নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দত্তক কাহিনী

০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৪৩

দত্তক


এটি ফেসবুকে মান্না খন্দকার এর পেজ থেকে নেওয়া। শিশুদের ভিডিও দেখতে চাইলে দত্তক এ ক্লিক করুন ।




১৯৭২ সালের জুলাইয়ে কানাডায় বিমানবন্দরে বাংলাদেশ থেকে দত্তক গ্রহণ করা ১৫ জন যুদ্ধশিশুর প্রথম দল।
বাংলাদেশ পরিত্যক্ত শিশু (বিশেষ বিধান) আদেশ ১৯৭২ জারি হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কানাডার সমাজকর্মী বনি কাপুচিনো ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেন-এর পক্ষ থেকে ঢাকায় এসে যুদ্ধশিশুদের দত্তক নেওয়ার আয়োজন করেন। দত্তক প্রদানের এই পুরো বিষয়টিতে সহযোগিতা করে তৎকালীন সমাজকল্যাণ বিভাগ। ১৯৭২ সালে ঢাকার তৎকালীন মাদার তেরেসা হোম থেকে দত্তক প্রদান করা ১৫ জন যুদ্ধশিশুর একটি দল কানাডা পৌঁছায়। কানাডার ১৪ জন দম্পতি মোট ১৫ জন যুদ্ধশিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন। এই ১৫ শিশুর মধ্যে ছিল ৮ জন মেয়ে ও ৭ জন ছেলে। এই পথ অনুসরণ করেই ৭১ এর যুদ্ধশিশুদের কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করা শুরু হয়।
দত্তক প্রদান করা প্রথম এই দলে যে শিশুরা ছিলঃ
(১) শিখা : শিখা সাত মাসের গর্ভধারণের পর জন্মগ্রহণ করেছিল, ১২ মার্চ ১৯৭২ সালে ঢাকায়। জন্মের সময় তার ওজন ছিল ২.৭ কেজি। যিনি তাকে মাদার তেরেসার শিশু ভবনে নিয়ে আসেন, তার নাম অজ্ঞাত। তাকে অনাথ আশ্রমে দত্তক দেওয়ার জন্য রেখে যাওয়া হয়েছিল। সিস্টার মার্গারেট ম্যারি শিশুটির নাম দেন শিখা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির যত্ন নিতে শুরু করেন। কারণ ভগ্ন স্বাস্থের শিশুটি অস্বাভাবিকভাবে রোগা ছিল।বর্তমানে শিখা কানাডায় বসবাস করছেন। তার কাটারিনা ও কারমা নামে দুটি মেয়ে আছে।
(২) ওমর : ওমরের জন্ম ২৯ এপ্রিল ১৯৭২ সালে ঢাকায়। মাদার তেরেসার শিশু ভবনে তার নাম দেওয়া হয়েছিল ওমর। জন্মের সময় ওজন ছিল ২.৫ কেজি। আড়াই মাস বয়সে দত্তক হিসেবে সে কানাডায় আসে। টনি দম্পত্তি ওকে লালন-পালন করেন। ওমর বর্তমানে কানাডায় কর্মরত আছেন।
(৩) অরুণ : অরুণের জন্ম ২৭ মে ১৯৭২ ঢাকায়। ওর মা গোপনে এসে তাকে অনাথ আশ্রমে প্রসব করে রেখে চলে যান। জন্মের সময় ওর ওজন ছিল ২.৪ কেজি। আশ্রম কর্তৃপক্ষ ছেলেটির নাম রাখেন অরুণ। কানাডা পৌঁছানোর পর তার দত্তক মা ফেরিরা ছেলের নাম বদলে দেন। ১৯৯২ এর গ্রীষ্মকালে ছেলেটি হসপিটালিটি (অতিথিসেবা) বিষয়ে পড়াশোনা করে জর্জ ব্রাউন শহরে কাজ করছেন।
(৪) সাবেত্রি : সাবেত্রির জন্ম ঢাকায় মাদার তেরেসা শিশু ভবনে ৮ জুলাই, ১৯৭২। নবজাত শিশুটির ওজন ছিল ১.২ কেজি। শিশু ভবনেই তার নাম দেওয়া হয় সাবিত্রি। দত্তক পরিবার ফেরিদের সঙ্গে সে কানাডা পৌঁছায়। ১৯৯০-১৯৯৩ তে সাবেত্রি অন্টেরিও’র লন্ডনে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টেরিও-তে সমাজবিজ্ঞান ও অপরাধবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক পড়াশোনা করে।
