নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলা ১৯৭৭, স্মৃতিচারণ

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৩৮

১৯৭৭ সালে ঢাকাতে প্রথম যাই বইমেলাতে। বাংলা একাডেমির পূর্ব দিকের গেট , ঐ একটাই গেট ছিল আর তা দিয়ে হাতে গোনা উৎস্যুক দর্শকের সমাগম হতো । মুক্তধারা, নওরোজ, ইউনিভারসিটি প্রেস আর কিছু লাইব্রেরী তাদের ও অন্যের প্রকাশ বা সংগ্রহ নিয়ে সাজগোজহীন নিরাভরণ বই মেলায় অংশ নিয়েছিল । আমার সিনিয়র রেজা ভাই আমায় নিয়ে যেতেন এসব আয়োজনে । তখন ঢাকা শহরের এদিকটায় বিনোদনের কিছুই ছিলনা ।
প্রায় জনমানবহীন রাস্তা আর একাডেমীর পিছনে বন জঙ্গল ও একটা দুটো বাড়ী ছিল কর্মচারিদের জন্য । তিনটি স্টল মোটামুটি বইতে পরিপূর্ণ আর বাকীরা ডেকোরেটরের টেবিলে সাদা চাদর বিছিয়ে বই রেখেছিলেন । মুক্তধারা তাদের দোকানের শোকেস নিয়ে এসেছিলেন বইমেলায় । রাতে বই গুছিয়ে রাখা হতো আর কর্মচারীদের কেঁউ একজন মশারি লাগিয়ে মাটিতে ঘুমাতেন । বড় সহযোগিতার ভাব ছিল বই বিক্রেতাদের মধ্যে ।

মাত্র সাতটি স্টল ছিল ১৯৭৭ সালে । মুক্তধারা পরিপূর্ণ , বাকিদুটো আংশিক আর অন্যরা কোনমতে যারা রাতে বই বেঁধে একটি স্টলে রাখতেন । ২১ ফেব্রুয়ারির আগের দিন আরও কয়টি বই বেচার প্রতিষ্ঠান হাজির হোল বই আর ম্যাগাজিন নিয়ে । শুরুই হয়েছিল ১৪ কি ১৫ তারিখে আর শেষ হয়েছিল ২১র সন্ধ্যা রাত্রে । ২১র দিনটায় সকালেই ভিড় করছিলো শহীদমিনারে আগত বাঙ্গালী সুজন যারা মালা দিয়ে স্মরণ করেছিল ভাষা শহীদদের । আমিও মিনারে ফুল দিয়ে সারা দিন বইমেলায় মানুষ গুনেছি ।
চারুকলা তখন আর্ট কলেজে আমরা স্বউদ্যোগী হয়ে প্রচার চালাতাম বা উদ্ভুদ্ধ করতাম মেলায় যেতে যাতে আমরা ফাঁকা জায়গায় ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে বাদাম খেয়ে আড্ডা দিতে পারি । আমাদের অনুরোধ খুব কাজে দেয়নি কারন শাহনেওয়াজ হলের বাসিন্দারা খুব ক্ষুধার্ত থাকত আর ৬টা বাজতেই গরম খাবারে তারা মনোনিবেশ করত । আমার সহপাঠীদের নিয়মিত না পেলেও রেজা ভাই ও আরও কজন উপরের ক্লাসের ছাত্র অথবা পাশ করে যাওয়া আর্টিস্টরা থাকতেন ।
নতুন বই কনসেপ্ট টা তখন ছিলনা বা কেউ ২১কে সামনে রেখে কোন বই ছাপাননি । কিছু লেখক ও কবিকে দেখেছি তখন মেলাতে । প্রকাশকরা তাদের বছরওয়ারি প্রকাশনা নিয়ে এসেছিলেন । বাইরে একটি চটপটির দোকান সাহস করে দাড়িয়ে ছিল হ্যাজাক জালিয়ে । তখন অত পয়সা পকেটে থাকত না যে বই কিনব তবে রেজা ভাই তিনখানি বই কিনেছিলেন মেলা থেকে যা দেখতে হলের অনেক ছেলেই এসেছিল । রেজা ভাইয়ের সহপাঠীরা বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন কে কখন পড়বেন । এখন যেমন বই সংগ্রহের ভিড় তখন চিত্রটি ছিল হতাশার । সবগুলো স্টল মিলিয়ে কয়শ টাকা মাত্র বেচেছিলেন । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গিয়েছি মেলায় তাও দিনের বেলায় ভিড় এড়াতে ছেলে আর মেয়ের জন্য বই কিনতে । নিজেও কিনেছি প্রবন্ধ,ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ক বই। ২০০৮এর সন্ধ্যায় ধরা খেয়ে গেলাম প্রচণ্ড ভিড়ে । ভিড় যেদিক ঠেলে নিয়ে যায় সেদিকে যাই, অবস্থাটা বড় দুরুহ কিন্তু আনন্দদায়ক এজন্য যে মেলা অর্থাৎ বইমেলা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে । ৮২ থেকে একটা দীর্ঘ অনুপস্থিতি ছিল উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ গমন এবং শেষে চাকুরিতে কিছুকাল অবস্থান । বইমেলার এইযে সার্থকতা তার পেছনে এক বিশাল অবদান রয়েছে চিত্ত রঞ্জন বাবুর । বাংলাদেশে বই পড়া অভ্যাস তৈরির জন্য লেখক, প্রকাশক ও বইমেলার অবদান সবচে বেশী । এদের কাউকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই । বইমেলা প্রতিস্ঠিত হয়ে গেলে সরকার এগিয়ে এলেন । এর কৃতিত্ব কোনও সরকারের নেই । আছে প্রকাশক ও লেখকদের । এবার বইমেলা রেসকোর্স উদ্যানে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে । তাতে মনে হয় মাছের বাজারের ভাবটা দূর হবে যদিও যাইনি এখনো , যাবো ,নীলসাধুদের স্টলে আড্ডা দিতে হবেনা ? বাদামওতো খেতে হবে ।
একুশ,বইমেলা, বৈশাখ এখন বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে । যে বা যারা যেভাবেই চেষ্টা করুকনা কেন নাড়ীর ভিতরে বয়ে চলা ত্রয়ীর উচ্ছ্বাস আর অদম্যতাকে কখনো বন্ধ করা যাবেনা ।
শুভ বইমেলা !!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

