নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতীকী ছবি
আমরা শেরাটনে লাঞ্চ মিটিং শেষ করলাম । আমরা চীনা কোম্পানির কর্মকর্তাদের তাদের গাড়ীতে উঠিয়ে দিলাম । পিছনে আমাদের কালো বেঞ্জ । কাইয়ুম সাহেব ও আমিন সাহেব পিছনে উঠলেন । কাইয়ুম সাহেব ঘড়ি দেখলেন এবং বললেন তাকে ধারে কাছের কোন মসজিদে নিয়ে যাবার জন্য । আমি জানালাম স্যার, এটা আমাদের প্রোগ্রামের মধ্যে আছে, আজ শুক্রবার বেলা ১.৫০ মিনিটে নামাজ। গাড়ি অফিস মুখো । উনি বললেন আমরা তো অফিসে ফিরছি, তাহলে আমায় একটি ট্যাক্সি করে ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দাও, আজ হয়তো জুম্মা পড়া হবে না। আমিন সাহেব বললেন কাইয়ুম সাহেব গাড়ি আপনাদের নিয়ে মসজিদে যাবে।
আর আপনি?
আমার একটু কাজ পড়ে আছে অফিসে।
না না তা কি করে হয়, আপনিও চলুন ।
আমিন সাহেব যাবেন না এবং কাইয়ুম সাহেব ছাড়বেন না ।
আমিন সাহেব তার হাদীস শুনালেন ঘর থেকে হাজার মাইল দুরে---- আল্লাহ মাফ করে দিবেন । উল্টা হাদীস এলো এটাই এখন ঘর আপনার ক’বছর হলো ? গাড়ি অফিসের পার্কিং থামল এবং আমিন সাহেব নামতে নামতে বললেন জিন্দেগি এক লম্বা সফর হ্যায়। গাড়ি এবার মসজিদগামী আমি পিছনের সিটে চলে এলাম। কাইয়ুম সাহেব গল্প শুরু করলেন । তিনি এই প্রতিষ্ঠানের হংকংয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা । কালো আফ্রিকানদের মতো দেখতে । বলে চলছিলেন তার যৌবনের কাহিনী । দুর্ধর্ষ সময়, ৪৭ এর বিভক্তি । কেন তিনি আমায় এই কাহিনী শুনাচ্ছিলেন তার কারণ আমিও বুঝতে পারছিলাম । আমার স্বাধীন বাঙালী আর তিনি উত্তর প্রদেশে অনার্য এক মুসলিম যিনি পিতা মাতার সাথে পাকিস্তানে পাড়ি দিয়েছিলেন । আমি তাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিনই বুঝেছি তিনি প্রাক্তন ইন্ডিয়ান । কায়দা করে জিজ্ঞাসা করলাম স্যার আপনার আত্মীয় স্বজন ওখানে কেউ নেই ?
হ্যা আছে, আছে । অনেকেই তখন পাকিস্তানে যেতে চায়নি । আমরা যারা গিয়েছিলাম রোমহর্ষক দৃশ্যের মধ্যে পড়েছি, সারা জীবন তা ভোলার নয় । তিনি চশমা খুলে চোখের কোন মুছলেন। আজ একা আমায় পেয়ে কেন তিনি মন উজাড় করে সব বলছেন, হয়ত তারা বঞ্চিত ।
লুট তরাজ, ধর্ষন পথে পথে। আমি ভীষন কালো এবং আমার বাবা মাও তাই । ফলাফল আমাদের সৌভাগ্য এনে দিল । কয়েকদিন লাগাতার যাত্রার পর আমরা পৌছলাম পাকিস্তানে । করাচির ঘেটো ভাঙ্গা চোরা ঘরবাড়ি হলো আমাদের মাথা গোজার ঠাই । এটাও ছেড়ে যাওয়া হিন্দুদের ।
স্যার কে কে আছেন ওখানে?
চাচাতো ভাই, মায়ের পক্ষের আত্মীয়রা ।
যান না মাঝে সাঝে?
হ্যা বছরে এখন এক দফা নিয়মিত হয়ে গেছে ।
কেমন লাগে পুরানো স্মৃতি?
দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে বললেন, সব চেঞ্জ হয়ে গেছে। আমাদের অংশ দখল হয়েছিল, পরে চাচারা ম্যানেজ করেছে। আমার বন্ধুরা, সহপাঠীরা সবাই আমার মত বুড়ো হয়ে গেছে। গেলে ওইযে একবার বসি- পুরো বিকেল, রাত গভীর হয়ে যায় আড্ডায় আড্ডায় । বড় সম্পদ কী জানো? আমি তার মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রই। আমাদের কৈশোর আর যৌবন শুরু সময়টি। ওই শিক্ষা,আনন্দ সারা জীবনের বড় সম্পদ । আমার সম্পদ পড়ে আছে ইউপির গ্রামে, আমার জম্মস্থানে।
৪৭ এর পর ঠিক কত দিন বাদে গ্রামে গিয়েছিলেন?