(৫) বাথল : বাথলের জন্ম ২৭ জুন ১৯৭২ এ মাদার তেরেসার ঢাকাস্থ শিশু ভবনে। জন্মের সময় তার ওজন ছিল ২.৫ কেজি। তিন সপ্তাহ বয়সে সে কানাডা পৌঁছায়। অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষ ছেলেটির নাম রেখেছিলেন বাথল। তার জন্মদাত্রী মা কোনো তথ্য দিতে চাননি এবং সেসব চাওয়াও হয়নি। কারণ ওটা জবরদস্তিমূলক গর্ভধারণের ব্যাপার ছিল। তাই শিশুটির জন্মের পর পরই তার মা প্রসূতি সনদ ছিঁড়ে চলে গিয়েছিলেন। বাথলের দত্তক নেওয়া বাবা-মা তার নাম বদলে রাখেন রায়ান। বাথল ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরিবেশ ও সম্পদ বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি নেন। ১৯৮৯ সালে রায়ান বাংলাদেশ এসেছিলেন।
(৬) রানী : রানী তার মায়ের গর্ভে মেয়াদের পুরো মাস ছিল না। গর্ভের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই রানীর জন্ম হয় ১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ মাদার টেরেসার শিশু ভবনে। তার জন্মের সময় ওজন ছিল মাত্র ১ কে.জি। তার নাম রানী হিসেবেই শিশু ভবনের রেজিস্টার বইয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়। তার জন্মদাত্রী মা তার জন্মের পর তাকে অনাথ আশ্রম কর্র্তৃপক্ষের হাতে সঁপে দিয়ে অন্তর্হিত হন। রানী ২০ জুলাই ১৯৭২ তারিখে কানাডা এসেছিল মরাল পরিবারে যোগ দিতে। রানীর দত্তকগ্রাহী মা-বাবা মেয়ের নাম বদলে রাখেন রানী জয় মরাল। ১৯৯০ সালে গ্রেড ১২ বাইলিংগুয়াল ডিপ্লোমা নিয়ে রানী গ্র্যাজুয়েট হন। তারপর তিনি অন্টেরিওর কিংসটনে কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং পড়তে যান। রানী এখন শিক্ষকতা করছেন।
(৭) লারা জরিনা মরিস : জরিনা ঢাকার নিকটবর্তী একটি গ্রামে ২৩ অক্টোবর ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিল এবং তাকে শিশু ভবনে ডিসেম্বরে সিস্টার ম্যারির কাছে নিয়ে আসা হয়। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই জরিনা যখন জুলাই ১৯৭২-এ অন্য যুদ্ধশিশুর সঙ্গে ক্যানাডা পৌঁছায়, তার বয়স তখন নয় মাস যদিও সে অত্যন্ত রুগ্নস্বাস্থ্যের শিশু ছিল।আনুষ্ঠানিক রেজিস্ট্রেশনের সময় মরিস দম্পতি ওকে ঢাকা শিশু সদনে যে নাম দেওয়া হয়েছিল সেটা বাদ দেননি। তারা মেয়েটার নাম (প্রথম নাম) রাখেন ল্যারা আর মধ্য নাম জারিনা, যদিও বাংলাদেশে তার জন্মসনদে তার নাম ছিল জরিনা। ফলে শিশু মেয়েটির নাম হলো ল্যারা জারিনা মরিস। অন্টেরিও প্রদেশের ব্র্যান্টফর্ড শহরের নর্থ পার্ক কলেজিয়েট ও ভোকেশনাল স্কুল থেকে হাইস্কুুলের পাঠ শেষ করে ল্যারা ব্যারি শহরে জর্জিয়ান কলেজে ভর্তি হন। ওখান থেকে অনার্স ডিপ্লোমা করেন ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট-এ ১৯৯৩ সালে।