আরজু পনি বলেছেন:

বাহ্ দারুণ স্মৃতিচারণ !
খুব ভালো লাগলো জেনে ।


আমার ব্লগারদের বই নিয়ে পোস্টটাতে (Click This Link) এ্যাড করে নিলাম ।

শুভেচ্ছা রইল ।।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭

নিজাম বলেছেন: অনেক বছর আগের এক বইমেলা। সালটা মনে নেই। মনে হয় ৮৪-৮৫ হবে। আমার এক সিনিয়র ভাই-এর সাথে মেলা প্রঙ্গনে দেখা হলো। তিনি বললেন, একজন মহিলা কবি অসম্ভব এক কবিতা লিখেছেন। কবিতার কয়েকটি লাইন আবৃত্তি করলেন। আমি হতবাক। এমন লেখা কেউ লিখতে পারে? আমি কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে কথা বললে তিনি বললেন, যাও ওমুক স্টলে। সেখানে ওমুক কবিতার বই আছে এবং স্টলে বইয়ের লেখিকাও রয়েছেন। প্রায় দৌড়ে সেখানে গেলাম, কবিতা বইটি হাতে নিয়ে পড়লাম এবং মহিলা কবিকে দেখলাম। রাজ্যের বিস্ময়ভরা চোখে দেখলাম একা বসা তিনি। তিনিই এ যুগের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৯

সুফিয়া বলেছেন: লেখাটিকে শুধুমাত্র আপনার অতীত দিনের স্মৃতিচারণ হিসেবে দেখে একে সীমাবদ্ধ গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে চাইনা। লেখাটি তথ্যসমৃদ্ধ। বইমেলাকে নিয়ে যাদের ভিতর আবেগ-উদ্দীপনা কাজ করে তাদের সবার জানা দরকার এই বই মেলার সূচনা লগ্নের ইতিবৃত্ত। সেদিক থেকে আপনার লেখাটি প্রশংসার দাবী রাখে। তবে এত অল্পতে সারলেন যে মনে অতৃপ্তি রয়ে গেল।

তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। সাথে ++++++++++++++

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৯

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: এত আগের স্মৃতিচারণ। চমৎকার!

শুভেচ্ছা সতত।

৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

মামুন রশিদ বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভালো লাগল ।

৬| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার সাথে দেখা হলে এই গল্প করার সুযোগই হয়ে উঠে না। নেক্সট টাইম দেখা হবে আড্ডা হবে ভাই। ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল।

৭| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ !!

৮| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪২

নিশাত তাসনিম বলেছেন: খুব ভালো একটি স্মৃতিচারণ পোস্টে ভালোলাগা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.