৬৫র যুদ্ধের পরে । পাসর্পোট পাওয়াটাও ঝামেলা, ইন্ডিয়াতে জম্ম, আবার রিফিউজী! ঠিক কী করতে যেতে চাও ইন্ডিয়াতে। গায়ের রং কালো বলে সন্দেহ বেশি । প্রথম দফা যাওয়ার পর গোয়েন্দাদের আনাগোনা, কত কি ।
আমি তার হৃদয়ের ক্ষরন বুঝতে পারছিলাম । আমাদের অফিস ও হংকংয়ের বৃহৎ স্থাপনায় পাকিস্তানী ও সামান্য কিছু বাঙালী কর্মরত । আর্য পাকিস্তানীরা পাঞ্জাবকেই মূল পাকিস্তান এবং পাঞ্জাবিই হচ্ছে পাকিস্তানীদের ভাষা । কদিন আগে পাক রাষ্ট্রদূত এক জলসায় এমনই ভাষন দিলেন । ভাষনটা অবশ্য উর্দূতেই ছিল। যাক বাবা বাচা গেল, প্রথম টার্গেট ছিল বাঙলা ভাষা, উর্দূর বিপরীতে ৪৮ সালে । ৭১ এ তা বেজোড় । ১৯৮৯ তে উর্দূর বিপরীতে পাঞ্জাবি ভাষা । সময়ের কি নিদারুন খেলা । ৮৯ গিয়ে ঠিক কত সালে দাড়াবে তা দেখার বিষয়।
আবেগতাড়িত কাইয়ুম একাধারে বলে চলছিলেন তাদের বঞ্চনার কাহিনী । হংকং চলে আসার পর এখন নিয়মিত যান জম্মভূমিতে। পাকিস্তানে এখন খুব কমই যাওয়া হয়। ছেলেরা ব্যবসা এবং পড়াশুনা, নিজের টপ চাকরি । পুরোপুরি রিফিউজি হয়ে গেলাম সারা জীবনের তরে ।
তুমি জানো আজিজ, আমার দিকে ঘুরে তিনি বলতে লাগলেন আমরা ঘর বাড়ি বিষয় সম্পত্তি সব ছেড়ে খালি হাতে আরেক ভূখন্ডে হিজরত করলাম । পাকিস্তানীরা আমাদের হিজরতের মূল্যায়নতো করেনি এবং বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলেনি ‘তুমি আমার ভাই তুমি পাকিস্তানী বরং বলেছে“ তোম মোহাজির হো”। কি নিমর্মতা........। কাইয়ুম সাহেব কাঁদছিলেন, আমি স্তব্দ এবং আমার উপলদ্ধি জেগে উঠলো স্বাধীন এবং পরাধীনের মধ্যেকার পার্থক্যে।
মসজিদের গেটে গাড়ি পৌছে গেছে, চীনা ড্রাইভার তড়িৎ নেমে তার দরজা খুলে ধরল।
কপিরাইটঃ শাহ আজিজ
ছবি-গেটি ইমেজ
১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১৭
শাহ আজিজ বলেছেন: হুম , সম্পূর্ণ সহমত ।
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৪৬
সোনাগাজী বলেছেন:
পাকিস্তানের নিজের খবর ছিলো না, রিফিউজীদের কি খবর নেবে? তবে, যারা পুর্ব পাকিস্তানে এসেছিলো ( বিহারী ও বোম্বাই'এর ), তারা বাংগালীদের চেয়ে হাজারগুণ বেশী সুযোগ পেয়েছিলো।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:১৭
শাহ আজিজ বলেছেন: আমার ছোট বেলায় দেখেছি বিহারিরা বাঙ্গালদের কি ডোমিনেট করত । সেই বিহারিদের যুদ্ধ শেষে রিলিফ দিয়েছি ।
৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:২০
শেরজা তপন বলেছেন: এদের থেক রোহিঙ্গারা অনেক বেশী ভাগ্যবান। আমার ধারনা সেইসময়ে তারা দেশ ছেড়ে ভুল করেছিলেন।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩৮
শাহ আজিজ বলেছেন: সবই দুই ব্যারিস্টারের খেল । বদ দোয়ায় দুইটাই মরেছে । দুইটাই গুজরাটি বদ । এদের কারো ভাষা উর্দু নয় কিন্তু এরা উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা কেন বানাতে চেয়েছিলেন আজো অজানা ।
৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪৭
শেরজা তপন বলেছেন: জিন্নাহ (বড় শয়তান) বছর খানেক আগে মরলে ভারতবর্ষের ইতহাস অন্যরকমভাবে লিখতে হোত নিশ্চিত।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৩
শাহ আজিজ বলেছেন: একদম শিউর ।
