েছে তখনই তার পুরো পরিবারকে হত্যা করে নারীদের উ?িয়ে নিয়ে চলে যায়।
এক সন্ধ্যায় জাহিদ নামের এক মুক্তিযোদ্ধা লুকিয়ে চলে আসে রুবিনা েয বাড়িতে আছে সেখানে। েস খুব সাবধানে আসে পাশে েদখে ঘরের সামনে এসে ধিরে ধিরে দরজা নক করে। দরজার শব্দ েপয়ে ঘরের েভতরে থাকা রুবিনা ভয় েপয়ে যায়। তখন ঘরে ছিল রুবিনা তার েদবর আসিফ ও একবছরের েময়ে ইরিন। জাহিদ খুব আস্তে বলে উ?ে, “ ভাবী আমি জাহিদ বলছি, দরজা খুলুন।“ জাহিদের কন্?স্বর শুনতে েপয়ে রুবিনা দরজা খুলে দিলে জাহিদ দ্রুত ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে েদয়।
রুবিনা বলে,“জাহিদ ভাই আপনি- ইকবাল েকাথায়?”
জাহিদ বলে,“ হ্যা ভাবী আসতে হয়েছে, ইবাল ভাই পা?িয়েছে। ইকবাল ভাই ভাল আছে েস খুব শিঘ্রই আপনাদের পাশের গ্রামে ক্যাম্পে যাবে। আপনারা এই খানে আর সুরক্ষিত নন তাই আপনাদের এক্ষুনি এখান হতে গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হতে হবে, দ্রুত তৈরি হয়ে নিন। রাজাকার েয েকান সময় হানাদার বাহিনীদের নিয়ে এখানে চলে আসতে পারে তাই আর েদরি করা ?িক হবে না। “ জাহিদের কথা শুনে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস গুছিয়ে দ্রুত েবরিয়ে পরে তারা। একদিকে তারাও েবরিয়ে যায় আর অন্য দিকে রাজাকার চলে আসে হানাদার বাহিনীকে সাথে করে কিন্তু এসে তারা আর কাউকে খুজে পায় না।
জাহিদ খুব সাবধানে বহু কষ্টে তাদেরকে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে নিয়ে েযতে থাকে। একরাত আর একদিন তারা কখনো পায়ে েহটে কখনো গাড়িতে করে শহর পার হয়ে এক গ্রামের বাজারের কাছে এসে েপŠছায়। সবাই খুব ক্লান্ত সাথে খাবার না থাকায় জাহিদ তাদের এক নিরাপদ জায়গায় েরখে খাবার েকনার উদ্দেশ্যে বাজারের দিকে রওনা হয়। এদিক েসদিক তাকিয়ে খুব সর্তক হয়ে একটা েদাকান হতে কিছু খাবার ও পানি কিনে নিয়ে দ্রুত চলে আসে। েদরি না করে ঝটপট খাবার েসড়ে েনয় তারা, রুবিনা েময়েকে পানি পান করায় খাবার েশষে জাহিদ পানি মুখে নিতেই হ?াৎ গুলির শব্দ শুনতে পায়। েস দ্রুত উ?ে েপছন ফিরে উকি েমরে েদখে হানাদার বাহিনীরা বাজারে আক্রমন করেছে। েলাকজন জীবন বাচানোর জন্য এদিক েসদিক ছুটাছুটি করছে। জাহিদ দ্রুত এসে ইরিনকে েকালে নিয়ে বলে, “ এক্ষুনি এখান হতে েযতে হবে। ভাবী-আসিফ যদি েকান কারনে েকউ কাউকে খুজে না পাই তাহলে অপেক্ষা না করে নিরাপদে বাড়ি দিকে রওনা হব ?িক আছে।” তার কথা শুনে তারা মাথা েনরে “হ্যা” বলে।
ভিড়ে পালানোর সময় কখনযে তারা আলাদা হয়ে যায় তা লক্ষ করেনি। এক পাশে রুবিনা থাকে তার েদবরকে নিয়ে আর অন্য পাশে জাহিদ ইরিনকে েকালে নিয়ে। একসময় তারা েকউ কাউকে খুজে পায় না। েময়েকে না েদখতে েপয়ে রুবিনা অস্থির হয়ে েছাটাছুটি করে, েযখানেই যায় েকবল লাশ আর লাশ েদখতে পায়। হ?াৎ আসিফ এসে তাকে েপছন হতে েটনে মুখ েচপে ধরে লুকিয়ে েফলে কারন আর একটু হলেই পাক হানাদারদের েচাখে পরে েযত।
অবস্থা েবগতিক জাহিদ রুবিনা ও আসিফকে খুজে না েপয়ে ইরিনকে বাঁচানোর জন্য তাদের অপেক্ষা না করে েসখান হতে সুযোগ বুঝে চলে যায়।
হানাদার বাহিনী চলে েগলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে রুবিনা ধীরে ধীরে বাইরে আসে। তারা দুজনই জাহিদ ও ইরিনকে খুজে। েকাথাও তাদের পায় না। রুবিনা কান্নায় েভঙ্গে পরলে আসিফ বলে, “ ভাবী আমার মনে হয় জাহিদ ভাই ইরিনকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে েগছে। জাহিদ ভাইতো বলেছিল েকউ কাউকে খুজে না েপলে অপেক্ষা না করার জন্য। েকঁদনা, েদখে নিও জাহিদ ভাই ?িক ইরিনকে নিরাপদে বাড়ি েপŠছে েদবে। এখানের এক মূহূর্ত থাকা নিরাপদ নয়, চল।” আসিফের কথা শুনে কান্নাভরা েচাখে েসখান হতে চলে যায়।
দলে দলে মানুষ গুলো জীবন বাচানোর জন্য গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। একটা গ্রামের পাশ দিয়ে েহটে যাবার সময় হ?াৎ রুবিনা এক নবজাত বাচ্চার কান্না শুনতে পায়। েস এদিক েসদিক তাকিয়ে একটু আগে বাড়তেই েদখতে পায় রাস্তার পাশে শিশু জন্মদিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তার লাশ মাটিতে পরে আছে মাথার সামনে অসহায়ের মত বসে েচাখে পানি েফলছে তার স্বামী আর নবজাত বাচ্চাটিকে েকালে নিয়ে দাদী আর্তনাদ করে সৃষ্টি কর্তাকে বলছে, “হায় আল্লাহ অহন আমি কি করুম। এতটুকু দুধের বাচ্চারে তার মারে দুধও নসিবে হইতে দিলা না। অহন আমি কই পামু ওর খাওন। এইডা তুমি কি করলা আল্লাহ, অহন আমি েকমনে শান্ত করাই তুমি কইয়্যা দাও।”
রুবিনা কাছে এসে বাচ্চাটিকে েকালে তুলে নিয়ে আড়ালে গিয়ে নিজের বুকের দুধ পান করিয়ে কান্না থামায় এবং পূনরায় বাচ্চার দাদির হাতে তুলে েদয়। বাচ্চার দাদি বাচ্চাকে েকালে নিয়ে রুবিনার মাথায় হাত বুলিয়ে েদায়া করে আর সৃষ্টি কর্তাকে বলে,“তোমার লিলা বুঝা বড়ই ক?িন। “তারপর পূনরায় রওনা হয়, েলাকটি তার স্ত্রীর মৃতদেহ কোলে নিয়ে আর বাচ্চার দাদি বাচ্চাকে নিয়ে। এই সবকিছুর পরও বাকী েবঁচে থাকা জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই চলছে সকলের মধ্যে।
