নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাঁঠালি চাঁপা - গল্প

২৪ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৪৫




চারুকলার পুরাতন ভাস্কর্য বিভাগের বারান্দা লাগোয়া কাঁঠালি চাঁপা গাছটির নিচেই আমরা দুজন বসতাম , নিবিড় হয়ে । আমার ডিপার্টমেন্ট বলে একটা দাদা দাদা ভাব থাকত আমার ভিতরে । গল্প হতো নির্দিষ্ট কোন বিষয় ছাড়াই । একসময় ধুতি পরা শুকনা রোগা আর খাটো মানুষটি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াত দুহাত পেন্নামের ভঙ্গিতে, এরপর দুহাত খুলে বাড়িয়ে ধরত আমাদের সামনে ঝুকে , নত হয়ে । হাতে একটি কাঁঠালি চাঁপা । একটাকা দিতাম সাধুকে । সাধু চারুকলার ঝাড়ুদার , চিরকুমার , ট্যারা , গলায় মালা , সাদা পোশাক পরনে । একদিন জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় থাকেন সাধু ? ক্ষীণ কণ্ঠে বলল রমনার মন্দিরে । পরিবারের কথা বলতেই চুপ মেরে গেল সাধু । অন্যদের কাছে জেনেছিলাম সাধু বিয়েই করেনি , চিরকুমার । রেসকোর্সের মধ্য দিয়ে আড়াআড়ি পাড়ি দিত এবং একসময় সদ্য লাগানো গাছপালার আড়ালে ছোটখাটো আকারের সাধু হারিয়ে যেত । নিরামিষাশী সাধু দুপুরে মুড়ি খেত একাকী । সন্ধ্যায় রান্না হত মন্দিরে । বর্ষা চলে গেলে সাধু খুব বিপদে পড়ে গেল । আর ফুল নিয়ে আসেনা আমিও পারিনা আমার প্রেমিকার হাতে ফুল তুলে দিতে । এরি মধ্যে ভালবাসার টানে জবা ফুল নিয়ে হাজির । লোকটিকে কেউ কখনো প্রেম নিবেদন করেছে কিনা জিজ্ঞাসা করল আমার প্রেমিকা, লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নত সাধু গুড় গুড় করে ভেগে গেল । আরও কয়েক দম্পতি বারান্দার কোনে বা ক্যান্টিনের পেছনে বসে প্রেমে মশগুল থাকত । সাধু সবাইকে ফুল দিত । আমরা ঠিক করলাম তোমায় মাসে পাচ টাকা দেব বাকি অন্য যুগলদের বললাম দিতে। তাদের একজন সাধুকে মালাউন বলে গাল দিয়ে বলেছিল ধান্দাবাজির জায়গা পাওনা । খুব কষ্ট পেয়েছিলাম মনে । শীত এলেই বকুল নাহয় শিউলি এনে হাজির , নাছোড়বান্দা । কোথায় পেলে সাধু? মিনমিন করে জবাব রমনা পার্ক থেকে । আমি খুশি হয়ে প্রেমিকার হাতে তুলে দিতাম সেই ফুল । দুদিন হয় সাধু আসেনা কাজে । প্রেমিকা উদ্বিগ্ন । খোজ নিয়ে জানা গেল সাধু ঠাণ্ডায় ধরাশায়ী । একটা উলের টুপি আর মোটা চাদর পরে সাধু কাজে এলো । তাকে ৩০ টাকা দিলাম একটা পুরাতন কম্বল কিনতে । আমাদের প্রেম জীবনে সাধুর প্রণোদনা অসীম । নতুন দালানে চলে এলে আর কাঁঠালি চাঁপার নিচে বসা হত না। নতুন দালানের দোতালার সিঁড়িতে নির্জনে বসে থাকতাম দুজনে । সাধু মেইন গেটের কাছে দাড়িয়ে থাকতো ভিন্ন ভিন্ন ফুল নিয়ে। তাকে পিছনের কথা বলতেই নিচু স্বরে জানাল পিছনের স্টাফরা তাকে নিষেধ করেছে ওখানে যেতে । বেশ গোলমেলে ব্যাপার । ধরলাম সেই স্টাফকে , সে গড়াগড়ি খেয়ে বলল তাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার বলেছে যারা এখানে বসে প্রেম করে তাদের ফুল দিতে সাধুকে না করতে কারন এতে লেখাপড়ার ক্ষতি হয় । বললাম তাকে গিয়ে বলতে আমার বালের শিক্ষক , হালার পুতের প্রথম বউ ভাইগা গেছে দ্বিতীয়টা ভাগার অপেক্ষায় । চারুকলাকে মাদ্রাসা বানাইয়া ফেলব মনে হয় । আড্ডার জায়গা একেবারে ক্যাম্পাসের সামনেই উন্মুক্ত বারান্দায় নিয়ে এলাম ।একসময় উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশ । সাধু হারিয়ে গেল আমাদের জীবন থেকে । আমরা দুজন প্রবাসে সাধুর কথা মনে করতাম । বিদেশে কাঁঠালিচাঁপা নেই , নেই মাদকময় গন্ধের ফুল ।এখন চারুকলায় যাই আর যাতায়াতের পথে তাকিয়ে দেখি কাঁঠালিচাঁপা । এক সন্ধ্যায় কি খেয়ালে চারদিক দেখে বসে পড়লাম গাছটার নিচে । এখন ফুলের সময় নয় । উঠে দাঁড়ালাম , হাত দিয়ে ছুঁলাম গাছটিকে , তার স্পন্দন টের পেলাম । শুধোলাম ‘কিরে কেমন আছিস?’ ‘ভাল’ । ৪২ বছরে তুই বড় হয়েছিস অনেক’ , ‘হ্যা তোর মত মোটাও হয়েছি’। হেসে দিলাম । কারা যেন আসছে , আমি গাছ ছেড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। আবারো ওকে আদর করতে করতে বললাম এখনো কি কেউ ফুল কুড়োয় ? বেশ বেদনাহত হয়ে বলল সবাই শাহবাগ থেকে ফুল কেনে , আমি অচ্ছুৎ হয়ে গেছি যেন। শোকবিহ্বলে দাড়িয়ে রইলাম । একসময় বলল সাধু চলে গেছে আগেই , তোর প্রেমিকাও চলে গেছে একই পথে । স্তম্ভিত আমি দাড়িয়ে রইলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেছে । কাঁঠালিচাঁপা করুন স্বরে বলল , সময় পেলে আসিস , ছুঁয়ে দিস আমায় , আর শোন শরীরের দিকে খেয়াল নিবি । আমার দুচোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি গড়াতে লাগল । আমি নিরুত্তর ওর শরীর ছেড়ে বাক্যহীন অন্ধকারে হাটা শুরু করলাম গেটের দিকে । ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলাম কাঁঠালিচাঁপার দিকে আর মনে মনে উচ্চারন করলাম শতায়ু হ’ ।


