নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন জাপানী লি হুইএর মা এবং হিরোশিমা

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৭



লি হুই’র জাপানী নাম কি জানা হয়নি । লি হুই চীনে শিক্ষকদের দেওয়া নাম । ও সিরামিক্সে পিকিংএ পড়ছে আমার স্ত্রীর একই স্কুলে। আমাদের ফ্লোর ম্যাটের ওপর জাপানী কায়দায় বসে লি হুই আমায় এবং আমার স্ত্রীকে বলছিল হিরোশিমার সেই মর্মান্তিক কাহিনী । দরজার কাছেই হিটারে চিকেন ফ্রাই হচ্ছে , আমরা বিয়ার পান করছি । আসলে আগেই একদিন লি হুইকে কারো জন্মদিনে জিজ্ঞাসা করেছিলাম হিরোশিমার কথা । তাই আজ লি হুই সময় দিয়েছে শোনাবে ওর মায়ের গল্প ।
আমার মা তখন অনুঢ়া কিশোরী । হিরোশিমা শহরে বাগানওয়ালা একটি বাড়িতে মা বাবা ভাই বোন সবাইকে নিয়ে বসবাস । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে । সাইরেন বাজলেই ঘরে ঢুকে লুকিয়ে পড়ি । আমার বন্ধুদের সাথে পুতুল খেলা বন্ধ । বাগানে বেরুলে কথা হয় , দেখা হয় । মা ভীষণ ব্যাস্ত আমাদের জন্য রান্না বান্না নিয়ে । বাবা অফিস যাচ্ছেন নিয়মিত । মা বাবাকে পই পই করে সাবধান করে দেন । ছয়ই আগস্ট সকাল , বেশ রোদ্দুর উঠেছে । ঝলমলে দিন । মা বাইরের বাগানে কাপড় নাড়ছেন । বাবা বাজারে । সাইরেন বাজলে এখন কেউ ভয় পায় না কারন আজতক এখানে বোমা ফেলেনি কেউ। আমি জানালার পাশে কিছু একটা হাতে নিয়ে দেখছি । হটাৎ ভীষণ ঝলসানো আলো চারিদিকে , মনে হল সূর্য নিচে নেমে এসেছে । আমার সামনে জানালার কাঁচ ফেটে টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল । আমি বিস্ময়ে হতবাক দেখলাম আমার মা লুটিয়ে বাগানে । আমার শরীর দিয়ে রক্ত পড়ছে কিন্তু আমার শরীরে তো আঘাত লাগেনি , রক্ত কেন ? এবার যন্ত্রনা বোধ হল , শরীর কুঁকড়ে যাচ্ছে । আমার ভাই বোনের অবস্থা সুবিধার না । খেয়াল করলাম সবাই আহত আমরা । আমার মা বাগানেই মারা গেছেন , ফুল গাছের ওপর নেতিয়ে আছেন তিনি । ভীষণ হতভম্ব আমি যন্ত্রনা সয়ে বাগানে গেলাম । মা শুয়ে , তার মাথা , শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে । আমার ইচ্ছে হল মাকে ছুয়ে দিই কিন্তু এত বেদনা শরীরে যা ক্রমশ বাড়ছে , ইচ্ছে হলনা বা পারলাম না মাকে ছুতে । আমার ভাইবোনরা ধীরে বেরিয়ে এসেছে । আমার শরীর ভেঙ্গে পড়ছে একদম । রাস্তা দিয়ে ধীর পায়ে দুই দিকে দুইহাত ঝুলিয়ে উচুতে রেখে কি কষ্ট করে হাঁটছে সবাই । আমি দুই হাত শরীর থেকে সরিয়ে দেখলাম যন্ত্রনা কিছুটা কম হচ্ছে । গেটের কাছে এগিয়ে ওদের জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় যাচ্ছ তোমরা ?
হাসপাতালে । কষ্টকর কণ্ঠের জবাব ।
আমরা পেছনে খালি বাড়ি রেখে বেরিয়ে এলাম । ধীর পায়ে সবার সাথে এগিয়ে যেতে গিয়ে আমার যন্ত্রনা কিছুটা কম মনে হল । হাজার মানুষ হাঁটছি আমরা । সবাই রক্তাক্ত । অনেক সুস্থ মানুষ হাসপাতালে এসে দ্রুত আমাদের সেবা দিচ্ছিল । মাঠ এবং বাগানে তাবু লাগিয়ে আসতে থাকা বিপুল আহত মানুষের সেবা দিতে সুস্থ জাপানীদের সেকি চেষ্টা । ব্যাথার ওষুধ , শরীরে সংক্রমণ এড়াতে ইঞ্জেকশন , মলম লাগিয়ে নিথর পড়ে রইলাম । ডাক্তার আমায় জানালেন তোমার শরীরে কাচের গুড়ো এমনভাবে ঢুকে গেছে যে তা কখনই বের করা যাবেনা । সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলাম । বাবা আমার মায়ের মৃতদেহের সৎকার করেছিল অন্যদের সাহায্যে । ধ্বংসস্তূপ হিরোশিমার রাবিশ সরানোর কাজ চলছে । আমেরিকানরা বোমা ফেলেছে হিরোশিমার উপর । আমি বড় হতে লাগলাম । নিত্য ওষুধ আনি হাস্পাতাল থেকে । শারীরিক বেদনা নিত্য সঙ্গী আমার এবং হাজারো হিরোশিমাবাসির । এরই মধ্যে পুনঃগঠন হল হিরোশিমার । আমার বিয়ে হল । আমি পরপর ২০ বছরে সুস্থ ৫ টি শিশুর জন্ম দিয়েছি । আমরা বান্ধবীরা যারা আহত এবং শারীরিক যন্ত্রনায় ভুগি তারা একটা ক্লাব করলাম । প্রতি সপ্তাহে আমরা ধ্যানে বসি যন্ত্রনা লাঘবের জন্য । এখন আমি অবসর নিয়েছি চাকুরি থেকে । ছেলে মেয়েদের বাচ্চা লালন করি কিন্তু ওই যে লক্ষ টুকরা কাঁচ যা কখনই বের করা যাবেনা তা আমাকে বহন করতে হচ্ছে । প্রতি বছর এইদিন ৬ আগস্ট আমরা নগরীর যে দালানের ওপর বোমা ফেলেছিল সেখানে জমায়েত হই ভোর বেলায় । গান গাই যেন এমন বিপদ আর কারো উপর না আসে ।
লি হুই’র চোখ ছল ছল , আমাদেরও । আরেকটু বিয়ার ঢেলে দিলাম ওর গ্লাসে । আমরা চিকেন ফ্রাই খেলাম , সাথে নুডলস , আলু । লি হুইএর একটি ছবি ছিল , খুজে পেলাম না । হারিয়ে গেছে সম্ভবত । এই লেখা লেখার সময় নিশ্চয়ই লি হুইএর মা বেচে নেই , লি হুইও বুড়ি হয়ে গেছে । আমাদের কোন যোগাযোগ নেই ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমাদের স্কুলের সিলেবাসে হিরোশিমায় বোমা ফেলার মুহূর্তের ঘটনা বর্ণনা করে একটা গল্প ছিল যেখানে একজন ভুক্তভুগির বর্ণনা ছিল। বর্ণনাটা অনেকটা আপনার লেখার বর্ণনার মত। সেখানে বলা ছিল যে ঘটনার ঠিক পরমুহূর্তে তারা হাতের তালু দিয়ে হাতের চামড়ার উপর ঘোষলে চামড়া উঠে যেত গলিত মোমের মত। এখন যে পারমানবিক বোমা আছে সেগুলির শক্তি নাকি হিরোশিমার বোমার হাজার গুন। লিটল বয় আর ফ্যাট ম্যান ছিল হিরোশিমা আর নাগাসাকির বোমা দুটির নাম।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৫৭