(৮) অনিল : অনিলের জন্ম ২৩ মে ১৯৭২-এ, মাদার তেরেসার শিশু ভবনে, ঢাকায়। শিশুটির জন্মের সময় ওজন ছিল ৩ কেজি। অন্য যুদ্ধশিশুদের মতো অনিলকেও ওর জন্মদাত্রী মা অনাথ আশ্রমে ছেড়ে গিয়েছিলেন, নিজের নাম-ঠিকানা না দিয়ে। অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষ তার নাম রেখেছিলেন অনিল। যখন অনিল কানাডায় পৌঁছল তখন তার বয়স আট সপ্তাহের কম। জন্মের পর অপুষ্টিতে ভুগে ওজনের একাংশ হারিয়ে ফেলে। অনিল ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন পড়াশোনা করে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। শুরুর বছরগুলোতে সে টরেন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। অনিল মেলিসা বার্টেলো নামে এক ইতালীয় বংশোদ্ভুত কানাডীয়র সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
(৯) সমর : সমরের জন্ম ৭ এপ্রিল ১৯৭২ ঢাকায়। মাত্র ১ কেজি ওজন নিয়ে সে কানাডা আসে। তার দত্তক পিতা-মাতা তার নাম দেন মার্টিন। বয়স তিন মাসের একটু বেশি এবং ওজন দুই কেজির নিচে। তার মা-বাবার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল তাদের ছেলেকে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। সৌভাগ্যক্রমে, যত সময় যেতে লাগলো, মার্টিনের ওজন বাড়তে থাকে এবং সে এক সময় তার বয়সী শিশুদের মতোই সক্রিয় হয়ে ওঠে।
(১০) রাজিব : রাজিবের জন্ম ১৯৭২ সালে ১ জুলাই ঢাকার শিশু ভবনে। তার জন্মের সময় ওজন ছিল ৩ কেজি।রাজিব ব্রাউন এলিমেন্টারি স্কুুল টরেন্টো, অন্টেরিওতে পড়াশোনা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে সে বাংলাদেশ সফরে আসে। বর্তমানে সে কানাডায় কর্মরত।
(১১) মলি : মলির জন্ম ৪ মে ১৯৭২ মাদার তেরেসার ঢাকাস্থ শিশু ভবনে। ওর জন্মের সময় ওজন ছিল ১.২ কেজি। মিশনারিজ অব চ্যারিটির সিস্টাররা ওর নাম রেখেছিলেন মলি। মলির মা-ও তাকে অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষের হাতে সঁপে দিয়ে আশ্রম ত্যাগ করেছিলেন গোপনে। হার্টস দম্পতি তাকে দত্তক নেয়। বর্তমানে মন্ট্রিয়ালে বাস করছেন। তিনি মাস্টার্স করেছেন কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মলি শিক্ষকতা করছেন।
(১২) রাজিনা : রাজিনার জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯৭১। সিস্টার ম্যারি শিশুটির নাম রাখেন রাজিনা। ফ্রেড ও বনি ক্যাপুচিনো, যারা শিশুদের তাদের কানাডীয় দত্তক মা-বাবার সঙ্গে মেলানোর দায়িত্বে ছিলেন। তারা রাজিনাকে দত্তক নেন।