রুবিনা আর আসিফ প্রায় তাদের গ্রামের কাছাকাছি চলে আসে। েছাট্ট একটা নদী পার হলেই তাদের গ্রাম। আসিফ হ?াৎ নদীর অপর প্রান্তে েবশ কিছু দূরে জাহিদকে েদখতে েপয়ে রুবিনাকে বলে উ?ে, “জাহিদ ভই - ভাবী ঐ েদখ জাহিদ ভাই, তার েকালে ইরিন। “ আসিফের কথা শুনে রুবিনা ভাল করে েদখতে েচষ্টা করে। এক সময় েময়েকে েস চিন্তে পারে। েস সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করে।,“আমি বলে ছিলামনা েতামার, জাহিদ ভাই ?িক ইরিনকে নিরাপদে েপŠছে েদবে। বাস আর কিছুটা পথ, আমরাও খুব শিঘ্রই বাড়ি েপŠছে যাব। “ তারা েনŠকার জন্য অপেক্ষা করে এমন সময় আসিফ েপছনে তাকাতেই কয়েকজন হানাদারকে েদখতে পায় তাই েস খুব দ্রুত ভাবীকে নিয়ে েপছনে এক জঙ্গলের পাশ্বে লুকায়। পাশ্বেই থাকে একটা বড় গর্ত। হানাদার বাহিনীকে েদখে নিজেদের আরো লুকাতে চাইলে হ?াৎ আসিফ পা ফসকে গর্তের েভতরে পরে যায়। রুবিনা আসিফের নাম ধরে ডাকতে চাইলে, পরে যাবার অবস্থায় তাকে ইশরায় চুপ থাকতে ও লুকাতে বলে। রুবিনা নিজের মুখ েচপে ধরে েকান মতে লুকিয়ে থাকে। হানাদার বাহিনী চলে েগলে রুবিনা আসিফকে উপরে েটনে েতালে। তারপর েদখে েকাথাও আঘাত েলগেছে কিনা। এমন সময় আসিফ একটা েনŠকা েদখতে েপয়ে েদŠড়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে এগিয়ে আসে। েনŠকার মাঝি তাদের েদখে েনŠকা পাড়ে ভিড়ানোর আগেই েপছন হতে হানাদার বাহিনী চলে আসে। তাই েদখে েনŠকার মাঝি তার েনŠকা ফিরিয়ে েনয়।
রুবিনা আর আসিফ বুঝতে পারে তারা বিপদে পরে েগছে। তাই রুবিনা দ্রুত তার মাথার েঘামটা বড় করে েটনে েদয় তারা স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে। হানাদারদের একজন তাদের েপছন হতে েডকে উ?লে তারা ভয়ে ভয়ে পিছু ফিরে। আসিফ রুবিনাকের আড়াল করে দাড়ায় কারন েস েদখে এক হানাদার রুবিনার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আসিফকে ইশারা েদয় রুবিনার সামনে েথকে সরে যাবার জন্য কিন্তু আসিফ েসভাবেই দাড়িয়ে থাকে। একজন কাছে এসে রাইফেলের বাট দিয়ে আসিফকে আঘাত করলে েস হাটুতে নিচে বসে পরে। আর তাই রুবিনা চিৎকার করে আসিফকে ধরতে েগলে মাথা হতে েঘামটা খুলে যায় তার। হানাদার গুলো রুবিনার রূপ েদখে অবাক হয়ে যায়। রুবিনা তার েদবরকে ধরে নিচে বসা ছিল এমন সময় েয হানাদার আসিফকে আঘাত করেছে েস রুবিনার হাত ধরে েটনে নিতে চাইলে আসিফ বাধা েদয়। অন্য এক হানাদার এসে তার বুট দিয়ে েজাড়ে একটা লাথি মারে আসিফকে । আঘাত েপয়ে রুবিনার হাত ছুটে যায় আসিফের হাত েথকে। তারপর তাকে গুলি করে েমরে েফলে। এই দৃশ্য েদখে রুবিনা জ্ঞান হারায়।
জাহিদ ইরিনকে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে তার দাদা- দাদীর েকালে তুলে দিয়ে সবকিছু বলে দ্রুত েসখান হতে েবরিয়ে যায়। সব শুনে দাদা-দাদী কান্না করে। আর ঐ দিকে রুবিনাকে হানাদার গুলো তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। গ্রামের এক স্কুলে নিজেদের ক্যাম্প গ?ন করে তারা। েসখানেই এক কক্ষে গ্রাম েথকে ধরে আনা অসহায় নারীদের আটকে েরখেছে নিজেদের েভাগের সামগ্রী হিসেবে। প্রতিনিয়ত এই নারীদের উপর চলে শারীরিক নির্যাতন আর েয সব নারীরা অসুস্থ্য হয়ে যায় তাদেরকে সবার সামনে গুলি করে হত্যা করে লাশ উ?িয়ে জঙ্গলে আবার নদী ও পুকুরে েফলে দেয়। পাকিস্তান মিলিটারির এক সিনিয়র অফিসার েমজর শাহনেওয়াজ রুবিনাকে েদখে মুগ্ধ হয়ে যায় েস তখনও অজ্ঞান ছিল। শাহনেওয়াজ ইশারায় তাকে তার কক্ষে নিয়ে েযতে বলে। আর তাই রুবিনাকে শাহনেওয়াজের কক্ষে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে েবরিয়ে যায়।
শাহনেওয়াজ নিজের ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে েযয়ে বসে রুবিনার পাশ্বে তারপর নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে রুবিনার কপালে ধিরে ধিরে র্স্পশ করে আঙ্গুল চিবুকের কাছে আনতেই রুবিনার জ্ঞান ফিরে আসে,েচাখ খুলে শাহনেওয়াজকে েদখে ভয় পেয়ে যায়। রুবিনার দিকে হাত বাড়ালে রুবিনা তার দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে ে?লে দিয়ে দ্রুত উ?ে খাট হতে েনমে যায়। নিজের সম্মান বাচাঁনোর সর্বচ্চ েচষ্টা করে, এমন কি নিজের জীবন দিয়ে দিতে চায় কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, েশষ রক্ষা হয়নি। জীবন েবঁচে েগলেও মান বাঁচাতে পারে নি। রুবিনা যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে তাই তাকে েবধে রাখে।
ইকবাল হ?াৎ অস্থিরতা অনুভব করে নিজের মধ্যে আর মনে মনে ভাবে “সবাই সুরক্ষিত আছে েতা?” তাকে এভাবে চিন্তিত ও অস্থির েদখে মুক্তিবাহিনীর প্রধান নকিব বলে,“কি হয়েছে ইকবাল, েতামাকে এমন েদখাচ্ছে েকন?”
ইকবাল বলে “ জানিনা নকিব ভাই, েকন েযন মনে হচ্ছে েকাথাও কিছু খারপ ঘটছে। জাহিদ সবাইকে নিয়ে নিরাপদে েপŠছেছে কিনা েক জানে?”