ধীরে হাটতে লাগলাম রাত নেমে আসা শাহবাগের আলো ঝলমলে ব্যাস্ত সড়কের দিকে।।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি প্রকৃতি-প্রান মানুষ।

২৪ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫৪

শাহ আজিজ বলেছেন: হুম , আপনি সহি জায়গায় হাত লাগাইছেন ।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:৫৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



গাছের প্রতি ভালোবাসা সবার থাকে না। আর এনজিওগুলো করে অভিনয়। মানুষ যদি পৃথিবীর মেষ্ট জীব হয় তাহলে মানুষের ভালোবাসা হতে হবে বিশ্বের সকল প্রাণের প্রতি। - নয়কি?

২৪ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০২

শাহ আজিজ বলেছেন: প্রচুর গাছপালা ছিল ঘোষদের কাছ থেকে কেনা বাগানবাড়ীটায় । এখন সব প্রায় নাই হয়ে গেছে । গাছ ভালবাসি বেশি করে যখন দেখলাম চীনারা মরুভুমিকে সবুজ করে ফেলেছে । ১৯ এর অকটোবরে ঢাকা যশোর যেতে নিচে তাকিয়ে দেখলাম বসতবাড়ি বৃদ্ধিতে সবুজ কমেছে ।

আরও সবুজ চাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.