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যা কাচে বিদ্ধ হওয়া মানুষ সর্বাধিক । কাছের মানুষেরা নানাবিধ বস্তুর আঘাতে মারা গিয়েছিল ।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৫

আমি সাজিদ বলেছেন: কি হৃদয়বিদারক!

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৫৮

শাহ আজিজ বলেছেন: গেল পরশু বৈরুতে একই ঘটনা ঘটেছে ।

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৩৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এই বোমা হামলার হাজরটা খারাপ দিক কিন্ত একটা ভাল দিক হল যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেছে।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: আনবিক বোমা বন্ধ হয়েছে কিন্তু মিসাইল তো বন্ধ হয়নি । ফসফরাস বোমা আরও মারাত্মক ক্ষতিকর ।

৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


জাপানীদের উচিত ছিলো না অকারণে পার্ল হার্বার আক্রমণ করা ও ইউরোপে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরও যুদ্ধ করা।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:০৮

শাহ আজিজ বলেছেন: আক্রমন একহাতে হয়নি । জাপানিরা এত বাড়াবাড়ি করেছিল যে আমেরিকান বোমা তাদের ভদ্র আর গঠনশীল করে তুলল ।

৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়ে মনটা বিষন্ন হয়ে গেল। আজ রাতে আর ঘুম আসবে না। কিছুক্ষন পর অবশ্য ভোর হয়ে যাবে।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:০৯

শাহ আজিজ বলেছেন: এখন বৃষ্টি হচ্ছে , আজ ঘুম হবে ।

৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: না আমাদের এখানে বৃষ্টি হয়নি।
খুব গরম।

১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৫

শাহ আজিজ বলেছেন: ৭ তারিখের উত্তর ১১ তারিখে , কি আশ্চর্য !! কিন্তু দেখাচ্ছে ৭ তারিখ । নোটিফিকেশন এরকম হল কেন ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.