নকিব বলে, “ এত েভবোনা একবাল, তাছাড়া এখন নিজেকে েকানমতে দূর্বল করলে চলবেনা। েদশে এখন যুদ্ধ চলছে আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে েয েকান পরিস্থিতি েমাকাবেলা করার জন্য। তাই যাই ঘটুক নিজেকে শক্ত রাখতে হবে, তাছাড়া সামনের সপ্তাহে েতামাকে েতামাদের গ্রামের পাশ্বের গ্রামে ক্যাম্পে েযতে হবে দল গ?ন করে। আশা করছি সুযোগ বুঝে খবর নিতে পারবে”।
“আপনি ?িক বলেছেন নকিব ভাই। আমি দূর্বল হব না, েযখানে আমার েদশের সব মানুষের উপর এত অত্যাচার হচ্ছে েসখানে আমার পরিবার আলাদা কি করে?” ইকবাল নিজের মনে সাহস সঞ্চার করে পূনরায় সবার সাথে যুদ্ধে েনমে যায়। সারা েদশে একের পর এক হামলার প্রতিবাদে বাংলার দামাল েছলে ও সৈনিকরা ঝাপিয়ে পরে শক্ত হাতে লড়াই করছে জয় এর লক্ষমাত্রা নিয়ে।
হানাদার বাহিনীরা গ্রামের েভতর হামলা েদয় মুক্তিবাহিনীর েখাজে। গ্রামের েভতরে চালায় গন হত্যা আর নারীদের েদখলে কখনো তুলে নিয়ে যাচ্ছে আবার ঘরে প্রবেশ করে সম্মান হনন করে চলে যাচ্ছে। আর না চাইতেও অসহায় স্বামী ও পরিবারের মানুষ গুলো দূরে লুকিয়ে েথকে এইসব অত্যাচার সহ্য করে নিচ্ছে েকবল মৃত্যুর ভয়ে। হানাদার বাহিনী চলে েগলে েদŠড়ে ঘরে েযয়ে নারীদের অবস্থা েদখে কান্নায় েভঙ্গে পরে। আর নিজেদের অপরাধি মনে করে। এই যুদ্ধ েযন অসহায় মানুষগুলোকে আরো অসহায় করে দিল। ইকবাল পরের সপ্তাহে নিজের গ্রামের পাশ্বের গ্রামে চলে যায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে। েসখানের যাবার পর একদিন এক রাতের েবলা লুকিয়ে সুযোগ বুঝে নিজের গ্রামের বাড়ী যায়। েসখানে েস তার মা-বাব ও েময়ের সাথে েদখা করে আর জানতে পারে ভাই ও স্ত্রীর কথা। মা বলে, “ওরা েয এখনো এলো না-আজ এতদিন হয়ে েগল।” মায়ের কথা শুনে ইকবাল বুঝে যায় ভাই ও স্ত্রী বিপদে পরেছে।
বাবা বলে, “জাহিদ বলল ওরা একসাথেই ছিল কিন্তু পরে তারা কিভাবে েযন আলাদা হয়ে যায়।”
সবশুনে ইকবাল নিজেকে বাবা মার সামনে দূর্বল হতে েদয় না অনেকটা ক?োর হয়েই বলে উ?ে, “ভেবে নিও েতামরা েতামাদের সন্তান ও েবŠ সবাইকে েদশের জন্য কুরবান কর দিয়েছ। হয়তো আমিও না ফিরতে পারি শুধু েদায়া কর েযন আমর এই েময়ে কাল সকালে ঘুমভাঙ্গার পর একটা স্বাধীন েদশের সুর্যের আভায় আলোকিত হতে পারে। আমাদের এই আত্মদান এত ত্যাগ েযন বৃথা না হয়ে যায়। এ েদশ স্বাধীন হবেই হবে। এ েদশের মানুষ মাথা উচু করে বাঁচবে, কখনো কারও সামনে মাথা নত করবেনা। েতামরা সাবধানে েথকো আমি যাই েভার হবার আগেই ফিরতে হবে। “বলে েময়েকে মায়ের েকালে দিয়ে েস বিদায় নিয়ে েবরিয়ে পরে।
ইকবাল গ্রামের জঙ্গলের েভতর দিয়ে যাবার সময় এক েময়েকে আত্মহত্যা করতে েদখে তাকে বাধা দিয়ে বলে, “ কি করছেন আপনি?”
“আমারে ছাইরাদেন, আমি আর বাঁচাতে চাইনা।”
“দেশের এমন মূর্হূতে আপনি েসচ্ছায় জীবন ত্যাগ করছেন। েকন? ”
“বাঁচনের সব পথ েয বন্ধ আমার। ঐ হারামির বাচ্চারা আমার মান সম্মান সব নষ্ট কইরা দিছে।আমার স্বামী শ্বাশুড়ী েকউ আমারে চায়না। কয় আমি থাকলে তারা কাউরে মুখ েদখায়তে পারবোনা। আমার যাওনের েকান যায়গা নাই। তাই আমার মরনই একমাত্র পথ।” বলে উ?ে কান্না মাখা েচাখে।
“প্রতিশোধ না নিয়েই চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যখন মরতেই হবে তবে বীরের মত নয় েকন? যাদের কারনে আজ আপনার সম্মান, ঘর সব হারিয়েছেন তাদের প্রতি প্রতিশোধ েনবেন না। মরার আগে যদি একজন শক্রকে মারতে পারেন তবে আপনার েসই মৃত্যু হবে বীরের মত মৃত্যু। এখন আপনি ?িক করুন, আপনি কি চান বীরের মৃত্যু নাকি অপমৃত্যু।”
“আপনি ?িক কইছেন - মরতেই যখন হইবো কয়েকটারে নিয়াই মরুম”। বলে উ?ে েচাখের পানি মুছে।
ইকবাল েময়েটিকে নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে এসে েদখে জাহিদ আহত অবস্থায় ফিরে এসেছে। েস ইকবালকে েদখে ক্ষমা েচয়ে বলে, “ আমাকে ক্ষমা করবেন ইকবাল ভাই, আমি আমার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে পারিনি।”
ইকবাল তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ এতদিন েকাথায় ছিলে আর েতামার এই অবস্থা কি করে।”
“ ইরিনকে আপনার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে ফিরে আসার সময় এক হামলায় আহত হয়ে কয়েকদিন এক স্বাস্থ্য েকন্দ্রে চিকিৎসাধিন ছিলাম। জ্ঞান ফিরে আর েদরি না করে এখানে চলে এসেছি।” ইকবাল েময়েটিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে েট্রনিং এর ব্যবস্থা করে। আর ঐ দিকে হানাদার বাহিনীরা সকল নরীদের আটকে েরখে নির্যাতন করতে থাকে। েয সকল নারীরা অসুস্থ্য হয়ে পরে তাদেরকে সবার সামনে গুলি করে েমরে েফলে।
হানাদার বাহিনীর আক্রমন হতে েদশকে রক্ষা করার জন্য নারী পুরুষ সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে ঝাপিয়ে পরে। একের পর এক আক্রমনের প্রতিবাদে বাংলা মুক্তিবাহিনী অকুতভয় বীরের মত লড়াই করে।
লড়াইয়ের এক পর্যায়ে েট্রনিং পাওয়া েময়েটি বুকে মাঈন েবধে ঝাপিয়ে পরে শক্রর ট্যাংকের সামনে। পরাজিত হয় েসই গ্রামের হানাদার বাহিনীরা। মুক্তিবাহিনীর সবাই েময়েটির সাহসিকতাকে সম্মান জানিয়ে েসলুট করে। গ্রামটি শক্র মুক্ত হয়। এভাবে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর েদশ স্বাধীন হয় সারাদেশে স্বাধীনদেশের পতাকা উড়ানো হয়। সকলের মনে আনন্দের ধারা প্রবাহিত হয়।
মুক্তি বাহিনীরা েযয়ে বন্ধী নারীদের মুক্ত করে েদয় আর যারা আহত তাদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য েকন্দ্রে পা?ানো হয়। রুবিনাও েসই ক্যাম্পে ছিল কিন্তু ইকবাল তা েদখতে পায়নি। ইকবাল মনে মনে রুবিনাকে খুজে- েয ভিড়ে রুবিনাকে খুজে েস ভিরে রুবিনা থাকে না কারন অন্য একটি কক্ষে বন্ধী ছিল। ইকবালের েদখার আগেই রুবিনাকে তার পাশাদিয়ে নিয়ে চলে যায়।
বন্ধী নারীরা মুক্ত হয়ে সাবাই ছুটে যায় নিজ নিজ পরিবারের কাছে। শহর গ্রাম সব যায়গায় বন্ধী নারীরা বাড়ি ফিরে যাবার পর একই চিত্র লক্ষনীয়। যাদের পরিবার েবঁচে আছে তারা তাদের জড়িয়ে কান্নায় েভঙ্গে পরে। আবার েকউ মুখ ফিরিয়ে েনয়, নিজেদের মান সম্মান বাচাতে। আবার যাদের েকউ েবচে েনই তারা খালি বাড়িতে বসে গভীর কান্নায় েভঙ্গে পরে। এমনি এক নারী মুক্ত হয়ে নিজের বাড়ি েযয়ে তাদের বাড়ি ভাঙ্গ ও পুড়িয়ে েফলা অবস্থায় েদখতে পায়। তার স্বামী মুক্তিবাহিনীতে েযাগ দিয়ে শহীদ হন। েস এদিক েসদিক েছাটা ছুটি করে পরিবারের েলাকদের েখাজার েচষ্টা করে কিন্তু কাউকে খুজে পায় না। এমন সময় এক বৃদ্ধা নারী এসে জানায়,“সবাইরে ধইরা নিয়া মাইরা ফালায়ছে, েকউ বাইচা নাই,” বলে েস চলে যায়।
বৃদ্ধ নারীটির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় েস, তাপর কিছুক্ষন পর উ?ে রান্না ঘরের পাশ্বে একটা দা েদখতে পায় যা অর্ধেক মাটিতে গাথা ছিল। েস কাছে এসে দা উ?িয়ে নিয়ে নিজের হাতের কব্জিতে রাখতেই একটা পাঁচ বছরের েছলে খালিগায়ে জীর্ণ র্শীণ অবস্থায় দাড়িয়ে “মা” বলে েডকে ও?ে। ডাকশুনে েস েপছনে ফিরে তাকিয়ে হাত েথকে দা েফলে েদয় এবং েদŠড়ে এসে েছলেকে েকালে তুলে নিয়ে গভীর কান্নায় েভঙ্গে পরে।
ইকবাল বাড়ি ফিরে আসে একদিকে স্বাধীনতার আনন্দ আর অন্যদিকে স্ত্রী ও ভাই হারানোর েবদনা। েস েময়েকে বুকে নিয়ে খাটের উপর বসেছিল এমন সময় একজন এসে খবর েদয়,“ইবাল ভাই-রুবিনা ভাবী।” খবর েপয়ে দ্রুত চলে যায় হাসপাতালে। তথ্য অনুযায়ী অপক্ষো করতে থাকে ইকবাল হ?াৎ েপছন হতে তার কাধে হাত রাখে নকিব। ইকবাল েপছন ফিরে কিছু বলার আগেই ডাক্তার চলে আসে। েস ডাক্তারকে েদখে বলে উ?ে,“ডাক্তার রুবিনা -”
ডাক্তার বলে,“আপনি?”