(১৩) আমিনা : গর্ভধারণ মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই আমিনার জন্ম হয়েছিল ৩ এপ্রিল ১৯৭২ এ মাদার তেরেসার ঢাকাস্থ শিশু ভবনে। জন্মের সময় আমিনার ওজন ছিল ২ কেজি। সে কানাডায় পৌঁছেছিল ২০ জুলাই ১৯৭২ সালে। অন্টেরিওর লন্ডন শহরের কাছে কমোকায় তারা বাবা-মার বাড়িতে বড় হয়। সে পার্কভিউ এলিমেন্টারি স্কুল এবং লন্ডনের মেডওয়ে সেকেন্ডারি স্কুলে লেখাপড়া করে। স্কুলের পড়া শেষ করে আমিনা ইউনিভাসিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টেরিওতে ব্যাচেলর অব অ্যাডুকেশন শেষ করেন। তারপর তিনি ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে আবার ব্যাচেলর অব অ্যাডুকেশন শেষ করেন এবং অ্যাডুকেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে। টরন্টো এলাকায় কয়েক বছর থাকার পর তিনি কাজ নিয়ে প্রথমে চিলিতে যান, সেখানে থেকে যান চীনে এবং পরে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক ডাসেলডরফ স্কুলে। জার্মানির চুক্তি শেষ করে বর্তমানে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে নব নির্মিত আন্তর্জাতিক স্কুল দুবাই-আল খাইল-এ শিক্ষকতা করছেন।
(১৪) রুফিয়া : তার জন্ম ১৫ জানুয়ারি ১৯৭২। বর্তমানে প্রিন্স অ্যাডওয়ার্ড আইল্যান্ডের বাসিন্দা ফিল ও ডায়ান রশফোর রুফিয়াকে ১৯৭২ সালে দত্তক নিয়েছিলেন। প্রোডাকশন শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করে রিজা প্রাদেশিক ও ফেডারেল গভর্নমেন্টেও কাজ করেন। তিনি টরেন্টো ডমিনিয়ন (টিডি) ব্যাংকে কাজ করেছেন।
(১৫) প্রদীপ : কানাডীয় আর্কাইভসের রেকর্ড অনুযায়ী যখন কেনেথ ও মিটজি ম্যাককালা ১৯৭২ সালে প্রবীরকে দত্তক নিয়েছিলেন তখন তারা নোভা স্কোশিয়ার হ্যালিফ্যাক্সে বাস করতেন। তারা ছেলেটিকে কোলে তুলে নেওয়ার আগেই তার নামকরণ করেন ম্যাথিউ ম্যাককালা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর তিনি এখন কানাডায় বসবাস করছেন।

কপি অ্যান্ড পেস্ট বাই শাহ আজিজ ।।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:




এই বাচ্চাগুলো ছিলো আমাদের জাতির সন্তান; শেখ সাহেব বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব নিলেন না; উনি মনে হয়, "দায়িত্ব" শব্দটার অর্থ বুঝতেন না।

০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৫৭

শাহ আজিজ বলেছেন: নিজেরগুলার আর নিতে পারল কই !!

২| ১০ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৪৫

কামাল১৮ বলেছেন: একটা সাধারন ধারনা ছিল যে,এইসকল বাচ্চাদের পিতা পাকিরা এবং নিরাপত্তার অভাবের কারনে মায়েরাও বাচ্চাদের নিতে তাদের সামর্থ ছিল না।অনেক বাচ্চাই পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মাকে খুঁজতে এসেছিল।কেউ পেয়েছে কেউ পায়নি।এটার খারাপ দিকের পেয়ে ভালোর দিকটাই ছিল বেশি।

১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:১৮

শাহ আজিজ বলেছেন: এদের জন্ম তারিখ দেখলে বোঝা যায় এরা যুদ্ধ শিশু ছিল না । এই শিশুদের মায়ের নাম সংরক্ষন করা হয়নি তাদেরই অনুরোধে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.