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:১৯
শেরজা তপন বলেছেন: আচ্ছা আজিজ ভাই আপনিতো অনেক বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ মানুষ। আপনার কি মনে হয় ভারতীয় বাঙ্গালীদের নিজদেশে পরবাসী মনে হয় বা মনে হয় তাদের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে কিংবা ভাষার উপর কোন আক্রমন হচ্ছে? ভারতের জাতীয়ভাষা কি হওয়া উচিৎ সেটা নিয়ে মহাত্মা গান্ধী নাকি রবীন্দ্রনাথকে তিনবার চিঠি দিয়েছিলেন।
হ্যা মুসলমানেরা খানিকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেটা নিশ্চিত তবে সবখানে নয়। দেশভাগ হওয়ার সবচেয়ে বড় পাওনা সম্ভবত; জমিদার প্রথার বিলোপ! আর তো ভাল কিছু দেখি না- কি বলেন?
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০৯
শাহ আজিজ বলেছেন: ভারতীয় বাঙ্গালিরা গলায় মাছের কাটার মত আটকে আছে । সারা ভারতে ওরা ছড়িয়ে আছে শুধু কলকাতা আর বোলপুরে টিম টিম করে জলছে বাঙ্গালের বাতি । বাংলায় কোন উন্নতি নেই বাঙ্গালীদের কারনেই । বামপন্থীরা বাংলাকে খেয়ে ফেলেছে । ওই তুলনায় তামিলরা খুব দর্পের সাথে এগিয়ে আছে । একমাত্র মুস্লিম - হিন্দু ক্লাশ ছাড়া আমি অন্যদের ভিতর তেমন বিভক্তি দেখিনি । ভারতের জাতীয় ভাষা ইংরেজিই সেট হয়ে গেছে । এক বিশাল ভিন্ন ভিন্ন জাতি উপজাতি নিয়ে ভারত গঠিত , এজায়গায় কেউ হাত দেবে না । আমার মনে হয়েছে হিন্দিই ডমিনেট করছে তারপর ইংরেজি । বাঙ্গালরা আধা কাপ চায়েই সীমাবদ্ধ থাকবে । ওদের স্বপ্ন নেই কোন ।
৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: জিন্নার দোষ আমি দিবো না। আসল দোষ ধর্মের।
ধর্মের দোহাই দিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা তো আর কম হয়। মানুষ তো কম মরেনি। এই যে দেশ ভাগ। দেশের ভাগের ফলে কত পরিবার পথে বসেছে সেই হিসাব কার কছে আছে?
বংশপরম্পরায় এখন বেশ কিছু বিহারী আমাদের দেশে আছে। এরা বাঙ্গালীদের সাথে মীশে গেছে। তলে তলে এরা আজও জিন্নার ছবি বুকে ধারন করে বেঁচে আছে।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১৬
শাহ আজিজ বলেছেন: আমাদের দেশে আশ্রয় পাওয়া বিহারিদের অনেকেই মেনে নিয়েছে ভাগ্যকে । কিন্তু অন্যরা এখনও ষড়যন্ত্র আঁটছে কিভাবে এই ভুমিকে বদলে দেওয়া যায় । তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে । এদের ঠিক রাখার জন্য মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই ।
৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২১
রাজীব নুর বলেছেন: এদের কেউ মারতে পারবে না। তলে তলে এরা দেশের ক্ষতি করছে। আমাদের দেশের অনেক বিহারীরা এখনও পাকিস্তান পাকিস্তান করে। অথচ তাঁরা এই দেশে আছে। এই দেশেরটা খেয়েপরে বেঁচে আছে।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩০
শাহ আজিজ বলেছেন: খুব দ্রুত শেখ যাদের ক্ষমা করেছিলেন তারাই এখন দ্বিতীয় শক্তি ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৩
কামাল১৮ বলেছেন: দেশ ভাগ করে মানুষ যতটা কষ্ট পেয়েছে ততটা শুখ তারা পায় নি।এই দুঃখের জন্য জাতিয়তা যতটা না দায়ী তার থেকে বেকে বেশি দায়ী ধর্ম।