ইকবাল বলে, “ ও আমার স্ত্রী”
ডাক্তার বলে,“েদখুন তার অবস্থা ভাল নয়। যতদ্রুত সম্ভব তাকে ঢাকা েকান বড় হাসপাতালে নিয়ে যান আর েদরি করা ?িক হবে না। আর একটি কথা আপনার স্ত্রী গর্ভবর্তী।”
ডাক্তারের কথা শুনে ইকবাল স্তব্দ হয়ে যায়, েস দাড়ানো অবস্থায় পরে েযতে নিলে নকিব তাকে সামলে েনয়। তারপর ডাক্তারের কথা অনুযায়ী রুবিনাকে ঢাকা বড় একটি হাসপাতালে সিফ্ট করে। েসখানকার ডাক্তাররা তার চিকিৎসা শুরু করে এবং প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা েনয়। ডাক্তার েকবিন হতে েবর েহয় এলে ইকবাল বলে, “রুবিনা এখন েকমন আছে?
ডাক্তার বলে, “ আমরা পুরো েচষ্টা করছি। েস গর্ভবর্তী হওয়ায় আমাদের চিকিৎসাও সাবধানে করতে হচ্ছে।”
ইকবাল বলে,“চাইনা এই বাচ্চা - আপনি েকবল আমার রুবিনাকে সুস্থ্য করেদিন।”
ডাক্তার বলে, “ আই এম সরি মি: ইকবাল, বাট না চাইলেও এই বাচ্চাকে রাখতে হবে। কারন এখন যদি এই বাচ্চা নষ্ট করার কথা চিন্তা করেন তাহলে শুধু বাচ্চাটি নয় আপনার স্ত্রীও মারা েযতে পারে।”
ইকবাল বলে, “প্লিজ এভাবে বলবেন না - আমার রুবিনাকে বাচাঁন। এই বাচ্চা জন্মনিলে আমার রুবিনা েকানদিন সুস্থ্য হয়ে উ?বে না, পারবে না ভুলতে এই দুর্ঘটনাকে।”
ডাক্তার বলে, “ আপনার কথা বুঝতে পারছি, কিন্তু তা আর এখন সম্ভব হবে না অনেক েদরি হয়ে েগছে। তাছাড়া বর্তমানে তার েয অবস্থা তাতে বিকল্প অন্যকোন পথ েনই, সরি।” বলে চলে যায়, নকিব বুঝে পায় না এই সময় েস কিভাবে ইকবালকে শান্তনা েদবে।
একদিন ইকবাল রুবিনার পাশ্বে বসা এমন সময় রুবিনার জ্ঞান ফিরে আসতে থাকে। রুবিনার জ্ঞান ফিরে আসতে েদখে ইকবাল সতেজ হয়ে হাসিভরা মুখে তাকিয়ে থাকে। রুবিনা েচাখ েখালার আগেই তার সাথে ঘটে যাওয়া র্দূঘটনা সামনে ভাসতে থাকে। েস েচাখ বন্ধ অবস্থায় উত্তেজিত হতে থাকে এক সময় েচাখ খুলে ইকবালকে েদখে ভয় েপতে থাকে কারন েস ইকবালের পরিবর্তে হানাদার বাহিনীর েসই পশুটাকে েদখতে পায়। ইকবাল হাত বাড়িয়ে তাকে ধরতে চাইলে রুবিনা নিজেকে বাচানোর জন্য উ?ে বসে এবং ভয়ে সংকুচিত হয়ে চিৎকার করে উ?ে। তার চিৎকার শুনে ডাক্তার ও নার্স এসে তাকে থামানোর েচষ্টা করে অবশেষে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে। ইনজেকশন েদবার কিছুক্ষন পর রুবিনা ঘুমিয়ে পরে। ইকবাল সব েদখে নিজেকে ?িক রাখতে পারেনা। মনে হতে লাগল, েযন পুরো দুনিয়া শূন্যে উ?ে েগছে। েস ধিরে ধিরে েপছনে েযতে থাকে। নকিব দরজায় দাড়িয়ে সব েদখছিল- ইকবাল েপছনে নকিবের সাথে ধাক্কা েলগে শরীর েছড়ে পরে েযতে নিলে তাকে জড়িয়ে ধরে নকিব এবং বাইরে নিয়ে েবঞ্চে বসায়। ডাক্তার এসে জানায়, “দেখুন মিস্টার ইকবাল, আপনার স্ত্রীর উপর দিয়ে েয ঝড় বয়ে েগছে তা েথকে েবর হয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে - তাই আপনাকে আরো শক্ত হতে হবে।” ডাক্তার চলে েগলে ইকবালের েচাখ েবয়ে পানি ঝড়ে তার েচাখের সামনে েভসে উ?ে তাদের বিয়ের দৃশ্য। তারা যখন খুব েছাট তখন তাদের বাবা-মায়েরা সখ করে বিয়ে দিয়েছিল। একই সাথে েবরে উ?া, ভাললাগা, ভালবাসা আর েময়ে ইরিনের জন্ম সব কিছুই দৃশ্যমান হয়ে উ?তে থাকে।
রুবিনা তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে েফলেছে। েস কাউকে চিন্তে পারে না। েকান পুরুষ তার সামনে এলে ভয় েপয়ে যায়। এভাবে দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে থাকে, একসময় অসুস্থ্য অবস্থায় জন্ম েদয় একটি শিশু পুত্র। ইকবাল একবারের জন্যও ফিরে তাকায়নি শিশুটির দিকে তাই নকিব েকালে তুলে েনয়।
ইরিন তার বাবার পড়ার ঘরের সামনে এসে দরজায় নক করতেই ইকবাল েচাখ খুলে তাকায়। তার েচাখের দুই পাশ গড়িয়ে পানি পরে। ইরিন দরজা খুলে েভতরে এলে ইকবাল েচাখের পানি মুছে চশমা পরে েনয়। ইরিন বলে,“বাবা অনেক রাত হয়েছে, এসো খাবে।”
“তোমার মা েখয়েছে?”
“হ্যা বাবা, এশা খাইয়ে দিয়েছে এখন ঘুমুচ্ছে।”
“?িক আছে তুমি যাও আমি আসছি।”
ইরিন চলে েগলে েস উ?ে প্রথমে রুবিনার ঘরে েযয়ে তাকে েদখে েনয় তারপর চলে আসে খাবার েটবিলে েযখানে এশা আগে েথকেই অপেক্ষা করছে তার জন্য। এশা ইকবালকে েদখে বলে, “এত েদরি করলে েকন নানাভাই, অনেক ক্ষুধা েপয়েছে?”
ইকবাল বলে,“সরি নানা ভাই কখন েয েদরি হয়ে েগছে বুঝতেই পারিনি।”
এশা বলে,“তুমি ?িক আছো নানা ভাই?”
