নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টাকা আমার টাকা ওগো টাকায় পকেট ভরা // রম্য

১৯ শে মে, ২০২১ সকাল ১০:৫৪



হঠাৎ মোবাইলে একটা SMS এলো।
তাকিয়ে দেখি, "সরকারের তরফ থেকে আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে!" আমি যেমন চমকে উঠলাম! তেমনই মূহুর্তেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম! পলকেই ঘর থেকে বের হয়ে আপ্লুত কণ্ঠে চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে বলতে শুরু করলাম, -'সবাই শোনো, দিন বদলে গেছে, আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা এসে গেছে"।
রান্নাঘর থেকে বউ হাসি মুখে বেরিয়ে বললো,
-'অত খুশির কি আছে, আমার এ্যাকাউন্টেও তো ৫০ লাখ টাকা এসেছে। এই যে মেসেজ দেখ।' বলেই আমার দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি, হ্যাঁ, তাই'তো! তার মোবাইলেও একই মেসেজ! একটু অবাক হলাম!
ভাবলাম
আশেপাশে সবাইকে গিয়ে বলি।
বাড়ির পাশের লোক আমায় বলল, -"বেশি উত্তেজিত হইও না, আমাদের এ্যাকাউন্টেও ৫০ লাখ টাকা এসে গেছে।'
আমি থমকে গেলাম। যেনো খুশি সব উড়ে গেল! ভাবলাম যাই, বাজার থেকে কিছু মিষ্টি নিয়ে আসি। কিন্তু হায়! বাজারে গিয়ে দেখি, দোকান বন্ধ। পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, -'ও ভাই এই মিষ্টির দোকান বন্ধ কেন?"
সে বললো, -"মিষ্টি দোকানদারের আর দোকানদারি করার কি দরকার। কারণ, তার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ এসে গেছে।"
ছোট্র একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবলাম,
একটু নিউ মার্কেটে যাই, সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসি। সে'কি! এখানেও কোনো দোকান পাট খোলা নেই। ওনাদের সবার এ্যাকাউন্টেও নাকি ৫০ লাখ এসে গেছে.....।
প্রচন্ড খিদে পেয়েছে,
ভাবলাম এখানে তো দোকান পাট বন্ধ।
সামনের দিকে যাই, ভালো কোন হোটেলে তৃপ্তি করে খাওয়া যাবে। সামনে যতই যাই সবই দেখি ফাঁকা।
হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাগত জানানোর সেই লোকও নেই, যে কাস্টমার দেখলেই সালাম ঠুকে ওয়েলকাম করেন, শপিং মলের সিকিউরিটিও নেই।
সবার এ্যাকাউন্টেই ৫০ লাখ টাকা এসে গেছে। মার্কেটে কেউ নেই। সবজি ওয়ালা, চা ওয়ালা, সরবত ওয়ালা
ফাস্টফুড ওয়ালা কোথাও কেউ নেই, কিচ্ছু নেই।
সব কিছুই বন্ধ।
সকলের ঠিকানা এখন ব্যাঙ্কে ৫০ লাখ টাকা তোলার জন্যে। কেননা এখন আর কারো কাজ করার দরকার নেই, কারণ সবাই এখন লাখোপতি।
আমার এক বন্ধু ফোন করে বললো,
"আমি জব ছেড়ে দিয়েছি, আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা আছে।' আমার এক বড় ভাই ফোনে জানালো, -'তার আর্ট স্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছে।'
আমার অসংখ্য বন্ধুর টিউশন পড়ানো অফ।
নিপা নামের মেয়েটিও আর কলেজে যায় না, ইভান আর জন্নে হয়ে চাকুরী খু্ঁজে না। 'শ্রমিকরাও এখন আর কারখানায় যায় না, শিল্প-কলকারখানা সবকিছুই বন্ধ।
কারণ,
সবার এ্যাকাউন্টেই ৫০ লাখ টাকা এসে গেছে।
সবাই এখন বড়লোক। আনন্দে সবাই সুর তুলছে, গান করছে, নৃত্য করছে, উৎসবে মশগুল ছোটবড় সবাই।
বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে মাঠের দিকে গেলাম,
জমিতে কেউ নেই, কৃষকরা সবাই কাজ ছেড়ে বাড়িতে
আড্ডা দিচ্ছে। এখন তাদের রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করার কি দরকার? কারণ, সবাই এখন টাকাওয়ালা। প্রত্যেকের এ্যাকাউন্টেই এখন ৫০ লাখ টাকা।
::
মাসখানেক পর দেখা গেল
খিদের জ্বালায় অনেকেই কাঁদছে। কেননা, জমি থেকে কেউ ফসল তুলছে না, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ, হোটেল, মেডিক্যাল, কলকারখানা সব বন্ধ।
অসুস্থ হয়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, খাবার নেই, ডাক্তার নেই, চিকিৎসা নেই! পশুরাও অনাহারে মরছে! জমিতে সবুজ ঘাস নেই, সোনালী ফসল নেই। চারদিকে কেবল নেই আর নেই, আছে কেবল টাকা আর টাকা!
মানুষ এখন ছুটছে মুঠো মুঠো টাকা নিয়ে।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে পকেটে টাকা নিয়ে।
লক্ষ-লক্ষ টাকা নিয়ে মানুষ কাঁদছে আর বলছে,
-'এই ভাই নাও ১০ হাজার টাকা, আমাকে ২০০ গ্রাম দুধ দাও। আমার বাচ্চাটা অনাহারে মারা যাচ্ছে...!"
কিছুদিন পরেই মানুষ অনাহারে মরতে আরমাভ করলো, মরছে। কিছু কিছু লোক টাকার ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে রাস্তায়।
এই নাও ভাই ৫ লাখ টাকা, "আমাকে ৫ কেজি চাল দাও।
১০ দিন থেকে না খেয়ে আছি।"
সব বাজার হাট বন্ধ হয়ে গেছে।
শাক সবজি খাবার দাবার কারো কাছেই নেই।
সবদিকে শুধু মৃত্যুর ছবি দেখা যাচ্ছে।
আমিও আমার ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি, নাও ভাই নাও ৫০ লাখ নিয়ে নাও,
তবুও কিছু খাবার দাও"।
কে কার টাকা নেবে, খাবার কারো কাছেই নেই।
মানুষ মানুষের দিকে তেড়ে আসছে হিংস্র সিংহের মত।
মনে হচ্ছে, মানুষ মানুষকে খাবে।
অচেনা একলোক তাড়া করেছে আমাকে, চিবিয়ে খাবে বলে।
ছুটছি আমি। আমি ক্ষুধার্ত মানুষ, কতটা আর ছুটব?
পড়ে গেলাম হোঁচট খেয়ে....মা গো করে চিৎকার করে উঠলাম.....
বউ তখন ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে "কি হলো তোমার ?
সকাল হয়ে গেছে, ঘুম থেকে উঠো, চোখে মুখে পানি দিয়ে আসো।
এই তুমি বাচাঁও বাঁচাও বলে চেঁচাচ্ছিলে কেন?
কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে নাকি ?"
আমি বললাম, "না, খারাপ নয়, ভালো দিনের স্বপ্ন। "
::
আমরা অনেকেই গরীব,
কিন্তু ঘরে দু'মুঠো খাবার তো আছে,
তৃষ্ণার পানি তো আছে,
শিশুরা খেলছে,
পশুরা মাঠে ঘাস খাচ্ছে,
দোকানে মানুষের ভিড় আছে,
যানবাহন চলছে তো চলছেই....
মানুষের সমাগমও চলছে অবিরাম.....
বাগানে ফুল ফুটছে,
প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে ওঠছে!!
::
আমরা অনেকেই সহজ করে ভাবি,
আল্লাহ কেন ধনী-গরীব সুষ্টি করলেন? ইচ্ছে করলেই তো সবাই'কে সমান ধন-সম্পদ দিয়ে সুখি করতে পারতেন। বাস্তবতা হলো, ধনী-গরীবেরর বৈষম্য আছে বিধায় পৃথিবী এতো সুন্দর এবং গতিশীল! এই বৈষম্য না থাকলে এই সুন্দর পৃথিবী শ্মশানে পরিণত হতে।।
বিঃদ্র,
সবাই ধনী হলে কি হতো তা'তো দেখতেই পারলেন।
আসুন, এখনই মহান আল্লাহ্ তা'য়ালার দরবারে শোকরিয়া আদায় করি, --আলহামদুলিল্লাহ্!
-------- (সংগৃহীত)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:


এর আগে একবার কোথায় যেন পড়ে ছিলাম।
যা হোক এমন কঠিন বাস্তবতা যেন আমাদের
ফেস করতে না হয়।

এমনই ধারার একটা গল্প ছিলো রুপকথায়।
এক রাজা আল্লাহর কাছে বর চাইেলো যেন
সে যাহা স্পর্শ করবে তা যেন সোনা হয়ে যায়।
তার দোয়া কবুল হলো। সে যাহা স্পর্শ করে
তাই সোনা হয়। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, খাট পালং
এমনকি খাবার পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত না খেতে
পেরে তার মৃত্যু হয়। এমন বিত্ত বৈভব দিয়ে
কি হবে যদি না খেয়ে মরতে হয়।

১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:০৫

শাহ আজিজ বলেছেন: যেমন স্বাস্থ্যের হিজাবের বক্ষ স্পর্শে রোজিনা হয়েছে বিখ্যাত ।

২| ১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:



শেষ গাছটা কাটা হয়ে যাবে যখন
শেষ মাছটা যখন জালে পড়বে।
শেষ জন্তুটা জবাই হয়ে গেলে তারপর
কী দিয়ে তুমি পেট ভরবে।
শেষ জঙ্গল কাটার উদ্যোগে
শেষ ঝর্ণাটা হয়ে গেলে চোট
খাবার জন্য শুধু থাকবে তােমার কাছে
কড়কড়ে টাকার নােট

হায় হায় এ কী শুধু কড়কড়ে টাকার নােট
বলাে পেট ভরবে কি, দিয়ে কড়কড়ে টাকার নােট

শেষ যুদ্ধটা জেতা হয়ে যাবে যখন
শেষ পারমাণবিক সংকট
হয় খেতে হবে শুধু মরুভূমি
নয় কড়কড়ে টাকার নােট

কেউ খাবে এক টাকা দুই টাকা
কেউ খেতে পাবে শুধু পঞ্চাশ
যার আছে বেশি খাও পাঁচশ
যার আছে কম, খাও দশ

খেতে হবে টাকা, শুধুই টাকা
শুকনাে টাকা, শুধু টাকা
টাকার সাগর, টাকার মাছ
টাকার পাহাড়, টাকার গাছ

যদি দেখ হঠাৎ সেই টাকার মরুতে উকি মারছে
ছােট্ট হলদে ফুল
যেন সেটাই তােমার নিজের বিভ্রান্তী চোখের ভুল
----- অঞ্জন দত্ত -----

১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:০২

শাহ আজিজ বলেছেন: চমৎকার ।


খাবো খালি কুচানো টাকার সুপ
এড়িয়ে সবার নজর বেডরুমে চুপ চুপ
মুশকিল হচ্ছে নতুন নোট নিয়ে
আওয়াজ ওঠে মাড়ি দিয়ে
চাবাতে গিয়ে
সবার লুকানো নোট চেক করে দেখি
কারটা হল পুরাতন ময়লায় মাখামাখি
চাঞ্চ চাঞ্চ নেই শুন্য সে পকেট
সব দিয়ে ভরেছে ব্যাংকের ভল্ট
পকেটমারকে জামাই আদরে বলি
পুরাতন দশে দেব ডাবল নোটের কলি
সে বলে এত অসৎ ভাবলেন কখন
যায়নি এখনো ইমান আমান
ঝুলে আছে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়িতে
মারি দ্রুত পকেট মুখে কলেমা জপিতে জপিতে
ভাবলাম থাকতে হলে বেচে আমিও নাববো বাজারে
মারব শুধু পকেট শুধু পুরাতন অতি কৌশল ধীরে ।।

৩| ১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৩

শায়মা বলেছেন: বাহ! এ কারণেই এত রকম মানুষ। এত রকম পেশা।

১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:৪৩

শাহ আজিজ বলেছেন: লোভ । এই লোভকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলে আর একটু সহনীয় হতে পারত এই জীবন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.