ইকবাল বলে, “হ্যা, হ?াৎ এ প্রশ্ন েকন?”
এশা বলে,“ েতামাকে েকমন েযন েদখাচ্ছে?”
ইরিন বলে, “এশা ?িক বলেছে বাবা“খাবার সামনে দিয়ে,” নাও খাওয়া শুরু কর। সব?িক আছেতো- কারা এসেছিল?”
ইকবাল বলে, “ হ্যা সব?িক আছে। জসিম আর আরিফা এসেছি।”
ইরিন বলে, “ েতামার এক্স স্টুডেন্টস, ওরাতো কি েযন একটা সংস্থার সাথে জড়িত আছে তা ওরা হ?াৎ কি মনে করে?”
ইকবাল বলে, “ বাংলাদেশ সরকার েঘাষনা দিয়েছে সকল বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা উপাধিতে ভূষিত করবে।”
এশা বলে, “ ওয়াও নাইস নিউজ।”
ইকবাল বলে, “কাল আলোচনা সভা ডাকা হয়েছে েসখানে েযতে হবে। শুনেছি সারা বাংলাদেশের বীরাঙ্গনা নারীর নামের তালিকা সংগ্রহ করে জমা েদওয়ার কথা বলেছে।”
এশা বলে, “ যদিও কাজটি েদরি হয়েছে তবুও কাজটি সম্পূর্ণ হলে বাংলার ইতিহাসে এদেশের বীরাঙ্গনা নারীরা আরেক ধাপ নিজেদের এগিয়ে নিয়ে েযতে পারবে। জানো নানা ভাই েসদিন আমি বীরাঙ্গনা মায়েদের কষ্টকে উপলব্ধি করার জন্য েকবল মাত্র েচাখ বন্ধ করে নিজেকে তাদের স্থানে নিয়ে েযতে েচয়েছিলাম কিন্তু আমি পারিনি। েয বিষয় আমি েচাখ বন্ধ করে চিন্তা করতে পারিনি অথচ এই সব মায়েরা তা দিনের পর দিন সহ্য করেছে, এত কষ্ট ---- কথা বলতে বলতে েচাখ গড়িয়ে পানি পড়ে। কন্?স্বর ভারি হয়ে আসে এশার। ইরিন খাবার েরখে উ?ে এসে েময়েকে বুকে জড়িয়ে েনয় তার েচাখ েবয়ে পানি পরে। তারপর েচাখ মুছে অনেকটাই ক?োর ভাবে বলে উ?ে। “সেদিন ইচ্ছে হয়েছিল একাত্তরের ঐ দালাল আর পাকিস্তানি নরপশুগুলোকে ধরে এনে সকল বীরাঙ্গনা নারীর সামনে দাড় করিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলি গুলি করে মারতে, তবে হয়তো কিছুটা কষ্ট কম হতো। কিন্তু আমরা পানি না---।”
ইকবাল তাকে শান্তনা দিয়ে বলে,“ভেবোনা -- শাস্তিতো ওরা পাবে। এ েদশের আইন ও বিচার বিভাগ তার কাজ ?িক করবে। আর আমাদের বীরাঙ্গনা নারীরা তার ন্যায্য অধিকারও পাবে।”
এশা বলে, “তুমি ?িক বলেছ নানা ভাই,যদি বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা উপাধিতে ভূষিত করার কাজটি সফল ভাবে স্পূর্ণ হয় তবে বীরঙ্গনা নারীদের কষ্ট কিছুটা কমবে। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা েযমন অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে েদশ স্বাধীনের জন্য লড়াই করেছে আবার জীবনও দিয়েছে েতমনি এদেশে বীরাঙ্গনা নারীরাও তাদের সম্মান দিয়ে লড়াই করেছে।
ইরিন বলে, “ েস সবতো ?িক আছে কিন্তু কাজটি অর্থাৎ নামের তালিকা তৈরি করতে েগলে অনেকে লজ্জায় বা সম্মান হারনোর ভয়ে নাম েলখাতে রাজি নাও হতে পারে।”
ইকবাল বলে, “ তাইতো তাদের বুলতে হবে বীরাঙ্গনা নারীরা েকান পাপ, অন্যায় ও অপরাধ করেনি, তবে েকন তারা লজ্জা পাবে এ লজ্জাতো একাত্তরের ঘাতক দালাল আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর। লজ্জা যদি েপতে হয় তবে ওরা পাবে।”
এশা বলে,“ বীরাঙ্গনা শব্দ শুনলে েচাখে েভসে আসে নারীদের উপর অত্যাচারের দৃশ্য। আর মুক্তিযোদ্ধা শব্দ শুনলে েভসে উ?ে লড়াইয়ের দৃশ্য তাহলে েকন তারা েমনে েনবেন না। বাস শুধু েখয়াল রাখতে হবে এ কাজটি করার সময় েকউ েযন আঘাত না পায়।” এভাবে তারা কথা বলতে বলতে রাতের খাবার েশষ করে।
ইকবালের বাড়ি হতে েবরিয়ে সাহেদ সারা রাত বাইরে কাটিয়ে সকালে বাড়ি ফিরলে নকিব তার পথ আটকে বলে,“কোথায় ছিলে সারা রাত? আমি েতামাকে বলছি সাহেদ - েকাথায় ছিলে?” সাহেদ েকান উত্তর না দিয়ে চলে েযতে নিলে, “ তুমি কি ইকবালের বাড়ি গিয়েছিলে? আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও সাহেদ?” বলে উ?ে ধমকের সুরে। সাহেদ েথমে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উ?ে, “হ্যা হ্যা গিয়েছিলাম আমি েসখানে।”
“ েকন গিয়েছিলে েসখানে, কতবার বারন করবো েতামায়।”
“ েকন শুনবো আমি েকান বারন। যাব আমি- ততোদিন যাব যতদিন আমি আমার প্রশ্নের উত্তর খুজে না পাব।”
“তোমার কাছে েতামার প্রশ্নের উত্তরই সব। আর সেই নারীর কোন মূল্য েনই। েততাল্লিশ বছর পার করে এখনো েয েসই বিভর্ষ স্মৃতি হতে েবরিয়ে আসতে পারেনি, বার বার তার সামনে গিয়ে েকন তার পুরনো ক্ষততে আঘাত হান? েয এমনি মরে আছে তাকে আর েমরে কি লাভ, আমি আবারও বলছি বৃথা েচষ্টা না করে ভুলে যাও সব। নিজের কাজে মনোযোগী হও। নিজেও ভাল থাকার েচষ্টা কর তাদেরও ভাল থাকতে দাও। েদখ সাহেদ তুমি এক বীর মায়ের গর্ভ হতে জন্ম নিয়েছ, েতামাকে আমি আমার নাম দিয়েছি এটাই কি যথেষ্ট নয়। তাই বলছি ভুলে যাও সব---”
“ ভুলে যাব ---- কিন্তু কিভাবে। েয আমাকে জন্মদিয়েছে েস আমাকে েদখলে ভয় পায়, যন্ত্রনায় ছটফট করে যার পুরোটা জীবন নষ্ট হয়ে েগছে তার এই অবস্থার জন্য েয দায়ী, তাকে শাস্তি না দিলে েস মায়ের প্রতি অবিচার হয়ে যাবে েয। যতদিন ঐ পশুটাকে খুজে েবর করে নিজ হাতে হত্যা করতে না পারব ততোদিন কিছুই ভুলতে পারবো না।” একাথা বলে সাহেদ চলে যায় নিজের ঘরে, েসখানে খাটে বসে বিসানায় শুয়ে পরে উপরের দিকে মুখ করে। তর েচাখ গড়িয়ে পানি পরে।
রুবিনা সকালবেলা তার ঘরে ইজি েচয়ারে বসা। ইরিন একটা েট্রতে করে নাস্তা নিয়ে এসে তার সামনের েটবিলে েরখে মায়ের দিকে হাসি মুখে তাকায়। রুবিনা ইরিনের কপালে ব্যান্ডেজ েদখে তার েচাখ ছলছল হয়ে যায় েস আলত করে েময়ের কপালে হাত বুলিয়ে বলে, “এই ব্যাথা - আমি দিয়েছি, তাই না?”
“ েক বলেছে এই ব্যাথা তুমি দিয়েছ - আমার মা দুনিয়ার সবচাইতে ভাল মা আর আমি জানি আমার মা তার েময়েকে অনেক ভালবাসে। েস কখনো তার েময়েকে কি আঘাত করতে পারে?”একথা বলে মাকে জড়িয়ে ধরে। এশা দরজায় দাড়িয়ে সব শুনে বলে উ?ে,”হু সবভালবাসা শুধু েময়ের জন্য আমি বুঝি েকউ নই?” রুবিনা ও ইরিন এশার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে ইশারায় েডকে উ?লে এশা কাছে এসে তাদের জড়িয়ে ধরে।
ইকবাল তৈরি হয়ে চলে যায় আলোচনা সভায়। সভায় বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। যারা এত বছর ধরে ব্যক্তিগত ভাবে বীরাঙ্গনা নারিদের সহযোগিতা করে আসছিলেন তারাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনা হয় কিভাবে নামের তালিকা তৈরি করা হবে এবং কি কি সুযোগ সুবিধা েদওয়া হবে। এই আলোচনা েশষে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা ব্যক্তিগত ভাবে নিজেদের সাথে খন্ড খন্ড আলোচনার মাধ্যমে কাজ বিভক্ত করে েদয়। নির্দেশ অনুযায়ী কর্মীরা েনমে পরে তালিকা তৈরির কাজে। েকউ যায় শহরে আবার েকউ যায় গ্রামে। নামের তালিকা তৈরি করতে েযয়ে কর্মীরা কিছু সমস্যাও পরে কারন অনেকেই সম্মান হারানোর ভয়ে ও েলাকের নিন্দার হাত হতে বাচার জন্য নাম েলখতে রাজি হয়নি। তাই কর্মীরা নির্দেশ অনুযায়ী তাদের জানায় তারা না চাইলে সবার সামনে নাম উল্লেখ করা হবে না। নাম েগাপন রাখা হবে যখন তারা চাইবে েকবল তখনই নাম উল্লেখ করা হবে। কর্মীরা তাদের আরো জানায় এটা লজ্জার বিষয় নয় বরং এই েদশ স্বাধীন করায় একজন মুক্তিযোদ্ধার যতটুকু অবদান, এক বীরাঙ্গানা নারীর ও ততোখানি অবদান রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন দিয়ে েযমন েদশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে েতমনি বীরাঙ্গনা মায়েরাও তাদের সম্মানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ েদশের স্বাধীনতায় ভূমিকা েরখেছে। তাই এক বীরাঙ্গনা মায়ের এই উপাধি পাওয়ার অধিকারও রয়েছে। কর্মীদের এই সব কথা শুনে তবেই তারা নাম েলখাতে চায়।
এশা ও তার এক বন্ধু আকাশ ইকবালের েদয়া তথ্য অনুযায়ী তালিকাকরনের জন্য গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জসিম ও আরিফার সাথে। তারা একই সাথে গ্রামে েযয়ে েপŠছায়, গাড়ি হতে েনমে তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই দিকে চলে যায়। এশা ও আকাশ গ্রামের পথ ধরে হাটতে থাকে তারা গ্রামের েলাকদের জিজ্ঞাসা করে রাহেলা েবগম নামে এক বীরাঙ্গনা নারীর বাড়ী খুজে েবর করে। তারা বাড়ীর েভতরে েযয়ে দাড়াতেই একটা েলাক বলে,“কারে চান?”
এশা বলে, “ জ্বি আমরা রাহেলা েবগমের সাথে েদখা করতে চাচ্ছি। তিনি কি আছেন?”
লোকটি বলে, “ জ্বি আছে- তা তার লগে কি কাম?”
আকাশ বলে,“আমরা ঢাকা েথকে এসেছি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী তাই আপনি কি একটু কষ্ট করে তাকে েডকে েদবেন, আমরা তার সাথে কথা বলতে চাই।”
লোকটি বলে, “ খারান, ডাকতাছি।” েলাকটি একটি ঘরের েভতরে েযয়ে রাহেলা েবগমকে েডকে নিয়ে আসে আর বলে,“ এইযে রাহেলা েবগম।“ তারপর েলাকটি চলে যায় তার কাজে। এশা হাসি মাখা মুখে রাহেলা েবগমকে জড়িয়ে ধরে এবং সব জানায়। সব শুনে রাহেল েবগম কান্না করে এবং আচলে মুখ লুকায়। এশা তাকে শান্তনা েদয় তারপর েস একটু স্বাভাবিক হয়ে তাদের জানায়,“দেশ স্বাধীনের পর যখন বাড়ি ফিরে তখন আমার স্বামী শ্বাশুড়ি েকউ আমারে মাইন্না েনয় নাই। কয় আমি থাকলে তাগো মান সম্মান নষ্ট অইবো। দূর দূর কইরা তারায় দিছে কিন্তু আমি মাইয়্যা মানুষ যাওনের যায়গা আছিল না। তিনবছরের একটা েছাট েপালা বার বার ওর মুখখানা েচাখের সামনে ভাসত তাই মরতেও পারি নাই। ঐ েয ঐখানে দিনের পর দিন বইয়্যা কত কানছি আর মিন্নতি করছি কিন্তু তারা রাজি অয় নাই। কয়েকদিন পর আমার েচাক্ষের সামনে দিয়া আমার শ্বাশুড়ি তার েপালারে নতুন কইরা বিয়া েদয়। কতই বা বয়স আছিল আমার। তার পরও সব সহ্য করছি ঐ েপালাডার লিগা। কি েদাষ আছিল আমার আমি কি কইছি আমারে ধইরালিয়া েবইজ্জত করতে। কি পাপ করছি আমি, আমিতো েকান অপরাধ করি নাই তাইলে এত বড় শাস্তি কিসের জন্য? েহয় বিয়া করনের পর একদিন তার পায়ে পইরা একটু যায়গা ভিক্ষা চাইছি। আল্লাহর কি রহমত অইছে েহয় আমারে ঘরে তুইলা নিছে।” কথা গুলো েচাখের সামনে েভসে আসতে থাকে তার, েচাখ েবয়ে পানি ঝরে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস েছড়ে অবশেষে ভাল থাকার কথাও বলে, “তার পর আমি নতুন কইরা আবার সংসার শুরু করছি। েহর পরে আমার আবার আরো দুইডা েপালাপাইন অইছে। কয়তে পারেন এত কষ্টের পরও ভালই আছি। “তার কষ্টের কথাশুনে এশার েচাখে ছলছল হয়ে যায়। েস েকান রকম কাজ েশষ করে বাইরে এসে কান্না করে, আকাশ রাহেলা েবগমের কথা শুনে েস নিজেও আপসেট ছিল তাই এশাকে কি বলে স্বান্তনা েদবে তাই ভাবছে। েস েপছন হয়ে এশার কাধে হাত রাখে এশা নিজেকে সামলে নিয়ে েচাখ মুছে। আকাশ ব্যাগ হতে পানির েবাতল েবর করে সামনে দিলে এশা পানি পান করে। আকাশ বলে, “আর ইউ ওকে?” এশা মাথা েনরে হ্যা বলে পূনরায় কাজে েনমে পরে।
অপর দিকে আরিফা ও জসিম এক বাড়িতে তালিকা েশষে উ?ে চলে যায় জামিলা খাতুনের বাড়ী। জামিলা েসই নারী যাকে হানাদার বাহিনীরা বাড়ীতে এসে অত্যাচার করেছিল যার স্বামী অসহায়ের মত দূরে দাড়িয়ে ছিল কিন্তু কিছুই করতে পারে নি জীবনের ভয়ে। েছাট্ট ছয়মাসের শিশুকে মারার ভয় েদখিয়ে পরপর ছয়জনে মিলে তাকে অসম্মান করেছিল। তার স্বামী ও শ্বাশুরি তাকে েকানদিন অবহেলা করেনি বরং তার অনেক েসবা যতœ করে সুস্থ্য করে তুলেছে আর আজ তার েসই স্বামী গত কয়েক বছর ধরে অসুস্থ্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। জামিলার ঘরের অবস্থা অনেক খারাপ দারিদ্রতা তাকে ঘিরে েরখেছে। েছলেরা বড় হবার পর েয যার যার মত বিয়ে করে দূরে চলে েগছে। আরিফা বাড়ির েভতরে এসে ঘরের বাইরে েথকে েডকে উ?ে,“ঘরে েকউ কি আছেন?” শব্দ শুনে জামিলা বাইরে এসে বলে, “েক - আপনেরা কারা আর কারে চান?”
জসিম বলে , “ জ্বি আমরা জামিলা খাতুনের সাথে েদখা করতে চাই।”জামিলা নিজের পরিচয় দিলে আরিফা তাকে সবকিছু বলে। সবশুনে জামিলা কান্না করে এবং জানায় তার দূর অবস্থার কথা, “ যতদিন আমার স্বামী কাজ কাম করছে ততোদিন না খাইয়া থাকতে অয় নাই কিন্তু েস অসুস্থ্য অইয়্যা গত কয়েক বছর বিছানায় পরনের পরথিকা কত কষ্টে েয দিন কাটে তা বুঝায়তে পারুম না। একটু ঝগড়া লাগলে প্রতিবেশিরা অহনও কথা শুনায়। জানিনা কবে এই যন্ত্রনার হাতথিকা মুক্তি পামু।” এভাবে একের পর এক তাদের কষ্টের কথা বলে উ?ে। এক এক করে সকলের বাড়ি বাড়ি েযতে সকলের সম্মতি ক্রমে নামের তালিকা তৈরি করে।
তালিকা তৈরি েশষে তারা চারজন একই গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় েকউ কারও সাথে কথা বলে না সবার মন খারাপ তাই একেক জন একেক দিকে ফিরে শুধু বীরাঙ্গনা নারীদের কথা ভাবতে থাকে।
যুদ্ধের সময় পুরো বাংলাদেশকে এগারটি েসক্টরে ও ৬৪ টি সাব েসক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল ?িক েস অনুযায়ী সব জায়গা েথকে নামের তালিকা তৈরি করে, েযখানে অনেক বীড়াঙ্গনা নারীরা মৃত ছিল। তালিকা গুলো প্রথমে সাব অফিসে পরবর্তীতে মন্ত্রনালয়ে জমা করে।
এশা বাড়ি ফিরে আসার পরও তার মন অনেক খারাপ ছিল। েস অন্য মনস্ক হয়ে সিড়ি হতে নামতে েযয়ে হ?াৎ পা ফসকে পরে েযতে নিলে নিজেকে সামলে নিয়ে সিড়িতে বসে পরে। েস ডান পায়ে ব্যাথা েপয়ে “মা” বলে েডকে উ?লে রুবিনা শব্দ েপয়ে তার ঘর হতে বাইরে এসে এশাকে আর্তনাদ করতে েদখলে দ্রুত তার কাছে আসে। রুবিনাকে কাছে েপয়ে এশা এক মূহূর্তের জন্য ভুলে যায় তার ব্যাথাকে েস অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর এশাকে ধরে নিয়ে যায় তার কক্ষে। রুবিনার এই আচরন েদখে ইকবাল ও ইরিন অবাক হয়ে যায় তারপর ছুটে যায় রুবিনার কক্ষে। এশাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে, “ েবশি ব্যাথা হচ্ছে - - আমি এক্ষুনি ডাক্তার ডাকছি।” বলে ইকবাল ও ইরিনকে েদখে, “ েদখ না ও ব্যাথা েপয়েছে ডাক্তার ডাক যাও ও কষ্ট পাচ্ছে।” এশা তাকে এভাবে তার জন্য অস্থির হতে েদখে তার হাত ধরে থামিয়ে বলে,
“নানু - ব্যাথা ছিল কিন্তু এখন েনই” বলে েস রুবিনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে আর বলে, “তুমি সব সময় এমনি আমার কাছে েথকো তাহলে আমার কিছু হবে না।”
ইরিন এসে তাদের দুজনকেই জড়িয়ে ধরে। ইকবাল চশমা খুলে েচাখের পানি মুছে।
সাহেদ অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে েহটে যাবার সময় ধাক্কা লাগে একাত্তরের এক রাজাকার আক্কাস আলীর সাথে। রাজাকারের হাত হতে ব্যাগ ছুটে রাস্তায় পরে যায়। সাহেদ চৈতন্য ফিরে েপয়ে ব্যাগ উ?িয়ে হাতে দিয়ে বলে, “ মাফ করবেন আমি আপনাকে েদখতে পাইনি।”
ব্যাগ হাতে নিতে গিয়ে রাজাকার সাহেদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। সাহেদ চলে েযতে নিলে তাকে েপছন হতে েডকে বলে উ?ে, “ শুনেন বাবা- ”সাহেদ েথমে গিয়ে েপছন ফিরে তাকালে েস বলে, “ আপনার পিতার নাম কি?” একথা শুনে সাহেদ অবাক হয় কারন এই প্রথম েকান েলাক ডাইরেক্ট তার পিতার নাম জানতে চাইছে। তাই সাহেদ রাজাকারের সামনে দাড়িয়ে বলে, “ একথা েকন জানতে চাইছেন?”
“ না - আপনার েচহারা হূবহূ পাকিস্তান মিলিটারীর সিনিয়ার অফিসার শাহনেওয়াজের মত েদখতে। এতখানি মিল তার সাথে তাই জানতে চাইলাম।”
“আপনি কি করে জানেন?
“ কি কন বাবা, তার সাথে কাজ করেছি।”
“কখন করেছেন?”
“করেছি অনেক বছর আগে।”
“ ১৯৭১ সালে ?”
“জ্বি”
“ তারমানে আপনি - রাজাকার?” একথা শুনে েস হাসিভরা মুখে বলে, “সবাইতো তাই বলে।”
“এমন ভাবে বলছেন েযন কত েনক কাজ করেছেন।”
“ তা বলতে পারেন, যা করেছি ধর্ম প্রতিষ্?ার জন্য --”
কথা েশষ না হতেই সাহেদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “ধর্ম, েকানটা ধর্ম। আপনারা যা করেছেন েসটা ধর্ম নয় ধর্মের নামে অধর্ম করেছেন। েকান ধর্মে েলখা আছে এভাবে মানুষ হত্যা করা নারীদের েভাগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে তাদের সম্মানহানী করা। সৃষ্টির েশ্রষ্?জীবের অপমান নয় েতারাতো সৃষ্টি কর্তাকে অসম্মান করেছিস। আর এই েনাংরা মুখে ধর্ম প্রতিষ্?ার কথা উচ্চারন করিস।” সাহেদকে েক্ষপে েযতে েদখে রাজাকারটি ভয় েপয়ে দ্রুত পালাতে থাকে আর সাহেদ তাকে থামানোর েচষ্টা করে। সাহেদ বলে, “কোথায় যাচ্ছিস, দাড়া আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যা। ঐ পশুটাকে েকাথায় পাব, ?িকানা বল ?” েপছন হতে েদŠড়ে েযয়ে কাধে হাত রাখতেই তাকে ধাক্কামেরে দূরে শরিয়ে েদŠরে পালাতে থাকে। সাহেদ েপছনে ছুটে যায় কিন্তু হ?াৎ রাস্তার অপর প্রান্ত হতে আসা এক বাসের ধাক্কায় রাজকারটি ছিটকে পরে মারা যায়।
সাহেদ েদŠড়ে কাছে এসে তার পাঞ্জাবির কলার ধরে বলে, “এই উ? তাকা আমার দিকে - বল আমায় েকাথায় পাব ঐ পশুটাকে, বল?” আশে পাশ্বে েলাকের ভীড় জমে যায়। এক েলাক বলে,“কি করছেন ভাই, েদখছেন না েসতো মরে েগছে।” েলাকটির কথা শুনে রাজাকারটিকে েছড়ে দিয়ে উ?ে চলে যায় সাহেদ।
রুবিনা ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হতে থাকে। েস তার ঘরে এশা ও ইরিনের সাথে গল্প করছে। রুবিনা খাটে বসে আছে আর ইরিন ও এশা তার েকালে মাথা েরখে শুয়ে আছে। বাইরে লনে বসে নকিব ও ইকবাল চা পান করছে হ?াৎ ইকবাল সাহেদকে বাড়িতে েভতরে েদখতে পায়। সাহেদ তার দিকেই এগিয়ে আসে। ইকবাল রুবিনার জন্য ভয় েপতে থাকে যদি েস সাহেদকে েদখে েনয়। ইকবালকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে েদখে নকিব েপছনে ফিরে তাকায়। সাহেদ সামনে আসতেই তারা দুজনই দাড়িয়ে যায়।
নকিব বলে,“সাহেদ তুমি এখানে েকন?”
সাহেদ বলে, “ আমি কি েদখতে ঐ পশুটার মত?”
ইকবাল মুখ ফিরিয়ে েনয় আর নকি বলে, “ েতামাকে কত করে বলেছি ভুলে যাও সব। েকন শুনো না আমার কথা?”
সাহেদ বলে, “ সব ভুলে যাব আমি, শুধু বলে দাও আমিকি েদখতে ঐ পশুটার মত?”
ইকবাল বলে, “ জানি না - কিছু জানি না। যদি জানতাম তাহলে খুজেবের করে নিজের হাতে ঐ জানোয়ারটাকে গুলি করে হত্যা করতাম। চলে যাও এখান েথকে, চলে যাও।” উত্তেজিত হয়ে েস েসখান হতে চলে যায়।
নকিব বলে, “েদখ সাহেদ সত্যি আমরা তাকে েদখিনি তবে হ্যা এখন রুবিনা েকবল েতামাকে েদখলেই ভয় পায় আর কাউকে নয় তাই অনুমান করা যায়। হয়তো েতামার েচহারা েদখতে -----। সাহেদ সব ভুলে গিয়ে এদেশের অসহায় মানুষ গুলোর পাশ্বে েযয়ে দাড়াও তাদের জন্য কিছু কর েদখবে েতামার কষ্ট অনেক কমে যাবে।”
সাহেদ বলে, “এই েচহারা নিয়ে কারও জন্যই কিছু করতে পারবোনা। েয কাজে হাত েদব মনে হবে েযন কারও -------” বলে উ?ে ঘৃর্ণর স্বরে “পৃথিবীর েয প্রান্তেই থাক না েকন ঐ পশুটাকে আগে খুজে েবর করে নিজ হাতে হত্যা করে তারপর যদি েবচে থাকি তবেই নিজের বাকি জীবন বিলিয়ে েদব এদেশের মানুষের জন্য, েদশের জন্য।” এ কথা বলে সাহেদ চলে যায় নিজের ঘরে। েসখানে কম্পিউটারে েনট সার্চ করে পাকিস্তান মিলিটারির শাহনেওয়াজের তথ্য খুজে েবর করে। েসখানে শাহনেওয়াজের ছবি েদখতে পায় হূবহূ তার মত। নিচে আপডেট পরে শাহনেওয়াজ গত কয়েক বছর আগে মারা েগছে তাই েদখে েস উত্তেজিত হয়ে নিজের ঘরে ভাংচুর করে।
রুবিনা এখন আগের তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক এখন েসতার পরিবারের সাথে সময় কাটায়। সবার সাথে বাইরে ঘুরতে যায়। একদিন পার্কের েভতর হাটার সময় রুবিনা ও ইকবাল পাশাপাশি থাকে হ?াৎ কিছু একটা েদখে েস আনন্দিত হয়ে ইকবালের হাতে ধরে নিজের অজান্তে, ইকবাল রুবিনার দিকে তাকিয়ে হাটতে থাকে কিছুক্ষন পর রুবিনা েখয়াল করে েস ইকবালের হাত ধরে আছে। একসময় েস ইকবালের বাহুতে মাথা েরখে হাটতে থাকে এ দৃশ্য এশা েদখতে েপয়ে তার মাকে েদখালে তারা আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। এশা নিজের েমাবাইলে রুবিনা আর ইকবালে একান্ত মূহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করে েনয়। আর ঐ দিকে সাহেদ এক গাছের আড়াল হতে দাড়িয়ে রুবিনা েক স্বাভাবিক েদখতে েপয়ে আনন্দিত হয়, তার েচাখ েবয়ে আনন্দ অশ্রু ঝরে। েকউ েদখার আগেই সাহেদ েসখান হতে চলে যায় আর যাবার সময় মনে মনে ভাবে, “ আর েকান কুৎসিত অতীতকে আমি আমার মায়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত খারাপ করতে েদবনা।
এখন েথকে আমার মা এমনি তার পরিবারের সাথে আনন্দে জীবন অতিবাহিত করবে। েভবোনা মা েতামার জীবনের কুৎসিত অতীতকে আমি আমার সঙ্গে নিয়ে চলে েগলাম। েতামরা ভাল েথকো।”
এক সময় চলে আসে েসই মূহূর্ত তৈরি করা হয় বীরাঙ্গনা নারীদের উদ্দেশ্য স্মৃতি স্তম্ভ। তাদের সস্মানোনা জানানোর জন্য আসে লাখো মানুষ। একে একে বিশেষ অতিথী সহ সবাই ভাষন েদয় এমন কি বীরাঙ্গনা নারিরাও জানায় তাদের কথা আর ধন্যবাদ জানায় এই সম্মানোনার জন্য। একপর্যায়ে তাদের েমডেল ও সার্টিফিকেট েদওয়া হয়। প্রস্তুতি েনয় স্তম্ভ উন্মেচন এবং পতাকা উত্তলনের জন্য ?িক এমন সময় ঘরে বসে থাকা সাহেদ নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে ভাবে, “ ঐ পশুটার ছায়া এই বাংলার মাটিতে থাকবে না। তাই আজকের এই শুভদিনে সারা জীবনের জন্য এই ছায়াকে আমি মুছে েদব। নিজ হাতে আমি এর সমাপ্তি টানব তবেই হবে প্রকৃত শুভদিন। ”তারপর েস একটা ধারালো ছুরি নিয়ে নিজের বাহাতের কব্জিতে বসিয়ে েজাড়ে েপাচ মারে।
একদিকে সাহেদ হাতে েপাচ েদয় আর অন্যদিকে ?িক তখনই জাতীয় পতাকা উত্তলন ও স্তম্ভ উন্মচন করা হয়। একদিকে সাহেদ মাটিতে পরে যায় আর অন্যদিকে সবাই মিলে দাড়িয়ে সম্মান জানায়।
অনুষ্?ান হতে নকিব বাড়ি ফিরে সাহেদের ঘরে েযয়ে েদখে েস আত্মহত্যা করেছে। নকিব দ্রুত তার পাশ্বে যায় এবং ধরে েদখে েবঁচে েনই সাহেদের এক পাশ্বে পরে আছে একটা চি?ি। নকিব চি?ি হাতে নিয়ে পড়ে েদখে েসখানে লিখা আছে, “ েভবে ছিলাম নিজ হাতে ঐ পশুটাকে হত্যা করব কিন্তু তা আর হল না কারন সৃষ্টিকর্তা ওকে আগেই এই দুনিয়া হতে তুলে নিয়েছে। আজ আমার মা অনেকটাই সুস্থ্য েস তার পরিবারের সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে কিন্তু আমরা এই েচহারা তাকে কি তার কুৎসিত অতীত হতে মুক্তি েদবে হয়তো পূনরায় অসুস্থ্য করে েদবে। তাই আমি আমার মায়ের স্মৃতি হতে চিরকালের জন্য এই েচহারাকে নিশ্চিহ্ন করে দিলাম। আমায় ক্ষমা করে দিও বাবা - আমি েতামাদের সবাইকে অনেক ভালবাসি। েতামরা সবাই ভাল েথকো। আমার এই মৃত্যুর জন্য েকউ দায়ী নয়।
ইতি
হতভাগ্য সাহেদ”
নকিবের েকালে সাহের মাথা আর েদহটি পরে আছে েফ্লারে। তার েচাখ গড়িয়ে পানি ঝরে।
“সমাপ্ত”

“সাহানা আনোয়ার”
০১৭২৪৯৭০৪৩৯”







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.